জাতি, রাজনৈতিক মত, যৌন জীবন- কেন্দ্রের ডিজিটাল স্বাস্থ্য মিশনে জানাতে হতে পারে সবকিছুই
পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: বুধবার মোদি সরকার জাতীয় ডিজিটাল স্বাস্থ্য মিশনের অধীনে খসড়া ‘স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য পরিচালন নীতি’ প্রকাশ করেছে। এই নীতির অধীনে তারা প্রত্যেক ভারতবাসীর জন্য স্বাস্থ্য পরিচয়পত্র(হেল্থ এবং গোটা দেশের একটি ডিজিটাল স্বাস্থ্য কাঠামো তৈরি করতে চায়. বলাই বাহুল্য, জনগণের স্বাস্থ্য রক্ষার ছদ্মবেশে এটি আসলে কর্পোরেট স্বাস্থ্য বিমা সংস্থা, ওষুধ সংস্থা ও বেসরকারি হাসপাতালগুলির তথ্য ভাণ্ডার হতে চলেছে।
খসড়া নীতিতে বলা হয়েছে, ‘মানুষের ব্যক্তিগত ও সংবেদনশীল তথ্য নিরাপদ ও কার্যকর রাখার কাঠামো’ তৈরিই এর লক্ষ্য। ‘সংবেদনশীল ব্যক্তিগত তথ্য’র একটি সংজ্ঞাও এখানে দেওয়া হয়েছে। যা সরাসরি ব্যক্তি বা কোনো প্রকল্পে থেকে সংগ্রহ করা হবে-এর মধ্যে অন্যান্য তথ্যের সঙ্গে ধর্মীয় পরিচয়, রাজনৈতিক আনুগত্য এবং জিনগত তথ্যও থাকবে।
খসড়া অনুযায়ী ‘ব্যক্তিগত সংবেদনশীল তথ্য’কথাটির অর্থ হল, ‘ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড ও অন্যান্য অর্থ আদানপ্রদানের ব্যবস্থাগুলির তথ্যের পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য, যৌন জীবন, যৌন পছন্দ, চিকিৎসা সংক্রান্ত রেকর্ড ও ইতিহাস, বায়োমেট্রিক তথ্য ও জিনগত তথ্য’।
লিঙ্গ ও যৌন পছন্দগত তথ্যের মধ্যে থাকবে, ব্যক্তি ‘রূপান্তরকামী বা অন্য যৌন পরিচয়ের অন্তর্গত কিনা’। এছাড়া জানতে চাওয়া হবে জাতি ও আদিবাসী সংক্রান্ত পরিচয়ও।
তথ্যের মালিকানা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির হলেও তা তিনভাবে সংগ্রহ করা হবে। কেন্দ্রীয় স্তরে, রাজ্য স্তরে এবং স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে। প্রতিটি স্তরই যতটুকু তথ্য প্রয়োজন, ততটুকুই জানবে। এই তথ্য গবেষণার কাজে লাগানো হলে, তথ্যের মালিকের নাম গোপন থাকবে। তথ্যের মালিক চাইলে এই প্রকল্পের বাইরে থাকতে পারেন এবং নিজেরে স্বাস্থ্য পরিচয়পত্র বাতিল করতে পারেন। যদিও আধারের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানি, পরবর্তীকালে বিভিন্ন সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য ক্রমেই হেল্থ আইডি থাকা বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হবে। ফলে কোনো নাগরিক তথ্যের গোপনীয়তার স্বার্থে হেল্থ আইডি বাতিল করতে চাইলেও করে উঠতে পারবেন না।
এই খসড়াটি প্রকাশ করেছে প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা কার্যকরকারী সংস্থা ন্যাশনাল হেল্থ অথোরিটি। খসড়ার ওপর জনগণকে মতামত দেওয়ার জন্য মাত্র এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে। শেষ তারিখ ৩ সেপ্টেম্বর। অর্থাত প্রকৃতপক্ষে, এর গুরুত্ব মানুষ বুঝে ওঠার আগেই নীতিটি কার্যকর করতে চাইছে বিজেপি সরকার।
বলা হচ্ছে, এটি নাকি সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেওয়ার পথে হাঁটার প্রথম ধাপ। আসলে এটি কর্পোরেটদের জন্য তথ্যভাণ্ডার। ক্রমেই সরকার সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য পরিষেবার বিষয়টি বিমা সংস্থার হাতে ছেড়ে দেবে। এই তথ্য ভাণ্ডারের নিরাপত্তার কথা বারবার বলা হচ্ছে বটে, কিন্তু আসলে স্বাস্থ্য ব্যবসায়ীদের স্বার্থরক্ষা না করতে পারলে এই হেল্থ আইডি তৈরির কোনো অর্থ নেই।