পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: বেতন নয়। কাজের পরিবেশ এবং ক্লান্তি। সপ্তাহে অন্তত তিনবার টানা ৪২ ঘণ্টা ডিউটি করতে হয়। শিফট শেষ হওয়ার ২ ঘণ্টার মধ্যে আবার ডিউটির ডাক পড়ে। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ মেলে না। গত ১৯ নভেম্বর এক শ্রমিককে ডিউটি শেষ হওয়ার পরেই পরবর্তী ডিউটি চাপিয়ে দেওয়া হয়। তিনি কর্তৃপক্ষেকে জানান, তিনি পারবেন না কারণ খুবই ক্লান্ত। সেই অপরাধে বিনা বেতনে ১৪ দিন সাসপেন্ড করা হয় তাকে। ভেঙে যায় ধৈর্যের বাঁধ। সেই থেকে কানাডার রেল সংস্থা কানাডিয়ান ন্যাশনালের ৩,২০০ শ্রমিক ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন।
বেতন বাড়ানোর দাবি তাঁরা করছেন না। বলছেন ক্লান্তির কথা, কাজের পরিবেশের কথা। দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থা চলছে। গত ২৩ জুলাইয়ের পর তাঁদের চুক্তিও নবীকরণ হয়নি। আলোচনা চলছে। এর মধ্যেই কেন্দ্রীয় ইউনিয়ন ট্রিমস্টারের ৩,২০০ শ্রমিক ধর্মঘটের পথে হাঁটলেন। কানাডিয়ান ন্যাশনাল মূলত পণ্য পরিবহনের কাজ করে থাকে। ফলে ধর্মঘটের চাপ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশে।
গভীর সংকটে পড়েছেন কৃষকরা। শস্য বিক্রয়যোগ্য করার জন্য প্রয়োজন জ্বালানির। তার জন্য প্রোপেন আসছে না, কারণ তা ট্রেনে আসে। ফলে শস্য রফতানির জন্য নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দিতে পারছেন না। প্রতিবাদে সোমবার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ত্রুদোর কেন্দ্র মন্ট্রিৱের দফতরের সামনে ট্রাক্টর নিয়ে মিছিল করে যান তারা, শস্য ফেলে বিক্ষোভ দেখান।
অন্যদিকে বেশ কিছু খনিতে কাজ বন্ধ রয়েছে। পণ্য ইয়ে যাওয়ার উপায় নেই বলে। সব মিলিয়ে অচলাবস্থা কানাডা জুড়ে। গত দশ বছরে এত বড়ো রেল ধর্মঘট দেখেনি কানাডা।
রেল শ্রমিকদের ধর্মঘটের জন্য ব্যাহত হচ্ছে দেশের রফতানি। বন্দরে খালি অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকার জন্য নৌকাগুলিকে দৈনিক ভাড়া গুনতে হচ্ছে। কৃষকরা রেল শ্রমিকদের প্রতি সহানুভূতিশীল। তারা চান আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হোক দ্রুত। দেশের কৃষিমন্ত্রীও কানাডিয়ান ন্যাশনাল কর্তৃপক্ষের কাছে একই আবেদন রেখেছেন। তবে এখনও কোনো সমাধানসূত্র মেলেনি।
সব মিলিয়ে লাতিন আমেরিকার হাত ধরে তৈরি হওয়া গণবিক্ষোভ এবার ছড়িয়ে পড়ল উত্তর আমেরিকাতেও।
(শেষ পর্যন্ত ধর্মঘটের আটদিনের মাথায় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে খসড়া চুক্তিপত্রে ঐক্যমত হওয়ার পর কাজে ফিরেছেন শ্রমিকরা)