পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: অত্যাচারী সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে মায়ানমারের জনগণের সশস্ত্র সংগ্রাম তৃতীয় বছরে পা দিল। তা ক্রমেই তীব্র আকার ধারণ করছে। চলতি্ মাসের শুরুতে মান্দালয়, সাগাইং ও মাগওয়ে অঞ্চলে তিন দিনে সামরিক জুন্টার ৪৩ জন সৈন্যের মৃত্যু হয়েছে।
এর মধ্যে সাগাইং অঞ্চলের শোয়েবো শহরে হাইওয়েতে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সামরিক বাহিনীর ১৩ জন তাতমাদেও কমান্ডারকে মেরে ফেলা হয়। আহত হয় ৬ জন। যে যোদ্ধারা এই বিস্ফোরণটি ঘটিয়েছেন, তারা এক সাক্ষাৎকারে বলেন, সেটি ছিল তাদের নিজেদের তৈরি ল্যান্ডমাইন। তারা দলে ছিলেন ১১ জন। এই হামলাটি ছিল খুবই বিপজ্জনক কারণ একটি সেনা ব্যাটেলিয়নের ছাউনির কাছেই ঘটানো হয়েছিল বিস্ফোরণ।
ওই একই অঞ্চলের আয়াদও শহরে সামরিক বাহিনীর পাঁচ জনের ওপর ড্রোন থেকে বোমা ছোড়া হয়। এতে তাদের মৃত্যু হয়। আহত হয় ১০ জন।
সাগাইং-এই তিনটি থানায় সশস্ত্র যোদ্ধাদের হামলায় ২ জন জুন্টা সেনার মৃত্যু হয় এবং বহু আহত হয়। আরও একটি ঘটনায় ৬০ জনের তামাদাও ইউনিটের ওপর সশস্ত্র জনগণ হামলা চালালে ২ জনের মৃত্যু হয় এবং বহু আহত হয়। এতে ১৮টি ল্যান্ডমাইন ব্যবহার করা হয়েছিল।
মাগওয়ে এবং মান্দালয়ের হামলাতেও জনগণ ল্যান্ডমাইন ব্যবহার করেছে।
ইতিমধ্যে সামরিক শাসনের মেয়াদ আগামী আগস্ট থেকে আরও ৬ মাস বাড়ানো হয়েছে। অথচ ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করার পর, ১ বছর বাদে নির্বাচন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। যা এখন তিন বছরের দিকে এগোচ্ছে।
অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন জেনারেল মিন আউং হ্লাইং। সরকারের প্রধান আং সান সু কি-কে আবারও গ্রেফতার করা হয়।
যদি নির্বাচন হয়ও, অনেকের ধারণা, তাকে সামরিক জুন্টা নিজেদের শাসন বৈধ করতে কাজে লাগাবে। কারণ তারা প্রধান বিরোধী সু কি-কে ৩৩ বছরের জন্য জেলে পাঠিয়েছে। গোপন ও বেআইনি পদ্ধতিতে সু-কির বিচার করা হয়েছিল।
সামরিক শাসনে মায়ানমারের জনগণ চূড়ান্ত সন্ত্রাস ও হেনস্থার শিকার হচ্ছে। গত ২ বছরে ৩০০০ জন নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে বেশির ভাগই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারী। এছাড়ায় অভ্যুত্থানের বিরোধিতা, পুনরায় নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় বসানো এবং জনগণের নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করার ১৮ হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক ভাবে আকাশ থেকে বোমাবর্ষণ চলছে। এতে শিশু এবং বৃদ্ধদেরও মৃত্যু হচ্ছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে তাতমাদাও-তে একটি স্কুলে বোমাবর্ষণ করে ১১জন ছাত্রকে হত্যা করা হয়। তারপর কাচিন আদিবাসীদের একটি সঙ্গীতানুষ্ঠানে বোমা মেরে ৫০ জনকে মেরে ফেলা হয়। আহত হয় ৭০ জন।
বহু ঘরবাড়ি ধ্বংস এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়কে দেশ থেকে তাড়ানো চলছে ব্যাপক মাত্রায়। হাজার হাজার জাতীয় সংখ্যালঘু মানুষজন সীমানা পেরিয়ে থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ, ভারতে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
নৃশংস অত্যাচার, মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন সত্ত্বেও, বৃহৎ তেল উৎপাদক সংস্থা টোটাল সহ সাম্রাজ্যবাদী কর্পোরেশনগুলি মায়ানমারের সামরিক জুন্টা সরকারকে সাহায্য করে চলেছে। আফগানিস্তান, ইউক্রেন ও পূর্ব এশিয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক দুনিয়া ব্যস্ত থাকায় মায়ানমারের পরিস্থিতি খুব কমই আলোচিত হচ্ছে। গত ৩১ জানুয়ারি দেশের চারটি অঞ্চলের ৩৭টি শহরকে উপদ্রুত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এছড়াই বেশি কয়েকটি জায়গায় তীব্র লড়াই চলছে।
বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠী, আদিবাসী ও রাজনৈতিক শক্তি সামরিক জুন্টার বিরুদ্ধে এই সশস্ত্র সংগ্রামে সামনের সারিতে্ রয়েছে।
ভারতের সঙ্গে মায়ানমারের ১৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমানা রয়েছে। সবটাই উত্তর-পূর্ব ভারতে।