(গত ৪ নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিপ্লবী গণমঞ্চ (রেভলিউশনারি ইউনাইটেড ফ্রন্ট) প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে তাঁদের মতামত প্রবন্ধ আকারে প্রকাশ করেন মার্কিন নাগরিকদের জন্য। নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হয়ে গেলেও এটি অত্যন্ত জরুরি ও একই রকম প্রাসঙ্গিক মনে করে, আমরা তার ভাবানুবাদ করলাম। মার্কিন রাজনীতিকে বুঝতে দুনিয়ার যে কোনো প্রান্তের মানুষেরই এই প্রবন্ধ কাজে লাগবে।)
আমরা শুনছি, এই নির্বাচন ফ্যাসিবাদকে রুখবে এবং এই দেশের ভবিষ্যত আমাদের ভোটের ওপর নির্ভর করছে। এটা কি সত্য?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই নির্বাচনটাই নাকি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এই দেশের ভবিষ্যতের ক্ষেত্রেও তেমনটাই। অন্তত সেভাবেই এই নির্বাচনকে চিহ্নিত করা হয়েছিল।কেউ কেউ এমনও বলেছিলেন, ট্রাম্প যদি জেতেন তাহলে আমেরিকা নাৎসি জার্মানির মতো ফ্যাসিস্ট দেশে পরিণত হবে। কারও কারও মতে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেওয়ার গুরুত্ব বিশাল, এবং তা পরিস্থিতিতে বড়ো রকমের তফাত গড়ে দেবে(এক্ষেত্রে ফ্যাসিবাদের উত্থান রুখবে)।কিন্তু এটা কি আদৌ সত্যি? সত্যিই কারও ভোট তফাত গড়ে দিতে পারে? সত্যিই কি প্রতিটি ভোটের গুরুত্ব আছে?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া কঠিন নয়। ওপর থেকে, ট্রাম্প ও বিডেনকে দেখতে খুবই আলাদা লাগে। বিডেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ, এই ব্যবস্থার মধ্যে কাজ করার কয়েক দশকের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি নিজেকে একজন প্রবীণ রাষ্ট্রনায়ক, সম্ভ্রান্ত ও সৎ হিসেবে উপস্থাপন করেন।এই বিভ্রম মাঝেমধ্যেই ধাক্কা খায়, যখন তিনি মুখ ফসকে কৃষ্ণাঙ্গদের একটি একমাত্রিক সম্প্রদায় হিসেবে বিবেচনা করে তাদের মাথা ও বুকের বদলে ‘কেবল’ পায়ে গুলি করার জন্য পুলিশকে পরামর্শ দেন। কিন্তু আমাদের বারবার বোঝানো হয়েছে, হাবিজাবি কথা বলা, অভদ্র, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাশূন্য ট্রাম্পের থেকে তিনি সম্পূর্ণ আলাদা।
বিডেন ও তাঁর সঙ্গীরা আমাদের বলেছেন, তিনি ট্রাম্পের থেকে সত্যিই আলাদা। যদিও বিডেন- ট্রাম্পের মতোই- পারিবারিক পরিচয় ব্যবহার করে ব্যক্তিগত সম্পদ বৃদ্ধির জন্য ছেলেমেয়ের সঙ্গে যৌথ ভাবে নানা অনৈতিক ব্যবসায়িক চুক্তিতে যুক্ত রয়েছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ইউক্রেনে ছেলে হান্টারকে সামনে রেখে বিডেন বিভিন্ন গোপন, দুর্নীতিপূর্ণ বাণিজ্যিক চুক্তি করেছেন। কিন্তু এফবিআই(চিরকালের ‘বিশ্বাসযোগ্য’ ও ‘সৎ’ তথ্যসূত্র) বলেছেন, বিডেনকে দুর্নীতিগ্রস্থ বলে প্রচার করাটা আসলে রাশিয়ার চক্রান্ত, এবং এই প্রচারকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয়। কেউ কেউ চটপট এই বলে আমাদের নিশ্চিত করেছেন যে, ভুলত্রুটি কিছু থাকলেও, বিডেন ট্রাম্পের মতো রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও অন্যান্য এজেন্সিকে প্রতিবাদীদের বিররুদ্ধে কাজ লাগাবেন না(অন্তত ‘শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদী’দের বিরুদ্ধে তো নয়ই)।
কিন্তু এসব গল্প আমরা আগেও শুনেছি। ঠি্ক একই রকম পরিস্থিতি না হলেও, বুশের ৮ বছরের নিও কনজারভেটিভ প্রতিক্রিয়ার প্রতিষেধক হিসেবে মার্কিন জনগণের কাছে ওবামাকে বেচে দেওয়া হয়। তিনি ছিলেন সম্ভ্রান্ত ও বাকপটু সেখানে বুশ ছিলেন অভদ্র ও অশ্লীল। তিনি ছিলেন যুদ্ধের বিরুদ্ধে যেখানে বুশ ছিলেন যুদ্ধের পক্ষে। দেশের মধ্যে নজরদারি চালানোর জন্য বুশ প্রশাসন তৈরি প্যাট্রিয়ট অ্যাক্টের খোলামেলা সমালোচক ছিলেন ওবামা; ওবামা, নথিহীন অভিবাসীদের পাশে থাকবেন(যা বুশ করেননি), আরও নানা কিছু। ওবামার নানা অস্পষ্ট শ্লোগানে আমাদের বহু ‘পরিবর্তন’-এর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু আমরা প্রায় একই মাল পেয়েছিলাম। তফাত একটাই ছিল, আমরা আগের প্রেসিডেন্টের থেকে অনেক বেশি গুছিয়ে কথা বলে পারেন, এমন একজনকে পেয়েছিলাম।
আপনারা যদি তথ্যের দিকে নজর রাখেন, তাহলে স্পষ্ট বোঝা যাবে যে প্রশাসনে পরিবর্তনের চেয়ে অনেক বেশি ধারাবাহিকতা থেকেছে। মার্কিন রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের গুরুত্ব খুবই কম। দেখুন ওবামা কীভাবে বুশের পদচিহ্ন ধরে এগিয়েছিলেন:
১. ইরাক ও আফগানিস্তানে বুশ যুদ্ধ শুরু করেন। ওবামাকে সেটা ছড়িয়ে দেন। নির্বাচিত হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই আফগানিস্তানে আক্রমণ বাড়িয়ে দেন। ইরাক থেকে মার্কিন সেনা সরিয়ে আনার ভান করে দ্রোন হানা বাড়িয়ে দেন এবং ব্ল্যাকওয়াটারের মতো ভাড়াটে বাহিনীকে লেলিয়ে দেন।
২. দ্রোন হানার প্রসঙ্গে বলতে গেলে বলতে হয়, বুশ প্রশাসন এটা শুরু করলেও ওবামা এই কর্মকাণ্ডের ব্যাপক বৃদ্ধিবিকাশ ঘটান। প্রতি মঙ্গলবার ওবামা সিআইএ-র প্রধানের সঙ্গে বসে ব্যক্তিগত ভাবে ঠিক করতেন কাকে আমেরিকা আকাশ থেকে হত্যা করবে।
৩. তাদের ৮ বছরের শাসনকালে বুশ আর চেনি দেশের মধ্যে নজরদারি আর অত্যাচারের বহর বাড়িয়েছিলেন। প্রচারের সময়, যারা এটা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। নির্বাচিত হওয়ার পর, তিনি মামলা তো করেনইনি উল্টে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, তিনি তাদের এ ব্যাপারে রক্ষাকবচ দেবেন, যাতে জনগণের ওপর নজর রাখা ও অত্যাচার করার জন্য তাদের কখনও জেল খাটতে না হয়।
৪. নথিহীন অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর আগ্রাসী নীতি নিয়েছিলেন বুশ ও চেনি। সেটা পালটানোর বদলে ওবামা তার ব্যাপক বিকাশ ঘটান। তাঁর শাসন কালে তিনি ২০,০০,০০০ মানুষকে ফেরত পাঠান। তার আগে কোনো প্রেসিডেন্ট এত অভিবাসীকে ফেরত পাঠাননি।
৫. বুশ জীবাশ্ম জ্বালানি সংস্থাগুলিকে সাহায্য করেছিলেন, তারা যাতে ইরাকের তেল পায় তার চেষ্টা করেছিলেন, আমেরিকাতেও খনন কার্য বাড়িয়েছিলেন। কিন্তু তার উত্তরসূরি যা করেছেন, তিনি তার ধারেকাছেও রৌঁছতে পারেননি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ওবামার আমলেই আমেরিকার জীবাশ্ম জ্বালানির উৎপাদন সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায়, সে সময়ই আমেরিকা দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি তেল উৎপাদক দেশে পরিণত হয়।
৬. বুশ ২০০৮ সালে ব্যাঙ্কগুলিকে প্রচুর অর্থ দিয়ে বিপদ থেকে উদ্ধার করেছিলেন। কিন্তু ওবামা তাঁর শাসনকালে বারবার ব্যাঙ্গগুলিকে বিপুল টাকা দিয়ে সাহায্য করেছেন এমনকি নিজের মন্ত্রিসভার সদস্য ঠিক করতেও সিটিব্যাঙ্ক ও অন্যান্য সংস্থার সাহায্য নিয়েছেন।
এগুলো হল, কয়েকটি মাত্র উদাহরণ, যা থেকে বোঝা যায়, বিভিন্ন প্রশাসনের মধ্যে কতখানি ধারাবাহিকতা থাকে। রাজনীতিবিদরা প্রচুর অর্থ খরচ করে ও নানা ভাবে চেষ্টা করে বোঝাতে চান য়ে তারা একে অপরের থেকে কতখানি আলাদা, কিন্তু একটি প্রশাসন থেকে পরের প্রশাসনে তফাত হয় অতি সামান্যই। মিশেল ওবামা জর্জ ডব্লিউ বুশকে বলেছিলেন ‘পার্টনার ইন ক্রাইম’, সেটা বলার নানা কারণের মধ্যে হয়তো এই বাস্তবতাকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টিও ছিল। বুশের প্রতি তাঁর এই সহানুভূতির কারণটা স্পষ্ট, তাঁর স্বামীও বুশের মতোই যুদ্ধাপরাধী।
সাম্প্রতিক কালে, ট্রাম্প জর্জ ফ্লয়েডের ঘটনার প্রতিবাদে ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও অন্যান্য সংস্থাকে নিয়োগ করেন। জনগণ ন্যায্যতই তার সমালোচনা করেন। এমনকি বিডেনও সমালোচনায় অংশ নেন। যদিও চটপট তিনি জানিয়ে দেন যে তিনি কেবল ‘শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদী’দের ওপর বলপ্রয়োগেরই বিরোধিতা করছেন। প্রকৃতপক্ষে, বিডেন প্রতিবাদে যুক্ত থাকা ‘নৈরাজ্যবাদী’ ও লুঠেরাদের ওপর বলপ্রয়োগ করা ও তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার কথা বলেন, ট্রাম্পও একই কথা বলেছিলেন। এই কথাগুলো বিপুল সংখ্যাক প্রতিবাদীকে একই রঙে রাঙিয়ে দেয় এবং পথে নামা প্রতিবাদীদের ওপর দমন চালানোকে ন্যায্যতা দেয়, বিশেষত তাদের ওপর যাদের পুলিশি হংসার সামনে দাঁড়িয়ে আত্মর৭আ করতে হয়েছে। যারা এই ক্ষেত্রে বিডেনকে ট্রাম্পের থেকে ভালো বলছেন, তারা ভুলে য়াচ্ছেন বালটিমোর ও ফার্গুসনের প্রতিবাদে ওবামা যে নীতি নিয়েছিলেন, ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনে ট্রাম্প প্রায় একই নীতি নিয়ে চলেছেন। জনগণের ওপর অত্যাচার চালানোর জন্য বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছিল, এফবিআই সহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে ডাকা হয়েছিল, কিছু প্রতিবাদীকে সরকার হত্যাও করেছিল। অকুপাই আন্দোলনের সময়, ওবামার এফবিআই, স্নাইপার দিয়ে বিভিন্ন রাজ্যের মূল নেতাদের একই সঙ্গে হত্যার পরিকল্পনাও করেছিল(যদি প্রতিবাদ বাড়তে থাকতো)।
ট্রাম্পের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর নীতিগুলোর একটার কথাই ধরা যাক, সীমান্তে পরিবারকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার নীতি। তিনি বাচ্ছাদের খাঁচায় আটকে রাখেন, সীমান্তের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের খাঁচার সিমেন্টের মেঝেতে ঘুমোতে তাদের বাধ্য করেন। কিন্তু এইসব ক্যাম্পের বেশিরভাগই ওবামার সময় তৈরি হয়েছিল। আর ট্রাম্প নির্বাচিত হয়ে আসার আগে থেকেই, কেবল আমেরিকায় আসার জন্য, বাচ্চারা কারান্তরালে কংক্রিটের মেঝেতে ঘুমোচ্ছিল। এই নিষ্ঠুরতায় ট্রাম্পের ‘আবিষ্কার’ একটাই, খাঁচার মধ্যে বাচ্চারা যাতে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতে না পারে, তা নিশ্চিত করা।
এটা ঠিক যে বাস্তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে, ট্রাম্প আরও দক্ষিণপন্থী ও প্রতিক্রিয়াশীল নীতিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু দেশকে ফ্যাসিবাদী স্বৈরতন্ত্রে পরিণত করার দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এই বিষয়টা মোটেই তার কোনো ব্যক্তিগত ব্যাপার নয়। সব কিছুকে আরও আরও দক্ষিণে ঠেলে নিয়ে যাওয়ার এই গতিটা গত এক দশক ধরে দুই দলেরই প্রবণতা। ট্রাম্পের কাজগুলি সেই প্রবণতারই সাম্প্রতিকতম নিদর্শন। গত কয়েক দশকে আমরা দেখেছি, বিভিন্ন প্রশাসনের মধ্যে তফাতের তুলনায় মিল অনেক বেশি। মানুষ যাকেই ভোট দিক, ঘরে এবং বাইরে সেই একই দমনমূলক নীতি চালিয়ে যাওয়া হয়েছে, যত দিন গিয়েছে অত্যাচারের মাত্রা বেড়েছে। এই নির্বাচনে আমরা খোদ বিডেন, প্রাক্তন এফবিআই ও সিআইএ প্রধান সহ বহু রথী-মহারথীর থেকে অজস্র মেসেজ পেয়েছি যে তিনিই সেরা পছন্দ বা অন্তত ট্রাম্পের চেয়ে কম খারাপ।
এই দেশের আগের নির্বাচনগুলির ইতিহাস থেকে আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, বিডেনকে নির্বাচিত করলে কোনো সমস্যারই সমাধান হবে না। আমরা তাকে ‘আগুনে পা রাখতে’ বাধ্য করতেও পারবো না আর তাঁকে ‘ভোটারদের কাচে কৈফিয়ত দিতে’ও বাধ্য করতে পারবো না। এটা উদারনীতিবাদীদের কল্পনা ছাড়া কিছুই নয়, যা দাঁড়িয়ে রয়েছে ক্ষতিকারক ‘কম খারাপ’ তত্ত্বের ওপর। প্রকৃত পরিবর্তন নিয়ে সমাজে গেঁড়ে বসে থাকা নৈরাশ্যবাদকে কাজে লাগিয়ে এই তত্ত্ব চালাকি করে জনগণকে দিয়ে এই ব্যবস্থাকে সমর্থন করিয়ে নেয়(যেভাবেই হোক) এবং তাদের বোঝায় যে শাসক শ্রেণির তৈরি করা একটি ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে তাদের রাজনৈতিক দলগুলিকে নিজেদের উপকারে কাজে লাগানোই পরিবর্তনের একমাত্র উপায়।
কিন্তু সত্যিটা হল, ভোট-টোট দিয়ে প্রায় কোনো তফাতই হয় না। বিডেন আমাদের রক্ষা করবে না। বদলে তিনি, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা মার্কিন রাজনীতির দক্ষিণপন্থী গতিকেই এগিয়ে নিয়ে যাবেন। বদলে আমরা সংগঠিত হয়ে, ঘুরে দাঁড়িয়ে লড়াই করে এবং শেষ পর্যন্ত বিপ্লবের মাধ্যমে জনগণের স্বার্থরক্ষাকারী এক নতুন ধরনের সরকার গঠন করেই কেবল আমরা নিজেরা নিজেদের রক্ষা করতে পারি। আমাদের গভীরে ঢুকে থাকা নৈরাশ্যবাদ আমাদের বিশ্বাস করতে বলে যে এই ব্যবস্থার মধ্যেই কেবল পরিবর্তন সম্ভব, কিন্তু তা দেখতে পায় না যে ব্যবস্থাটাই কতটা নড়বড়ে।দেশটার বয়স মাত্র ২০০ বছর হয়েছে। এই গ্রহে মানুষ রয়েছে কয়েকশো হাজার বছর ধরে। বর্তমান ব্যবস্থার কোনো বিকল্প নেই, এ কথাটা কি আমাদের বিশ্বাস করতেই হবে? এটা কি নিশ্চিত নয় যে যদি আমরা একসঙ্গে কাজ করি, তাহলে আমরা এই দেশ ও দুনিয়ার জনগণের জন্য অনেক উন্নত কিছু গঠন করতে পারবো, এমন একটা রাজনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে আমাদের সব সময় কম খারাপকে বাছতে হবে না, বরং ভালো কিছুর জন্য লড়াই করতে হবে?
এটা হল নির্বাচনী রাজনীতির মায়াকে দূরে ঠেলে সামনে পড়ে থাকা দীর্ঘ কঠিন লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হওয়ার সময়। আমরা এক বিশাল অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের শুরুতে দাঁড়িয়ে রয়েছি, জলবায়ুর পরিবর্তন এই গ্রহকে ধ্বংস করে দিচ্ছে এবং আমেরিকা ও চিন এক নতুন ঠান্ডা যুদ্ধ শুরু করেছে। ট্রাম্প ও বিডেন স্পষ্ট ভাবেই বিলিওনেয়ারদের পক্ষে, ব্যাঙ্কগুলিকে অর্থ দিয়ে ও ঋণ মকুব করে বাঁচিয়ে রাখার পক্ষে, জীবাশ্ম জ্বালানি সংস্থাগুলিকে ভর্তুকি দেওয়া এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে দু’পক্ষের পরিকল্পনাই প্রায় এক এবং দুজনেই চিনের সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদী সংঘাতের ক্ষেত্রে একে অপরের থেকে বড়ো যুদ্ধবাজ হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করতে ব্যস্ত ছিলেন।
আমাদের অর্থাত জনগণকে এগিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজতে হবে। নৈরাশ্যবাদ ও কম খারাপের তত্ত্বের থেকে মুক্ত হতে হবে যাতে আমরা সত্যিই দুনিয়াটাকে পালটাতে পারি। কিন্তু সবার আগে আমাদের সংগঠিত হবে হবে।