Home কৃষি নয়া কৃষি বিল: কর্পোরেট রাজকে ঠেকাতে হবে, পালটাতে হবে বর্তমান অবস্থাটাও
0

নয়া কৃষি বিল: কর্পোরেট রাজকে ঠেকাতে হবে, পালটাতে হবে বর্তমান অবস্থাটাও

নয়া কৃষি বিল: কর্পোরেট রাজকে ঠেকাতে হবে, পালটাতে হবে বর্তমান অবস্থাটাও
0
দেবাঞ্জন রায়

(লেখক কৃষিবিজ্ঞানের ছাত্র। পাস হওয়া তিনটি কৃষিবিল সম্পর্কে নিজের মতামত তিনি সোশাল মিডিয়ায় লিখেছিলেন। আমাদের অনুরোধে সেই লেখাটিতে কিছু পরিমার্জন ও পরিবর্দ্ধন করে দিয়েছেন।)

একজন কৃষিবিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ার দরুণ আমার উপর এই দায়িত্ব বর্তায় যে বর্তমানে তিনটি কৃষি বিল নিয়ে সঠিক তথ্যটা সবাইকে জানাই। আমি নিশ্চিত অনেকেই এই তিনটি বিল সম্মন্ধে আংশিক বা সম্পূর্ণরূপেই সচেতন। তাও আমি কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরতে চাই সেই সব মানুষের সহজভাবে বোঝার জন্য যারা কৃষি পরিস্থিতি নিয়ে সম্পুর্ণ সচেতন নয় ।

গত কয়েকদিন যাবত আমরা সবাই হয়তো শুনছি পঞ্জাব হরিয়ানার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে চাষিরা আন্দোলন করছে এবং এই আন্দোলন এর জোয়ার গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। কোনো কোনো জায়গায় পুলিশ লাঠি চার্জ করছে,কখনও বা কোনো মহান ব্যক্তিত্ব এই চাষিদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিচ্ছে।কিন্তু আমাদের মধ্যে অধিকাংশই সেভাবে জানি না যে কেনো এই প্রতিবাদ। আজকে এই নিয়েই কিছু আলোচনা করা যাক। প্রথমে আসা যাক ভারতীয় কৃষি ব্যবস্থা প্রসঙ্গে।স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকেই দেশের কৃষকরা বিভিন্ন গ্রামীণ মহাজন বা সুদ ব্যবসায়ীদের কাছে অত্যাচারিত হয়ে এসেছে। কিন্তু ১৯৬৫ সাল নাগাদ APMC ( Agriculture Produce Market Committee)   নামে এক নতুন সিস্টেম চালু করা হয়। যেই সিস্টেমে দেশীয় কৃষি ব্যবস্থায় একটা মান্ডি ব্যবস্থা তৈরি করার চেষ্টা করা হয়। কৃষকরা মান্ডিগুলোতে নিজেদের উৎপন্ন ফসল বিক্রি করতো এবং সেখান থেকে সেগুলো বাজারে যেত।এই APMC সিস্টেম-এ ট্রেডারদের লাইসেন্স দিত এই বাজার কমিটি। যার ফলে কৃষি বিপণন অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রিত হতো এই মার্কেট কমিটি আর মান্ডিগুলোর দ্বারা।  এক্ষেত্রে মিডল ম্যান(মধ্যস্বত্বভোগী বা ফোড়ে) সরাসরি কৃষকদের থেকে ফসল কিনে সেগুলো বিপণনের ব্যবস্থা করতো এবং কোনো ক্ষেত্রে  মিডল ম্যান ফসল কিনতে না চাইলে কৃষকদের থেকে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে(MSP) মান্ডি সেটা কিনে নিত। অর্থাৎ কোনো ফসলের দাম স্বাভাবিক বাজার দরের চেয়ে অনেকটা কমে গেলে কৃষকদের থেকে সরকার একটা ধার্য করা দামে সেগুলো কিনে নিত যাতে কৃষকদের সম্পূর্ণ ক্ষতির মুখ দেখতে না হয়, কিন্তু এই MSP- টা দেওয়া হতো যারা সরাসরি তাদের ফসল মান্ডিতে বিক্রি করতো কেবল তাদের। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এই ব্যবস্থাটায় কিছু সমস্যা দেখা যেতে থাকে।

১) এই মার্কেট কমিটির ক্ষেত্রে লাইসেন্স রাজ শুরু হয়,অর্থাৎ তারা নিজেরা নিজেদের ইচ্ছে মতো ঠিক করতে থাকে কাদের লাইসেন্স দেবে আর কাদের না।

২) ভারতে মোট কৃষির সাথে যুক্ত মানুষের কেবল মাত্র ৬-৮ শতাংশ MSP-র সুযোগ পেত।

৩) বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কৃষিক্ষেত্রে মাফিয়া রাজ চলতে থাকে,অর্থাৎ মান্ডিগুলো কৃষকদের থেকে ফসল কিনতে চাইতো না, যার ফলে কৃষকরা অন্য ট্রেডারদের কাছে কম দামে ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হতো।

৪) অনেক ক্ষেত্রে এই মিডল ম্যান যারা তারা কৃষকদের থেকে কম দামে কিনে পরে সেগুলো প্রচুর দামে বিক্রি করে অনেকটা লাভ নিজেদের কাছে রাখতো।

এই সমস্যাগুলো ক্রমাগত বাড়ছিল, এই সময় গত জুন মাসে কেন্দ্রীয় সরকার তিনটে অর্ডিন্যান্স জারি করে(তার মধ্যে একটা চলতি আইনের সংশোধনী)। কী বলা হয় তাতে, দেখে নেওয়া যাক একবার।

## অত্যাবশ্যক পণ্য আইন,১৯৫৫-র সংশোধনী

অর্থাৎ দানা শস্য,ভোজ্য তেল, ডাল শস্য,প্রভৃতি অত্যাবশ্যক কৃষিপণ্যের বিপণনের উপর আর কোনো সরকারি নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। সরকার এই শস্যগুলো মজুত করবে না বা এগুলোর বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কোনো বিধিনিষেধ লাগাবে না।

## কৃষি পণ্য লেনদেন বাণিজ্য উন্নয়ন বিল

১)  চাষিরা নিজেদের শস্য  বেসরকারি সংস্থার কাছে বিক্রি করতে পারবে। নিজের রাজ্যে এবং অন্য যে কোনো রাজ্যে ফসল বিক্রি করতে পারবে।

২) চাষিরা অনলাইনে ফসল বিক্রি করতে পারবে।

৩) বস্তুত কৃষিপণ্য বাজার কমিটির যে রাজ এতদিন চলছিল, সেটাকে খর্ব করে যে কোনো ব্যবসায়ীর সঙ্গে কেনাবেচার সুযোগ তৈরি করা হল।

৪) কেউ এই শর্তগুলো না মানলে ১০ লক্ষ টাকার উপর জরিমানা হতে পারে।

## কৃষিপণ্যের দাম নিশ্চিত রাখতে কৃষকদের সুরক্ষা ক্ষমতায়ন চুক্তি বিল

 ফসলের ক্রেতাকে ফসল কেনার এক থেকে তিন দিনের মধ্যে টাকা দিতে হবে চাষিকে।

উপরি উপরি দেখলে আমাদের মনে হতেই পারে, এই শর্ত আর বিষয়গুলো তো কৃষক বন্ধু। অর্থাৎ তারা এবার লাভের মুখ দেখবে। কিন্তু একটু গভীরে গেলে বিষয়টা স্পষ্ট হবে। সেগুলো এবার আলোচনা করা যাক।

  • এই যে এক দেশ এক বাজারের ডাক এতে স্বাভাবিক ভাবে বৃহৎ কর্পোরেটগুলোর একটা একচেটিয়া বাজার তৈরি হবে। কারণ APMC বা মান্ডিগুলোর আর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না কারা ব্যবসা করতে পারবে তার উপর। ফলে বড়ো বড়ো সংস্থাগুলো খুব সহজে বাজার দখল করে নেবে।
  • MSP বা ন্যূনতম সহায়ক মূল্য। অর্থাৎ কোনো ফসল-এর দাম খুব কম গেলে আগে মান্ডিগুলো একটা নির্দিষ্ট ধার্য দামে সেই ফসল চাষিদের থেকে কিনে নিত।যার ফলে ক্ষতির কিছুটা অংশ চাষিদের পুষিয়ে যেত। কিন্তু বর্তমান ব্যবস্থায় মান্ডিগুলোর ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়ায় এই ন্যূনতম সহায়ক মূল্য থেকে চাষিরা বঞ্চিত হবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বেসরকারি সংস্থারা নিজেদের মুনাফার জন্য বাজার দরের কম দামেই ফসল কিনবে এবং সেগুলো মজুত করে পরবর্তীতে দাম ঠিক হলে সেগুলো বাজারজাত করবে। অর্থাৎ বিক্রেতা চাষি এবং ক্রেতা সাধারণ মানুষ, কারোরই লাভ থাকল না। লাভ হল কোম্পানিগুলোর।
  • অত্যাবশ্যক যে শস্যগুলো আগে সরকার মজুত করতো এবং নিয়ন্ত্রণ করতো, নতুন ব্যবস্থায় সেটা আর হবে না, অর্থাৎ সংস্থাগুলো এবার নিজেদের মতো যথেচ্ছ ভাবে সেগুলো মজুত বা নিয়ন্ত্রণ করবে। যার ফল স্বরূপ কৃত্রিম খাদ্য সংকট সৃষ্টি করা অস্বাভাবিক নয়।
  • নতুন ব্যবস্থায় বলা হচ্ছে চাষিরা এবার যেখানে খুশি বিক্রি করতে পারবে,কিন্তু আমরা দেখেছি আগের সিস্টেম- এর মধ্যে eNAM বলে একটা ব্যবস্থা আগে থেকেই ছিল যার মাধ্যমে চাষিরা অনলাইন মিডিয়াম- এর মাধ্যমে ফসল বিক্রি করতে পারতো। তাহলে এই নতুন যে অনলাইন সিস্টেম আনার কথা বলা হচ্ছে তার প্রয়োজনটা কোথায়।
  • আগে ফসলের দাম ঠিক করতো APMC অর্থাত এই বাজার কমিটি কিন্তু বর্তমানে বেসরকারি সংস্থাগুলোর উপর পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে দাম ঠিক করার বিষয়টা। অর্থাৎ স্বাভাবিক ভাবেই চাষিরা বেশি মাত্রায় দাম নিয়ে শোষণের শিকার হবে।
  • খাদ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। যেহেতু সরকারি আর কোনো নিয়ন্ত্রণ রইলো না। তাই বিভিন্ন কৃষি পণ্য বা প্রক্রিয়াকরণ সংস্থা কিংবা কর্পোরেট সংস্থার দালালরা যেই সময় ফসল কাটা হবে অর্থাৎ যখন ফসলের দাম কম থাকবে সেই সময় বেশি বেশি ফসল মজুত করতে শুরু করবে। তারপর যখন দাম বাড়বে সেগুলো বাজারজাত করবে। যার ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাবে।
  • APMC-র হাত না থাকলে Producer-Wholesaler-Processor-Retailer-Buyer এই বাজার faciliation chain ভেঙে যাবে। ব্যাপারটা সহজ ভাবে বললে মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবস্থা চলে যাবে। কৃষক মান্ডির বাইরে শস্য বেচতে পারবে এরকম বললে এটাও বোঝায় তারা বাড়ি থেকে শস্য বেচতে পারবে। এখন একটি ছোটো বা মাঝারি কৃষিপণ্য সংস্থার পক্ষে বাজারের বড়ো সংস্থাগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা অসম্ভব। একটা ছোটো উদাহরণ: ব্রিটানিয়া সংস্থা একটি অঞ্চলের সকল কৃষকের ফসল সর্ব নিম্ন মূল্যে কিনে রাখার ক্ষমতা রাখে কিন্তু মান্ডির ওপর ভরসা করে গড়ে ওঠা সাধারণ বেকারি কারখানার মালিক সেটা পারবে না। ফলে ১০ জন মিলে গড়ে ওঠা একটা বেকারি তার কাঁচা মালের কৃত্রিম সংকটের জন্য বাধ্য হবে নিজের উপার্জনের বেকারি বন্ধ করতে অথবা মজুতদার কোম্পানির কাছে নিজেকে বিক্রি করে দিতে এবং সকলের উপার্জনের কথা ভেবে নিজের মালিকানা হারিয়ে একটি সংস্থার শ্রমিক হয়ে থাকতে।
  • বেসরকারি সংস্থার কথায় চাষ করলে চাষি তার স্বাধীনতা হারাবে আর পরোক্ষ ভাবে সংস্থার শ্রমিকে পরিণত হবে। একটু ভাবা যাক এই বিষয়ে, এক চাষি ১০ টন ধান উৎপাদন করেছেন। সংস্থার চাহিদা ৮ টন। কিন্তু সংস্থার কথায়, বাজার দর যখন সব চেয়ে কম তখন ফসল তুলতে চাষিদের বাধ্য করলে অতিরিক্ত ফসল যদি তার কাছে কিছু থেকেও থাকে তার মূল্য সে পাবেনা।
  • -চুক্তি চাষের ক্ষেত্রে প্রতিকূল প্রাকৃতিক অবস্থায় কৃষকের মাথায় হাত অবশ্যই পরবে কারণ খুবই সহজ, নষ্ট ফসলের দায় কৃষকের ঘাড়ে পড়বে, সংস্থার নয়।
  • মান্ডি ব্যবস্থায় নিলাম বা দরাদরির মাধ্যমে ফসলের দাম ধার্য করার ব্যবস্থা ছিল কিন্তু যদি গোটা বিষয়টা বড়ো কর্পোরেট ব্যবস্থার হাতে চলে যায়, তখন কখনওই একজন ক্ষুদ্র কৃষকের পক্ষে সংস্থার কর্তৃপক্ষর সাথে কথা বলে দাম ধার্য করা সম্ভব নয়। ফলে সংস্থার নিচু স্তরের কর্মীদের দ্বারা চাষিরা দামের ক্ষেত্রে শোষিত হবে,এমনটা খুবই সম্ভব।
  • ফোড়েদের জন্য কখনও কখনও দাম অহেতুক বাড়ে জিনিসের। হতে পারে ৪ টাকার আলু ১৪ টাকায় কিনছে ক্রেতা কিন্তু সেই অতিরিক্ত ১০ টাকায় একটা সংসার অবধি চলছে। মধ্যস্বত্বভোগীকে এভাবে সরিয়ে দেওয়া মানে ১৩০ কোটির দেশে অন্তত ২০ কোটি মানুষের জীবন বিপন্ন করা। আর কর্পোরেট সংস্থা তো এমন নয় যে ৪ টাকার আলু ৫ টাকায় বেচবে। একটু পশ্চিমে ঘুরে আসলে দেখা যাবে, super market system, যেখানে ১২০ টাকায় ৬ টা আলুর একটা প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে।
  • এবার আসা যাক জমির মালিকানা কতটা কৃষক- এর হাতে থাকবে? প্রথমে বেসরকারি ক্ষেত্রের হাতে সমস্ত ক্ষমতা তুলে দেওয়ার মধ্যে দিয়ে কৃষকরা সংস্থাগুলোর কেনা গোলামে পরিণত হয়ে যাবে।অর্থাৎ যেই ফসলের বাজার দর কম, সেই ফসলও কম দামে কোম্পানির কাছে বিক্রি করতে বাধ্য থাকবে যদি সেটা কোম্পানির কোনো পণ্যের কাঁচামাল হয়। এভাবে শুরু করে পরবর্তীতে দেনার দায়ে জর্জরিত কৃষকের জমি বাজেয়াপ্ত  হয়ে যাওয়া অসম্ভব নয়।
  • ভারতীয় কৃষি ব্যবস্থার আধা সামন্ততান্ত্রিক চরিত্র। অর্থাৎ কোনো বড়ো কৃষকের নীচে অসংখ্য ছোটো ও মাঝারি কৃষক এবং তারও নীচে অনেক ভূমিহীন কৃষক কাজ করে। বর্তমান অর্ডিন্যান্সগুলোর(সংসদে পাস হয়ে গেছে, রাষ্ট্রপতির সইয়ের অপেক্ষা) প্রভাবে ছোটো মাঝারি কৃষকদের অবস্থা তো খারাপ হবেই। পাশাপাশি যে সব ভূমিহীন কৃষকরা চাষে যুক্ত আছেন তারা কী হিসেবে কর্পোরেটদের সাথে দরাদরি করে ফসল বিক্রির ব্যবস্থা করবে এবং কীভাবে এই আইন কৃষক বন্ধু হবে তাতে প্রশ্নের যথেষ্ট অবকাশ থাকে।
  • ৪৩ এর মন্বন্তরের অন্যতম একটি কারণ ছিল এই রকম মজুতদারি। ফলাফল কী হয়েছিল, কত মানুষ দুর্ভিক্ষে মারা গিয়েছিলেন বা সর্বস্বান্ত হয়েছিলেন সেগুলো নতুন করে বলার মানে নেই। এই যে মজুতদারির অবশ্যম্ভাবী বিপদ তার কী কোনো প্রতিবিধান সরকার রাখছে না? বিল অনুযায়ী ‘রাখছে’। কিন্তু সে রাখাটা এরকম: বলা হচ্ছে মজুতদারি নিয়ন্ত্রণ রাজ্য সরকারগুলো করতে পারবে না। বিশেষ প্রয়োজন মনে হলে কেন্দ্রীয় সরকার নিয়ন্ত্রণ করবেখন! এই কেন্দ্রীয় সরকারের যা ট্র্যাক রেকর্ড তাতে আদৌ তারা মজুতদারি নিয়ন্ত্রণের ‘বিশেষ প্রয়োজন‘ কখনও মনে করবেন কিনা, সন্দেহের বিষয়।
  • চুক্তি চাষ যে আমাদের এখানে নতুন বিষয় সেটা কিন্তু নয়। স্বাধীনতা পূর্ব সময়ে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কীভাবে চুক্তি চাষের নামে কৃষকদের নীল চাষ করতে বাধ্য করেছিল সেটা আগেই দেখা গেছে।পুনরায় সেরকম ক্ষমতা কোম্পানিগুলোর হাতে দেওয়া হচ্ছে, যার ফলে খাদ্য শস্যের থেকে বেশি ক্যাশ ক্রপ-এর উপর জোর দেবে পুঁজিবাদী,অর্থলোলুপ সংস্থাগুলো।যার ফল কী হতে পারে সেটা আমাদের জানা।

অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে আসলে এই নতুন বিলগুলোর মাধ্যমে একদিকে যেমন কৃষকদের অবস্থা শোচনীয় থেকে আরো শোচনীয় হবে, অপরদিকে মিডলম্যান এবং সাধারণ ক্রেতা সবারই গুরুতর সমস্যা আসতে চলেছে। মাঝখানে আখের গোছাবে বেসরকারি সংস্থাগুলো।

সমাধান কোন পথে

দেশীয় কৃষি ব্যবস্থা এমনিতেই যথেষ্ট খারাপ। যেখানে বাজেটের ১ শতাংশও ব্যবহৃত হয়না সেই ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ এর বেশি মানুষ যুক্ত। আর যেসব পশ্চিমা দেশগুলোর নিও লিবারেল পলিসি অনুসরণ করে এই অর্ডিন্যান্সগুলো জারি করা হয়েছে সেখানে ইতিমধ্যেই এই ব্যবস্থাটা ব্যর্থ হয়ে গেছে। ফ্রান্স সহ ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায় কৃষক মৃত্যুর হার বেড়ে গেছে,,সেখানে কী হিসেবে এই জনবিরোধী সিদ্ধান্ত নিতে পারে সরকার? অবশ্য পুঁজির দালাল সরকারের থেকে এর বেশি কীই বা আশা করা যায়।সমগ্র ভারতে কৃষক আন্দোলনকে আরও জোরদার সংগঠিত হতে হবে। বস্তুত বৃহত্তর গণ আন্দোলন ছাড়া আর উপায় নেই। কিন্তু কী কী দাবি তুলছে কৃষকরা?

প্রথমত, কৃষিপণ্য বাজার কমিটিগুলোর ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সেটাকে ঠিক করে আরো শক্ত ভাবে সেটাকে প্রয়োগ করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, চাষের ক্ষেত্রে ব্যায় হওয়া অর্থের ৫০% ন্যূনতম সহায়ক মূল্য  দিতে  হবে ।

তৃতীয়ত, সমগ্র ভারতে হাতে গোনা মান্ডি না বানিয়ে মান্ডির সংখ্যা অনেক বাড়াতে হবে,এবং যতো বেশি সংখ্যক সম্ভব ততজনকে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আওতায় আনতে হবে।

চতুর্থত, ভারতীয় কৃষি ক্ষেত্রের বেসরকারিকরণের চক্রান্তকে যেকোনো উপায়ে আটকাতেই হবে।

পঞ্চমত, মান্ডি ব্যবস্থার মাধ্যমে আলোচনার মাধ্যমে ফসলের মূল্য নির্ধারণ-এর পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হোক কৃষকদের এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের ক্ষমতার উপর বাজার কমিটির কড়া নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে যাতে তারা বাড়তি মুনাফা নিজেরা না লুটতে পারে।

আমাদের সবাইকে এবার অন্তত নিজেদের স্বার্থে পথে নামতেই হবে। এতদিনের এত কৃষক এর মৃত্যু দেখেও যখন আমাদের শিক্ষা হয়নি। এবার আমাদের মধ্যবিত্ত সমাজ এবং সাধারণ ক্রেতাদের গায়েও আঁচ লাগার সময় হয়েছে। তাই কৃষকদের জন্য না হলেও অন্তত নিজেদের জন্য পথে নামতে হবে। লড়াই জোরদার হোক। কৃষকদের স্বাধীনতা দেওয়ার নামে তাদের উপর কর্পোরেট হস্তক্ষেপের এই ভয়ানক রাষ্ট্রীয় চক্রান্তকে রুখে দিতে পারে একমাত্র তীব্র গণ সংগ্রাম।

Share Now:

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *