নির্বাচনী কারচুপি, স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক গণ অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব ক্রমেই দখল করছে বেলারুশের শ্রমিক শ্রেণি
পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: নির্বাচনী দুর্নীতি এবং তীব্র রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের ফলস্বরূপ সমগ্র বেলারুশ জুড়ে ধর্মঘট ও গণ-বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। বিগত ২৬ বছর ধরে রাজত্ব করার পরও এই পূর্ব ইউরোপীয় দেশটির স্বৈরশাসক আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো যখন ঘোষণা করলেন যে , ৯ আগস্ট,রবিবার অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তিনি ৮০ শতাংশ ভোট পেয়েছেন, হাজার হাজার লোক তখন এই প্রতারণামূলক ভোটের প্রতিবাদে শহর ও শহর কেন্দ্রগুলিতে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিল। অবিরাম তিন দিন ধরে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সাথে যে সংঘর্ষ চালিয়ে যায় তাতে ইতিমধ্যে দু’জন মারা গেছে, ৭০০০ জন জেল বন্দি এবং আহত বহু।
কয়েক রাতের বিক্ষোভের পরে আন্দোলনকারীদের সংখ্যা কমে এলে সরকার পুনরায় তার আগে রূপে ফিরে আসে, এমনকী আরো বেশি নিষ্ঠুর হয়ে ওঠে। তবে বৃহস্পতিবার সকালে, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প-কারখানার কয়েক হাজার শ্রমিক কারখানার বাইরে গণ সভার আয়োজন করে ধর্মঘটের ডাক দিলে মুহুর্তেই তা কয়েক হাজার সাইটে ছড়িয়ে পড়ে।তারপরই, ১৬ আগস্ট, রাজধানী মিনস্কে প্রায় ২ লক্ষেরও বেশি মানুষ বিক্ষোভে সামিল হয়। মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে বেলারুশ গত ৩০ বছরের বৃহত্তম গণআন্দোলনের ময়দানে রূপান্তরিত হয়েছে – শ্রমিক, শিক্ষার্থী , অসন্তুষ্ট মধ্যবিত্ত শ্রেণি, সকলেই দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে গর্জে উঠেছে।
গত কয়েক মাস ধরেই প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছিল , ঐক্যবদ্ধ বিরোধী প্রার্থী স্বেতলানা তিখানোভস্কায়ার জুলাইয়ের নির্বাচনী সমাবেশ সে সময়ই হাজার হাজার মানুষের গণ-বিক্ষোভে পরিণত হয়েছিল। বিক্ষুব্ধ জনগণের মেজাজ অনুমান করতে পেরেই হয়তো লুকাশেঙ্কো সামরিক ঘাঁটি পরিদর্শন করেছেন, ১৫০০ টি শক্তিশালী গুন্ডা বাহিনীর সাথে দেখা করেছিলেন, তাঁর ব্যক্তিগত বাসভবনের আশেপাশে নিরাপত্তাকে আরও শক্তিশালী করে তোলার পাশাপাশি সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
পূর্ববর্তী নির্বাচনগুলি জালিয়াতপূর্ণ হলেও এত বড় দুর্নীতি এর আগে কখনোই হয়নি। ২২ বছর বয়সী শিক্ষার্থী কাটিয়া স্লেপনেভামিনস্কের বলেছেন, “বেশিরভাগ মানুষই রাষ্ট্রপতির প্রতি অত্যন্ত অসন্তুষ্ট। তিনি করোনাভাইরাসের বিপদকে পুরোপুরি উপেক্ষা করেছেন, বেলারুশে কোনও কোয়ারেন্টাইন সেন্টার তো ছিলই না উপরন্ত তিনি জনগণের বিরুদ্ধে প্রচুর আপত্তিকর কথা বলে গেছেন।” মার্চ মাস থেকেই, করোনাভাইরাস পুরো ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে এবং মহাদেশের বেশিরভাগ অংশেই লকডাউন কার্যকর করা হয়। লুকাশেঙ্কো কোন সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে বেলারুশিয়ানদের এই বলে বিভ্রান্ত করেছিলেন যে তারা যদি ভোদকা পান করে, সউনা দ্বীপ পরিদর্শন করে এবং নিজেদের নিয়মিত কাজ চালিয়ে যায় তবেই তারা সংক্রমণমুক্ত থাকবে। বলাবাহুল্য, বেলারুশ এখন ইউরোপের সর্বোচ্চ সংক্রমণের হারের অন্যতম জতুগৃহে পরিণত হয়েছে।
কাতিয়া বলেছেন ‘রাষ্ট্রপতির শাসনামলে যে প্রজন্ম বেড়ে উঠেছে তারা তাঁকে মোটেই সমর্থন করে না । আমরা ইতিমধ্যে ২৬ বছর ধরে এক স্বৈরশাসকের দ্বারা শাসিত হয়েছি, যার স্থায়িত্বকাল আমার বয়সের চেয়েও বেশি এবং তিনি সর্বশক্তিমান। সরকার যা-ই বলুক না কেন; কার্যত সমস্ত কিছুর প্রধান, ইউনিয়ন, মন্ত্রীরা, তাঁরই আদেশ পালন করেন। আমরা প্রথম থেকেই শিখে এসেছি যে একমাত্র দেশ ত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ পেতে পারি , তাতে নিজেদের ইচ্ছা থাকুক বা না থাকুক, এখানে সবকিছুই একজন ব্যক্তির দ্বারাই নির্ধারিত হয় ।মানুষ কি চায়- সেটা বোঝা তার কল্পনার অতীত। এটি আমার জীবনের প্রথম নির্বাচন ছিল যেখানে সাধারণ মানুষ কিছু পরিবর্তনের আশা করেছিল। ”
নির্বাচনের রাতে যখন এই আশাগুলি এক এক করে ভেঙ্গে যায় , তখন লোকেরা পরাজয় স্বীকার করতে রাজি হয়নি। সরকার হিংস্র প্রতিক্রিয়া দেখায়, দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করে এবং ব্যাপক ধরপাকড়ও শুরু করে। “তারা ফ্ল্যাশ-ব্যাং গ্রেনেড ব্যবহার করে, বিশেষ লাঠি দিয়ে মানুষকে মারধর করে, রাবার বুলেট দিয়ে গুলি করে, ভিড়ের মধ্যে তাদের ট্রাক চালিয়ে দেয়”, কাতিয়া বলে। লুকাশেঙ্কো তিন দিনের জন্য ইন্টারনেট এবং মোবাইল ফোন ব্ল্যাকআউটও চালু করেছিল। তবে টেলিগ্রাম পরিষেবাগুলি বজায় ছিল,তারা বিক্ষোভের আপডেট সরাসরি প্রকাশ করে, ২০১২ সালে হংকংয়ে উত্থানের কৌশল অবলম্বন করে বিক্ষোভ চলতে থাকে।
এরকম একটি পোস্ট ছড়িয়ে পড়ে:
“আপনার বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ুন, প্রতিবেশীদের সাথে দেখা করুন এবং ২০ জনের ছোটো দলে যোগ দিন।
এক জায়গায় দাঁড়াবেন না! ছোটো ছোটো দলে শহরের কেন্দ্রের দিকে এগিয়ে যান, তবে কেন্দ্রীয় স্কোয়ারগুলি এড়িয়ে চলুন- সুরক্ষা বাহিনী সেখানে রয়েছে। সমস্ত সংলগ্ন রাস্তাগুলি এবং ব্লক রোডগুলি আটকে দিন। শহরকে গতিহীন করে দিন!
এই দলগুলিকে যাতা রাষ্ট্রীয় বাহিনী ভেঙে দিত না পারে, সেদিকে নজর রাখুন…
যদি আপনারা অনেক জন একসাথে না থাকেন এবং সুরক্ষা বাহিনী আক্রমণে করে, তখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়ে পুনরায় জড়ো হন ও অন্য কোনও জায়গায় উপস্থিত হন। জলের মতো সাবলীল হন”!
মিনস্ক এবং অন্যান্য শহরে প্রথম কয়েক রাতের সংঘর্ষের পরে, জেল থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত প্রতিবাদকারীদের কাছ থেকে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। তাতে দেখা গেছে- হাতাহাতির ফলে আহত কালো ও নীল দেহ। দু’দিন ধরে প্রতিবাদকারীরা খাবার ঘুম ছাড়াই একটা ছোটো সেলের মধ্যে কোন রকমে বেঁচে ছিল। এই ছবিগুলি জনগণের ক্রোধকে আরো বাড়িয়ে তুলেছিল এবং গণপ্রতিরোধের আগুনে ঘি ঢালার কাজ করেছিল।
সৈন্যদের ইউনিফর্ম ফেলে দেওয়া ভিডিওগুলি টেলিগ্রাম সাইটগুলিতে মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এই সরকারে বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের হাজার হাজার নারী সাদা পোশাক পড়ে এবং ফুল নিয়ে প্রতিটি শহরের রাস্তায় ছড়িয়ে পড়েছিল, । প্রতিদিন প্রতি মিনিটে মিনস্কে অংশ নেওয়া প্রতিবাদকারী ক্যাট্যা বলেছিলেন,” মহিলাদের প্রতিবাদ হ’ল অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা । আক্ষরিক অর্থে, দিনের সময়, শহরের প্রতিটি অঞ্চলে, আপনি মহিলাদের এই সংহতি শৃঙ্খলা দেখতে পাবেন”।
এবং ১৩ আগস্ট হাজার হাজার শ্রমিক তাদের কারখানার বাইরে সংগঠিত হতে শুরু করে। জুমে বেলারুশের সমাজতান্ত্রিক আনাতল মাতসভিয়েনকা বলেছেন “এই মুহুর্তে, শ্রমজীবী মেহনতি মানুষ তাদের রুটি রোজগার এবং কারখানায় দাবি তুলে ধরছেন-যার অন্যতম হল আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের নিয়ে একটি নতুন নির্বাচন ,নিখরচায় নির্বাচন- ফলস্বরূপ শুরু হয়েছে ধর্মঘট ।”জনসমাবেশগুলি অপ্রতিরোধ্য সমর্থনের দাবিকে চ্যালেঞ্জ করেছে। যেখানেই কর্মীরা একত্রিত হচ্ছেন সেখানেই সর্বদা এই প্রশ্ন থাকছে: ‘কে লুকাশেঙ্কোকে ভোট দিয়েছে এবং কেই বা তিখনভস্কায়াকে ভোট দিয়েছে?”, আনাতল বলেছেন- “তিখনভস্কায়ার সমর্থনই বেশি। ইন্টারনেটে প্রচুর ভিডিও থেকে যা এখন স্পষ্ট।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরে বেলারুশিয়ান অর্থনীতির বেশিরভাগ অংশই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রয়েছে , যা পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে অনেকটাই আলাদা। পুরনো রাজনৈতিক কাঠামোও বিদ্যমান ছিল(উদাহরণস্বরূপ গোয়েন্দা সংস্থাকে এখনো কেজিবি বলা হয়)। রাষ্ট্রীয় সংস্থার শ্রমিক- যারা একদা লুকাশেঙ্কোর অনুগত হিসাবে পরিচিত ছিল – তারাই প্রথম বিক্ষোভে সামিল হয়। এর ফলে শ্রমিক ও রাষ্ট্রীয় অধিকর্তা যারা ধর্মঘটকে অস্বীকার করার চেষ্টা করছেন, তাদের মধ্যেই সরাসরি দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে।
বেলারুশের স্বতন্ত্র মিডিয়া সাইটগুলির মধ্যে অন্যতম, টুটবাই , গ্রোডনোর গ্রোডনোঝিলস্ট্রয় নির্মাণ সংস্থার এক মিটিং থেকে রিপোর্ট পেশ করলে তাতে দেখা যায় যে,বিল্ডিংয়ের শ্রমিকরা তাদের ম্যানেজারের মুখোমুখি হয় এবং আগের সমস্ত অত্যাচারের জন্য ক্ষমা চাওয়ার দাবি রাখে। তাদের ই একজন ক্ষোভে ফেটে পড়ে বলে, “আমরা এই শহরটি তৈরি করেছি অথচ সন্ধ্যা 6 টার পরে কিনা আমরাই বাড়ি ছেড়ে যেতে ভয় পাচ্ছি! গ্রোডনোর মেয়র এবং অন্যান্য স্থানীয় কর্মকর্তারা খিমভলোকনো পলিয়েস্টার কারখানায় একটি সভা করতে গেলে শত শত শ্রমিক তাদের ঘিরে ফেলে, কারণ বিক্ষোভের সময় তাদের প্রত্যেকেই বন্ধু বা আত্মীয় আহত হয়েছিল। কর্মকর্তাদের প্রতিক্রিয়া দেখে হতাশ হয়ে তারা পুনরায় একটা রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও আন্দোলনকারীদের মুক্তির দাবিতে একটি ইস্তাহার পেশ করে।
প্রতিটি শহর ও প্রদেশে প্রতিবাদ অব্যাহত থাকায় কয়েকশ কর্মক্ষেত্রে একই রকম দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। দশটি বৃহত্তম বেলারুশিয়ান সংস্থার আটটি আজ ধর্মঘটের পথে। এবং এটি কেবল কারখানার শ্রমিকই নয়! আনাতল জানিয়েছে যে মিনস্কের পাতাল রেল কর্মী থেকে শুরু করে কয়েকটি হাসপাতালের চিকিৎসকরা ও দলে দলে শামিল হয়েছেন এই প্রতিবাদে। মিনস্ক ফিলহার্মোনিক অর্কেস্ট্রা’ ও খুব সুন্দরভাবে প্রতিবাদ করেছিল -তারা বিল্ডিং থেকে বেরিয়ে সুর তুলেছিল-they have taken my voice.
জালিয়াতিপূর্ণ নির্বাচন এবং চূড়ান্ত রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের ফলে এই ধর্মঘটের জোয়ার ছড়িয়ে পড়েছে, যদিও অর্থনৈতিক সমস্যাগুলি সাময়িক বাড়ছে, যার মধ্যে একটি হ’ল স্বল্প-মেয়াদি শ্রম চুক্তির ব্যবস্থা , যার মধ্যে পড়ে বেলারুশিয়ান প্রায় ৯০ শতাংশ কর্মী । আনাতল এটিকে “মূলত একটি শ্রম দাসত্ব ব্যবস্থা” হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, কর্তারা যেহেতু কেবলমাত্র এক বছরের চুক্তি করে থাকে ,সুতরাং প্রতি বছর শ্রমিকদের পুনরায় চুক্তি পেতে হলে কারখানা বা সংস্থার কর্তৃত্বের প্রতি অনুগত থাকতে হবে।
বেলারুশিয়ান অর্থনীতি ২০১৪ সাল থেকে মন্দার জেরে ধুঁকছে
পূর্ব ইউরোপিয়ান ব্লকের পতনের পরে ১৯৯৯ সালে ‘ইউনিয়ন রাষ্ট্র’ চুক্তি স্বাক্ষর করে রাশিয়ান এবং বেলারুশিয়ান শাসক শ্রেণির দূরত্ব ক্রমশ মিটে গিয়েছিলো। এই চুক্তিটি দেশগুলির অর্থনৈতিক ও সামাজিক নীতিগুলিকে সংহত করার সঙ্গে সঙ্গে বৈদেশিক ও প্রতিরক্ষা নীতিগুলিতে নিবিড় সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছিল, এমনকি উভয়ই স্বাধীন রাষ্ট্রের মর্যাদা অক্ষুন্ন রেখে চলেছিল । তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে বিরোধের কারণে ইউনিয়ন রাষ্ট্র কখনই পুরোপুরি পৃথিবীর মুখ দেখেনি: যদি বেলারুশ এই ইউনিয়নের অংশীদার হতে রাজি হয় তবে সম্ভবত এটি সার্বভৌমত্ব হারাতে পারে এবং রাশিয়া এরকম ছোটো রাষ্ট্রের সাথে কখনোই সমতাতে রাজি হবে না। তা সত্ত্বেও, দুই দেশ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে ঘনিষ্ঠ রয়েছে: বেলারুশের বৈদেশিক বাণিজ্যের ৪৮ শতাংশ রাশিয়ার সঙ্গে হয়ে থাকে।
বছরের পর বছর ধরে, বেলারুশকে অপরিশোধিত তেল আমদানিতে বিদেশি কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। বেলারুশিয়ায় কারখানায় এই তেলকে পরিশোধিত করার পর তা সাধারণ দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে বিশ্ব বাজারে বিক্রি হয়। তবে রাশিয়া এখন কর ছাড় দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে, সম্ভবত এটিকে রাশিয়ার বেলারুশ আগ্রাসনের অন্যতম কৌশল বলা যেতে পারে।
অর্থনৈতিক সমস্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি শ্রমিকদের উপরও রাষ্ট্রের আক্রমণও ক্রমশ বেড়েই চলেছে। স্বল্পমেয়াদি চুক্তি ছাড়াও, সরকার চাকরি ছাড়াই ৫লক্ষ বেলারুশিয়ানের উপর বেকারত্ব কর আরোপ করেছে এবং গত বছর পাশ হওয়া একটি নতুন শ্রম আইন, সংবিধানে কঠোর কর্মক্ষেত্র নীতি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবর্তন করেছে।
বিগত বছরগুলির মতো, লুকাশেঙ্কো তাঁর তিন প্রতিপক্ষকে জেল বন্দি করেই নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছিল। তবে গ্রেফতারের পরপরই, দলের অন্যান্য কর্মীবৃন্দ প্রচারের নেতৃত্ব গ্রহণ করেছিল। একজন প্রাক্তন শিক্ষক ও জনপ্রিয় ব্লগার সের্গেই তিকানভস্কির স্ত্রী তিখনভস্কায়া ব্যাপক জনসমর্থন অর্জন করেন এবং অন্য দুজন প্রতিদ্বন্দ্বী, যারা বাদ পড়েছিলেন তারাও তিখনভস্কায়াকে সমর্থন করলেন। ঐক্যবদ্ধ বিরোধীদের তিনটি দলের মধ্যে দুটি আগে প্রশাসনের অংশ ছিল, তাদের “আমি / আমরা ৯৭ শতাংশ” স্লোগানটি বেলারুশিয়ান সমাজের মন জয় করে নিয়েছিল
প্রতিবাদ বহুগুন বেড়ে যাওয়ার পরে লুকাশেঙ্কো জনগণের বিরোধিতা অস্বীকার করার জন্য প্রচারের দিকে ঝুঁকলেন। জুলাইয়ে, তিনি ৩০ জন রাশিয়ান পর্যটককে গ্রেফতার করে দাবি করেন যে তারা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার জন্যই সেখানে এসেছিল। ভোটগ্রহণের কয়েক সপ্তাহ আগে একটি সাক্ষাত্কারে, তিনি জোর গলায় বলেন যে , জনসংখ্যার মাত্র ২০ শতাংশ তার বিরুদ্ধে থাকতে পারে, তারা কেবল ‘সরব সংখ্যালঘু’ — যেটা স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে ,নির্বাচনের রাতে ঘোষিত ৮০ শতাংশ ভোটের সিদ্ধান্ত আগে থেকেই নেওয়া হয়ে গিয়েছিল। এই কৌশলগুলির কোনওটিই কাজ করেনি! নির্বাচনের রাতে আটক থাকাকালীন তিখনভস্কায়াকে তার সমর্থকদের রাস্তায় নামতে বলার জন্য বাধ্য করা হয়নি, এমনকি তিনি এখন লিথুয়ানিয়ায় পালিয়ে গেছেন।
ইউএসএসআর ভেঙে যাওয়ার পরে এই আন্দোলনটি বেলারুশের ইতিহাসে বৃহত্তম, এখনও এটি ক্রমবর্ধমান। শ্রমিকদের গণ-সমাবেশগুলিতে শহরের কেন্দ্রগুলি ভরে উঠেছে। তবে, আন্দোলন মাত্রই নানা বাধার সম্মুখীন হয়। শ্রমিক শ্রেণির স্বতন্ত্র সংগঠনগুলি প্রায় অস্তিত্বহীন। বেলারুশের ফেডারেশন অফ ট্রেড ইউনিয়ন প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রের একটি সহায়ক সংস্থা; ফেডারেশনের সভাপতি মিখাইল আরদা হলেন লুকাশেঙ্কোর প্রচার বিভাগের প্রধান.আর একটি স্বতন্ত্র ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন রয়েছে যা কিনা ১৯৯০ এর দশকের আন্দোলনের ফসল , তারা প্রতিরোধের ঢেউকে সমর্থন করেছে, তবে এর সদস্যপদ মাত্র ৭,০০০ শ্রমিকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তবে পরিস্থিতি পালটাচ্ছে। বেলারুশের শ্রমিক শ্রেণি ক্রমশ আন্দোলনের মঞ্চ দখল করছে। নির্বাচন বা রাষ্ট্রপতি বদল করে যে তাদের সমস্যার সমাধান হবে না, তা দৃঢ় বাবে বলছে।
রাষ্ট্র সাম্প্রতিকালে কৌশল পরিবর্তন করছে, দমন-পীড়ন তুলে নিচ্ছে, বন্দিদের মুক্তি দিয়েছে, এমনকি দেশজুড়ে আরও বেশি বিক্ষোভ দেখানোর পথ উন্মুক্ত করে দিচ্ছে। আন্দোলনের গতি কোন দিকে হবে তা এখনও পরিষ্কার নয়, তবে এখনও পর্যন্ত প্রতিবাদকারীদের অবস্থান অনড় । আনাতল বলেছেন, “ নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, এই বিগত দিন, সপ্তাহ এমনকি মাসগুলিতে সমাজের বিপুল পরিবর্তন হয়েছে, সমাজ আগের অবস্থায় কখনই ফিরে যাবে না।”