বিকাশ মাহাতো
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দেশের দশটি মাওবাদী অধ্যুষিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের নিয়ে একটি মিটিং করেন। মিটিং-এর সার বক্তব্য হলো দেশ থেকে মাওবাদীদের নির্মূল করতে হবে। যে রাজ্যে যেমন তাদের উপস্থিতি সেই রাজ্যে সেই তীব্রতাতে তাদের দমন করতে হবে। এই অর্ধশতাব্দী প্রাচীন ‘সমস্যা’-র ‘সমাধান’ করতে হবে।
অপারেশন গ্রিনহান্টের মতো পৈশাচিক অভিযানের বিনিময়েও যখন মাওবাদীদের ঠেকানো গেলো না, তখন আরও হিংস্র ও বাছ-বিচারহীন অভিযানের পরিকল্পনা করা হলো যারই পোশাকি নাম “অপারেশন সমাধান’। এই অপারেশনের সরকারি সময়সীমা ২০১৭ থেকে ২০২২-এর জুন। এখন চলছে তার চূড়ান্ত পর্যায়, ‘অপারেশন প্রহার’। ‘সমাধান’-র নাম রহস্যের দিকে আর গেলাম না। সরাসরি আসল কথাতে আসি। ২৬ তারিখের মিটিং-এর পর সারা দেশের বিভিন্ন রাজ্যে পুলিশ ও গোয়েন্দা দফতর, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা, আধা সামরিক বাহিনী ও কাউন্টার ইন্সার্জেন্সি বাহিনীগুলো সেন্ট্রাল কমান্ডের অধীনে একাধিক তল্লাশি অভিযান, গ্রেফতারি ও হত্যা চালিয়েছে তার একটি তালিকা এখানে দেওয়া হলো-
সারা দেশ
তারিখ | রাজ্য | ঘটনা | |
১ | ৪ অক্টোবর ২০২১ | অন্ধ্রপ্রদেশ | ওসমানিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষক ও তেলেঙ্গনা বিদ্যার্থী সঙ্ঘমের রাজ্য সম্পাদক কোটা শ্রীনিবাস গৌড় কে হায়দ্রাবাদের এলপি নগর থানার পুলিশ ২০১৯ সালের একটি UAPA কেসের ভিত্তিতে নিজের বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে। |
২ | ১২ অক্টোবর, ২০২১ | পশ্চিমবঙ্গ | নিজের বাসভবন থেকে সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে গভীর রাতে বিপ্লবী ছাত্র সংগঠন ইউএসডিএফের প্রাক্তন সদস্য টিপু সুলতানকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। দুই দিন বেআইনি ভাবে আটক করার পর ২০১৬ সালের বেলপাহাড়ি থানার একটি UAPA কেসে তার নাম যুক্ত করে পুলিশ। |
৩ | ৫ নভেম্বর, ২০২১ | কেরালা | কোচিতে নলিবুরের একটি ট্রেনিং ক্যাম্পে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে পুলিশ দীপক, রমেশ এবং শোভা নামের তিন জন সিপিআই মাওবাদীর সদস্যকে গ্রেফতার করে। |
৪ | ৬ নভেম্বর ২০২১ | পশ্চিমবঙ্গ | লালগড় থেকে অমর সরেন, ধানিরাম সরেন, রাবণ মাণ্ডি, মঙ্গল মুর্মু এবং শম্ভু হাঁসদা নামের পাঁচ প্রাক্তন সিপিআই মাওবাদীর সদস্যকে গ্রেফতার করে লালগড় থানার পুলিশ। |
৫ | ৭ নভেম্বর, ২০২১ | তামিলনাড়ু | কুন্নুর থেকে গ্রেফতার হয় মুরুগান নামের এক সদস্য । |
৬ | ৯ নভেম্বর, ২০২১ | কেরালা-কর্নাটক সীমান্ত | গ্রেফতার করা হয় সিপিআই মাওবাদীর কাবানী দলম এলাকার সদস্য বি জি কৃষ্ণমুর্তি ও সাবিত্রীকে। |
৭ | ১২ নভেম্বর, ২০২১ | ঝাড়খণ্ড | গ্রেফতার হন সিপিআই মাওইস্ট এর পূর্বাঞ্চলীয় ব্যূরোর সচিব প্রশান্ত বোস ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শীলা মারান্ডি। |
৮ | ১৩ নভেম্বর, ২০২১ | মহারাষ্ট্র | ভারত রাষ্ট্র মহারাষ্ট্রের করচির কাছে মালেওয়ারার জঙ্গলে অভিযান চালিয়ে সিপিআই মাওবাদী পার্টির সিসি সদস্য মিলিন্দ তেলতুম্বে সহ আরও ২৬ জনকে হত্যা করে। |
৯ | ১৮ নভেম্বর, ২০২১ | অন্ধ্রপ্রদেশ | সমাজকর্মী, শহিদ পরিবার ও বন্ধুদের সংগঠনের কর্মী পদ্মা কুমারী, এবং বিপ্লবী ছাত্র সংগঠন ডিএসইউএর প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক অরুনাঙ্ক লাঠার মতোন মানুষদের বাসভবনসহ হায়দরাবাদের ১৪ টি বিভিন্ন স্থানে রেড করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। |
১০ | ২১ নভেমবর, ২০২১ | অন্ধ্রপ্রদেশ | সিপিআই মাওবাদীর তিন জন সদস্য ও একজন গ্রামবাসীকে অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনম জেলার জিকে বিধি থানার পুলিশ গ্রেফতার করে। |
১১ | ৬ ডিসেম্বর, ২০২১ | ছত্তীসগঢ়-পশ্চিমবঙ্গ | রায়পুর থানার পুলিশ ও আসানসোল দূর্গাপুর পুলিশ যৌথ ভাবে দূর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের শ্রমিক রাজু সিং (খাঁ)-কে মাওবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগের অভিযোগে দূর্গাপুর থেকে গ্রেফতার করে। |
১২ | ২৭ জানুয়ারি, ২০২২ | পশ্চিমবঙ্গ | মঙ্গল হাঁসদা ও শিবু মূর্মূকে বাঁকুড়ার বারিকুল থানার মেলেরা এলাকা থেকে পুলিশ সিপিআই মাওবাদীর নামাঙ্কিত পোস্টার মারার অভিযোগে দেশদ্রোহিতার আইনে গ্রেফতার করে। |
১৩ | ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ | পশ্চিমবঙ্গ | চুনিলাল মান্ডি নামের একজনকে ল্যান্ডমাইন্ড রাখার অভিযোগে লালগড় থানার পুলিশ গ্রেফতার করে। |
১৪ | ৭ মার্চ, ২০২২ | অসম | ৬ মার্চ অসমের চাচর জেলা থেকে সিপিআই মাওবাদীর প্রবীণ নেতা ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অরুণ কুমার ভট্টাচার্য ওরফে কাঞ্চন দা ও আকাশ ওরাং নামের আর এক সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। |
১৫ | ২৩ মার্চ, ২০২২ | পশ্চিমবঙ্গ | মুর্শিদাবাদের নওদা থানা এলাকা থেকে কৃষকদের বিপ্লবী সংগঠন শ্রমিক-কৃষক একতা মঞ্চের দুই কর্মী প্রতীক ভৌমিক (ইউএসডিএফের প্রাক্তন সদস্য) ও হাসিবুল শেখকে পুলিশ সোনাটিকুরি গ্রাম থেকে বেআইনি ভাবে থানায় নিয়ে যায় এবং একদিন পর অস্ত্র আইনে গ্রেফতারি দেখায়। |
১৬ | ২৯ মার্চ, ২০২২ | পশ্চিমবঙ্গ | জাগুলিয়া থেকে জয়িতা দাসকে (আর এস এফ ও মাতঙ্গিনী মহিলা সমিতির প্রাক্তন সদস্য) কোলকাতা পুলিশের বিশেষ টাস্ক ফোর্স গ্রেফতার করে। পুলিশের কথা অনুযায়ী গত ২৮ ডিসেম্বর ময়দান থেকে একটি প্যাকেট পাওয়া গেছিলো তাতে মাওবাদী পার্টির পোস্টার ও নথি ছিলো। এই মর্মে যে এফআইআর করা হয় তাতে কারও নাম না থাকার সত্ত্বেও সেই কেসে জয়িতা দাস এবং আশ্চর্যরকম ভাবে মুর্শিদাবাদের দুইজনেরও নাম ভরে দিয়েছে। |
এছাড়াও, বিহার, ঝাড়খণ্ড, কেরালা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে এমন কোনো দিন যায়নি যেদিন সিপিআই মাওবাদীকে সরকারি বাহিনীর মুখোমুখি হতে হয়নি।
বাংলার ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী সরকার’ গতবছরের অক্টোবর থেকে এই বছর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পরপর বেআইনি ও মিথ্যা অভিযোগে ১০ কে গ্রেফতার করার পর গত ২৩ মার্চ মুর্শিদাবাদের নওদা থানা এলাকা থেকে কৃষকদের বিপ্লবী সংগঠন শ্রমিক-কৃষক একতা মঞ্চের দুই কর্মী প্রতীক ভৌমিক (ইউএসডিএফের প্রাক্তন সদস্য, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ২০১৮ সালের ‘চলো পাল্টাই বিসিকেভি’ আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক) ও হাসিবুল শেখকে (ভূমিহীন কৃষক) পুলিশ নওদা থানার সোনাটিকুরি গ্রাম থেকে বেআইনি ভাবে থানায় নিয়ে যায়। এবং তার একদিন পর অস্ত্র আইনে তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়। ২৯ মার্চ রাতে, জাগুলিয়া থেকে জয়িতা দাসকে (আর এস এফ ও মাতঙ্গিনী মহিলা সমিতির প্রাক্তন সদস্যা) কোলকাতা পুলিশের বিশেষ টাস্ক ফোর্স গ্রেফতার করে। পুলিশের কথা অনুযায়ী গত ২৮ ডিসেম্বর ময়দান থেকে একটি প্যাকেট পাওয়া গেছিলো তাতে মাওবাদী পার্টির পোস্টার ও ডকুমেন্ট ছিলো। এই মর্মে যে এফআইআর করা হয় তাতে কারুর নাম না থাকার সত্ত্বেও সেই মামলায় পুলিশ, জয়িতা দাস এবং আশ্চর্যরকম ভাবে মুর্শিদাবাদের দুই জনের নামও ভরে দিয়েছে। ২০০৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত, রাজ্যে সিপিএম বিরোধী যে গণ-আন্দোলন গড়ে ওঠে তাতে সক্রিয় ভুমিকা রাখেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ছাত্রী জয়িতা দাস। তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর উত্তর ২৪ পরগনার কামদুনিতে গণধর্ষণ এর বিরুদ্ধে যে গণআন্দোলন গড়ে ওঠে, তাতেও অন্যতম সংগঠকের ভুমিকা পালন করেন তিনি। এর ফলস্বরুপ ২০১৩ সালে প্রথমবার গ্রেফতার হন জয়িতা দাস।
মাওবাদীদের বিরুদ্ধে ‘লো ইন্টেন্সিটি কনফ্লিক্ট- একটি মার্কিন উপহার
এই মুহূর্তে, দেশে মাওবাদী দমনে সব চেয়ে কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে যা ব্যবহার করা হচ্ছে তার পোশাকি নাম ‘লো ইন্টেন্সিটি কনফ্লিক্ট’। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দ্বারা বহুল ব্যবহৃত এই যুদ্ধ পদ্ধতি যে তার অনুগত দেশও ব্যবহার করবে তা বলাই বাহুল্য। মার্কিনিরা বিভিন্ন দেশে ক্যু করার আগে সেখানকার প্রচার মাধ্যমগুলোর মধ্যে দিয়ে দেশটির শাসকের বিরুদ্ধে কুৎসা, মিথ্যাচার ইত্যাদি করার জন্য লোক পুষত (পোষে)। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে এই পদ্ধতি আন্তঃদেশীয় সন্ত্রাসবাদীদের ও ড্রাগ মাফিয়াদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়েছে বা হয়। ভারত রাষ্ট্রের মাওবাদ দমনের অংশ হিসেবে বস্তারে আদিবাসিদের মধ্যে পুলিশ নিয়ন্ত্রিত প্রচার দল পাঠানো হয়, যাদের কাজই হলো গোন্ডি গান ও ছড়ার মাধ্যমে পুলিশ ও সরকারের প্রশংসা করা আর মাওবাদীদের নিন্দা করা। ঝাড়খণ্ডে এই একই কাজ করানো হচ্ছে পুলিশের পেটোয়া মানকি-মুন্ডা সঙ্ঘের দালালদের দিয়ে। আবার পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গলমহলে হোম গার্ডের চাকরি, দু’টাকার চাল, জঙ্গলমহল কাপের মতো সরকারি স্কিম চালু করা থেকে শুরু করে রাষ্ট্র যে সব ব্যক্তিকে লক্ষ্যবস্তু করেছে, তাদের বিরুদ্ধে শহরাঞ্চলে কিছু ওই সংগঠন ছেড়ে আসা পুরোনো কর্মীদের দিয়ে ফেসবুক হোয়াটসআপের মতো মাধ্যমে নিয়মিত এই সংগঠন সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচার পদ্ধতিকে লো ইন্টেন্সিটি কনফ্লিক্টের অংশ হিসেবেই বেছে নেওয়া হয়েছে। কোনো আন্দোলন বা সংগঠন ভাঙ্গার এই পদ্ধতি এই প্রথম না। কাশ্মীরের মণিপুরের মুক্তি যুদ্ধ হোক কিংবা নেপালের বিপ্লব দমন- সমস্ত ক্ষেত্রেই লো ইন্টেন্সিটি কনফ্লিক্ট-এর ব্যবহার হয়েছে বা হচ্ছে। ভারতরাষ্ট্রের ক্ষমতা কাঠামোর সঙ্গে যুক্ত সকল শক্তিই নানা ভাবে এই সাম্রাজ্যবাদী পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে বাধ্য। তার অঙ্গ হিসেবেই পশ্চিমবঙ্গের ‘ফ্যাসি বিরোধী শক্তি’ তৃণমূল, কেন্দ্রের ফ্যাসিস্ট বি জে পি–র সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ‘মাওবাদী দমনের’ নামে ছাত্র, সমাজকর্মী ও বিপ্লবী রাজনীতির কিছু প্রাক্তন সদস্যের নামে মিথ্যাচার করা ও পাশাপাশি তাদের গ্রেফতারির কর্মসূচি নিয়েছে। ইতিমধ্যেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক শক্তি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সামিল হয়েছে ও কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
এই মাওবাদী বিপ্লবী ধারার পক্ষে বা বিপক্ষে নানা মত আছে। তা নিয়ে বিতর্ক থাকাটাই সঙ্গত। কিন্তু একটা কথা পরিষ্কার যে, ভারতের সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে কিছু বুনিয়াদি সমস্যা না থাকলে, অর্ধ শতকেরও বেশি সময় ধরে এই ধারাটি বহমান থাকতে ও পুষ্ট হতে পারত না। কিন্তু ভারত রাষ্ট্র এই ধারাকে সামরিক ও অগণতান্ত্রিক কায়দায় দমন করতে যতটা সক্রিয়, সেই সব বুনিয়াদি সমস্যাগুলি সমাধানের ব্যাপারে একেবারেই তা নয়। তার শ্রেণিস্বার্থের জায়গা থেকেই তারা তা করতে পারছে না। তাই বারবার এই আন্দোলন দেশের এক প্রান্তে পিছু হঠলেও অন্য প্রান্তে জেগে উঠছে।
- https://www.hindustantimes.com/india-news/amit-shah-holds-meet-with-cms-sets-1-year-deadline-to-end-maoist-violence-101632668751270.html.
- https://www.airuniversity.af.edu/Portals/10/AUPress/Books/B_0024_WARE_LOW_INTENSITY_CONFLICT.pdf
- https://www.bannedthought.net/Turkey/TKP-ML/1990s/LowIntensityWarfare-PeoplesWar-1998.pdf(use tor browser) .
- https://www.jstor.org/stable/45193449
- https://www.aninews.in/news/national/general-news/bastar-police-launches-counter-propaganda-campaign-to-expose-naxals20200916001810/
- https://theprint.in/india/bastar-cho-awaaz-chhattisgarh-police-wages-poster-war-to-expose-naxals-through-memes/504001/
- https://timesofindia.indiatimes.com/city/raipur/chhattisgarh-bastar-cops-launch-propaganda-blitz-against-maoists/articleshow/78154496.cms
- https://www.google.com/search?q=police+campaign+against+maoist+in+singbhum+chaibasa+&rlz=1C1ONGR_enIN992IN992&sxsrf=APq-WBsKYGqYu1_xulF5ROleEsxikylbrA%3A1648712094496&ei=nllFYrP2HaWdseMPua2bkAU&ved=0ahUKEwizveqV6-_2AhWlTmwGHbnWBlIQ4dUDCA4&uact=5&oq=police+campaign+against+maoist+in+singbhum+chaibasa+&gs_lcp=Cgdnd3Mtd2l6EAM6BwgjELADECc6BQghEKABOgcIIRAKEKABOgQIIRAVOgYIIRAKEBVKBAhBGAFKBAhGGABQjwlY-zdgoT9oAXAAeACAAYsCiAGWHZIBBjAuOC4xMJgBAKABAcgBAcABAQ&sclient=gws-wiz
- http://www.ipcs.org/ipcs_books_selreviews.php?recNo=206
https://journals.lib.unb.ca/index.php/JCS/article/download/14552/15621/0