Home খবর ‘খুব কম উপসর্গহীনই করোনার বাহক’ বলেও এক পা পিছলো হু, কাদের চাপে?

‘খুব কম উপসর্গহীনই করোনার বাহক’ বলেও এক পা পিছলো হু, কাদের চাপে?

‘খুব কম উপসর্গহীনই করোনার বাহক’ বলেও এক পা পিছলো হু, কাদের চাপে?
0

পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: হু-র ইমার্জিং ডিজিজ অ্যান্ড জুনোসিস ইউনিটের প্রধান, ডা. মারিয়া ভ্যান কেরখোভ সোমবার জানিয়েছিলেন, উপসর্গহীন করোনা আক্রান্তদের থেকে সংক্রমণের সম্ভাবনা খুবই কম। এক ধাপ এগিয়ে তিনি বলেছিলেন, এখন থেকে সরকারগুলোর কাজ হবে, কেবল উপসর্গযুক্ত ব্যক্তিদের রক্তপরীক্ষা করা এবং তাদের সংষ্পর্শে আসা ব্যক্তিদের নজরে রাখা।

আরও পড়ুন: ‘উপসর্গহীন ব্যক্তিদের থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের নজির খুবই বিরল’: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই বক্তব্য সামনে আসার পর গোটা পৃথিবীতে তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। কারণ, করোনা আক্রান্তদের ৮০ শতাংশই উপসর্গহীন, কিন্তু তারাও সংক্রমণ ছড়াতে পারেন- এই ধারণার ভিত্তিতেই ভারত সহ পৃথিবীর বহু দেশে লকডাউন করা হয়েছিল সংক্রমণ আটকানোর লক্ষ্যে। তাতে কোটি কোটি খেটা খাওয়া মানুষের জীবন চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। দুনিয়া জুড়ে আর্থিক মন্দার প্রকোপ তীব্রতর হয়েছে। বাণিজ্যের হাল খুবই খারাপ। এখন হু সম্পূর্ণ অন্য কথা বলায়, ব্যাপক সমালোচনা ও সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা।বস্তুত, উপসর্গহীনরা সংক্রমণ না ছড়ালে সোশাল ডিসট্যান্সিং নীতি মেনে চলা ও মুখোশ পরার গুরুত্ব থাকে না।

অন্যদিকে চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীদের একাংশ বলতে শুরু করেন, হু-এর এই নতুন তত্ত্ব বিশ্বাসযোগ্য নয়। এখনই এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর মতো যথেষ্ট তথ্য সামনে আসেনি।

এই পরিস্থিতিতে কেরখোভ ও হু-এর অন্য শীর্ষকর্তা সামাজিক মাধ্যমে সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেখানে তারা সোমবারের বক্তব্যের নতুন ব্যাখ্যা দেন। কেরখোভ বলেন, সোমবার তিনি এক প্রশ্নের উত্তরে ওই কথা বলেছিলেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতি পরিবর্তনের বিষয়ে কিছু বলেননি।

এদিন কেরখোভ বলেন, শুরুর দিকে চিনের কয়েকটি উদাহরণ দেখে তাদের মনে হয়েছিল, উপসর্গহীনরা সংক্রমণ ছাড়াচ্ছেন। কিন্তু এখন তাদের হাতে কয়কটি দেশের ‘কনট্যাক্ট ট্রেসিং’-এর তথ্য এসেছে, তা থেকে তারা মনে করছেন উপসর্গহীনদের থেকে সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে সেই তথ্য যথেষ্ট নয়।

কেরখোভ এদিন বলেন, দুনিয়ার জনসংখ্যার ১৬ শতাংশ উসর্গহীন করোনা আক্রান্ত। কিন্তু কোনো কোনো মডেলারদের হিসেবে সংক্রমণের ৪০ শতাংশ ছড়াচ্ছে উপসর্গহীনদের মাধ্যমে। সেগুলো হু-এর হিসেব না হলেও, সেগুলিকেও আপাতত গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। সোমাবারের মন্তব্যের সময়, সেগুলিকে হিসেবের মধ্যে রাখা হয়নি।

যদিও এদিন স্বাস্থ্যবিধি প্রসঙ্গে ঘুরপথে একটা নতুন কথা বলেছেন ওই হু-কর্তা। তার বক্তব্য, যেহেতু উপসর্গহীনদের থেকে একেবারে সংক্রমণ হচ্ছে না, একথা বলা যাবে না, তাই শারীরিক দূরত্ব না মানা গেলেও মুখোশ পরে থাকা জরুরি। নিজদের বক্তব্য নিয়ে বিতর্কে যোগ দেওয়ার মতো যথেষ্ট প্রমাণ তাদের হাতে আছে বলে এদিন দাবি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

প্রশ্ন উঠেছে, সোমবার নতুন সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সরকারগুলিকে বিকল্প নীতি নেওয়ার পরামর্শ অবধি দিয়ে ফেলার পর এদিন কেন পিছু হঠল হু?

ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, এর পেছনে দুটি কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, তীব্র সমালোচনা এড়িয়ে যাওয়া। কারণ সেক্ষেত্রে ভুয়ো লকডাউনে নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনে বিপর্যয় নামিয়ে আনার দায় তাদের ঘাড়ে পড়বে। সেই সমালোচনা শুরুও হয়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয়ত, ওষুধ সংস্থা ও বিভিন্ন ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর চাপ। উপসর্গহীনদের গুরুত্ব কমিয়ে দিলে রক্তপরীক্ষার গুরুত্ব কমে যাবে। কোভিড টেস্ট কিটের চাহিদাও কমে যাবে। যেসব মডেলাররা উপসর্গহীনদের থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা ৪০ শতাংশ বলে দেখাচ্ছেন, তাদের গবেষণাগুলি স্পনসর করছে বিভিন্ন ওষুধ সংস্থাই।  কোভিডের ভ্যাকসিন তৈরিতে ধনী দেশগুলো কয়েকশো কোটি টাকা ইতিমধ্যেই বিনিয়োগ করে ফেলেছে। রোগের গুরুত্ব কমে গেলে প্রতিষেধকের চাহিদাও কমে যেতে বাধ্য।

এই পরিস্থিতিতে অনেকেই মনে করছেন, চাপের মুখে আপাতত পিছু হঠলেও ধাপে ধাপে কোভিড মোকাবিলার নীতি পরিবর্তন করবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জনজীবনের দিকে এগিয়ে দেবে দুনিয়াকে।   

Share Now:

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *