Home রাজনীতি ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ বলা সঙ’-এ পরিণত হচ্ছে গণতন্ত্রের স্তম্ভগুলি

‘হ্যাঁ, হ্যাঁ বলা সঙ’-এ পরিণত হচ্ছে গণতন্ত্রের স্তম্ভগুলি

‘হ্যাঁ, হ্যাঁ বলা সঙ’-এ পরিণত হচ্ছে গণতন্ত্রের স্তম্ভগুলি
0
নীলাঞ্জন মণ্ডল

৯ নভেম্বর দিনটি  হিন্দুত্ববাদীদের কাছে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ১৯৮৯ সালের ৯ নভেম্বর  অযোধ্যায় রাষ্ট্রীয়  স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ বা আর এস এস এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতৃত্বের উপস্থিতিতে রাম মন্দিরের ‘শিলান্যাস’  হয়। সুপ্রিম কোর্ট  অয্যোধ্যা মামলার রায় দিলেন সেই ৯ নভেম্বরেই। সালটা ২০১৯। নিছক সমাপতন কিনা কে জানে !  

আরও পড়ুন: অযোধ্যা রায়: ক্ষমতার কাছে বিচারব্যবস্থার নতিস্বীকারের নিকৃষ্ট উদাহরণ

২০১৪ পরবর্তী সময় থেকে সুপ্রিম কোর্টের কাজের গতি প্রকৃতি অনুধাবন করলে এটা প্রতিভাত হয় যে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার বিপদে পড়বে এরকম কোন রায় তারা দেয়নি। আধার সংক্রান্ত মামলায় ব্যক্তি পরিসরে গোপনীয়তাকে মান্যতা দেওয়া হল, কিন্তু আধার নিয়ে কোন নির্দেশ দেওয়া হলনা। যখন আধার সংক্রান্ত মামলার রায় দেওয়া হল তখন অধিকাংশ মানুষের  আধার হয়ে গেছে।

সুপ্রিম কোর্টে অযোধ্যা মামলার বিচার্য বিষয় ছিল বিতর্কিত জমির মালিকানা নিয়ে। বাবরি মসজিদ ধ্বংস নিয়ে আর একটি ফৌজদারি মামলা চলছে আদালতে, যা কবে শেষ হবে কেউ জানেনা।

অযোধ্যার বিতর্কিত জমি সংক্রান্ত মামলায় রায়দানের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া ওই স্থানে খননের যে রিপোর্ট আদালতে পেশ করেছিল তার উল্লেখ করেছেন। সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, রিপোর্টে বলা হয়েছে  যে বাবরি মসজিদের ধ্বংসাবশেষের নিচে খনন কার্য চালিয়ে স্থাপত্যের যে নমুনা পাওয়া গেছে তা ইসলামিক নয়।  কিন্তু ঐ নমুনা যে কোন হিন্দু মন্দিরের তাও বলা হয়নি। 

বাকি থাকল জমির মালিকানা সংক্রান্ত দলিল দস্তাবেজ। ১৫২৮ থেকে ঐ জমি যে তাদের অধিকারে আছে, এ সংক্রান্ত কোন দলিল দস্তাবেজ মুসলমান সম্প্রদায় জমা দিতে পারেনি। অথচ হিন্দুদের কাছে এরকম কোন নথি চাওয়াই হলনা। মুসলমানরা জমির দখল সংক্রান্ত কোন নথি জমা দিতে পারেনি- এটাকেই মান্যতা দেওয়া হল। ঐ চত্বরে হিন্দুরা পুজা করছেন, সুতরাং ঐ জমি তাদের –এরকম একটা যুক্তি দেওয়া হল।যদিও  ১৯৪৯ এ বাবরি মসজিদের তালা ভেঙ্গে রামলালার মূর্তি স্থাপন যে বেআইনি কাজ- এ কথা সুপ্রিম কোর্ট অনেকদিন আগেই অন্য একটি মামলায় জানিয়ে দিয়েছে।

বাবরি মসজিদ ভাঙ্গা যে বেআইনি কাজ- একথা সুপ্রিমকোর্ট অযোধ্যা সংক্রান্ত এই মামলার রায়েই উল্লেখ করেছেন। তাহলে তো ওখানে মসজিদই পুননির্মাণ করতে হয় ন্যায় বিচারের স্বার্থে। কিন্তু তারা এসবের মধ্যে গেলেন না। যুক্তি তর্ক বাদ দিয়ে শেষ পর্যন্ত শুধুমাত্র হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশ্বাসকে বিচারের মাপকাঠি ধরে নেওয়া ১০৪৫ পৃষ্ঠার এই রায়ে।

গোলয়ালকর তার  ‘We or our nationhood defined’ বইতে অখণ্ড ভারত, এক দেশ, এক ভাষা, এক জাতি, এক ধর্মের ভিত্তিতে হিন্দু রাষ্ট্রের যে ছবি এঁকেছিলেন, তা বাস্তবায়িত হওয়ার দিকে ক্রমশ এগিয়ে চলেছে ভারত রাষ্ট্র। গণতন্ত্রের স্তম্ভগুলি অর্থাৎ বিচার, প্রশাসন ,নি’র্বাচন কমিশন, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সব কিছুই  ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ বলা সঙ’-এ পরিণত হচ্ছে।

Share Now:

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *