
পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: ২০ অক্টোবর নির্বাচনের ফলাফলে তিনি পুনরায় প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই অশান্ত হয়ে উঠেছিল বিভিন্ন দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠী। অভিযোগ, ভোট গণনার প্রক্রিয়া যথাযথ ছিল না। ভোট গণনা চলাকালীন অশান্তি শুরু হওয়ায় বলিভিয়ার শীর্ষ আদালত গণনার সরাসরি সম্প্রচার ১৫ ঘণ্টা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। সম্প্রচার শুরু হওয়ার পর জানা যায়, ১৪ বছরের প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেস ফের জিতে গিয়েছেন। তারপর থেকেই দক্ষিণপন্থী আন্দোলনে জেরবার গোটা বলিভিয়া।
আরও পড়ুন: ৯ নভেম্বর : অযোধ্যা রায়ের দিন আর ‘কাঁচ ভাঙা’ সেই রাত, ক্রিস্তালনখট
দেশের বিভিন্ন গোষ্ঠী, রাজনৈতিক দল, ক্যাথলিক চার্চ, গর্ভপাত বিরোধী সংগঠন- সকলেই মোরালেসের বিরুদ্ধে পথে নামে। মোরালেসের দল ‘মুভমেন্ট ফর সোশালিজম’-এর সদস্যদের ওপর আক্রমণ চালানো হয়। তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়। বারবার শান্তি রক্ষার আবেদনেও কোনো কাজ হয়নি। তাঁর ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আস্থা অটুট রাখতে নতুন করে নির্বাচনেরও ঘোষাণা করেন মোরালেস। কিন্তু লাভ হয়নি। গত সপ্তাহে পুলিশ আধিকারিকরা প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে পথে নামেন। অন্যদিকে ‘অর্গানাইজেশন অফ আমেরিকান স্টেটস’ দক্ষিণপন্থীদের প্রতি সমর্থন জানায়। সহমত হয় ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও। ওএএস-এর মতামত শিরোধার্য করে নেন মোরালেস। সেই মতো দেশে শান্তিরক্ষারও আবেদন জানান। লাভ হয়নি। রবিবার সেনাকর্তারা মোরালেসকে পদত্যাগ করতে বলেন। মোরালেস ও তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট দুজনেই সেনেটের প্রেসিডেন্টের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। কিন্তু সেনেটের প্রেসিডেন্টও চেম্বার অফ ডেপুটিজের প্রেসিডেন্টের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। ফলে বলিভিয়ায় এখন রাজনৈতিক ক্ষমতার কোনো সাংবিধানিক বিন্যাস অবশিষ্ট নেই। ক্ষমতা সেনাবাহিনীর হাতে।
মোরালেস তার পদত্যাগের ভাষণে বলেছেন, দেশে শান্তিরক্ষার জন্যই তিনি ক্ষমতা ছাড়ছেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, তাঁর ১৪ বছরের শাসনকালে তিনি ওয়াশিংটনের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেই চলেছেন। বিশ্বব্যাঙ্কের নীতিমালাই দেশে কার্যকর করেছেন। দেশের ক্ষমতাবান কৃষিব্যবসায়ীদের সঙ্গে আপসরফার মধ্য দিয়ে ক্ষমতা ভোগ করেছেন। ২০০৮ সালে সীমিত ভূমিসংস্কার করার সিদ্ধান্ত যখন মোরালেস নিয়েছিলেন, সেই সময়েও একটি অভ্যূত্থানের চেষ্টা হয়। তাতে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তারাই রয়েছেন এবারের অভ্যূত্থানের নেতৃত্বে। গোটা শাসনকালে মোরালেস কখনওই মার্কিন নীতি ও দেশের প্রতিক্রিয়াশীল সামন্ত ক্ষমতার বিরুদ্ধে বড়ো ধরনের গণ আন্দোলনের পথে হাঁটেননি। এমনকি সাম্প্রতিক দক্ষিণপন্থী আক্রমণের মুখেও তিনি দলীয় কর্মী ও দেশবাসীকে শান্ত থাকার আবেদন জানিয়েছেন। প্রতিরোধ করার আহ্বন জানাননি। ফলে পদত্যাগের ভাষণে, যতই তিনি বলুন যে আইএমএফ-এর নীতি বলিভিয়ার পক্ষে ক্ষতিকারক হবে। সেটা শুধু আগামী দিনে ভোটে জেতার কৌশল ছাড়া কিছু নয়। তবে সে সুযোগ তিনি পাবেন কিনা, এখনই বলা যাচ্ছে না। মেক্সিকো ইতিমধ্যেই ইভো মোরালেসকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে। আর আমেরিকা মোরালেসের পদত্যাগকে সাধুবাদ জানিয়েছে।