মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চলমান গণ আন্দোলন নিয়ে ড্যানিয়েল টেলরের এই প্রবন্ধটি গত ৩১ মে অস্ট্রেলিয়ার রেড ফ্ল্যাগ পোর্টালে প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমান আমেরিকার আর্থ সামাজিক অবস্থা ও চলতি বিক্ষোভের যে বিশ্লেষণ লেখক করেছেন, তা আমাদের সাধারণ ভাবে মূল্যবান বলে মনে হয়েছে। তাই আমরা প্রবন্ধটির কিছু সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত না হয়েও এটির ভাবানুবাদ প্রকাশ করলাম।
আরও একবার, কালো আমেরিকা বিশ্বজোড়া সংগ্রামের সামনের সারিতে উঠে এল। চলতি বছর জুড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে ছবিটা আমাদের কাছে ধরা পড়ছিল, তাতে ছিল দক্ষিণপন্থার পাগলামি, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অতিমারি সামলানোর ক্ষেত্রে ভয়াবহ অদক্ষতা। এখন এই দেশটা দুনিয়াকে নতুন একটা জিনিস দেখাচ্ছে- তা হল, হঠাৎ করে অগ্নুৎপাতের মতো ব্যাপক গণ প্রতিরোধ তৈরি হওয়ার ক্ষমতা সে দেশে রয়েছে, যে প্রতিরোধ সব কিছু পালটে দিতে পারে।
আরও দেখুন: ছবিতে আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গ খুনের বিরুদ্ধে দুনিয়া জুড়ে বিক্ষোভ
ট্রাম্পের ভোটে জেতা ছিল একটা ঐতিহাসিক মোড় ঘোরানো ঘটনা। অতিমারিও তাই। কিন্তু একের পর এক মোড় ঘোরানো ঘটনার মধ্যে বেঁচে থাকাটা আতঙ্কের, যন্ত্রণার, বিপজ্জনকও বটে। বছরের বেশিরভাগ সময় জুড়ে নিপীড়িত শ্রমিক শ্রেণি একের পর এক দুঃস্বপ্ন দেখেছে- গণ কবর, গণ বেকারত্ব এবং অর্থনীতি চালু করার জন্য সশস্ত্র প্রতিবাদীদের দাবির মতো পৈশাচিক দৃশ্য। আর আমেরিকার চরিত্র অনুযায়ী এই প্রতিটি ঘটনাই কৃষ্ণাঙ্গ শ্রমিকদের সবার চেয়ে বেশি সমস্যায় ফেলেছে। অতিমারিতে তারাই সবচেয়ে বেশি মরেছে, কর্মহীনতার জন্য আর্থিক অবস্থা তাদেরই সবচেয়ে খারাপ হয়েছে এবং সশস্ত্র অতি দক্ষিণপন্থী গুন্ডাবাহিনী তাদেরকেই সবচেয়ে বেশি আতঙ্কিত করে রেখেছে।
কিন্তু বর্তমান সংঘর্ষ জমা-খরচের খাতায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে- এখন, শুধু কষ্ট ভোগ করে চলার বদলে নিপীড়িতরা ইতিহাস রচনা করছেন।
মিনিয়াপোলিস থেকে শুরু হয়ে অস্বাভাবিক গতিতে আমেরিকার অজস্র শহরে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে। কালো মানুষদের নেতৃত্বে এই প্রতিবাদ সকল জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে আন্দোলনে সামিল করে নিয়েছে- আমেরিকার অতীতের সব সংঘর্ষেরই এটাই চরিত্র। সে ১৯৬০-এর বিদ্রোহই হোক বা ১৯৯২ সালের লস অ্যাঞ্জেলেসের লড়াই। এই আন্দোলন দেখিয়ে দিচ্ছে, আমেরিকা জুড়ে হাজার হাজার মানুষ রাস্তার দখল নিতে এবং পুলিশের সদর দফতর, পুলিশের গাড়ি, আদালত, মূর্তির মতো অত্যাচারের প্রতীকগুলিকে ধ্বংস করতে রাজি।
আটলান্টার মেয়র কেইশা ল্যান্স বটমস প্রশ্ন তুলেছেন, ‘একটা শহরকে তছনছ করে তোমরা কী পালটাবে?’ কিন্তু প্রতিবাদীরা জানেন তারা কী পালটাচ্ছেন। নিজেদেরকে, পরস্পরকে এবং সেই পৃথিবীটাকে, যেটায় তারা বেঁচে আছেন। লুইসিয়ানার ২১ বছর বয়সি পড়ুয়া কেয়লা জুলেয় জনসন নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলছিলেন, “২০২০ সালের ২৬ মে তারিখটা আমার জীবনকে চিরকালের মতো বদলে দিয়েছে। আমি সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে চিৎকার করেছি,’হাত তোল, গুলি চালিও না!’ এখন আমি জানি, নাগরিক অধিকার আন্দোলনে যোগ দিলে আমাদের মতো আফ্রিকান-আমেরিকানদের কেমন অনুভূতি হয়। আমি এখন ইতিহাসের অংশ”। ম্যানহাটনের ২৭ বছরের যুবক জেসন ফিলিপসের গলাতেও একই সুর।
এই আন্দোলনে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে রাস্তার লড়াই, সম্পত্তি ধ্বংস এবং দাঙ্গা। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ এবং সংঘর্ষ দুইই আলাদা আলাদা প্রতীকী বার্তা বহন করে। দুটিই বাস্তব সাংগঠনিক পদ্ধতি। আন্দোলনকারীদের সমাবেত হওয়ার স্থান, আক্রমণের লক্ষ্য এবং শ্লোগানের মধ্যে দিয়ে তাদের আন্তরিক ইচ্ছা ও দাবিগুলি স্পষ্ট হয়। এ সবের থেকে তাদের ক্ষমতা সম্পর্কে সরাসরি একটা ধারণা তৈরি করা যায়। তারা যখন পুলিশের সদর দফতর জ্বালিয়ে দেয় এবং হোয়াইট হাউজের পাঁচিল ভাঙার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে, তখন তারা আরও এক নতুন স্তরের প্রতীক রচনা করেন, অনুপ্রেরণা জাগান এবং ভবিষ্যতের কর্মসূচির দিকনির্দেশ করেন।
ক্ষমতার প্রতি আন্দোলনকারীদের ঘৃণা কতটা, তারা কতদূর এই সব প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে বিচ্ছিন্ন এবং তাদের লড়াই করার ঐকান্তিক ইচ্ছা কতটা পরিমাণে রয়েছে, চলমান সংঘর্ষ তা আড়েবহরে দেখিয়ে দিচ্ছে। ম্যালকম এক্স বলেছিলেন, ‘যে কোনো উপায়ে হোক’। আজকের আন্দোলনকারীদের প্ল্যাকার্ডেও সেই বিখ্যাত বিবৃতি শোভা পাচ্ছে।
গত কয়েক বছরে, ওবামার আমলে যখন জাতিবিদ্বেষ বিরোধী গণ সংঘর্ষ ও প্রতিবাদ ফেটে পড়েছে (ফার্গুসন, মিসৌরি, বালটিমোর থেকে শুরু করে মেরিল্যান্ড- বর্তমান আন্দোলনের আগে পর্যন্ত), সেটা ছিল বিন্দুভাঙার লড়াই বা একটা সূত্রপাত। ওবামার আমলে স্থায়ী জাতিগত অসাম্য, দারিদ্র্য ও পুলিশি অত্যাচারের মাধ্যমে কালোদের দাবিয়ে রাখা হয়েছিল। কিন্তু ফার্গুসনের ঘটনা দেখিয়ে দেয়, আমেরিকার কালো প্রেসিডেন্টের মতো বিশাল তাৎপর্যপূর্ণ প্রতীকী ঘটনা সত্ত্বেও কৃষ্ণাঙ্গ গরিব ও শ্রমিক শ্রেণির ক্ষোভকে দমিয়ে রাখা অসম্ভব।
আজকের সংঘর্ষ আলাদা। এটা ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের পুনরাবৃত্তি নয়। সেটা হয়েছিল এক ভিন্ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। শেষ কালো বিদ্রোহের ঢেউ উঠেছিল যে আমেরিকায়, তা দেখতে স্থায়ী হলেও, তার প্রান্ত থেকে ধীরে ধীরে ক্ষয় বাড়ছিল। সেখানে ছিলেন ক্যারিশম্যাটিক নয়া উদারনীতিবাদী টেকনোক্র্যাট ওবামা, সেই দেশটা ধীরে কিন্তু নিশ্চিতভাবেই মন্দা থেকে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল। আজকের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সেখানে একটি অতিমারি চলছে, যাতে ইতিমধ্যেই ১ লক্ষ মানুষ মারা গেছে, তাতেও তারা সমস্ত সুরক্ষা নীতি বিসর্জন দিয়ে অর্থনীতিকে খুলে দিচ্ছে। এর ফলে মৃত্যুহার যেমন বাড়তে পারে তেমনই জনগণের জীবনযাপনের মানেও পতন ঘটার সম্ভাবনা। গত কয়েক বছর জুড়ে সে দেশে রাজনৈতিক সংকটও চলছে। তার কারণ আমেরিকার খামখেয়ালি প্রেসিডেন্ট, যিনি অতি দক্ষিণপন্থীদের সঙ্গে যুক্ত আর অনেকগুলি শহরের শ্রমিক শ্রেণি তাকে মোটেই পছন্দ করে না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জনগণের এই উত্থান, নব পর্যায়ের এক সংকটের সূচনাবিন্দু হতে হলেছে। সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতির সমান্তরালে নিপীড়িত শ্রেণির ধারাবাহিক, স্বতস্ফূর্ত আক্রমণের দিন এসে গেছে।
পুলিশরা কালোদের খুন করেও রক্ষা পেয়ে যায়, এই ক্ষোভ থেকে আন্দোলন শুরু হলেও, থানাগুলি দখল করে প্রতিবাদীরা অসাধারণ সাহস ও সামাজিক দায়িত্বের পরিচয় দিয়েছেন। এই প্রতিবাদগুলি ছিল অপরিকল্পিত, কিন্তু কোনোমতেই অসামাজিক নয়। গণমাধ্যম লুঠপাটের ঘটনাগুলিকে বড়ো করে দেখিয়েছে। তা থেকে মনে হতে পারে প্রতিবাদীরা ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদী, স্বার্থপর এবং কোনো মতে ভাঙচুর করে জিনিসপত্র দখল করার সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু যারা সামাজিক মাধ্যমে এই আন্দোলনের সরাসরি সম্প্রচার দেখেছেন, তারা সত্যিটা জানেন। এই সংঘর্ষগুলির পরিবেশ ছিল অসম্ভব বন্ধুত্বপূর্ণ। অংশগ্রহণকারীরা চূড়ান্ত পরিণতিবোধ দেখিয়েছেন। রাত থেকে ভোর পর্যন্ত প্রতিবাদীরা রাজপথ দখল করে রেখেছেন, জাতি-বর্ণে বিভাজিত অত্যাচারের কেন্দ্রগুলোকে প্রতিরোধ ও সমন্বয়ের খোলা মঞ্চে পরিণত করেছেন। তারা নিজেদের মধ্যে গল্প করেছেন, এর ওর বাইকে চেপে অন্য জায়গা থেকে খবর নিয়ে এসেছেন, পানীয় বিনিময় করেছেন। সব মিলিয়ে গোটা সময়টা খুশিতে উদ্যাপন করেছেন। তারা যৌথ ভাবে নিপীড়নের কেন্দ্রগুলিকে আক্রমণ করেছেন।
মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার বলেছেন, “অ্যান্টিফা-র মতো কৌশল নিয়ে নৈরাজ্যবাদী এবং অতি বামপন্থী চরমপন্থী বিভিন্ন গোষ্ঠীগুলি পরিকল্পনামাফিক, সংগঠিত হিংসা চালিয়েছে”। এটা ডাহা মিথ্যে। নৈরাজ্যবাদীরা যে ধরনের চক্রান্তমূলক অ্যাডভেঞ্চারধর্মী কাজকর্ম করে থাকে, তা দিয়ে এমন গণ অভ্যুত্থান সম্ভব নয়। আর যেসব দক্ষিণপন্থীরা এই অভ্যুত্থানকে চক্রান্তমূলক মনে করছে, তারা ভেবেছিল কিছু লোককে বাছাই করে গ্রেফতার করলেই আন্দোলন থেমে যাবে। সেটাও হয়নি। বাস্তবটা হল, এটা নিপীড়িতদের গণ আন্দোলন। মার্কিন শাসক শ্রেণি, রাজনৈতিক মাথারা এবং ‘প্রগতিশীল’ আমলাতন্ত্র সর্বদা চেষ্টা করে সামাজিক ক্ষোভবিক্ষোভকে শান্তিপূর্ণ ও আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে বেঁধে রাখতে। তারা এবার এক অস্বস্তিকর সত্যের মুখোমুখি হয়েছেন- সাধারণ মানুষ ন্যায়ের ভিত্তিতে এক সমাজ গড়ে তোলার জন্য পুলিশদের জ্বালিয়েপুড়িয়ে দিতে চাইছে।
এরপর কী? শান্তিপূর্ণ মহামিছিল একটি প্রতীকী বিষয়, রাস্তার দাঙ্গাও তাই। থানা জ্বালিয়ে দেওয়া থেকে বোঝা যায়, তুমি কী চাও। কিন্তু আগুনের শিখা নিজে নিজেই্ তা এনে দেবে না। স্বতস্ফূর্ত বিদ্রোহ বা সম্পত্তি ধ্বংকরে দীর্ঘমেয়াদে পুলিশ বা যে ব্যবস্থাকে তারা রক্ষা করে, সেই ব্যবস্থাকে পরাজিত করা সম্ভব নয়। বামপন্থীদের একটি বিখ্যাত সূত্র আছে, ‘তুমি সামাজিক সম্পর্ককে জ্বালাতে পারবে না’। বর্তমান লড়াই, পুলিশের সম্পত্তির প্রতীকী ধ্বংসসাধন গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর মধ্যে দিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রের সঙ্গে কীভাবে লড়তে হবে, সেই প্রশ্নটা উঠে এসেছে। কিন্তু আজকের সংঘর্ষের মধ্যে সেই প্রশ্নের সামগ্রিক উত্তর নেই। কিন্তু যেমন ঠিক সময়ে জানলা দিয়ে পাথর ছুঁড়ে লড়াই বাঁধিয়ে দেওয়া যায়, তেমনই ঠিক সময় বেছে যথার্থ লড়াই চালালে আরও গভীর ও ব্যাপক গণ অভ্যুত্থান ঘটানো সম্ভব। সংঘর্ষ ছড়িয়ে যেতে পারে এবং সামাজিক আন্দোলনকে তা সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলনের দিকে চালিত করতে পারে।
গত শতকের ষাটের দশকের মাঝে কৃষ্ণাঙ্গদের নাগরিক অধিকার আন্দোলন বিপ্লবী পথে এগিয়েছিল। ১৯৬৮ সালে ফরাসি ছাত্ররা সারারাত রাস্তায় পুলিশের সঙ্গে লড়াই করেছে, তারা ইতিহাসের সবচেয়ে বড়ো সাধারণ ধর্মঘট করেছে- লক্ষ লক্ষ তরুণ শ্রমিক তাতে অনুপ্রাণিত হয়েছে এবং পড়ুয়াদের অবাধ্যতাকে আরও এগিয়ে দিয়েছে। ২ বছর আগে সেই ফ্রান্সেই সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে শহরের রাস্তায় ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলনকারীরা পুলিশের সঙ্গে লড়াই করেছে। এর মধ্যে দিয়ে বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন অনুপ্রাণিত হয়েছে। সেগুলি পুনর্জীবিত হয়েছে। কঠিন লড়াইয়ে উৎসুক শ্রমিকরা নিজেদের সংগঠনকে সেই ভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
হংকং-এর বীরত্বপূর্ণ যুব আন্দোলন গোটা দুনিয়াকে দেখিয়েছে কীভাবে রাস্তার লড়াইয়ের সঙ্গে গণ প্রতিবাদকে যুক্ত করা যায়, কীভাবে পুলিশের প্রতি ঘৃণার সঙ্গে সাহসিকতার মেলবন্ধন ঘটানো যায়, কীভাবে যৌথতা ও সমন্বয়কে সঙ্গী করে উন্নত পৃথিবীর জন্য সংগ্রাম করা যায়। সেই আন্দোলন থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে গোটা দুনিয়ায় গণ আন্দোলনের ঢেউ উঠেছে। ইতিমধ্যেই আমেরিকার ‘অ্ত্যাবশ্যক ক্ষেত্রের শ্রমিকরা’ লড়াকুদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। শ্রমিক শ্রেণির অংশ, কোভিড ১৯-এর আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাদীর্ণ কিছু বাসচালক, গ্রেফতার হওয়া আন্দোলনকারীদের কারাগারে নিয়ে যেতে রাজি হননি।
বিস্ফোরণের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা এক পৃথিবীতে করোনাভাইরাস জন্ম নিয়েছিল। এমন এক দুনিয়া যেখানে রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা ভেঙেচূরে যাচ্ছে, বিদ্রোহের ঢেউ ক্রমেই বাড়ছে, সংস্কারবাদীদের পুনর্জীবিত করার চেষ্টাও শেষ সীমায় পৌঁছে গেছে। ফলে নতুন প্রজন্মকে সাম্যের সমাজের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য এক ভিন্ন রাজনীতির খোঁজ করতে হচ্ছে।
সেই বিস্ফোরণ এখন এখানে হচ্ছে। দুনিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী ও ক্ষমতাশালী দেশে। গোটা ২০১৯ সাল থেকে আমরা শিখেছি, এই ধরনের আন্দোলন সারা পৃথিবীকে তা অনুকরণ করতে অনুপ্রাণিত করে। এক আধুনিক আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনকে, এই আমেরিকার দাঙ্গাবাজদের থেকেই লড়াই করার উদ্দীপনা ও নির্ভীকতা অর্জন করতে হবে। এবং তাকে ছড়িয়ে দিতে হবে গুদামঘর, বাস ডিপো এবং ‘অত্যাবশ্যক পণ্যের শ্রমিক’দের কষাইখানায়। হে দাঙ্গাবাজের দল, তোমাদের ধন্যবাদ। বিশ্বজোড়া সংকটে তোমরা পথিকৃতের ভূমিকা পালন করলে।