পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: পাতাগোনিয়া অঞ্চল। চিলি ও আর্জেন্তিনা জুড়ে বিস্তৃত এই এলাকা। অরণ্য, তুষারে ঢাকা, আগ্নেয়গিরিময় এই অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে বাস করছেন মাপুচে আদিবাসীরা। কৃষি ও বনজ সম্পদের ওপর নির্ভরশীল জীবন তাদের। চিলিতে বাস করেন ১৭ লক্ষ মাপুচে। তারা চিলির মোট আদিবাসীর ৮০% এবং চিলির জনসংখ্যার ৯%। মাপুচেরা চিলির যে অঞ্চলে বাস করেন, তার নাম আরাউকানিয়া অঞ্চল। এখানে তিনটি প্রদেশ রয়েছে।
জাপান ও সুইসজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে ব্যবসা করে আসছে। তারা এলাকার প্রাকৃতিক চরিত্র বদলে নতুন ধরনের গাছ লাগিয়েছে ব্যবসার প্রয়োজনে। এছাড়া চিলির দুটি সরকারি সংস্থাও রয়েছে এই অরণ্য ব্যবসায়। এখান থেকে প্রচুর টাকার কাঠ নিয়মিত আমেরিকায় রফতানি হয়।
দীর্ঘদিন ধরেই এই অরণ্য ব্যবসার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে চলেছে মাপুচেরা। তাদের দাবি এর ফলে তাদের জীবনজীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মাপুচেদের আন্দোলন দমাতে বহু বছর আগেই চিলির সামরিক একনায়ক পিনোশে সন্ত্রাস বিরোধী আইন তৈরি করেন। পিনোশে আর নেই, কিন্তু সেই আইন এখনও রয়েছে। জীবনজীবিকার নিশ্চয়তার পাশাপাশি সায়ত্তশাসনের দাবিও তীব্র করেছে মাপুচেরা।
করোনা অতিমারির জেরে গরিব মাপুচেদের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে গত কয়েক মাসে। লকডাউন তাদের জীবনে অভিশাপের মতো নেমে এসেছে। আন্দোলনের জেরে মালেকো ও তিনটি প্রদেশে বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছেন মাপুচেদের প্রধান ধর্মগুরু। গত ১২মে থেকে তিনি শুধু তরল খেয়ে অনশন চালাচ্ছেন। তার ওজন ২০ কিলো কমে গেছে। ওই অনশনের সংহতিতে গত একমাসে আরও বেশ কয়েকজন বন্দি অনশন শুরু করেন।
এই পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহে মালেকোর রাস্তা দখল করেন মাপুচে আন্দোলনকারীরা। বন্দিমুক্তির দাবিতে সদর শহরের চারটি পুরভবর দখল করে নেনে তারা। তারা সেখানেই থাকছিলেন। তাদের হঠাতে ১ আগস্ট অতি দক্ষিণপন্থী গুন্ডারা আক্রমণ করে ভবনগুলি। পুরুষ-নারী-শিশু সকলকে বেদম প্রহার করা হয়। নিষ্ক্রিয় ছিল চিলির পুলিশ। উল্টে উচ্ছেদ হওয়া প্রায় ৫০ জন মাপুচেকে গ্রেফতার করা হয়। এর প্রতিবাদে বুধবার অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে গোটা আরাউকানিয়া অঞ্চল। বহু ট্রাক জ্বালানো হয়। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে দেওয়া হয়। আগুন ও ধোঁয়ায় ভরে যায় গোটা এলাকা।
মাপুচেদের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ, জীবনজীবিকা রক্ষা, বন্দিমুক্তির দাবিতে বহুদিন ধরেই সরব বহু দেশিবিদেশি মানবাধিকার সংগঠন। সাম্প্রতিক দক্ষিণপন্থী গুন্ডাদের আক্রমণ নিয়েও সরব হয়েছে তারা।
গত বছরের শেষার্ধ থেকেই গণ আন্দোলনে উত্তাল চিলি। লকডাউন পর্বেও বারবার আন্দোলন আছড়ে পড়েছে সান্তিয়াগোর পথে। আরাউকানিয়ার এই আগুন আরও কতদিন জ্বলে সেটাই দেখার।