Home কৃষি কৃষি আইনের বিরুদ্ধে ফের প্রতিবাদ তীব্র করছেন হরিয়ানার কৃষকরা

কৃষি আইনের বিরুদ্ধে ফের প্রতিবাদ তীব্র করছেন হরিয়ানার কৃষকরা

কৃষি আইনের বিরুদ্ধে ফের প্রতিবাদ তীব্র করছেন হরিয়ানার কৃষকরা
0

পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: দিল্লি, টিকরি ও কুণ্ডলি সীমান্ত সহ হরিয়ানার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারী কৃষকদের সংখ্যা কোভিড মহামারির কারণে কিছু দিন কম ছিল। তবে কৃষক নেতারা আগেই জানিয়েছিলেন যে কোভিডের সংক্রমণ কম হতে শুরু করলেই আন্দোলন তীব্রতর করবেন। আন্দোলনের ছয় মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার তাদের দাবি অগ্রাহ্য করায় বিক্ষোভকারী কৃষকদের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনার সৃষ্টি হচ্ছে।

রাজ্যে করোনা সংক্রমণ কম হতেই কৃষকদের আন্দোলন আবার শুরু হয়ে গেছে। কমপক্ষে এমন তিনটি ঘটনা ঘটেছে যেখানে কৃষকদের আন্দোলনকে বিজেপি এবং জননায়ক জনতা পার্টির(জেজেপি) নেতা ও বিধায়করা সরাসরি এই আন্দোলন থামানোর চেষ্টা করেছিল।

গত মাসে হরিয়ানার হিসার শহরে একটি কোভিড কেয়ার সেন্টার উদ্বোধন কর্মসূচিতে পৌঁছতে মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টরকে বাধা দেন বিক্ষোভকারী কৃষকরা। এই বছরে জানুয়ারিতেও কারনাল শহরে মুখ্যমন্ত্রী খট্টরকে কৃষকদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়, সেখানে কৃষকরা তার হেলিকপ্টার নামতে বাধা দেয়। তবে এবারে হিসার শহরে কোভিড সেন্টারের সামনে যেতে বাধা দিয়েছিল প্রশাসন, তা সত্ত্বেও কিছু বিক্ষোভকারী কোভিড সেন্টারের সামনে গেলে পুলিশ খট্টরকে কর্ডন করে নিয়ে বেরিয়ে যায়।

বিগত ছয় মাস বা তারও বেশি সময় ধরে, কৃষকরা বিজেপি এবং জেজেপি জোট সরকারের বিধায়কদের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ করছেন। মাস দুয়েক আগে বিমানবন্দর থেকে বাড়ি ফেরার পথে জেজেপি নেতা ও উপ-মুখ্যমন্ত্রী দুষ্মন্ত চৌতালাকে বাধা দেয় কৃষকরা। অবশেষে চৌতালাকে হেলিকপ্টার করে তার বাড়ির সামনে যেতে হয়েছিল।

বিগত কিছুদিন কৃষকরা এভাবেই বিজেপি ও জেজেপির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রথমে তারা  ছারখি দাদ্রিতে কুস্তিগীর ও বিজেপি বিধায়ক ববিতা ফোগাটকে কালো পতাকা দেখায় ও ঘিরে ফেলে। এরপর কিছুদিন আগে কৃষকরা তোহানার জেজেপি বিধায়ক দেবেন্দর বাবলির গাড়ি ঘিরে ফেলে তার নিজের এলাকাতেই।

জেজেপি বিধায়ক বাবলি বিক্ষোভকারী কৃষকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন এবং কৃষকদের মুখোমুখি হতে নিজের গাড়ি থেকে নেমে এসেছিলেন। তার দাবি কৃষকরা তার পরিবারের সদস্যদের নির্যাতন করে এবং হামলা করে। তিনি বলেন বিক্ষোভকারী কৃষকরা তার গাড়ির কাচ ভেঙে দেয় যার ফলে তার সহকর্মী আহত হয়। পরে তার অভিযোগের ভিত্তিতে কৃষকদের বিরুদ্ধে একটি এফআইআরও নথিভুক্ত করা হয়।

বাবলি কৃষকদের ব্যাপারে তাৎক্ষনিক সমাধানের জন্য খট্টর ও চৌতালার কাছে আবেদন করেছিল। বাবলি এদিনের ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক উল্লেখ করে বলেন যে রাজ্যের পরিস্থতি আজ এমন জায়গায় এসে পৌঁছেছে যেখানে “কয়েক লক্ষ মানুষের ভোটে জয়ী জনপ্রতিনিধিকে আক্রান্ত হতে হচ্ছে”।

 

এই ঘটনার পরে, হরিয়ানার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল বিজ প্রতিবাদী কৃষকদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন যে, সহিংসতা সহ্য করা হবে না। বাবলি পর্বের পরে তার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিজ বলেন, কৃষকদের প্রতিবাদ করার, কালো পতাকা দেখানোর অধিকার ছিল কিন্তু তা ২০০ মিটার দূরত্ব থেকে।

বিজ বলেন যে কারোরই অন্যের কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার কোন অধিকার নেই। তেমনই কোনো রাজনৈতিক নেতাকে তার নিজের বাড়ি ঢুকতে না দেওয়া বা হাসপাতালে রোগী দেখতে যাওয়াতে বাধা দেওয়ারও কারও অধিকার নেই।

তিনি বলেন বাবলির ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের নেতা গুরনাম সিং চারুনি বলেন যে বিজেপি ও জেজেপি নেতারা যেখানেই যাবেন বিক্ষোভকারীরা তাদের পিছু নেবে। তিনি আরও বলেন যে কেন্দ্র তিনটি কৃষি আইন বাতিল না করায় বিক্ষোভকারীদের ধৈর্য হারিয়েছে।

চারুনি বলেন, বিক্ষোভগুলি তীব্রতা হারায়নি, শুধু রাজনৈতিক নেতারা কিছু সময়ের জন্য জনসমাবেশ আয়োজন বন্ধ রাখার ফলে দৃশ্যমান হয়নি। তবে তিনি বলছেন হরিয়ানার জোট সরকার এখন “অসামাজিক ব্যক্তিদের ব্যাবহার করে অপকর্ম করছে এবং আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে”।

অল ইন্ডিয়া কিষাণ ইউনিয়নের দর্শন পাল বলেন যে প্রতিবাদের স্থানে কৃষকদের কম উপস্থিতির কারণ, কৃষক নেতারা কোভিড-১৯ মহামারির কারণে কৃষকদের জড়ো হওয়ার আহ্বান জানায়নি। তিনি বলেন কৃষকদের উৎসাহ এখনও অক্ষুণ্ণ এবং যদি তাদের জড়ো হওয়ার আহ্বান জানানো হয়, তবে লক্ষ লক্ষ কৃষক দিল্লির সীমান্তে জড়ো হবেন।

ঘটনাচক্রে, কোভিড-১৯ সংক্রমণ বাড়ার সময় হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্ঈ খত্তর গত মাসে প্রতিবাদকারীদের কাছে তাদের আন্দোলন স্থগিত রাখার আবেদন করেছিলেন। তিনি অভিযোগ করেছিলেন যে, বিক্ষোভগুলির ফলে বেশ কয়েকটি গ্রাম করোনাভাইরাস হটস্পটে পরিণত হয়েছিল।

যদিও এই আবেদনের আগেই অনেক গ্রামের কৃষক করোনা সংক্রমণ বাড়ার ফলে তাদের কর্মসূচি স্থগিত রেখেছিল। এবং গ্রামের নিকটবর্তী রাজ্য মহাসড়কের বিক্ষোভও সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছিল।

Share Now:

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *