Home খবর ‘কড়া লকডাউনের’ বিরুদ্ধে চিনে তীব্র ছাত্র বিক্ষোভ
0

‘কড়া লকডাউনের’ বিরুদ্ধে চিনে তীব্র ছাত্র বিক্ষোভ

‘কড়া লকডাউনের’ বিরুদ্ধে চিনে তীব্র ছাত্র বিক্ষোভ
0

পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: করোনা অতিমারি ঠেকানোর নামে তাদের ক্যাম্পাসে আটকে রাখার প্রতিবাদে গত সপ্তাহে চিন জুড়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। বেজিং থেকে দক্ষিণের ফুজিয়ান থেকে উত্তরের মঙ্গোলিয়া পর্যন্ত দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে এই বিক্ষোভ। হাজার হাজার ক্যাম্পাস বি৭ওভে সামিল হয়।

চিন সরকারের কড়া লকডাউন নীতি লক্ষ লক্ষ ছাত্রকে ক্যাম্পাসে আটকে দিয়েছে। বিশেষত যারা ক্যাম্পাসেই থাকেন তারা গভীর সমস্যায় পড়েছে। বেশিরভাগ পড়ুয়াকেই ফুড ডেলিভারির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে অথচ ‘নো কন্ট্যাক্ট’ নীতির জন্য খাবার পাওয়া বেশ সমস্যার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক পড়ুয়াই জানিয়েছে, গ্রন্থাগার ও অন্যান্য পরিষেবার সুযোগ নেওয়ার জন্যও আগে থেকে সময় নির্ধারণ করে রাখতে হচ্ছে।

পড়ুয়াদের ওপর এই অগণতান্ত্রিক বিধিনিষেধ জারি হলেও পড়ুয়ারা দেখছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীদের ওপর তা জারি হয়নি। তারা ইচ্ছেমতো ঢুকছেন-বেরোচ্ছেন। অনেকেই মনে করছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সরকারকে দেখাতে চান, তারা সরকারি নির্দেশিকাকে কতখানি গুরুত্ব দেন। সে জন্যই পড়ুয়াদের ওপর এমন অপ্রয়োজনীয় একপেশে কড়া লকডাউন চাপানো হয়েছে। অতিমারিকে সত্যিই গুরুত্ব দিলে সকলের ক্ষেত্রেই সমান নিয়ম হতো। ফলে প্রতিবাদী পড়ুয়ারা এই লকডাউনকে বিদ্রুপ করছেন।

এই সুযোগে বহু বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের থেকে বাড়তি টাকা উপার্জন করছে। তাদের অন্য কোথাও যাওয়ার নেই বুঝতে পেড়ে ক্যান্টিন, মুদিখানা এমনকি ক্যাম্পাসের মধ্যেকার সেলুনও দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

চিনে অতিমারি পরিস্থিতি এখন আগের চেয়ে অনেকটাই ভালো। সিনেমা হল, রেস্তোরাঁ খুলে গিয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো কড়া লকডাউন নীতি প্রয়োগ করে চলেছে। শিক্ষা দফতর গত আগস্টে যে স্বাস্থ্যবিধি প্রকাশ করেছিল, সেটাকেই অর্থহীন ভাবে মেনে চলার অজুহাত দিচ্ছে তারা। সাধারণ মানুষ ও সরকারের মধ্যে এক অনলাইন আলোচনার মাধ্যমে ওই বিধিগুলি সে সময় তৈরি করা হয়েছিল। স্কুল-কলেজ চালু করাই ছিল সেই বিধির লক্ষ্য।

মনে করা হচ্ছে, পড়ুয়াদের থেকে মুনাফা করার জন্যই বিশ্ববিদ্যালয়গুলি এই কড়া লকডাউন চালিয়ে যাচ্ছে। এর জেরে গোটা চিনের পড়ুয়াদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।

গত ২০ সেপ্টেম্বর শাংসির শিয়াং ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা ক্যাম্পাসের দরজা খুলে দেওয়ার দাবিতে মাঝরাতে ৩০ মিনিট বিক্ষোভ দেখান।

On 20 September, students in Xi'an International Studies University (西安外国语大学) in the central province of Shaanxi began a 30-minute demonstration at midnight, demanding the unlocking of the university.

Posted by In Defence of Marxism on Thursday, 24 September 2020

২১ সেপ্টেম্বর দক্ষিণপশ্চিমেন আনহুই প্রদেশের হেফেই প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তারা লকডাউন তোলার দাবি করেন পাশাপাশি লকডাউন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দুরকম নীতির বিরুদ্ধেও প্রশ্ন তোলেন। এরপর ২৩ সেপ্টেম্বর সিচুয়ান প্রদেশের চেংডুতে সিচুয়ান ইউনিভার্সিটি অফ মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশনের পড়ুয়া ও নিরাপত্তাকর্মীদের মধ্যে মারামারি বেধে যায়। এর ধারাবাহিকতায় চেংডুর বেশ কিছু ক্যাম্পাসে অশান্তি শুরু হয়ে যায়।

পরিস্থিতি আরও তীব্র আকার নিচ্ছে। বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র বিক্ষোভ শুরু হয়ে গিয়েছে। এখনও সব খবর পাওয়া যাচ্ছে। সম্ভবত, বিক্ষোভ এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে যে চিন সরকার শুরুতেই আন্দোলন দমনের পথে হাঁটতে পারেনি। বেশিরভাগ জায়গা থেকেই ছাত্ররা জানাচ্ছেন, একেক জায়গার অতিমারি পরিস্থিতি আলাদা হওয়া সত্ত্বেও সব জায়গার বিশ্ববিদ্যালগুলি কড়া লকডাউনের পথে হেঁটেছে। যার কোনো মানে নেই। তারা সমস্যাটাকে ব্যক্তির ভুলত্রুটি সংশোধনের স্তরে নামিয়ে এনেছেন।

তবে চিন জুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি যে একই নীতি নিয়ে চলছে, এটা শুধু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষগুলির বিষয় হতে পারে না। এটা নিশ্চয় সরকারি নীতি। ছাত্রদের মেজাজ থেকে সমাজের পরিস্থিতি বোঝা যায়। বর্তমান ছাত্র বিক্ষোভ থেকে বোঝা যাচ্ছে, চিনের শ্রমিক শ্রেণি ও গরিব মানুষ গভীর সংকটে রয়েছেন। তা নিশ্চয় আগামী দিনে ফেটে পড়বে। পরিস্থিতি যাতে হাতের বাইরে না চলে যায়, তা নিশ্চিত করতেই হয়তো পড়ুয়াদের আটকে রাখার কৌশল নিয়েছে চিন সরকার।

Share Now:

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *