Home খবর আমেরিকায় অতিমারির ভরকেন্দ্র নিউইয়র্কে মে দিবসে শ্রমিকদের প্রতিবাদ, ছবি, ভিডিও

আমেরিকায় অতিমারির ভরকেন্দ্র নিউইয়র্কে মে দিবসে শ্রমিকদের প্রতিবাদ, ছবি, ভিডিও

আমেরিকায় অতিমারির ভরকেন্দ্র নিউইয়র্কে মে দিবসে শ্রমিকদের প্রতিবাদ, ছবি, ভিডিও
0

এই তথ্যগুলি নজরে আসতে কিছুটা দেরি হয়ে গেল। তবু অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে নতুন ধরনের এই প্রতিবাদের খবর আমাদের পাঠকদের উৎসাহিত করবে এবং সেখানকার শ্রমিকদের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করবে মনে করে আমরা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করছি।

পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: নিউইয়র্ক শহরের শহরতলি অঞ্চলে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করলেন সেখানকার শ্রমিকরা। প্রতিবাদ পৌঁছ গিয়েছিল শহরের গভর্নর কুওমোর দফতর ম্যানহাটনেও। যদিও পুলিশ বেশ কয়েকবার প্রতিবাদকারীদের আটকে দিয়েছে। এর ফলে প্রতিবাদ কর্মসূচি কখনও ব্যাহত হয়েছে, কখনও বা প্রতিবাদীদের পথ বদলে নিতে হয়েছে।

জনস্বাস্থ্যর বিষয়কে মাথায় রেখে গাড়ি ও বাইকে মিছিল সংগঠিত করা হয়। গাড়িগুলির বিভিন্ন ফেস্টুনে শ্রমিকদের সুরক্ষার দাবি, বাড়ি ভাড়া শিথিল করার দাবি তোলা হয়। এছাড়া ছিল রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির দাবিও। গাড়িগুলি সারাক্ষণ হর্ন বাজাচ্ছিল এবং ভেতর থেকে বাজানো হচ্ছিল থালাবাসন। ব্রংক্স অঞ্চলের বিক্ষোভে নিউইয়র্কের রাজনৈতিক বন্দি রামসে ওর্তার মুক্তির দাবি তোলা হয়। যেসব অঞ্চল দিয়ে মিছিল যায়, সেখানে আশেপাশের বাড়ি থেকে শ্রমিকদের সমর্থন করে উৎসাহ দেওয়া হয়। পথের ধারে বেশ কিছু শ্রমিক আগামী দিনে কারখানায় কী ধরনের বিক্ষোভ-আন্দোলন সংগঠিত করা হবে, সে সম্পর্কে জানতে চান।

ব্রংক্স অঞ্চলে যেখান থেকে মিছিল শুরু হওয়ার কথা ছিল, সেখানে পুলিশ সাদা পোশাকে এসে ঝামেলা পাকায়। আগেভাগে পৌঁছে যাওয়া এক আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করার হুমকিও দেয়। বাধ্য হয়ে সংগঠকরা মিছিল শুরুর জায়গা পালটে নেন। ফলে অনেকেই পরে এসে কাউকে দেখতে না পেয়ে ভাবেন কর্মসূচি বাতিল হয়েছে। তাই অনেকেই মিছিলে যোগ দিতে পারেননি। তারা বদলে যাওয়া পথের খবরও পাননি।

মিছিল সম্পর্কে বেশ কিছু সাধারণ মানুষকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তও করে পুলিশ। ব্রংক্সে মিছিল শুরুর জায়গায় প্রচুর পুলিশের গাড়ি দেখে এক পথচারী তাদের জিজ্ঞাসা করেন, কোনো শুটিং হবে কিনা। পুলিশ তাকে জানায়, একটি প্রতিবাদ কর্মসূচি রয়েছে। শুনে তিনি মন্তব্য করেন, “ওহ। তার মানে এরা কোভিড-সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীর দল’। 

ব্রংক্সে মিছিল শুরুর আগে অপেক্ষমান পুলিশ

কুইনস অঞ্চলে পুলিশ মিছিলের পেছনের অংশকে আটকে দেয়, ফলে মিছিল দু’ভাগে ভাগ হয়ে যায়। ৪০ মিনিট পর দুটি দল আবার মিলিত হয়। শ্রমজীবীদের বসতি অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে যখন মিছিলটি যাচ্ছিল, তখন পথচারী শ্রমিকরা মিছিলকারীদের ব্যাপক অভিনন্দন জানায়। ম্যানহাটনে ব্রুকলিনের প্রতিবাদীদের সঙ্গে মিলিত হয় মিছিলটি। সেখানে গভর্নর কুওমের দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখানো হয়।

শ্রমিকদের মিছিল আটকানোর জন্য নিউইয়র্কের পুলিশ কেন এত ব্যাগ্র ছিল? একদিকে শহরের জটিল পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য মেয়র কড়া হাতে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছেন। অন্যদিকে সরকারি কর্তা এবং কর্পোরেট সংস্থাগুলি শ্রমিকদের এই পরিকল্পিত কর্মসূচিতে বিচলিত হয়ে পডেছিল। শাসকরা চাইছে, শ্রমিকরা নীরবে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে বাঁচুক বা মরে যাক। শ্রমিকদের এই ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচির মধ্যে দিয়েই শাসকদের কাছে তাদের দাবিগুলো দৃঢ়তার সঙ্গে তুলে ধরা সম্ভব।

সরকার বলছে, জনগণের সুরক্ষার জন্য তারা ‘শাট ডাউন’ করে রেখেছে। প্রকৃতপক্ষে, ভাইরাসের আক্রমণ থেকে শ্রমিক ও বন্দিদের রক্ষা করার জন্যই এই ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচির প্রয়োজন। শহরের মেয়র কিছুদিন আগে শ্রমিকদের বিক্ষোভ কর্মসূচির বিরোধিতা করেছেন। গত সপ্তাহে একটি শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে খুব ভিড় হওয়ায় ‘ইহুদি সম্প্রদায়’-এর বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়িয়েছেন।

মুখে বড়ো বড়ো কথা বললেও শহর কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বুনিয়াদি প্রয়োজনগুলি মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে। শ্রমিকরা যাতে নিরাপদে কাজে যেতে পারে, তার কোনো ব্যবস্থা করেনি। সাবওয়ে পরিষেবা চালু রাখায়, সেখানে ব্যাপক ভিড় হচ্ছিল। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসন রাতে সাবওয়ের ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে।

পুলিশ এবং রাজনৈতিক নেতারা ছাড়া গণমাধ্যমও প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়। পয়লা মের আগের দিন বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচার করা হয়, মে দিবসে নিউইয়র্কে বিশাল লকডাউন-বিরোধী প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হবে। টেক্সাস, মিচিগান এবং অন্যান্য প্রদেশে যেমন হয়েছে। সিটি হলে দক্ষিণপন্থীদের একটি লকডাউন বিরোধী প্রতিবাদ অবশ্য অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে লোকজন তেমন যোগ দেয়নি।

গণমাধ্যমের প্রচার এবং পুলিশের কার্যকলাপের মধ্যে দিয়ে দেখানো হচ্ছে, যে কোনো প্রতিবাদই দায়িত্বজ্ঞানহীন কার্যকলাপ। এই ধরনের বিভ্রান্তি ছড়ানোটাই আসলে মারাত্মক অপরাধ।

মিছিলের শেষে সংগঠকদের তরফে ঘোষণা করা হয়, প্রতি সপ্তাহান্তেই ওই অঞ্চলে বিভিন্ন ভাবে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হবে।     

Share Now:

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *