Home খবর ঐতিহাসিক গণবিক্ষোভ কলোম্বিয়ায়, থানা ভাঙচুর, সংঘর্ষ, লাল পতাকা হাতে মূর্তি ভাঙল ছাত্ররা
0

ঐতিহাসিক গণবিক্ষোভ কলোম্বিয়ায়, থানা ভাঙচুর, সংঘর্ষ, লাল পতাকা হাতে মূর্তি ভাঙল ছাত্ররা

ঐতিহাসিক গণবিক্ষোভ কলোম্বিয়ায়, থানা ভাঙচুর, সংঘর্ষ, লাল পতাকা হাতে মূর্তি ভাঙল ছাত্ররা
0

পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: গত বছরের ২১ নভেম্বর ঐতিহাসিক গণ অভ্যুত্থান দেখেছিল কলোম্বিয়া। ১০ মাস পর আবার অগ্নিগর্ভ দেশটি। বস্তুত শহরাঞ্চলে এত বড়ো বিদ্রোহ কলোম্বিয়ায় স্মরণকালে হয়নি। জনগণের ক্ষোভের আগুনে গোটা দেশে আক্রান্ত হয়েছে ৫৩টি থানা। ধ্বংস হয়ে গেছে ৪৯টি পুলিশ ফাঁড়ি।  পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে ১৭টি। পুলিশ-জনতা সংঘর্ষে ফেটে পড়ছে রাজধানী বোগোটা সহ একের পর এক শহর।

কীভাবে শুরু হল এসব? গত ৯ সেপ্টেম্বর ভোরে বিয়ার কিনতে বেরিয়েছিলেন ৪৮ বছর বয়সি আইনজীবী ও ট্যাক্সি ড্রাইভার, দুই সন্তানের পিতা জেভিয়ার ওরদোনেজ। তিনি তখন মাতাল অবস্থায় ছিলেন। রাস্তায় থাকা দুই পুলিশের প্রশ্নের উত্তর ঠিকমতো না দেওয়ায় তাকে তারা ধরে। বিদ্যুৎ শক দেয়।তারপর ফাঁড়িতে নিয়ে গিয়ে বেদম পেটায়। মারের চোটে তার মাথায় ৯টি জায়গা ফেটে য়ায়। ভাঙে পাঁজর, গুরুতর চোট লাগে লিভারে। তিনি মারা যান। জেভিয়ারের এক বন্ধু রাস্তায় পুলিশি অত্যাচারের দৃশ্যটি ভিডিও করেন। সেই ভিডিও ছড়িয়ে যায়।

গত ২১ নভেম্বরের আন্দোলনের সময় বিভিন্ন মহল্লায় মহল্লা কমিটি তৈরি হয়েছিল। ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সেই সব জায়গা থেকে অসংখ্য মানুষ বেরিয়ে আসেন।রাজধানী বোগোটায় ছাত্রযুবদের ক্ষোভ আছড়ে পড়ে থানা, ব্যাঙ্ক ও বিভিন্ন সরকারি সম্পত্তির উপর। দিকে দিকে পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায় জনতার। গরিবি, বেকারত্ব, কৃষকদের জমি কেড়ে নেওয়া, স্বাস্থ্য পরিষেবার অভাব- যাবতীয় অন্যায়ের উত্তর অনেকদিন ধরেই খুঁজছিল জনতা।  গোটা লকডাউন জুড়ে যেন বিদ্রোহের প্রস্তুতি চলছিল। অপেক্ষা ছিল বিপ্লবী দিশার।

বোগোটার পাশাপাশি বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে দেশের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর ম্যাডেলিনেও। সেখানে কমিউনিস্ট বিপ্লবী ছাত্ররা পথে নেমে জনগণের বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেয়। শাসক শ্রেণির পুলিশের সঙ্গে লড়াইয়ের পাশাপাশি বব অ্যাভাকিয়ানপন্থী সংশোধনবাদী বামেদের সঙ্গেও লড়তে হয় তাদের। অ্যাভাকিয়ানপন্থীরা লড়াকু ছাত্রদের পথের মাঝে দাঁড়িয়ে তাদের শান্ত হত বলছিল। হিংসার বিরোধিতা করছিল। তাদের পথ থেকে সরিয়ে দেয় সংগ্রামী ছাত্রযুবরা। শহরের কেন্দ্রস্থলে পুলিশের প্রধান দফতরের দরজা ভেঙে ফেলে বিক্ষোভকারীরা। পরে পুলিশ পৌঁছে পরিস্থিতি সামলায়।

এই অবস্থায় দেশের টিভি চ্যানেলগুলিতে সংসদীয় বামপন্থী ও অন্যান্য শাসক শ্রেণির দলগুলি জনগণের হিংসার বিরোধিতা করতে শুরু করে(ক্ষোভ ন্যায্য বলে স্বীকার করে নিয়েই)। পাশাপাশি ক্ষোভে প্রলেপ দিতে পুলিশি ব্যবস্থায় সংস্কারের ভাঙা রেকর্ড বাজানো হয়। সব দায় চাপানোর চেষ্টা করা হয় যে দুই টহলদার পুলিশ জেভিয়ারকে মারধর শুরু করেছিল, তাদের ওপর।

পরদিন বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে কুন্দিনামার্কা, কালি, মানিজালেস, পেরেইরা, বারানকুইলা, কুকুতা সহ বিভিন্ন শহরে। তিনদিন ধরে গোটা দেশ অগ্নিগর্ভ হয়ে থাকে। প্রচুর পুলিশ ও সেনাকে পথে নামানো হয়। পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৩ জনের, আহত শতাধিক, গ্রেফতার হয়েছে ১০০-রও বেশি।

এসবের মধ্যেই ম্যাডেলিনের প্রাক্তন মেয়র এক টিভি সাক্ষাৎকারে মন্তব্য করেন, ওই শহরে যে দুটি ছাত্র সংগঠন ও ছাত্র জোট লাল পতাকা হাতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে, তারা মাওবাদী। ওই সংগঠনগুলির মধ্যে ফার্ক ও ইএলএনের কমিউনিস্ট বিপ্লবীরা ঢুকে পড়েছে। ওই সাক্ষাৎকারটি শেয়ার করেন কলোম্বিয়ার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট। এতে ক্ষোভে ঘৃতাহুতি হয়। ১৪ সেপ্টেম্বর ম্যাডেলিন জুড়ে মিছিল, মিটিং, প্রচার চালায় এমইএসপি ও ইউইপি নামে ওই দুই সংগঠন।তাদের বক্তব্য় ছিল, জনগণের ন্যায্য বিদ্রোহকে বেআইনি তকমা দেওয়ার চেষ্টাতেই তাদের মাওবাদী বলা হচ্ছে। শেষ অবধি শহরের একটি পার্কে থাকা একটি ভাস্কর্যকে ভেঙে ফেলে তারা। রাষ্ট্রকে সেনাবাহিনীর ২০০ বছরের সেবাকে সম্মান জানিয়ে ওই ভাস্কর্য তৈরি হয়েছিল। শাসক শ্রেণি ও বৃহৎ জমিদারদের সেবায় নিয়োজিত সেনার প্রতি জনগণের বহুদিনের ঘৃণা। ওই বাহিনী বহু জমি দখল করেছেন, বহু মানুষকে অত্যাচার করেছে, বহু মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। কিন্তু বারবার চেষ্টা করেও কড়া পাহাড়ার জন্য এর আগে মূর্তিটি ভাঙা যায়নি। কিন্তু বিদ্রোহের পরিস্থিতিতে পুলিশ অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় সেদিন পার্ক অরক্ষিত ছিল। সেই সুযোগে মূর্তি নামিয়ে ভেঙে ফেলে বিক্ষোভকারীরা। সেনার মূর্তির সঙ্গে সেখানে এক কৃষকের মূর্তিও ছিল। তার হাত থেকে জাতীয় পতাকা নামিয়ে লাল পতাকা তুলে দেওয়া হয়।

গত বছর কলোম্বিয়ায় বিদ্রোহ হলেও লাতিন আমেরিকার দেশগুলির মধ্যে গত এক বছরে বারবার নজরে এসেছে চিলি, ব্রাজিল, ইকুয়েডর, পেরু, বলিভিয়া। অন্যদিকে নজর কেড়েছে আমেরিকা, পুয়ের্তো রিকো। কিন্তু কলোম্বিয়ায় এমন ঐতিহাসিক গণ অভ্যুত্থান ঘটবে, অনেকেই ভাবতে পারেনি। সাম্প্রতিক ঘটনা থেকে স্পষ্ট, গোটা লাতিন আমেরিকাই শুকনো কাঠ হয়ে রয়েছে। একটি আগুনের ফুলকি যে কোনো সময় দাবানল তৈরি করতে পারে।

Share Now:

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *