পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: ইয়াংকি সাম্রাজ্যবাদী (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) মদতপুষ্ট রাষ্ট্রপতি জিনাইন আনয়েজের বিরুদ্ধে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকে সমস্ত বলিভিয়ায় বড়ো ধরনের গণঅভ্যুত্থান শুরু হয়েছে। ২ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া জাতীয় ধর্মঘটে কৃষক এবং আদিবাসী জনগণ বিক্ষোভে অংশ নিয়ে কয়েকশ সড়ক অবরোধ করেছিল। এক সময় শাসক শ্রেণির বিশ্বাসভাজন প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেসকে সরানোর মধ্য দিয়ে সে দেশের প্রশাসনে সামরিক হস্তক্ষেপ শুরু হয়, বর্তমানে তা আরও কেন্দ্রীভূত হয়েছে।
১৪ আগস্ট, করোনাভাইরাস মহামারি চলাকালীন মানুষের জীবনকে অবহেলার বিরুদ্ধে, অনলাইনে পড়াশোনার বিরুদ্ধে এবং আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদের সঙ্কটের ফলে হওয়া ব্যাপক ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে প্রায় ৪ হাজার লোক রাজধানী লা পাজে মিছিল করে। পাশের শহর এল অল্টো থেকে ১২ কিলোমিটার হেঁটে এসে উঁচু ক্লাসের ছাত্র তাদের অভিভাবকরা মিছিলে যোগ দেয়। মিছিল শেষ হয় শিক্ষা দফতরে। ১২ই আগস্ট এল অল্টোতে খনি শ্রমিকরা বিক্ষোভ দেখান।
এল অল্টো, কোচাবাম্বা এবং সান্তা ক্রুজ-এ ১০ আগস্ট বিক্ষোভ চলাকালীন পুলিশের সাথে জনতার সংঘর্ষ হয় এবং বেশ কয়েক বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়াও সেদিন, চাপাড়ার কেন্দ্রীয় অঞ্চলে আইমারা আদিবাসী এবং কোকা চাষিরা হাতে শটগান নিয়ে বিক্ষোভ দেখায়। তারা দাবি করে আনয়েজকে এই অস্থায়ী সরকার থেকে ইস্তফা দিতে হবে। তাদের স্লোগান ছিল: “গৃহযুদ্ধ! এখনই”।
৮ আগস্ট সপ্তাহান্তে,সশস্ত্র দমন-বাহিনী এবং চরম দক্ষিণপন্থীদের সাথে রাস্তা অবরোধকারী শ্রমিকদের মধ্যে সংঘর্ষ আরও বাড়ে।
বলিভিয়ান হাইওয়ে অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কমপক্ষে ৭৭টি রাস্তা অবরোধের তথ্য জানিয়েছে। এগুলি হয়েছে প্রধানত কোচাবাম্বা, ওরুরো, লা পাজ এবং পোটোসে। সান্তা রোসা শহরে সশস্ত্র সংঘাতের একটি ঘটনায় কমপক্ষে তিনজন গুলিতে আহত হয়।
লা পাজের কেন্দ্রস্থল প্লাজা অ্যাবারোয়াতে কয়েকশো মুখঢাকা ব্যক্তি সুপ্রিম ইলেক্টোরাল কোর্টের সামনে প্রতিবাদ জানানোর সময় তাদের জোর করে সরানোর হুমকি দেওয়া হয়।
‘বিক্ষোভকারীদের গুলি করে দেওয়াই ঠিক হবে’ বলে মন্তব্য সরকারের তরফে
১১ আগস্ট, বলিভিয়ার সরকারের মন্ত্রী আর্তুরো মুরিলো বলেন যে “রাজনৈতিকভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত হবে গুলি চালিয়ে দেওয়া”। যে বিক্ষোভকারীরা দশ দিনেরও বেশি সময় ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দালাল সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছে, তারা বলে যদি এই ‘সংঘাত’ সমাধান করা সম্ভব না হয়, তাহলে তা যুদ্ধের রূপ নেবে।
প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেছেন, “আমরা এ দেশে গৃহযুদ্ধ এড়াতে চাইছি, আমাদের হাতে সময় কম”। তিনি আরও বলেন যে কোনোরকম বোঝাপড়া না হলে ” আইন হাতে তুলে নিয়ে কঠোর হওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না”।
অন্যদিকে প্রশাসনে ক্ষমতা অনেকটা কেন্দ্রীভূত করার পর, সামরিক বাহিনীও দাবি করেছে যে নতুন নির্বাচনের আগে রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করুন, সংসদ বন্ধ হোক এবং সশস্ত্র বাহিনী ‘রাষ্ট্রকে রক্ষা করবে’। অন্যথায়, ‘দেশের স্থিতিশীলতা এবং সুরক্ষার গ্যারান্টি দিতে’ দায়িত্ব হাতে তুলে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে তারা।