নিজস্ব সংবাদদাতা: আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের উত্তাপ বাড়তেই ফ্যাসিবাদ বিরোধী একটি যৌথ মঞ্চ গড়ে তোলার উদ্যোগ শুরু হয়েছে শহরে। আগামী ৪ জানুয়ারি ভারতসভা হলে এ বিষয়ে একটি কনভেনশনও রয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে এই মর্মে বিভিন্ন গণ আন্দোলনকর্মী ও বুদ্ধিজীবীদের সাক্ষরিত একটি বিবৃতি ছড়িয়ে পড়েছে সোশাল মিডিয়ায়। এই বিবৃতির মূল আহ্বান ‘নো ভোট টু বিজেপি’।
আরও পড়ুন: শুধু শাসক দল নয়, নির্বাচনে বিজেপিকে ঠেকাতে জোট বাঁধছেন গণ আন্দোলনকর্মী ও বুদ্ধিজীবীরাও
এই বিবৃতি ছড়িয়ে পড়ার দু-একদিন পরই এনআরসি-এনপিআর প্রতিরোধ মঞ্চের তরফ থেকে আরও একটি ফ্যাসিবিরোধী যৌথ মঞ্চের উদ্যোগ সামনে আসে। বিজেপি বিরোধিতার প্রশ্নে দুটি বিবৃতির মধ্যে কোনো তফাত না থাকলেও, প্রতিরোধ মঞ্চের বক্তব্য ছিল, বিজেপি বিরোধী যে উদ্যোগ গড়ে উঠবে তাতে নির্বাচনে কাউকে ভোট দেওয়া বা ভোট বয়কটের কথা বলা যাবে না। অর্থাৎ নির্বাচনের বিষয়টি উহ্য রেখে কেবল বিজেপিকে প্রতিরোধের প্রশ্নেই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ফ্যাসিবিরোধী মঞ্চের মধ্যেকার কোনো সংগঠন নির্বাচন প্রশ্নে তাদের অবস্থান তাদের নিজেদের সংগঠন থেকে বলতেই পারে।
অন্যদিকে আগামী ১ জানুয়ারি ভিমা কোরেগাঁও মামলায় গ্রেফতার হওয়া কবি, বুদ্ধিজীবী, গণ আন্দোলনকর্মীদের মুক্তির দাবিতে গড়ে্ ওঠা ‘রিলিজ দ্য পোয়েট’-এর উদ্যোগে ভিমা কোরেগাঁও দিবসে কলেজ স্ট্রিটের বই-চিত্রে একটি আলোচনা সভার আহ্বান জানানো হয়েছে। সেখানেও নির্বাচনের প্রশ্নকে বাদ দিয়ে একটি ফ্যাসিবাদ বিরোধী মঞ্চ গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে প্রথম যে উদ্যোগ(৪ তারিখের সভা), তার কয়েকজন আহ্বায়কের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছিলাম। নির্বাচনের প্রশ্নকে উহ্য রাখলে যদি একটিই বৃহত্তর ফ্যাসিবিরোধী গঠন করা সম্ভব হয়, তাহলে শুধু প্রতিরোধের প্রশ্নকে সামনে রেখে মঞ্চ গড়ায় কোনো সমস্যা আছে কিনা, তা জানাই ছিল আমাদের লক্ষ্য। এ প্রসঙ্গে অন্যতম আহ্বায়ক শর্মিষ্ঠা চৌধুরী আমাদের বলেন, কেবল ভোট দিয়ে ফ্যাসিবাদকে রোখা যায় বা ফ্যাসিবাদকে রুখতে ভোটের ভূমিকা প্রধান- এমন তিনি মনে করেন না। তবে অন্যসব কিছুর সঙ্গে ভোটের ময়দানেও ফ্যাসিবাদকে হারানো প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। প্রধান না হলেও, নির্বাচন ফ্যাসিবিরোধী লড়াইয়ের অন্যতম মাধ্যম। তবে নির্বাচন মঞ্চ গঠনের পূর্বশর্ত হবে কি না, এ বিষয়ে তিনি বলেন, তাঁরা চান চার তারিখ বিভিন্ন সংগঠন কনভেনশনে উপস্থিত হয়ে খোলা মনে নিজেদের মতামত রাখুক, তারপর সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।
আরও পড়ুন:ভোট নয়, প্রতিরোধ করতে হবে বিজেপির ফ্যাসিবাদকে, মনে করছেন বাম গণ আন্দোলনকর্মীদের একাংশ
এছাড়া আমরা কথা বলেছিলাম অন্যতম আহ্বায়ক কমল সুরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আগে নির্বাচন হোক, তারপর পরের লড়াই সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে- এটা কোনো ফ্যাসিবিরোধী মঞ্চের ভিত্তি হতে পারে না’। তাঁর মতে নির্বাচন সম্পর্কে অবস্থান মঞ্চ গঠনের পূর্বশর্ত হতে পারে না। গণ আন্দোলনটাই প্রধান বিষয়। গণ আন্দোলনের মধ্যে দিয়েই জনগণ ভোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। কমলবাবু বলেন, এনআরসি বিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলা ও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও ‘নো এনআরসি মুভমেন্ট’-এর পক্ষ থেকে তারা এমনই অবস্থান নিয়েছিলেন। এনআরসি-বিরোধী যে কোনো সংগঠন, ব্যক্তি ওই আন্দোলনের অংশ হতে পেরেছিলেন এবং পারছেন।
এই দুজন ছাড়াও আরও কোনো কোনো আহ্বায়কের সঙ্গে আমরা কথা বলি। কেউ কেউ আমাদের বলেন, বিবৃতির বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্ন মত থাকলেও উদ্যোগটাকে সম্মান জানিয়ে তারা এ বিষয়ে নিজের ভিন্নমত বাইরে বলে বিতর্ক তৈরি করতে চান না। চার তারিখের মঞ্চ থেকেই নিজের বক্তব্য জানাবেন।