Home জনস্বাস্থ্য কোভিড সামলানোয় সাম্রাজ্যবাদী ‘চিনা মডেলের সাফল্য’ আসলে অপপ্রচার, বলছে সে দেশের মাওবাদীরা

কোভিড সামলানোয় সাম্রাজ্যবাদী ‘চিনা মডেলের সাফল্য’ আসলে অপপ্রচার, বলছে সে দেশের মাওবাদীরা

কোভিড সামলানোয় সাম্রাজ্যবাদী ‘চিনা মডেলের সাফল্য’ আসলে অপপ্রচার, বলছে সে দেশের মাওবাদীরা
1

চিনের অতিমারি সামলানো নিয়ে বর্তমান প্রবন্ধটি গত এপ্রিলে প্রকাশ করেছে চিনের একটি গোপন মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী গোষ্ঠী। আমরা প্রবন্ধটির ভাবানুবাদ প্রকাশ করলাম।

২০২০-র এপ্রিলের মধ্যেই চিনের মহামারি ধীরে ধীরে স্থিতাবস্থায় পৌঁছে যায়। তখনও বেশিরভাগ দেশের অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তাই সাম্প্রতিক কালে, তথাকথিত ‘চিনের কৃতিত্ব’, ‘চিনের পথ’, ‘চিনের মডেল’ ইত্যাদি নানা শব্দের ঢক্কানিনাদ চালাচ্ছে চিনা সাম্রাজ্যবাদ। কিন্তু সত্যিই কি তথাকথিত ‘চিনা ব্যবস্থা’র জন্যই চিন মহামারি থেকে মুক্তি পেয়েছে? এবং, সত্যিই কি চিনা নেতৃত্বের ‘জনগণের সেবা করা’র মানসিকতার জেরেই চিনে মহামারি তাড়াতাড়ি শেষ হয়েছে? এটা ঠিক, যে চিন সরকারের কমান্ড ছাড়া মহামারিকে জয় করা সম্ভব হত না, কিন্তু তার থেকে কি এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে চিনা সিস্টেমের কোনো বিশেষ সুবিধা রয়েছে বা চিনের শাসক শ্রেণি সত্যিই জনগণের সেবা করে?

না। কখনওই নয়!   

গণ নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনো জরুরি অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে গেলে, কোনো দেশের সবার আগে কী দরকার? একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা? একদমই না। ব্যবস্থার আগেও প্রয়োজন পর্যাপ্ত মানবসম্পদ ও বস্তুগত সম্পদ। এমন মানবসম্পদ যা প্রয়োজনে কাজে লাগানো যায়। এই মুহূর্তে চিন একটি উদীয়মান সাম্রাজ্যবাদী দেশ। তার দেশজোড়া ব্যাপক বিস্তৃত জমিতে রয়েছে প্রচুর সম্পদ। সাম্রাজ্যবাদী চিনের কাছে রয়েছে দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ও সেরা মানের শ্রমিক। তাদের বেশিরভাগেরই রয়েছে সরল জাতীয়তাবাদী আবেগ। যা আসলে এমন এক তলোয়ার যার দুদিকেই ধার রয়েছে(এর ফলে বুর্জোয়ারা তাদের বোকা বানাতে পারে)। সমাজতান্ত্রিক গঠনকার্যের দিনগুলির সুবাদে সাম্রাজ্যবাদী চিনের শিল্পোৎপাদনের মূল্য দুনিয়ার সব দেশের চেয়ে বেশি। বহু রকমের পদার্থ দিয়ে এ দেশে সব রকমের পণ্য উৎপাদিত হয়। শক্তিশালী বস্তুগত শক্তির সাহায্যেই চিন মহামারি থেকে সবার আগে মুক্ত হতে পেরেছে। বিপরীতে, পুঁজির নিজেকে বাড়িয়ে চলার লোভ এবং আমেরিকা সহ পুরনো সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলিতে উদ্বৃত্ত মূল্যের হার ব্যাপক ভাবে কমে যাওয়া, অর্থনৈতিক রাজধানীতে গিয়ে পুঁজির আশ্রয় নেওয়া, এ সবের ফলে পুরনো সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলিতে ব্যাপক মাত্রায় বিশিল্পায়ন এবং উৎপাদন স্থানান্তরিত হচ্ছে। এই যখন অবস্থা, তখন কী করে এই পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় বস্তুগত শক্তিকে কাজে লাগাবে তারা? চিনে এখনও বড়ো মাত্রায় বিশিল্পায়নের পরিস্থিতি তৈরি হয়নি, কারণ চিনের নিজস্ব শ্রমভান্ডার এখনও বেশ সস্তা তাই পুঁজিপতিরা উঁচু মাত্রায় উদ্বৃত্ত মূল্য কামাতে পারে।  

চিনের হাতে যে কাজে লাগানোর মতো যথেষ্ট বস্তুগত শক্তি রয়েছে, এর থেকে এটাই বোঝা যায় যে তারা একটি উদীয়মান সাম্রাজ্যবাদী শক্তি, পুরনো সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির মতো এটি অবক্ষয়ের অবস্থায় নেই। তাছাড়াও, ‘মহামারি-প্রতিরোধে’ চিনের কর্মকাণ্ডের পেছনে রয়েছে রাষ্ট্রীয় একচেটিয়া বুর্জোয়ারা- যারা সমাজতন্ত্রের নাম ব্যবহার করে জনগণকে ধোঁকা দিচ্ছে এবং ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে নিষ্ঠুর ভাবে শ্রমিক শ্রেণির আন্দোলনকে দমন করছে। মহামারি দমনে চিনের ‘ভালো পারফরম্যান্স’ আর পুরোনো সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির ‘খারাপ পারফরম্যান্সে’র তুলনাটা সম্পূর্ণ ভাবেই চেরেনোবিল পারমাণবিক কেন্দ্রে দুর্ঘটনা সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে সংশোধনবাদী সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘ভালো পারফরম্যান্সে’র সঙ্গে ফুকুশিমা পারমাণবিক কেন্দ্রে দুর্ঘটনার পর জাপানের ‘খারাপ পারফরম্যান্সে’র সঙ্গে তুলনীয়। চেরেনোবিলে সোভিয়েতের ভালো পারফরম্যান্স তার সামাজিক সাম্রাজ্যবাদী চরিত্রকে আড়াল করতে পারেনি। তেমনি মহামারি দমনে চিনের ‘ভালো পারফরম্যান্স’ দিয়ে তার সাম্রাজ্যবাদী চরিত্রকে লুকনো যাবে না।

মহামারি প্রতিরোধে অন্যদের থেকে চিনের ভালো পারফরম্যান্স দিয়ে কি তার রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছনো যাবে? উত্তর হল একেবারেই নয়। শুরু থেকে বুর্জোয়া আমলারা প্রথম যারা এই অতিমারির কথা বলেছিল(হুইসলার), তাদেরকে শাস্তি দিয়ে একে রটনা বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তারপর যখন অতিমারি ছড়িয়ে পড়তে লাগল, তখন তারা ‘প্রতিরোধযোগ্য ও নিয়ন্ত্রণযোগ্য’ ধরনের শব্দগুলো ভাসিয়ে দেয়। অতিমারির সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে তারা ‘সিউয়েজ অ্যান্ড স্টেঞ্চ’ নামে একটি বাণিজ্যিক পুঁজিবাদী সংস্থার সঙ্গে গোপন আঁতাত করে নাগরিকদের খাদ্য ও বেঁচে থাকার জন্য অত্যাবশ্যক পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থাকে একচেটিয়া করে বিপুল মুনাফা করে। কেউ কেউ এই একচেটিয়া ব্যবস্থাকে ভাঙার চেষ্টা করলে, তাদের পুলিশ গ্রেফতার পর্যন্ত করে। কিছু মানুষ এই ঘটনার প্রতিবাদ করে, কিন্তু তখন আর একদল লোক জঞ্জালের গাড়ি করে সেইসব শাকসবজি ফেরত পাঠিয়ে দেয়(আসলে বুজোর্য়া আমলাতন্ত্রের জাল নিচুতলা পর্যন্ত ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল)।

যেটা অবশ্যই বলা দরকার, তা হল, হুবেই প্রদেশের স্থানীয় রেডক্রস প্রচুর টাকা ও জিনিসপত্র আত্মসাৎ করেছে। সরকারি হাসপাতালে জিনিসপত্রের অভাব থাকা সত্ত্বেও সেগুলি সেখানে না পাঠিয়ে নেতাদের বাড়িতে ও বেসরকারি হাসপাতালে পাঠিয়েছে। এই ঘটনাটা এতই প্রকাশ্য ও নির্লজ্জ ভাবে হয়েছে যে সাধারণ মানুষ এগুলো সহ্য করতে পারছিল না। জনগণ স্বতস্ফূর্ত ভাবে সম্পূর্ণ সরবরাহ ব্যবস্থা তৈরি করে, রেডক্রসকে এড়িয়ে, পণ্য উৎপাদকদের থেকে পণ্য নিয়ে তা সরকারি হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছে। জনগণের ‘মহামারি-বিরোধী’ স্বতস্ফূর্ত সংগঠনগুলির কথা অবশ্যই উল্লেখ করা উচিত। কিন্তু এই সব চমৎকার কাজগুলিকে হুবেই রেডক্রস ও কিছু সরকারি দফতর বেআইনি বলে দেগে দেয়। খোলা চোখে দেখলে, এই ধরনের কাজগুলি ঐক্যবদ্ধ পরিচালনা ব্যবস্থার পক্ষে ক্ষতিকারক কিন্তু আসল ঘটনা হল, এর ফলে বুর্জোয়া আমলাদের ঘুষ নিয়ে পকেট ভরতে অসুবিধা হচ্ছিল।

কিন্তু এতকিছুর পরেও অনেকেই সত্যটা মানতে চাইবেন না, তারা বলবেন চিনের স্বাস্থ্যব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বলবেন, এই স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও একটি নির্দিষ্ট ভাবে চিনা ব্যবস্থা। এটা ঠিক যে, সমাজতন্ত্রের অবসানের সময় যে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা রয়ে গিয়েছিল, তা সম্পূর্ণ অবলুপ্ত হয়নি এবং সরকারি হাসপাতালগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু শুধু আজকের পরিস্থিতির দিকে তাকালে সমস্যাটা বোঝা যাবে না, গোটা প্রবণতার দিকে নজর দিতে হবে। বছরের পর বছর ধরে ‘সংস্কার’-এর ফলে অথবা বলা যায় চিনের সাম্রাজ্যবাদী শাসকশ্রেণির নয়া-উদারনৈতিক নীতির ফলে সবকিছুই বেসরকারিকরণ হয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও তার বাইরে নয়। কয়েক বছর ধরে ‘পুতিয়ান’ হাসপাতাল(এক ধরনের বেসরকারি হাসপাতাল)গড়ে তোলা হয়েছে ‘বসন্তের বিনোদনস্থল’-এর মতো। এই ধরনের হাসপাতালেই্ ওয়েই জেনস্কিকে মেরে ফেলা হয়েছিল। এই সময়কালেই সরকারি হাসপাতাল ব্যাপক ভাবে কমিয়ে আনা হয়েছে যাতে বেসরকারি ক্ষেত্রের উপর জনগণের নির্ভরতা ও ভরসা বাড়ানো যায়। অন্যদিকে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সরকারি বিনিয়োগ ধাপে ধাপে কমানো হয়েছে, তাতে বহু প্রতিভাকে আমরা হারিয়েছি। সরকারি হাসপাতালের বহু ডাক্তারকে জীবিকার জন্য বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। কিন্তু এই মহামারিতে কোনো বেসরকারি হাসপাতাল কোনো ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেনি। তদুপরি, তথাকথিত এই ‘সমাজতান্ত্রিক চিনে’ স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সামাজিক সুরক্ষাটা এমন কিছু বিশাল ব্যাপার নয়। ব্রিটেনেও ‘ন্যাশনাল সার্ভিস সিস্টেম’ আছে, কিন্তু তার জন্য ব্রিটেনকে কেউ সমাজতান্ত্রিক দেশ মনে করে না। যারা মনে করেন, চিনের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা দূরন্ত কাজ করেছে, তাই চিন একটি সমাজতান্ত্রিক দেশ, তারা আসলে সমাজতন্ত্র বিষয়টাই বোঝেন না।                                     

মহামারি থেকে চিন তাড়াতাড়ি মুক্তি পাওয়ার ঘটনা, চিনের সাম্রাজ্যবাদী রাজনৈতিক ব্যবস্থা কতটা উন্নত, তা বোঝায় না। মহামারি থেকে আগে মুক্তি পাওয়ার মধ্যে দিয়ে সাম্রাজ্যবাদী চিনকে অন্যান্য পুরনো সাম্রাজ্যবাদীদের তুলনায় উন্নততর ব্যবস্থা হিসেবে দেখানোটা ভুল।

তাহলে কি, মহামারি মোকাবিলায় সাম্রাজ্যবাদী চিন সরকার যে ভাবে সাড়া দিয়েছে, তার সঙ্গে জনগণের সেবা করার কোনো সম্পর্ক নেই?

গোটা দুনিয়ার কারখানা(গ্লোবাল ফ্যাকটরি) হওয়ার ফলে চিন কিছু সুবিধা ভোগ করে, তা হল শ্রমিকদের ক্লান্তিহীন ভাবে নিংড়ে নেওয়ার ক্ষমতা, সেই ক্ষমতাটাই মহামারি মোকাবিলাতেও কাজে লেগেছে। চিনের শাসকশ্রেণি ‘জনগণকে বিপর্যয় থেকে রক্ষা করার জন্য’ মহামারি নিয়ন্ত্রণ করেনি, বরং তার লক্ষ্য ছিল পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থাকে ব্যাহত না হতে দেওয়া। সবচেয়ে বড়ো কথা, ব্যাপক সংখ্যক শ্রমিক যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাহলে বুর্জোয়ারা কীকরে উদ্বৃত্ত মূল্য শোষণ করবে? 

এমনকি, চিনের সাম্রাজ্যবাদী বুর্জোয়ারা শোষণ ও নিপীড়নের তীব্রতা বাড়ানোর জন্য মহামারির দাপট কমে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারেনি। লিয়েশেনশান ও হুওশেনশান- এই দুটি হাসপাতালই মহামারি মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই দুই হাসপাতালের নির্মাণ শ্রমিকদের মজুরি শুধু বাকি রাখা হয়নি, নিভৃতবাসের খাবারের খরচ বাবদ তা থেকে টাকা কেটেও নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি চালাকি করে বাকি থাকা মজুরি ১ শতাংশ কমিয়েও দেওয়া হয়েছে। কিছু শ্রমিক প্রতিবাদ করায়, তাদের জুটেছে লাঠি পেটা, জিজ্ঞাসাবাদ, নিপীড়ন ও বন্দিদশা। চিকিৎসাসামগ্রী তৈরির কারখানার শ্রমিকদের বোনাস ও অন্যান্য প্রাপ্য তাদের বসেরা বাতিল করে দিয়েছে মহামারি-পরিস্থিতির নামে। মহামারি মোকাবিলায় যেসব মহিলা চিকিৎসক ও নার্সরা বিপুল পরিশ্রম করেছেন, তাদেরকে চিনের শাসকশ্রেণি প্রচারের উপকরণ হিসেবে কাজে লাগিয়েছে। তারা কি বিপুল আত্মত্যাগ করেছেন, তা তুলে ধরা হয়েছে। কিছু মহিলা নার্সকে চুল কেটে নেড়া করে দেওয়া হয়েছে, তারা তা চোখের জল ফেলে মেনে নিয়েছেন। কিছু মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীকে জটিল মহামারিপ্রবণ এলাকায় যেতে বাধ্য করা হয়েছে এবং তাদের প্রাপ্য ভর্তুকি ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। একদিকে বিশাল সংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মী মহামারি মোকাবিলায় প্রাণ ঢেলে কাজ করেছেন, অন্যদিকে তাদেরকে শুধুমাত্র বুনিয়াদি মজুরিটুকুই দেওয়া হয়েছে, তাও তা পুরো দেওয়া হয়নি।

এখন যখন, মহামারি নির্মূল না হলেও তার দাপট অনেকটাই কমে এসেছে, তখন পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থাকে আগের পর্যায়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াটাই সাম্রাজ্যবাদী চিনা শাসকদের মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। উৎপাদন নতুন করে শুরু করার ব্যাপারে চিনা শাসকরা বুর্জোয়াদের প্রতি খুবই দয়ালু দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে। সংকটে থাকা শ্রমিকদের হাতে টাকা দেওয়ার বদলে তারা বুর্জোয়াদের কম সুদে বা বিনা সুদে ঋণ দিচ্ছে। বড়ো জোড় ভিখারিদের মতো কিছু সামান্য টাকা দেওয়া হচ্ছে। চিনের মার্কসবাদী শ্রমিকদের একটি গোষ্ঠী কিছু তথ্য নথিভুক্ত করেছে- মানবসম্পদ ও সামাজিক সুরক্ষা মন্ত্রক খোলামেলা ভাবে ঘোষণা করেছে, “কোনো সংস্থা চাইলে শ্রমিকদের বেতন কমানো ও বাকি পড়ে যাওয়া বেতনের অংশ কমানো নিয়ে আলোচনা চালাতে পারে”, “যখন উৎপাদন বন্ধ থাকছে, সেই সময়টায় শ্রমিকদের ছুটিগুলো বার্ষিক ছুটি থেকে কেটে নেওয়া যাবে”, একই সাথে কাজের মধ্যে কেউ কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হলে, সেটা কাজের মধ্যে অসুস্থ হওয়া হিসেবে গ্রাহ্য করা হবে না ফলে ক্ষতিপূরণও দিতে হবে না। ফক্সকন নামে এক বিশাল নির্মাণ গোষ্ঠী প্রচুর সাময়িক সময়ের শ্রমিককে বসিয়ে বিপুল সংখ্যক সস্তা শ্রমিককে কাজে লাগিয়েছে, হাইসেনস নামে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ১০ হাজার শ্রমিক ছাঁটাই করেছে, শেনজেনে একজন মাল আনানেওয়া করার শ্রমিককে নগরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা দফতরের আধিকারিকরা বিনা কারণে পেটায়, পুলিশি অত্যাচার তীব্র আকার ধারণ করে, বিওয়াইডি নামে একটি বিশাল গাড়ি প্রস্তুতকারণ সংস্থা তাদের বহু কর্মীকে প্রতি মাসে মাত্র ৩০০ ইউয়ান করে বেতন দিয়েছে, যা দিয়ে চিনের প্রথম ও দ্বিতীয় সারির শহরগুলিতে মাত্র তিনদিনের খাবার কেনা সম্ভব। একজন স্বাধীন প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীর হিসেব অনুযায়ী চিনে এই মুহূর্তে বেকারত্ব প্রায় ২০ শতাংশ।

মার্কসবাদী শ্রমিক গোষ্ঠী ও প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবীর সংগ্রহ করা তথ্য অনুযায়ী চিনের শ্রমজীবী জনতা অভূতপূর্ব যন্ত্রণা ভোগ করছেন, তারা হিংস্র নিপীড়নের মধ্যে রয়েছেন, কিন্তু চিনের শাসকশ্রেণি জনগণের এই যন্ত্রণাকে লুকিয়ে রেখেছে, অত্যাচার ও মিথ্যে প্রচার দিয়ে এক সম্প্রীতির ছবি দেখিয়ে চলেছে, যার কোনো অস্তিত্ব নেই। ওপরের তথ্যগুলো প্রমাণ করে, চিনা সাম্রাজ্যবাদী শাসকশ্রেণির অত্যাচারী একচেটিয়া বুর্জোয়ারা মোটেই জনগণের সেবা করেনা, বরং তারা বুর্জোয়াদের স্বার্থের সেবা করে।             

সঙ্গে এটা অবশ্যই বলতে হবে, এই মহামারিতে চিনের জনগণ বিপুল আত্মত্যাগ করেছেন। কারণ ভাইরাসটি ছড়ায় ঐতিহ্যপূর্ণ চিনা বসন্ত উৎসব থেকে। চিকিৎসা-সামগ্রী তৈরির কারখানার যে সব শ্রমিকরা ছুটিতে ছিলেন, যেসব শ্রমিকরা হুওশেনশান ও লেইশেনশান হাসপাতাল তৈরি করেছে, চিকিৎসক এবং ক্যুরিয়ার কর্মী এবং আরও অজস্র শ্রমিক পরিবারের সঙ্গে পুনর্মিলিত না হয়ে, ছুটি বাতিল ও ত্যাগ করে, সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে কাজে যোগ দিয়েছে। অন্যান্য অনেকের, যাদের তখনই কাজে যোগ দিতে হয়নি, তারা পরিস্থিতি অনুযায়ী নিয়ম মেনে, চাকারি হারানো ও বেতন ছাঁটাই হওয়ার ঝুঁকি নিয়েও দুমাস বাড়িতে বসে থেকেছে। চিনা জনগণের বিপুল আত্মত্যাগের জন্যই মহামারি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এই সংগঠিত ব্যবস্থাটা সম্ভব হয়েছে সরল চিনা জনগণের দেশপ্রেমিক আবেগের জন্য। এর থেকে বোঝা যায়, চিনা জনগণ কতটা ভালো ভাবে সংগঠিত হতে পারেন। মহামারি মোকাবিলার জন্য চিনা জনগণ যে আত্মত্যাগ করেছেন, তাকে আন্তরিক ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। মহামারির সময় তারা যে ভাবে সংগঠিত হয়েছেন, তার থেকে বোঝা যায় যে কি বিপুল বিপ্লবী সম্ভাবনা তাদের মধ্যে রয়েছে।

চিনা জনগণের সরল দেশপ্রেমিক আবেগ যখন বিপ্লবী উদ্দীপনায় পরিণত হবে, তখনই সাম্রাজ্যবাদী চিনের পতন ঘটবে। চিনা জনগণের মহান বিপ্লবী ঐতিহ্য রয়েছে। তারা আবার উঠে দাঁড়াবেন এবং একচেটিয়া পুঁজির স্বৈরতান্ত্রিক অত্যাচারকে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত করবেন। মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদের পথনির্দেশে চিনের বিপ্লবীরা একসঙ্গে কাজ করবেন এবং তাদের প্রয়াসকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কার্যকর করবেন। পাশাপাশি নিয়মিত ভাবে জনগণের মধ্যে যাবেন। জনগণকে বিপ্লবের জন্য সংগঠিত করুন এবং জনযুদ্ধের সমুদ্রে প্রতিক্রিয়াশীলদের ডুবিয়ে মারুন।      

Share Now:

Comment(1)

  1. চীনের বর্তমান শাসক দলের কাজের পদ্ধতির সঙ্গে আমাদের দেশের শাসক দলের কাজের পদ্ধতির হুবহু মিল আছে।

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *