পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: অগ্নিযুগের শহিদদের এ দেশে যে কতরকম ভাবে অপমান করা হয়, তার ইয়ত্তা নেই। কোথাও তাদের মূর্তি ভাঙা হয়, কোথাও বা স্মৃতিস্তম্ভ। আবার পাঠক্রম থেকেও শহিদদের বাদ দিয়ে দেওয়া হয় কিংবা ভুল ইতিহাস শেখানো হয়। এবার এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটল বিহারের মুজফ্ফরপুরে।
জেলার বিদ্যুৎ দফতর শহিদ ক্ষুদিরাম বোস ও প্রফুল্ল চাকির কাছে নোটিশ পাঠিয়েছে এক সপ্তাহের মধ্যে বিদ্যুৎ বিল মিটিয়ে দেওয়ার জন্য। নইলে তাদের বিদ্যুত সংযোগ কেটে দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়েছে। শহিদ ক্ষুদিরাম বোস মার্গে এই নোটিশ আটকানো রয়েছে।
কলকাতার অত্যাচারী চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট ডগলাস কিংসফোর্ডকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বিপ্লবী স্বাধীনতা সংগ্রামীরা। তার দিকে বোমা ছুড়েছিলেন ক্ষুদিরাম ও প্রফুল্ল চাকি। সেই অপরাধে ১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট ১৮ বছর বয়সি ক্ষুদিরামের ফাঁসি হয়, প্রফুল্ল চাকি ধরা না পড়ার জন্য নিজের বন্দুক দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এই ঘটনা সে সময় ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করেছিল।
মুজফিইফরপুরের কোম্পানি বাগে এই দুজনকে শ্রদ্ধা জানিয়ে একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়। প্রতিবছর বিভিন্ন সরকারি কর্তাদের উপস্থিতিতে সেখানে নানা অনুষ্ঠান হয়। ম্যাজিস্ট্রেট মূর্তিতে মাল্যদানও করেন। সেই মূর্তির জায়গাটির আলোর দাম এবার শহিদদের কাছেই চেয়ে পাঠিয়েছে নর্থ বিহার পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। তাতে বলা হয়েছে, ঠিক সময়ে বিল না দিলে লাইন কেটে দেওয়া হবে। তারপর বিল দিলে, বকেয়ার সঙ্গে নতুন সংযোগের টাকাও দিতে হবে।
বিদ্যুৎ দফতর বলেছে, সে সংগঠন ওই স্মৃতিস্তম্ভের দায়িত্বে আছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে বিল দিচ্ছে না। ফলে বিল বেড়ে ১ লক্ষ ৩৬ হাজার ৯৪৩ টাকা হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ দফতর জেগে উঠেই শহিদ ক্ষুদিরাম বোসকে নোটিশ ধরিয়ে দিয়েছে।
এর বিরুদ্ধে এলাকায় প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, বিদ্যুৎ দফতর যদি স্মৃতিস্তম্ভের লাইন কেটে দেয়, তাহলে তারা পথে নামবেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় মহকুমা শাসক জ্ঞানপ্রকাশ বলেছেন, যারা ভুল করেছে, তাদের শাস্তি হবে।
কিন্তু প্রশ্ন হল, বিদ্যুৎ বিল বাকি থাকলে, সেটা মেটানো কাদের দায়িত্ব, সেটা কি বিদ্যুৎ দফতর খুঁজে দেখেছিল? শহিদদের স্মৃতিস্তম্ভের দেখভাল করাটা কি সরকারের দায়িত্ব নয়?