Home রাজনীতি মোদি প্রশাসনের এক দশক: পিপলস ম্যাগাজিনের চোখে/ ৫— ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুত্ব ফ্যাসিবাদ

মোদি প্রশাসনের এক দশক: পিপলস ম্যাগাজিনের চোখে/ ৫— ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুত্ব ফ্যাসিবাদ

মোদি প্রশাসনের এক দশক: পিপলস ম্যাগাজিনের চোখে/ ৫— ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুত্ব ফ্যাসিবাদ
0

রাজনীতিতে স্বৈরতন্ত্র, অর্থনীতিতে কর্পোরেট সংস্থাগুলির সেবা, সমাজে হিন্দুত্ববাদের আধিপত্য, সংস্কৃতিতে জাতপাত ও পিতৃতন্ত্রের আধিপত্য—এগুলোই হলো মোদি-নেতৃত্বাধীন আরএসএস-বিজেপি কেন্দ্রীয় সরকারের চরিত্র। সনাতন ধর্ম(মনুবাদ) হলো এর অস্ত্র। এদের লক্ষ্য হলো হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। এ জন্য এরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুকে সমাবেশিত করে নিজেদের ক্ষমতাকে স্থীয়িত্ব দিতে চায়। মানুষ কী খাবে, কী পরবে, কীভাবে আচরণ করবে—সবকিছু এরা ঠিক করে দিতে চায় এবং সংখ্যালঘুদের পরম্পরা ও অভ্যাসগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে। দেশের বৈচিত্র্যকে এরা ধ্বংস করছে। মসজিদ ভাঙা এবং মন্দির গড়া এদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এর মধ্য দিয়ে এরা ধারাবাহিক ভাবে ধর্ম ও জাতপাতের ভিত্তিতে জনগণের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে। ঘৃণার আগুন জ্বালায়। গণেশ চতুর্থী, বিজয়া দশমী, নবরাত্রি, রাম নবমীর মতো উৎসবের দিনগুলোয় এরা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগায়। এরা যে শুধু গরিব মানুষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী পুষ্টিকর, সস্তা গোমাংসকে নিষিদ্ধ করেছে তাই নয়, গোরক্ষা, ঘর ওয়াপসি(ধর্মান্তরকরণ) ও লাভ জিহাদের নামে সংখ্যালঘু, যুক্তিবাদী, ছাত্র, মহিলা, ‘অধিকার’ আন্দোলনের কর্মী, বিপ্লবী ও গণতান্ত্রিক মানুষজনের ওপর আক্রমণ নামিয়ে এনেছে। দেশের এখানে-সেখানে, গ্রামে-শহরে প্রতিদিন রক্ত ঝরছে।

মোদি প্রশাসনের এক দশক: পিপলস ম্যাগাজিনের চোখে/ ৪— ‘নির্বাচিত স্বৈরতন্ত্র’

বিজেপি এবং বিজেপি শাসিত রাজ্য সরকারগুলো সবসময় ‘বিকশিত ভারত’-এর কথা বলে, জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা কর্মীয় কার্যকলাপ ও হিন্দু মন্দিরে বরাদ্দ ও নষ্ট করে। ধর্মীয় প্রকল্পে বিনিয়োগ গ্রাম ও শহরের উন্নয়নে বিন্দুমাত্র অবদান রাখে না এবং জনগণের প্রকৃত অবস্থার একটুও পরিবর্তন করে না বরং এগুলো ধর্মনিরপেক্ষ, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানসম্মত চিন্তার পথে বাধা। এগুলো ভাববাদী ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দু আধ্যাত্মিকতা ও অন্ধ বিশ্বাসকে ব্যাপক ভাবে উৎসাহিত করে। ওদের ‘বিকশিত ভারত’-এর প্রয়োজন নেই। তারা চায় হিন্দু রাষ্ট্র-ভারত যা সাম্প্রদায়িকতা ও জাতপাতে বিভাজিত এবং ঘৃণার আগুনে টগবগ করে ফুটছে। এভাবেই তারা পচাগলা আধা-ঔপনিবেশিক আধা সামন্ততান্ত্রিক সমাজকে রক্ষা করে চলেছে যেখানে জনগণ খাদ্য, আশ্রয়, শিক্ষা ও ওষুধের অভাবে চূড়ান্ত দুর্দশার মধ্যে রয়েছে। এরা দেশকে সাম্রাজ্যবাদী শোষণের শিকার বানিয়ে রেখেছে। এরা প্রায়শই জনগণকে প্রতারণা করতে নিজেদের ব্যর্থতার দায়িত্ব ভগবানের ওপর চাপিয়ে দেয়। নয়া-সামন্ত প্রভু হিসেবে অনেক ‘বাবা’র আবির্ভাব হয়েছে, যারা হিন্দু রাষ্ট্রের তারকা প্রচারক। যেসব মানুষ নিজেদের সমস্যা থেকে মুক্ত হতে তাদের কাছে যায়, তাদের তারা শেখায় কী করতে হবে আর কী হবে না। ‘বাবা’রা তাদের বলে যে, মানুষের সমস্যাগুলো তাদের ভাগ্যের ফলাফল, তাদের মাথায় মুসলিম-বিরোধী হিন্দুত্বের মতাদর্শ ঢোকায় এবং এভাবে রাষ্ট্রের সেবা করে।

ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দু ফ্যাসিবাদই আজ প্রধান বিপদ

৫০০ বছরের পুরোনো বাবরি মসজিদকে মিথ্যা, প্রতিশোধমূলক সাম্প্রদায়িক হিংসা এবং হাজার হাজার মুসলিম জনগণকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে ধ্বংস করা হয়। রক্তপাতের এই অমানবিক ইতিহাসের মধ্য দিয়ে ২০০০ কোটি টাকা খরচ করে রাম মন্দির তৈরি করা হয়েছে। ওরা নির্লজ্জের মতো বলে এটা নাকি দেশের জনগণের ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ ও হিন্দু সমাজের অনুভূতির প্রতিফলন। প্রকৃতপক্ষে এটি আরএসএস, বিজেপি ও তাদের সঙ্গে জড়িত সংগঠনগুলির উগ্র জাতীয়তাবাদের ঐতিহাসিক প্রতীক। মোদি এমনই কট্টর সাম্প্রদায়িক যে তিনি ২২ জানুয়ারি মুসলিম সমাজের বিরুদ্ধে জয় অর্জন করে রাম মন্দির নির্মাণে হিন্দু সমাজের সাফল্যকে স্মরণ করে আরও একটা দীপাবলি উদযাপনের আহ্বান করেন যা কিন্তু নরকাসুর বধের সমতুল্য(হিন্দু পুরাণের এক বিশাল আকৃতির মানুষ, যে কিনা অশুভ শক্তি—তাকে এক হিন্দু দেবতা হত্যা করেন, সেই দিনটিতেই দীপাবলি উদযাপিত হয়)। জনগণের মন্দিরের প্রয়োজন নেই। তাদের প্রয়োজন সাম্রাজ্যবাদী, মুৎসুদ্দি আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদী, সামন্ততান্ত্রিক শোষণ, দমন, নিপীড়ন, বৈষম্য ও দারিদ্র্য থেকে মুক্তি। এই সত্যটাকে আড়াল করতে এবং অন্ধ বিশ্বাস ও পশ্চাদপদতার সাহায্যে জনগণকে বিপথগামী করতে তিনি গোটা দায়িত্বটাই ভগবানের ওপর চাপিয়ে দেন।

 

Share Now:

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *