Home শ্রমিক-কর্মচারী চালু হয়ে গেল নয়া শ্রম কোড, বিপদটা চিনে নিন আরও একবার

চালু হয়ে গেল নয়া শ্রম কোড, বিপদটা চিনে নিন আরও একবার

চালু হয়ে গেল নয়া শ্রম কোড, বিপদটা চিনে নিন আরও একবার
0

অদৃজা মন্ডল

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা’র নির্দেশে ভারতে ১৯৯১ সাল থেকে চালু হয় নতুন শিল্পনীতি, যার ফলে দেশি-বিদেশি বৃহৎ পুঁজিপতিদের একচেটিয়া আগ্রাসনে গুণগত তীব্রতা আসে। দেশের সংখ্যাগুরু শ্রমজীবী মানুষ তথা শ্রমিকশ্রেণি ছত্রভঙ্গ হতে হতে ক্রমশঃ আরও বেশি কোনঠাসা হয়ে পরে।

বর্তমানের চারটি শ্রমকোডের কাজ মূলত ২০০০ সালের ‘স্পেশাল ইকোনমিক জোন’(সেজ আইন) তৈরির মধ্যে দিয়েই শুরু হয় গোটা দেশ জুড়ে, এ রাজ্যে যার প্রয়োগ ঘটায় তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার। এই আইনের মধ্যে দিয়ে লাগু হয়- শ্রমিকের কাজের সময় বাড়িয়ে মজুরি কমানো ও ঠিকা শ্রমিক প্রথা, তাদের দিয়েই স্থায়ী ভাবে কাজ করানো।  যে কারণেই মূলত অবক্ষয় ঘটতে থাকে শ্রমিকের সামাজিক সুরক্ষার- দৈনন্দিন জীবনযাপনের। এই সাম্রাজ্যবাদী আইনের ফলেই সংগঠিত ক্ষেত্রগুলি ভেঙে ভেঙে বাড়তে থাকে অসংগঠিত ক্ষেত্র, বাড়তে থাকে অসংগঠিত শ্রমিকের সংখ্যাও। যা আঘাত করে সোজা গিয়ে শ্রমিকশ্রেণির যৌথ প্রয়াসের ‘শ্রম ও উৎপাদন’ সত্তার শ্রেণিচেতনায়।

এর মধ্যে ১৯৯৯ সালে বিএমএস ও আইএনটিইউসি প্রতিনিধিত্বে বিজেপির শ্রমমন্ত্রী রবীন্দ্র ভার্মার স্বাক্ষরে গঠিত হয় দ্বিতীয় জাতীয় শ্রমকমিশন। এই কমিশনকে সেই সময় বয়কট করে অন্যান্য কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলি। আজ দুই দশক পেরিয়ে সংসদে পাশ হয়েছে নয়া শ্রমআইন, যাকে বলা হচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের আনা চারটি শ্রমকোড।

১) বেতন সংক্রান্ত কোড(২০১৯)

২) শ্রম সম্পর্ক সংক্রান্ত কোড(২০২০)

৩) কাজের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যের অবস্থা জনিত কোড(২০২০)

৪) সামাজিক সুরক্ষা সংক্রান্ত কোড(২০২০)

কেন্দ্রের বিজেপি ২০১৯-২০ সালে তার বিরোধীদের পরোক্ষ সাহায্যে পুরানো ৪৪ টি শ্রমআইন বাতিল করে ৪ টি ‘শ্রমকোড’ অন্তর্ভুক্ত করে নয়া শ্রমআইনে। সোজাসাপ্টা ভাবে বলতে গেলে শ্রমিক কিংবা প্রলেতারিয়েত শ্রেণিকে আরো বহু-বিভক্ত করে- তাদের উন্নতমানের সমাজ বিকাশের অগ্রগতি চেতনা মুছে ফেলতেই সাম্রাজ্যবাদী এই আইন লাগু করা হয়েছে। এর ফলে, শ্রমিক তার যৌথ প্রয়াস ভুলে ব্যক্তিকেন্দ্রিক হতে থাকবে এবং মালিকশ্রেণি সেই সুযোগে শ্রমিকের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে, তার মুনাফার লুঠ আরো বাড়াতে পারবে ও মাঝে পোক্ত হবে কিছু ঠিকা সংস্থার আধা সামন্তীয় কায়দার শোষণ। যা সাম্রাজ্যবাদের নিয়ন্ত্রণে চলা বৃহৎ পুঁজিপতিদের হাত আরো শক্ত করে, পরোক্ষ কায়দায় সাম্রাজ্যবাদী শাসন ও শোষণকে আরো পুরু করবে এই ভারতের বুকে।

দেখে নেওয়া যাক এই চারটি কোড ঠিক কী কী বলা হচ্ছে:

১) বেতন সংক্রান্ত কোড

এই কোডের মধ্যে দিয়ে বাতিল করা হয়েছে, (ক) ১৯৩৬ সালের মজুরি দেওয়ার আইন (খ) ১৯৪৮সালের ন্যূনতম মজুরি আইন (গ) ১৯৬৫ সালের বোনাস আইন (ঘ) ১৯৭৬ সালে সমান কাজে সমান বেতন আইন। অর্থাৎ, এখনই দেখা যাচ্ছে ঔপনিবেশিক ভারত থেকে আধা ঔপনিবেশিক ভারতে দীর্ঘ দিনের শ্রমিক আন্দোলনের ফলে চাপে পড়ে সরকার যে যে আইনগুলি শ্রমিকশ্রেণির স্বার্থ রক্ষায় আনতে বাধ্য হয়েছিল, তা আবার পুনরায় বৃহৎ পুঁজিপতি- মালিকশ্রেণির অধিক মুনাফার স্বার্থেই সরকার বাতিল করেছে এই ‘কোড’ লাগু করবার মধ্যে দিয়ে।

১৯৫৭ সালে পঞ্চদশ শ্রম সম্মেলনে ডক্টর এক্রোয়েডের সুপারিশ অনুযায়ী শ্রমিকের প্রয়োজনীয় ২৭০০ ক্যালোরি ন্যূনতম খাদ্য ও পরিবার পিছু ৭২ গজ কাপড়, আলো, জ্বালানির কুড়ি শতাংশ ধরে শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারিত হয়(যদিও শ্রম ‘তত্ত্ব’ অনুসারে শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি বলে কিছু হয়না)। এই কোডে যা সরাসরি (২০ শতাংশ) কাঁচি করে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

এই কোডে বলা হয়েছে, কেন্দ্র ও রাজ্যের ‘মিনিমাম ওয়েজ’ কমিটি তৈরির কথা- যার প্রতিনিধিত্বে মূলত থাকবে মালিক-সরকার, এক-তৃতীয়াংশ স্বাধীন ব্যক্তি এবং সব শেষে সংখ্যালঘিষ্ঠ শ্রমিক (যারা মালিকের ইশারায় চলে, তা বলাই যায়)। যা থেকে শ্রমিকের অধিকার ধীরে ধীরে আরো খর্ব হতে থাকবে। যদিও, এই কোডে জাতীয় স্তরে শ্রমিকের দৈনিক বেতন ১৭৮ টাকা স্থির করা হয়েছে। রাজ্য সরকারগুলি চাইলে নিজেদের লগ্নি টানতে রাজনৈতিক ভাবে আরো যথেচ্ছ কায়দায় এই কোডকে নিখুঁত ভাবে ব্যবহার করে শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি চাইলে আরো কমাতে পারবে, তারও সুযোগ রয়েছে। এই কোডের মধ্যে দিয়ে শ্রমিকের প্রাপ্য মজুরি না দিলে, মালিকের বিরুদ্ধে শ্রমিকের ফৌজদারি মামলার অধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এমনকি এই কোডের ফলে ‘ইন্সপেক্টরের বদলে ফেসিলেটর'(মালিক নিয়ন্ত্রিত তদন্তকারী সংস্থা) সাহায্যে মালিকপক্ষ নিজেই নিজেদেরকে সুরক্ষিত করার সার্টিফিকেট দিতে পারবে, যার দ্বারা তারা প্রমাণ করবে শ্রমিক ন্যূনতম মজুরি পেয়েছে ও তারাও সমস্ত আইন যথাযথ ভাবেই পালন করছে শ্রমিক স্বার্থে’র। শুধু এটাই নয়- এই কোডের মাধ্যমে ঠিকা শ্রমিকের প্রাপ্য মূল্যের অধিকারের দায় থেকে আইনি ভাবে ঠিকা শ্রমিকসংস্থা ও প্রধান নিয়োগকর্তাকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। যার ফলে শুধু মালিক নয় তাদের দৌরাত্ম্য সমাজে শ্রমিকের উপর প্রবল ভাবে বাড়তে থাকবে( আঞ্চলিক ভাবে আধা সামন্ততান্ত্রিক কায়দার সামন্তীয় শোষণের প্রভাব বাড়বে)।

এডভাইজারি বোর্ডে শ্রমিকের সংখ্যা কমানো হয়েছে। এই কোডের মধ্যে দিয়ে, যার ফলে দেশীয় শিল্প সংস্থার মান একেবারে তলানিতে ঠেকবে। শ্রমিকের বোনাসের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে মালিকের মুনাফায় জোর দিয়ে, এই কোডে’ই।

২) শ্রম সম্পর্ক সংক্রান্ত কোড(২০২০)

(ক) ১৯২৬ দ্য ট্রেড ইউনিয়ন অ্যাক্ট (খ) ১৯৪৬ ইন্ডাস্ট্রিয়াল এমপ্লয়মেন্ট অ্যাক্ট (গ) ১৯৪৭ দ্য ডিসপিউটস অ্যাক্ট একত্রিত করে ও এই আইনের পুরনো চারটে গুরুত্বপূর্ণ ‘রুলস’ কার্যত বাতিল করেই (প্রসিডিওর, সেন্ট্রাল প্রসিডিউর, সেন্ট্রাল, স্ট্যান্ডিং অর্ডার সেন্ট্রাল রুলস) এই কোড পেশ করা হয়েছে।

এই কোড অনুসারে শ্রমিকের স্থায়ী চাকরি বলে আর কিছুই থাকবে না। সমস্ত চাকরি হবে অস্থায়ী- “নির্দিষ্ট মেয়াদি চাকরি মানেই, নিয়োগকর্তার সাথে লিখিত চুক্তির ভিত্তিতে শ্রমিকের নির্দিষ্ট মেয়াদের চাকরি হবে!” যার অর্থ, মালিক তার মুনাফার প্রয়োজন মত শ্রমিককে আইনি পদ্ধিততেই ছাঁটাই করে তার প্রাপ্য অধিকারটুকুও অমান্য করতে পারবে। যার বিরুদ্ধে বাকি শ্রমিকেরাও সংগঠিত হতে পারবে না, কোড মোতাবেক। পারবে না ট্রেড ইউনিয়নে যোগ দিতে। সুতরাং যতদিন যাবে শ্রমিকশ্রেণির ট্রেড ইউনিয়নগুলিও নিশ্চিহ্ন হতে থাকবে এবং গড়ে উঠবে মালিক শ্রেণির সক্রিয় ইউনিয়ন, শ্রমিককে যে কোন সমস্যায় যার দ্বারস্থ হতে হবে (ইতিমধ্যে যা কেরল, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ সহ বহু জায়গায় শুরু হয়েছে)। অর্থাৎ, শ্রমিকের অসহয়তার সমস্ত সুযোগ নিয়ে মালিক ও নিয়োগকর্তারা বিনা শ্রমে অত্যাধিক মজুরি কামাবে সাথে কাজের ঘনত্ব বাড়াবে আরও বাড়তি লোভে। এই কোডে ট্রেড ইউনিয়নগুলির ধর্মঘটের ন্যূনতম অধিকারগুলিও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে মালিকের সাথে আলোচনার সমস্ত নির্দেশ না মানলে ট্রেড ইউনিয়নের ডাকা ধর্মঘট কিংবা আন্দোলন বেআইনি বলে ঘোষিত হবে এবং মালিক চাইলে তাদেরকে পুলিশ ডেকে গ্রেফতার করিয়ে দিতে পারে ও সেই ট্রেড ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করার সুযোগ থাকবে সম্পূর্ণ মালিকের হাতে। এমনকি নতুন করে ট্রেড ইউনিয়ন রেজিস্ট্রেশন করতে গেলে মিনিমাম ১০০ জন সদস্য সংখ্যা থাকতে হবে। যার মানে দাঁড়ায়, এর চেয়ে কম সদস্য থাকা ট্রেড ইউনিয়নগুলির কোনো বিষয়েই কোনো আলোচনার অধিকার আর থাকবে না।

৩) কাজের নিরাপত্তা স্বাস্থ্যের অবস্থা জনিত কোড(২০২০)

১৩ টি গুরুত্বপূর্ণ আইন বাতিল করে, এই কোডটি লাগু করা হয়েছে। যার মধ্যে দিয়ে বিভিন্ন পেশার সবাইকে ও তাদের পরিবারগুলির ন্যূনতম স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও তাদের পেশাগত সুরক্ষার অধিকার সম্পূর্ণ কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এই কোডে ফলে এই সম্পূর্ণ বিষয়টি মালিক সর্বস্ব হয়ে উঠবে। মালিক যাকে যেমন খুশি হবে তেমনই সুরক্ষা দিতে পারবে। যার ফলে, বাড়বে শ্রমিকের বিরুদ্ধে শ্রমিকের আর্থ-সামাজিক ক্ষোভ। বাড়বে শ্রমজীবী মানুষের মধ্যেকার দ্বন্দ্ব। যেই দ্বন্দ্ব কাজে লাগিয়ে মালিক ও সরকার তার স্বার্থসিদ্ধিতে আপ্রাণ চেষ্টা চালাবে, যা দীর্ঘদিনের ইতিহাস দেখলে নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে।

এই কোডে অন্যতম ভয়ঙ্কর দিক হচ্ছে, ‘বেতন সংক্রান্ত কোড’ রুলকে অমান্য করে বিভিন্ন কাজের প্রয়োজন ভিত্তিক সময় চালু করবার প্রয়োজনীয়তা। যার কারণেই শ্রমিকের প্রায় সপ্তাহে সাতদিনই ১২ ঘন্টার কাজ কিংবা তার অধিকও হয়ে যাবে, মালিকের অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের স্বার্থে। এমনকি বছরে চারমাসের মধ্যে ৫০ থেকে বাড়িয়ে ১২৪ ঘন্টা ওভারটাইম এই কোড অনুসারেই করা হয়েছে । যা মালিক সম্পূর্ণ ভাবে তার সুবিধা মত কাজে লাগাতে পারবে।

৪) কাজের সুরক্ষা সংক্রান্ত কোড(২০২০)

মূলত এই কোডটি পুরনো নয়টি শ্রমআইনকে মিলিয়ে তৈরি করা হয়েছে। যার মধ্যে ‘আন-অর্গানাইজড ওয়ার্কস সিকিউরিটি অ্যাক্ট থেকে ওয়ার্কার ওয়েলফেয়ার ফান্ড অ্যাক্ট’কেও ঢোকানো হয়েছে। কিন্ত এই কোডের মধ্যে কর্মী ও শ্রমিকদের স্বার্থ সুরক্ষিত করার মতন কোন সুযোগ দেখা যায় না। এই কোডের মধ্যে দিয়ে বহু বিভক্ত পেশার শ্রমজীবী মানুষকে আরো মৃত্যু মুখে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়েছে। যে কোনো ক্ষেত্রে ১০ জনের কম কাজ করা কারখানার শ্রমিককে এই কোডে রাখা হয়নি। রাখা হয়নি গৃহ পরিচারিকাভিত্তিক শ্রমজীবী মানুষকেও।

এই কোডে শ্রমিক ও কর্মচারী কমপক্ষে টানা পাঁচ বছর চাকরি মেয়াদ শেষে গ্রাচুইটি পাওয়ার যোগ্য হতে পারবে, বলা রয়েছে। তাছাড়া, শ্রমিক স্বার্থে গ্রাচুইটির অধিকার সম্প্রসারিত করার কথা কোথাও বলা হয়নি।

এই কোড অনুসারে বলা হচ্ছে, শ্রমিক কিংবা কর্মীদের মাসিক বেতনের ৫০% যাবে প্রভিডেন্ট ফান্ডে যা তারা পাবে কাজের চুক্তি সম্পূর্ণ শেষ হলে। কাজের সময় কর্মী কিংবা শ্রমিকের শারীরিক কোনো অসুস্থতা ঘটলে কিংবা কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেও মালিকের দায় এড়ানোর জায়গা করে দেওয়া হয়েছে এই সামাজিক সুরক্ষাজনিত কোড-এর মাধ্যমেই। যার ফলে মালিক সর্বত্রই চেষ্টা করবে শ্রমিকের শেষ ঘামটুকুও শুষে নিয়ে নিজের মুনাফার আশ মেটাতে।

চারটি কোড-এর ফলে সংখ্যাগুরু শ্রমজীবী মানুষের রুজিরুটির মান আরো কমবে। তাদের হাতে কাজ আরও কম যাবে, ফলত সংসার চালানোর টাকার পরিমাণ আরও কমবে, পরিবর্তন আসবে তাদের পোশাক থেকে খাদ্যাভ্যাসে। সমাজে বাকি ক্ষুদ্র ব্যবসার বাজার আস্তে আস্তে আরও তলানিতে ঠেকবে। অথচ, উচিৎ ছিল উন্নত প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে শ্রমিকের কাজের ঘন্টা কমিয়ে সামাজিক সুরক্ষায় শ্রমিকের জীবনমানের আরো উন্নয়ন। কিন্ত অধিক মুনাফার স্বার্থে চলা উৎপাদন ব্যবস্থায় কুপোকাত সমাজ কী করে করবে শ্রমিকের জীবনমানের উন্নতিসাধন?

এই চারটি কোড, পয়লা জুলাই থেকেই দেশের ২৩ রাজ্যে লাগু হতে চলেছে। সংবাদ সূত্রে জানা যায়, যাদের মধ্যে রয়েছে ‘বিজেপি- ফ্যাসিবাদ বিরোধী সরকার’ নেতৃত্বাধীন রাজ্য পশ্চিমবঙ্গও। যদিও এ রাজ্যে প্রথমে বাম সরকার ও ২০১১ সালের পরে তৃণমূল সরকার ঘুর পথেই এই চারটি শ্রমকোডের উল্লেখিত যাবতীয় আইনের যথোপযুক্ত ব্যবহার করেছে। যে কারণেই একেক সময় একেক কারখানা বন্ধ হয়ে কিংবা অত্যাধিক শ্রমিক ছাঁটাই-এর ফলে অধিকাংশ শ্রমিক হয়েছে গ্রামমুখী-ভর করেছে পুনরায় জমির উপর, পেট চালানোর তাগিদে। যে কারণেই দানা বাঁধেনি বৃহৎ আকারে শহরে কোনো শ্রমিক আন্দোলন। গড়ে ওঠেনি তেমন ভারী মাত্রার ‘শিল্প’। উল্টে শ্রমিক-কৃষক ঐক্যবদ্ধ হয়েই স্তব্ধ করেছে শাসকশ্রেণির বৃহৎ দেশি বিদেশি পুঁজিপতির স্বার্থে করা জমি অধিগ্রহণ।

বর্তমানের নয়া উদারনীতিবাদী- বেসরকারিকরণের একচেটিয়া আগ্রাসনের মুখে, আজ শুধুমাত্র শহর কেন্দ্রিক ‘প্রাপ্য মজুরির’ কিংবা কাজের সময় কমানোর দাবিতে’ ক্ষণস্থায়ী শ্রমিক আন্দোলন নয়, এই চারটি কোড বাতিল করাতে চাই কৃষক-শ্রমিক ঐক্যের দীর্ঘস্থায়ী গণ-প্রতিরোধ। যার জন্য আগেই বুঝতে হবে ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গের মোট শ্রমিকশ্রেণীর বিকল্প উপার্জন এবং তাদের সাথে গ্রামের কৃষি-জমি সম্পর্ক ঠিক কেমন।

Share Now:

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *