স্নাইপার থেকে ডাক্তার, ছুতোর থেকে ইঞ্জিনিয়ার- নানা ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের দলে নিতে উদ্যোগ মাওবাদীদের
পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: এতদিন পার্টিকর্মীদের বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ করে তোলার ওপর জোর দিত মাওবাদীরা। এবার তার পাশাপাশি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের পেশাদার ও ‘বিশেষজ্ঞ’দের পার্টিতে যুক্ত করার জন্য ক্যাডারদের উদ্দেশ্যে বার্তা দিল সিপিআই(মাওবাদীর)-র কেন্দ্রীয় মিলিটারি কমিশন। বিজেপি বিরোধী সংগ্রামে অন্য সব দলকে একমঞ্চে আসার আহ্বান দেওয়ার পর এই বার্তায় আবারও নতুনত্ব দেখছে পুলিশ-প্রশাসন।
গত ১৯ বছর ধরে ২ থেকে ৮ ডিসেম্বর গণমুক্তি গেরিলা ফৌজ(পিএলজিএ) সপ্তাহ পালন করে আসছে মাওবাদীরা। এই বছরও তা পালিত হবে। পিএলজিএ সপ্তাহ উদ্যাপনের জন্য কেন্দ্রীয় মিলিটারি কমিশন সকল পার্টি সদস্যের উদ্দেশ্যে একটি বার্তা দিয়েছে। হিন্দিতে লেখা সেই বার্তা হাতে পেয়েছে মহারাষ্ট্র পুলিশ। তাতে ‘পার্টিকে শক্তিশালী’ করার ডাক দেওয়া হয়েছে।
যুবক-যুবতীদের পিএলজিএ-তে যুক্ত করতে বলার পাশাপাশি সেই বার্তায় বলা হয়েছে সমাজের নানা স্তরের পেশাদারদের পার্টিতে যুক্ত করতে। তারমধ্যে সামরিক বাহিনীর জন্য স্নাইপার(গোপনে দূর থেকে নিখুঁত ভাবে গুলি চালিয়ে লক্ষ্যভেদ করতে পারে যারা) যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে ‘রাজনৈতিক কমিশার, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, চিকিৎসক, যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ, ছুতোর, ইলেক্ট্রিশিয়ান, ড্রাইভার, কম্পিউটার ব্যবহারে পারদর্শী ব্যক্তি, গোলাবারুদ বিশেষজ্ঞদের’ নিয়োগের কথাও। অর্থাৎ সামরিক-রাজনৈতিক কার্যকলাপে গুণগত পরিবর্তন ঘটানোর পরিকল্পনা করছে তারা।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মাওবাদীদের বার্তায় নিয়মিত ‘নেতৃত্ব প্রশিক্ষণ কর্মসূচি’এবং ‘সামরিক নেতৃত্ব প্রশিক্ষণ কর্মসূচি’র চালানোর কথা বলা হয়েছে। সামরিক বাহিনীর কর্মীদের বুবি ট্র্যাপ তৈরি্, রিমোট চালিত বিস্ফোরণ, অস্ত্র তৈরি, স্নাইপার কৌশলে প্রশিক্ষিত করার ডাক দেওয়া হয়েছে।
সামরিক কাজকর্মের পাশাপাশি মাওবাদীরা ‘আইনি,রাজনৈতিক, সামাজিক ও মতাদর্শগত’ ক্ষেত্রেও পার্টির অস্তিত্ব ছড়িয়ে দিতে চায়। কর্মীদের উদ্দেশ্যে তারা ‘শহর, সমতল ও অরণ্যে’ বিভিন্ন বিষয়ে বিক্ষোভ-আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান রেখেছে। পাশাপাশি বলা হয়েছে, যেখানে আন্দোলনে সাড়া মিলবে, সেখানে আন্দোলনের ‘প্রগতিশীল অংশে’র মধ্যে থেকে ‘পেশাদার বিপ্লবী’দের তুলে এনে ‘নতুন সংগ্রামে’র এলাকায় পাঠানোর কথা। শহর ও সমতলে নিজেদের প্রচার ও বিক্ষোভ প্রদর্শনের মধ্যে আটকে না রেখে ‘নতুন উপাদান নিয়ে গোপনে পার্টি গঠন’ করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে ওই বার্তায়। ‘ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দু ফ্যাসিবাদী শক্তির ওপর আক্রমণ’কেই জোর দেওয়া হয়েছে দলিলে। যেখানে যেখানে পার্টির শক্তি রয়েছে, সেখানে ‘আরএসএস, বিজেপি,এবিভিপি, বিজেওয়াইএম, বজরং দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বনবাসী কল্যাণ আশ্রম’ যাতে নিজের প্রভাব বাড়াতে বা ছড়াতে না পারে, সে জন্য কর্মসূচি নিতে বলা হয়েছে কর্মীদের।
মাওবাদীদের ওই চিঠি অনুযায়ী, যে সব এলাকায় রাষ্ট্রের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে, সেখানে যাতে সরকার আরও বাহিনী নিয়োগ করতে না পারে, তার জন্য গেরিলা পদ্ধতি ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছে তারা। পাশাপাশি পুলিশ, আধাসেনা, কমান্ডোদের ওপর আক্রমণ চালানোর জন্য মাইন-যুদ্ধ এবং স্নাইপারদের ব্যবহার করার কথা ওই বার্তায় বলেছে মাওবাদীদের কেন্দ্রীয় মিলিটারি কমিশন।
সূত্র:thehitavada.com