স্তালিনের মৃত্যুর পর ক্রশ্চেভের নেতৃত্বে সংশোধনবাদীরা সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির ক্ষমতা দখল করে এবং দেশটি সামাজিক সাম্রাজ্যবাদী দেশে পরিণত হয়। মাওয়ের নেতৃত্বে চিনা কমিউনিস্ট পার্টি আন্তর্জাতিক মতাদর্শগত মহাবিতর্কে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন। দুনিয়ার বহু কমিউনিস্ট পার্টি পঞ্চাশ বছরেরও বেশি আগে এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়েছেন। তবু দুনিয়া জুড়ে সংগ্রামের এই সময়ে আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের এইসব গুরুতর দিকগুলিকে ফিরে দেখার প্রয়োজন আছে নতুন প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে।এ নিয়ে বিস্তৃত আলোচনার সুযোগ আমাদের মতো সংবাদ নির্ভর পোর্টালে কম। কিন্তু সম্প্রতি নরওয়ের ‘সার্ভ দ্য পিপল’ সংগঠনের সমাজতন্ত্র বিষয়ক একটি প্রবন্ধ আমাদের নজরে আসে। ওই প্রবন্ধের সোভিয়েত ইউনিয়ন সংক্রান্ত অংশটি আমাদের খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে। আগ্রহীদের জন্য ওই অংশটি আমরা ভাবানুবাদ করলাম।
স্তালিনের মৃত্যুর পর ক্রুশ্চেভ এবং সোভিয়েত সংশোধনবাদ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে। মাও তাদের মুখোশ খুলে দিয়েছিলেন। ক্রুশ্চেভ স্তালিনের ঐতিহ্যকে জঘন্য ভাবে আক্রমণ করেন এবং নতুন রাজনৈতিক লাইন সামনে নিয়ে আসেন। ওই লাইনের মূল বিষয় ছিল চারটি-
আরও পড়ুন: চিনা কমিউনিস্ট পার্টি সংশোধনবাদী, চিনে সমাজতন্ত্র নেই- একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা
১. ওই সময় থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টি সকল জনগণের পার্টি এবং রাষ্ট্রটি সকল জনগণের রাষ্ট্রে পরিণত হল- অন্য কথা বলতে গেলে, এগুলো আর সর্বহারার অস্ত্র হয়ে থাকল না।
২. শান্তিপূর্ণ ভাবে সমাজতন্ত্রে উত্তরণ- সোভিয়েত ইউনিয়ন নিশ্চিত ভাবে জানাল, বাকি দুনিয়ায় কমিউনিস্টরা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে পারে।
৩. শান্তিপূর্ণ প্রতিযোগিতা- তারা যে পুঁজিবাদী দেশের থেকে উন্নত, সেটা সমাজতান্ত্রিক দেশগুলিকে শান্তপূর্ণ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে।
৪. শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান-সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশ্বশান্তিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেবে এবং পৃথিবীতে অশান্তির আগুন জ্বলতে পারে, এমন কোনো কাজে ইন্ধন জোগাবে না।
প্রতিবিপ্লব এই ধরনের মতাদর্শগত অবস্থান নিয়েছিল। তারওপর ক্রুশ্চেভের নেতৃত্বে সচেতন ভাবে একটি অভ্যুত্থান ঘটানো হয়। পরবর্তী কালে অর্থনীতির একটি বৃহৎ অংশকে পুনর্বিন্যস্ত করা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ম্যানেজারদের বেতন বাড়ানো হয় এবং উৎপাদনের ক্ষেত্রে মুনাফায় আরও জোর দেওয়া হয়।
কিন্তু সমাজতন্ত্র সম্পর্কে সংশোধনবাদীদের এই বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গি সাধারণ ভাবে এবং তাদের নিজেদের জন্যও ছিল বিপজ্জনক। কারণ, এর মধ্যে দিয়ে তারা সমাজবিকাশের চালিকা শক্তি হিসেবে শ্রেণি সংগ্রামের ভূমিকা সংক্রান্ত মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে পরিমার্জন করে, সর্বহারার নেতৃত্বকারী ভূমিকাকে তারা সংশোধন করে, তারা বিপ্লবী যুদ্ধের গুরুত্বকে অস্বীকার করে এবং বিপ্লবী যুদ্ধকে প্রত্যাখ্যান ও তার বিরুদ্ধে ভূমিকা নেওয়ার মধ্যে দিয়ে দুনিয়ার নিপীড়িত জনগণ এবং সারা পৃথিবীর সর্বহারাকে দুর্বল করে দেয়।