Home ফিরে দেখা মহামারির সময় বিপ্লবী কাজ ও লেনিন

মহামারির সময় বিপ্লবী কাজ ও লেনিন

মহামারির সময় বিপ্লবী কাজ ও লেনিন
0

১৮৯১ সালের জারশাসিত দুর্বল পুঁজিবাদী দেশ রাশিয়ার সঙ্গে, আজকের আধা সামন্ততান্ত্রিক- আধা ঔপনিবেশিক ভারতের মিল খুবই কম। খাদ্য সংকট-মহামারি মোকাবিলার পথে পৃথিবীও অনেক এগিয়েছে। আর পাঁচটা মহামারি বা খাদ্য সংকটের সঙ্গে বর্তমান করোনা পরিস্থিতি বা অতিমারির মধ্যে উমপুন-বিপর্যয়ের পার্থক্য বিশাল।তা সত্ত্বেও কিছু নীতিগত বিষয় কখনও পাল্টায় না। সেই নীতির ভিত্তিতেই তৈরি হয় কৌশল। জনগণের সেবা করার ব্যাপারে প্রতিক্রিয়াশীল ও পেটি বুর্জোয়া বুদ্ধিজীবী অংশের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে মার্কসবাদী বিপ্লবীদের তফাত থাকবেই। দু’পক্ষের কাজের ধরন হবে আলাদা। লেনিনের জীবনের এই টুকরো ঘটনা থেকে সংসদ-সর্বস্বতায় আক্রান্ত বামকর্মীরা সেই শিক্ষাটুকু চাইলে নিতে পারেন।    

অস্বাভাবিক গরমের জেরে ১৮৯১ সালের গ্রীষ্মে খরা হয়েছিল। বহু প্রদেশে দেখা দেয় দুর্ভিক্ষ। তার হাত ধরেই আসে একের পর এক মহামারি। এই দুর্যোগ গোটা দেশকে বিপর্যস্ত করে দেয়। গ্রাম কে গ্রাম উজাড় হয়ে যায়, শহরবাসীরা ভয়ে কাঁপতে থাকে। ক্ষুধার্ত ও বেপরোয়া কৃষকরা শহরে ঢুকে শহরের বাসিন্দাদের ঘরবাড়িতে লুঠপা‌ট চালায়। গ্রামের যাবতীয় সম্পদ গ্রীষ্মের দাবদাহে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সরকার হতচকিত হয়ে, পরিস্থিতি সামলাতে নানারকম নির্দেশ জারি করলেও তার কোনোটিই কার্যকর করতে পারেনি। বেসরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু ত্রাণকার্য চলছিল। বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ কমিটি তৈরি হয়, টাকাপয়সা তোলা হতে থাকে, খাবারদাবারের ব্যবস্থা করা হয়, স্বাস্থ্যকর্মীদের দল গঠন হয়। বুদ্ধিজীবীরা এই ত্রাণকার্যে ব্যাপক সাহায্য করেন। এমনকি শাসকদের চরম বিরোধী অগ্রণী অংশও এই অভূতপূর্ব বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে, চরম প্রতিক্রিয়াশীলদের সঙ্গে বিরোধ স্থগিত রেখে এলাকাভিত্তিক ত্রাণ কমিটিগুলির সঙ্গে কাজ করতে থাকেন।

অন্যান্য অঞ্চলের মতো সামারাতেও এই ধরনের একটি কমিটি তৈরি হয়েছিল। গঠিত হয়েছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন রাজনৈতিক মতবাদের মানুষের ‘পবিত্র’ জোট। এই অবস্থায় কী করণীয় ছিল লেনিনের? তাঁর বোন অ্যানা একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগ দিয়ে অসুস্থদের সেবা করা শুরু করলেন। লেনিন ওইসব ত্রাণ কমিটিগুলিতে যোগ দিতে অস্বীকার করেন এবং ওই কমিটিগুলির বিরুদ্ধে তাঁর গোপন গোষ্ঠীর মধ্যে প্রচার চালাতে থাকেন। তিনি নিজের পক্ষে লোকজন পাননি। শুধুমাত্র এলাকায় নতুন আসা এক ‘সন্দেহভাজন’ লেনিনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে তাঁর সঙ্গে কাজ করতে থাকেন।          

যারা নাকি মানবতাবাদী আদর্শে প্রাণিত হয়ে জনগণের সেবা করছে, তাদের প্রতি এরকম চূড়ান্ত বিরোধিতামূলক মনোভাব দেখানোটা কি লেনিনের দিক থেকে যুক্তিসংগত হয়েছিল? হ্যাঁ, লেনিনের অবস্থান মার্কসবাদের বুনিয়াদি নীতির সঙ্গে অবশ্যই সংগতিপূর্ণ ছিল। তাঁর মনে হয়েছিল, এই সমস্ত কার্যকলাপ(যা বিশুদ্ধ ও সোজাসাপটা মানবপ্রেম ছাড়া কিছু নয়) এমন ভাবে সাজা হয়েছে, যাতে জনগণের দুর্দশা দূর হওয়ার বদলে আরও বাড়বে। এই বিপর্যয়ের ফলে যখন জার শাসনের অনিশ্চয়তা এবং অদক্ষতা প্রকাশিত হয়ে গেছে এবং জনগণের মধ্যে বিপ্লবী রাজনীতি প্রচারের অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গেছে, তখন এই ধরনের ত্রাণকার্য এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসে শাসকদের নিজেদের গুছিয়ে নিতে সাহায্য করবে।অন্যদিকে একজন বিপ্লবী এরকম পরিস্থিতিতে একজন জঙ্গি রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে, শোষক শ্রেণির সঙ্গে নিজের তফাত বজায় রেখে কাজ করে চলবেন।     

সূত্র: লেনিন, জেরার্ড ওয়ালটার(১৯৫০), পৃ: ৩৯-৪০

Share Now:

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *