পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: ১৫১টি এক্সপ্রেস ট্রেন বিক্রি করে দেওয়াটা প্রকাশ্য সিদ্ধান্ত। কিন্তু সেটা হিমশৈলের চূড়া মাত্র। আসলে কেন্দ্রীয় সরকারের লক্ষ্য ধীরে ধীরে গোটা রেল পরিষেবাটাকেই বেসরকারিকরণ করা। কিন্তু বেসরকারি সংস্থাকে বেচতে হলে, পণ্যকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। করোনার ভয় দেখিয়ে আসলে সেই কাজটাই সারল ভারতীয় রেল। যাতে এরপর বিক্রির সিদ্ধান্ত কার্যকর করার সময় রেলকে প্রস্তুত করার কোনো কাজ বাকি না থাকে। আর এই কাজটা করার জন্য যে কেবল গত সাতমাস ধরে ভারতীয় জনগণকে সমস্যায় ফেলা হচ্ছে তাই নয়। তাদের পরিবহণ ব্যবস্থাকে আরও বিপর্যস্ত করারও বুনিয়াদ প্রস্তুত করা হচ্ছে।
সম্প্রতি রেল জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার চাইলে আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে দেশজুড়ে স্বাভাবিক রেল পরিষেবা চালু করতে প্রস্তুত তারা। নামেই ‘স্বাভাবিক’, আসলে গোটা রেল পরিষেবাকেই পালটে ফেলা হচ্ছে।
কী কী পরিবর্তন হচ্ছে দেখে নেওয়া যাক।
১) যাত্রী কম হয়, এমন ৬৮৬টি ট্রেন বাতিল করা হচ্ছে। তার মধ্যে ৬০০টি প্যাসেঞ্জার ট্রেন। ফলে ৪৬০০ থেকে প্যাসেঞ্জার ট্রেনের সংখ্যা কমে দাঁড়াবে ৪০০০।
২) যাত্রী ওঠানামা কম হয়, এমন ১০,২০০টি স্টেশন/হল্ট বাতিল করা হবে। তার মধ্যে রয়েছে ১৬০০টি নাইট হল্ট।
৩) ৩৬৩টি দূরপাল্লার ট্রেনকে মেল/এক্সপ্রেস ট্রেনে পরিণত করা হবে। গতি বাড়িয়ে করা হবে ১৪৫কিমি/ঘণ্টা।
৪) ১২০টি মেল/এক্সপ্রেস ট্রেনকে সুপারফাস্ট ট্রেনে পরিণত করা হবে। তাদের গতি হবে গড়ে ১৫৫কিমি/ঘণ্টা।
৫) লিঙ্ক ট্রেন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বাতিল করা হবে।
৬) এই সব পরিবর্তনের ভিত্তিতে রেলের টাইমটেবিল ঢেলে সাজা হবে, তার সঙ্গে পুরনো টাইমটেবিলের সম্পর্ক থাকবে না বললেই চলে।
৭) টিকিট ব্যবস্থাতেও আমূল পরিবর্তন হবে।
এই সব পরিবর্তনের ফলে বছরে ২০০০ কোটি টাকা আয় করবে বলে মনে করছে ভারতীয় রেল। সেটা হওয়ার পরেই বিক্রিবাটা শুরু হবে। কারণ লাভজনক সংস্থাকেই কিনতে আগ্রহী হবে কর্পোরেটরা। এর মধ্যে দিয়ে শ্রমজীবী ও নিম্নবিত্ত মানুষের রেলযাত্রা যেমন খরচসাপেক্ষ হয়ে উঠবে তেমনই রেলকে ঘিরে জীবনযাপন করা অতক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জীবিকাও সংকটে পড়বে। ক্রমশই তার নিয়ন্ত্রণ নেবে বেসরকারি সংস্থাগুলি। ভারতীয় রেল যাদের থেকে ভাড়া নিতে পারবে, তাদেরকেই কেবল রেলের সম্পত্তিতে ব্যবসা করতে দেবে। যেসব স্টেশনে ব্যবসার সুযোগ কম, সেসব জায়গায় আর ট্রেন দাঁড়াবেই না। অর্থাত আম জনতাকে সেবা করার বদলে ব্যবসাই মূল লক্ষ হয়ে যাবে রেলের।
করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে, মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত করে এই কাজটাই সারল কেন্দ্রীয় সরকার।