পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: পশ্চিম উত্তর প্রদেশের সামাজিক ভেদাভেদ ও কৃষক সমস্যার জন্য বিজেপিকে দায়ী করছেন গাজিপুর সীমান্তে আন্দোলনরত জাঠরা। ৩১ জানুয়ারি, গাজিপুর সিমান্তের বিক্ষোভকারী জাটরা জানান যে তারা আগামী বিধানসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টিকে ভোট না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের দাবি যে গেরুয়া শিবিরই পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে জাট ও মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছিল।কৃষকদের সমস্যাকে বাড়িয়ে, তাদের উৎপাদনের সঠিক মূল্য না দিয়ে, বিদ্যুৎ ও সারের দাম বাড়িয়ে দিয়ে তাদের সমস্যার মধ্যে ফেলেছে বিজেপি।
বিজেপি নেতানেত্রী ও গণমাধ্যমের বিভিন্ন অংশ আন্দোলনরত কৃষকদের ‘দেশবিরোধী’, ‘খালিস্তানি’ এবং ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলে অভিহিত করছেন। তবে আন্দোলনরত কৃষক ও আন্দোলনের সমর্থকরা মনে করেন যারা ক্ষমতায় বসে আছেন তাদের থেকে আন্দোলনরত কৃষকরা বেশি দেশপ্রেমের পরিচয় দিচ্ছেন।
২৪ বছর বয়েসি মোরাদাবাদের কৃষক প্রিন্স জানান যে “২০১৭ সালে বিধানসভা নির্বাচনে এখানকার পঁচানব্বই শতাংশ মানুষ বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন, এখন তারা সবাই হতাশ ও মনে করছেন বিজেপির রাজত্ব একটি প্রতারণার রাজত্ব, তারা আর বিজেপিকে চাইছেন না”।
গাজিপুর সীমান্তে আন্দোলনরত কৃষক উপেন্দ্র বলেন “ভারতীয় জনতা পার্টির গল্প এবারে শেষ, সব কিছুর একটা শেষ আছে আর এটাই বিজেপির শেষ।“
মুজফফারনগরের ভাইসি গ্রামের আখ চাষি প্রমোদ আহলাওয়াত জানান “ আদিত্যনাথ সরকার ভারতের আখ চাষের অঞ্চলের বিকাশ থামিয়ে দিয়েছে। চার বছরে কৃষকদের গড় আয় বাড়েনি। তিনি আরো বলেন “ কৃষকদের আয় না বাড়লেও কীটনাশক ও সারের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, এনপিকে সারের ওজন ৫০ থেকে ৪৫ হয়েছে। বিজেপিকে ভোট দেওয়া আমাদের প্রজন্মের সবচেয়ে বড় ভুল”।
পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের আখ চাষিরা ১৯৬৬-র আখ নিয়ন্ত্রণ নির্দেশের প্রয়োগ না হওয়ার জন্য বিজেপিকে দায়ী করছেন। এই আইন অনুযায়ী চিনি কলগুলি ১৪ দিনের মধ্যে কৃষকদের টাকা দেওয়ার ফরমান দেয়। তবে এক আখ চাষির দাবি যে তারা প্রায় এক বছর ধরে কোন টাকাই পাচ্ছেন না চিনি কলগুলির থেকে। তিনি আরও জানান যে “মালাকপুর মিল তাদের শেষ টাকা দিয়েছে ৪ মার্চ ২০২০ এবং যোগী আদিত্যনাথ সরকার গত তিন বছরে আখের দামও বাড়ায়নি”।
গাজিপুর সীমান্তে বিক্ষোভকারী জাঠরা বলেন যে তারা বিজেপির ‘বিভাজন এবং শাসন’- এর রাজনীতি দেখেছেন। ২০১৩ সালের মুজাফফারনগরে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, যার মাধ্যমে ৪২ জন মুসলমান ও ২০ জন হিন্দু সহ ৬২ জন নিহত হয়েছিলেন, বিক্ষোভকারীরা এই দাঙ্গাকে নির্বাচনী লাভের জন্য বিজেপির একটি খেলা হিসেবে মনে করেন। তারা মনে করেন বিজেপি উত্তরপ্রদেশে জিতেছেই এই দাঙ্গা ও হিন্দু মুসলিম বিভেদ সৃষ্টির কারনে।
বাঘপতের বাসিন্দা উপেন্দ্র স্বীকার করে বলেন যে “বিজেপির দ্বারা জাঠরা বিভ্রান্ত হয়েছিল। তবে এখন জাঠ ও মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ মিটে গেছে। এমনকি দলিতরাও কৃষকদের সাথে আছে। তাদের নেতা চন্দ্রশেখর আজাদ আমাদের সমর্থন করেছেন”। তিনি আরো বলেন যে “নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন যেমন মুসলিমদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়ছিল, তেমনই নয়া কৃষি আইনও কৃষকদের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে”।
আমরোহার কৃষক সুরভির সিং বলছেন, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের সাধারণ অর্থনৈতিক স্বার্থের কারণেই হিন্দু মুসলিমকে ঐক্যবদ্ধ করেছে এই আন্দোলন। তাই তারা সব সময় সাংবাদিকদের বলছেন যে তারা হিন্দু বা মুসলিম কৃষক নন তারা শুধু কৃষক।
মুরাদাবাদের দুই যুবক ভানশ ও শিখর উত্তরপ্রদেশের সাম্প্রদায়িক মনোভাব বৃদ্ধির জন্য ‘অশিক্ষিত’ প্রবীণদের দায়ী করছেন। শিখর বলেন “২৬ জানুয়ারি আমরা যখন দিল্লি প্রবেশ করি তখন মুসলিম বাসিন্দারা আমাদের ফুল ও ফল দিয়ে স্বাগত জানিয়েছিলেন”। তিনি আরো বলেন “পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে হিন্দু-মুসলিম বিভেদ বিজেপির অবদান। আমরা আমাদের প্রবীণদের মতো বিপথগামী হবো না। আমরা শিক্ষিত মানুষ, কোন দাঙ্গাবাজ নয় যা এই সরকার আর সংবাদমাধ্যম আমাদের বানাতে চায়। আমরা একবার বিজেপির পক্ষে ভোট দিয়ে ভুল করেছি, এবার এই ভুল শোধরানোর পালা”।
এই সকল আন্দোলনকারী যারা একসময় বিজেপিকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনেছিলেন, আজ তারা বিজেপিকে হারাতে জোরদার আন্দোলনের অংশ হয়ে উঠেছেন।
সৌজন্য: নিউজলন্ড্রি