কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনায় নারাজ শ্রমিকরা, কোল ব্লক নিলামের বিরুদ্ধে তিন দিন ধর্মঘটের পথে কোল ইন্ডিয়া
পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: কেন্দ্রীয় সরকার দেশকে আত্মনির্ভর করার জন্য দেশের ৪১টি কয়লা ব্লক নিলামের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছে ট্রেড ইউনিয়নগুলি। তরা মনে করছেন এতে অনিশ্চয়তায় পড়ে যাবে দেশের সরকারি কয়লা সংস্থা কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড ও সিঙ্গারেনি কয়লা খনির প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ শ্রমিকের ভবিষ্যত। এছাড়া বিভিন্ন প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক সংগঠনগুলির মতে, যেসব জায়গার কোল ব্লক দেশি-বিদেশি কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়া হবে, সেখানকার মানুষের জীবন-জীবিকাও এতে সংকটে পড়বে। নষ্ট হবে পরিবেশের ভারসাম্য। এই পরিস্থিতিতে আগামী ২ থেকে ৪ জুলাই কোল ইন্ডিয়া ও সিঙ্গারেনি কোলিয়ারি কোম্পানি লিমিটেডে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ট্রেড ইউনিয়নগুলি।
তিনদিন ধর্মঘট হলে ৪ মিলিয়ন টন কয়লা উৎপাদন ব্যহত হবে। এই পরিস্থিতিতে ধর্মঘট ঠেকাতে ট্রেড ইউনিয়নগুলির সঙ্গে বৈঠকের ডাক দিয়েছিল কেন্দ্র। কিন্তু যুগ্ম সচিবের সঙ্গে বৈঠকে বসতে রাজি হয়নি শ্রমিক সংগঠনগুলো। তাদের দাবি, যুগ্ম সচিব নয়, কয়লা সচিব বা কয়লা মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হলে তবেই আলোচনায় বসবে তারা।
শুধু বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়নগুলি নয়, ধর্মঘটে সামিল হয়েছে আরএসএস-এর শ্রমিক সংগঠন ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘও। যুগ্ম সচিবের সঙ্গে আলোচনায় না বসার সিদ্ধান্তের শরিক তারাও।
শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি, কোল ইন্ডিয়া কয়লা উত্তোলনের ভার ঠিকাদারদের হাতে দেওয়ায় দুর্নীতি বেড়েছে। এর ফলে মার্চ ত্রৈমাসিকে সংস্থার খরচ বেড়েছে।
ভারতের শিল্পের উন্নতির প্রয়োজনে ১৯৭২-৭৩ সালে কয়লা শিল্পের জাতীয়করণ হয়। কয়লার সাথে সাথে কোল সংস্থাগুলিকেও সরকার অধিগ্রহণ করে। এরপর ১৯৯৩ সাল থেকে কয়লা শিল্পকে ধাপে ধাপে বেসরকারি ব্যক্তি পুঁজির হাতে তুলে দেওয়া শুরু হয়। ভারত সরকার ২০১৫ সালে কোল মাইনস স্পেশাল প্রভিশনস অ্যাক্ট এনে ও বর্তমানে করোনার সুযোগে বেসরকারি কয়লা সংস্থাগুলিকে বাজারে কয়লা বিক্রির জন্য কোল ব্লক বরাদ্দ করে সরকারি কয়লা সংস্থাগুলির ধ্বংসের পথ তৈরি করেছে। এতদিন বেসরকারি কয়লা সংস্থাগুলি নিজেদের বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম কারখানা বা সিমেন্ট কারখানার জ্বালানি হিসেবে নিজেদের উৎপাদিত কয়লা ব্যবহার করতে পারত। বাণিজ্যিক ভাবে বাজারে বিক্রির অনুমতি ছিল না। কয়লাকে বাজারে বিক্রির অনুমতি দেওয়ায় বিভিন্ন শিল্প সংস্থাগুলি বেশি দামের কয়লা কোল ইন্ডিয়া থেকে না কিনে সবাই বেসরকারি সংস্থা থেকে কিনবে।
গত বছর, ২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা কয়লা শিল্পে ১০০ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগের ছাড়পত্র দিয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগের ফলে দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলির হাতে দেশের কয়লা সম্পদ চলে যাবে। বস্তুত, ১৯৯৩ সালে থেকে দেশের কয়লা সম্পদকে বেসরকারি মালিকদের হাতে তুলে দেওয়ার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, এই সিদ্ধান্তে তা সম্পূর্ণ হয়েছে।
ভারতের আগামী ১০ বছরের চাহিদা মেটানোর জন্য নতুন কোনো কোল ব্লক থেকে কয়লা উৎপাদনের প্রয়োজন নেই। কোল ইন্ডিয়া থেকেই প্রয়োজনীয় কয়লা পাওয়া যাবে। তা সত্ত্বেও আদিবাসীদের হাজার হাজার বছরের বাসস্থান থেকে উচ্ছেদ করে পরিবেশের তোয়াক্কা না করে, ভারতের পরিবেশ আইন অনুসারে যে জঙ্গলে বনবাসী ছাড়া আর কারও প্রবেশাধিকার নেই, সেখানে অবস্থিত ৪১টি ব্লক ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। বলাই বাহুল্য, এর ফলে দেশের সম্পদ বিদেশে পাড়ি দেবে। এই ৪১টি ব্লকের মধ্যে ২১টি রয়েছে ঝাড়ঘণ্ডে। সেখানকার সরকার কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছে।
শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি, সরকার তাদের দাবি না মানলে তারা আরও বড়ো আন্দোলনের পথে হাঁটবে।