Home রাজনীতি ফ্যাসিবাদকে ভোটে হারানো যায় না, প্রমাণ করছে সিবিআই

ফ্যাসিবাদকে ভোটে হারানো যায় না, প্রমাণ করছে সিবিআই

ফ্যাসিবাদকে ভোটে হারানো যায় না, প্রমাণ করছে সিবিআই
0

অর্জুন পাল

নিম্ন আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে যাওয়া খুবই সাধারণ বিষয়। কিন্তু সোমবার চার নেতা-মন্ত্রী নিম্ন আদালতে জামিন পেয়ে যাওয়ার পর যে কায়দায় বিবাদী পক্ষকে সুযোগ না দিয়ে সন্ধ্যা পেরনোর পর হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে ভার্চুয়ালি যোগাযোগ করে সেই রায়ে স্থগিতাদেশ জারি করানো হল, তার মধ্যে চক্রান্তের চিহ্ন স্পষ্ট। অতিমারি ও লকডাউনের মধ্যে পাঁচ বছরের পুরনো মামলা নিয়ে সিবিআই-এর এই আকস্মিক তৎপরতা প্রমাণ করে, বিজেপি কিছুতেই সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে বাংলার মানুষের রায়কে মেনে নিতে প্রস্তুত নয়। নির্বাচনের পর থেকে জনগণের চোখের আড়ালে চলে যাওয়া অমিত শাহ, আসলে ঘুর পথে বাংলা দখলের নীল নকশা তৈরিতেই ব্যস্ত। তথাকথিত গণতন্ত্রের ওপর যে আরএসএস-এর কোনো ভরসা নেই, সেই সত্য নগ্ন ভাবে সামনে চলে এসেছে।

আরও পড়ুন: অতিমারির মধ্যে মন্ত্রীদের গ্রেফতারি প্রমাণ করল জনগণের স্বার্থ নিয়ে ফ্যাসিস্টদের মাথাব্যথা নেই

আশ্চর্য এই নারদ মামলা। যে মামলায় ভিডিও ছাড়া কোনো প্রমাণ নেই, সেই মামলার তদন্ত করে চার্জশিট দিতে সিবিআই-এর পাঁচ বছর লাগল! সকলেই বুঝতে পারছে, তৃণমূলের দল ভাঙানো এবং/অথবা তাদের সঙ্গে দর কষাকষি করার জন্যই এতদিন ধরে বিজেপির নির্দেশে তদন্ত ঝুলিয়ে রেখেছে সিবিআই। ন্যূনতম গণতান্ত্রিক বোধ বা চোখের চামড়া যে ফ্যাসিবাদের থাকে না, শুভেন্দু-মুকুলকে গ্রেফতার না করাই তার প্রমাণ। অথচ প্রতিটি মানুষ বোঝে, যারা গ্রেফতার হয়েছেন, তারা যদি অপরাধী হন, তাহলে শুভেন্দু-মুকুলও অপরাধী। বিচারপতিরাও বোঝেন। অথচ, ‘লোকসভার স্পিকারের সম্মতি’ মার্কা ফালতু টেকনিক্যাল বিষয়ের ধুয়ো তুলে আদালত এক্ষেত্রে বিজেপির কূটকৌশলের সঙ্গী হয়ে রয়েছে। আদালতকে যারা নিরপেক্ষ মনে করেন, তারা যে আর কবে সত্যিটা বুঝবেন! শুভেন্দু-মুকুলদের সম্পর্কে প্রশ্ন না তোলার মধ্যে দিয়ে আদালত আসলে, তাদের দলবদল করে গ্রেফতারি এড়ানোর অনৈতিক কৌশলকে মান্যতা দিয়েছে। ন্যায়-অন্যায়ের প্রশ্ন বা বিচারের বাণীর এক্ষেত্রে কোনো গুরুত্বই নেই।

সোমবারের গ্রেফতারি নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই সরগরম হয়ে উঠেছে রাজ্য রাজনীতি। অতিমারি পরিস্থিতিতে, চার্জশিট জমা দেওয়ার দিনে, পাঁচ বছরের পুরনো মামলায় হঠাৎ গ্রেফতারির সমালোচনা করেছে কংগ্রেস ও সিপিআইএম। আপাত দৃষ্টিতে এই ইস্যুতে দুটি নতুন বন্ধু পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে সিপিএমের রাজ্য কমিটি গ্রেফতারির বিরোধিতা করে এবং বিজেপির সমালোচনা করে বিবৃতি দিলেও, তাদের রাজ্যসভার সাংসদ তথা আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য গ্রেফতারির পক্ষে দাঁড়িয়েছেন এবং ‘আইন আইনের পথে চলবে’ মার্কা শয়তানি যুক্তির অবতারণা করেছেন। অতিমারি-লকডাউনের সময় আদ্যন্ত রাজনৈতিক একটি গ্রেফতারি, যা সদিচ্ছা থাকলে বহু আগেই করা যেত, তার প্রতিক্রিয়ায় কীভাবে একটি তথাকথিত কমিউনিস্ট পার্টির সাংসদ অরাজনৈতিক মতামত দিতে পারেন এবং রাজ্যপালের ন্যক্কারজনক ভূমিকার সমালোচনা না করে থাকতে পারেন, তা কোনো সুস্থ বুদ্ধির মানুষেরই মাথায় ঢোকার কথা নয়। একটু খতিয়ে ভাবলেই বোঝা যাবে, আসলে এই দুরকম মতামত সিপিএমের কৌশল ছাড়া কিছু নয়। ২০১৯ ও ২০২১-এর নির্বাচনে এই দলটি কৌশলে বিজেপিকে সাহায্য করেছে। সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে রাজ্যের মানুষের বিজেপি-বিরোধী মুডের পরিচয় পেয়ে এবং সমাজের নানা স্তর থেকে ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হয়ে, তারা ফ্যাসিবাদ বিরোধিতার একটি মুখোশ পড়তে বাধ্য হয়েছে মাত্র। সেই মুখোশের সঙ্গে ভারসাম্য রাখতে, তারা বিকাশবাবুকে দিয়ে অন্য কথা বলিয়ে দিয়েছে। যা আসলে ফ্যাসিবাদের হাতকেই শক্ত করেছে। দীর্ঘদিন রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকার মধ্যে দিয়ে, নিজেদের দলীয় কর্মীদের ফ্যাসিবাদ বিরোধী চেতনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা তারা হারিয়েছেন। এই দলটির যাবতীয় ঘৃণ্য কৌশলের দিকে সতর্ক নজর রাখা প্রয়োজন।

এই অবস্থায় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তীব্র গণ আন্দোলন সময়ের দাবি। কিন্তু ফ্যাসিবাদ বিরোধী জনগণের একাংশ ভয় পাচ্ছেন, সেক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলার অবনতির ধুয়ো তুলে বিজেপি এ রাজ্যে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করতে পারে। নিজেরা না করে এ কাজে তারা আদালতকে ব্যবহার করতে পারে। গত সাত বছরে আরএসএস-বিজেপি দেশের বিচারব্যবস্থার ওপর অভূতপূর্ব নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেছে। এই পরিস্থিতির ভয় পাচ্ছে তৃণমূল, কংগ্রেস, সিপিএমের মতো দলগুলি। সোমবার নিজাম প্যালেসে তৃণমূল কর্মীরা কিছু সময় জঙ্গি বিক্ষোভ দেখাতেই তাদের নেতারা নিজেদের শ্রেণি চরিত্র অনুযায়ী, তা থামাতে ব্যগ্র হয়ে পড়েন। আইনের ওপর ভরসা রাখার কথা বলতে থাকেন। কিন্তু মনে রাখা দরকার পৃথিবীর ইতিহাস অন্য শিক্ষা দেয়। যুগে যুগে জনগণের জঙ্গি আন্দোলনই বারবার শাসকদের পিছু হঠতে বাধ্য করেছে। জরুরি অবস্থার দিনগুলি এবং তারপর কংগ্রেসের পরিণতির কথা বিজেপি নেতাদেরও স্মরণে আছে। এছাড়া সাম্প্রতিক কালে ভারতে হয়েছে এনআরসি-সিএএ বিরোধী গণ আন্দোলন, যার জেরে দেশজোড়া এনআরসির পরিকল্পনা আপাতত ঠান্ডা ঘরে পাঠাতে বাধ্য হয়েছে মোদি-শা। তৈরি করতে পারেনি নাগরিকত্ব আইনের বিধি। এছাড়া চলমান কৃষক আন্দোলন তো রয়েছেই। দিল্লি সীমান্তে লক্ষ লক্ষ কৃষকের অবস্থানের ধাক্কায় বিজেপি ল্যাজ গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। কৃষি আইন কার্যত স্থগিত হয়ে রয়েছে।

এ সময়টাকে আঁকড়ে ধরতেই হবে। আরএসএস-বিজেপির ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজ্যের মানুষের মধ্যে যে ঘৃণার জন্ম হয়েছে, তাকে কাজে লাগিয়ে গণ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে ফ্যাসিবাদকে চিরতরে উৎখাত করার সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ভোটের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদকে হারানোর দিবাস্বপ্ন ত্যাগ করতে হবে।

Share Now:
tags:

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *