Home রাজনীতি করোনা কিংবা উমপুন- শাসকের যাবতীয় ত্রাণই জনগণের বিরুদ্ধে ‘নিচু মাত্রার যুদ্ধে’র অংশ

করোনা কিংবা উমপুন- শাসকের যাবতীয় ত্রাণই জনগণের বিরুদ্ধে ‘নিচু মাত্রার যুদ্ধে’র অংশ

করোনা কিংবা উমপুন- শাসকের যাবতীয় ত্রাণই জনগণের বিরুদ্ধে ‘নিচু মাত্রার যুদ্ধে’র অংশ
0
অয়ন ব্যানার্জি

দু’ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়া হবে, দেবে মা-মাটি-মানুষের সরকার- মনে পড়ছে সেই সবুজ হোর্ডিং-গুলোর কথা যা গোটা জঙ্গলমহল জুড়ে শোভা পেতো ২০১১-১২ সালগুলোতে। স্থানীয় নেতারা যাতে দুর্নীতি না করতে পারে তাই চাল দেওয়া হবে থানা থেকে। এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সেদিনের নয়নের মণি ভারতী ঘোষ (যিনি আবার বেআইনি ভাবে বিপ্লবী ছাত্র-যুবদের জিজ্ঞাসাবেদের নামে অত্যাচার করতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন) জঙ্গলমহলের বিভিন্ন এলাকায় মাইক নিয়ে প্রচার চালিয়েছিলেন দু’টাকা কেজি চাল মানুষের অধিকার তারা যেন সেই অধিকার বুঝে নেয়। এমনকি এই প্রচারে এটাও বলা হয়েছিল যদি কেউ রেশনের চাল নিয়ে দুর্নীতি করে সে যত বড়ই নেতানেত্রীই হোক তাদেরকে শাস্তি পেতে হবে।

 ঠিক যেমন এই অতিমারির সময় মুখ্যমন্ত্রী নিজে রেশন দোকানে গিয়ে বলেন সরকারের ঘোষিত বরাদ্দ থেকে কোনো ভাবেই যেন মানুষকে বঞ্চিত না করা হয় এবং যদি কোনো নেতা ত্রাণ দিতে চান সে যেন নিজের পকেট থেকে দেয়। এটাও ঘটনা এই করোনা পরিস্থিতিতে মেহনতি জনগণের একটা বড়ো অংশ সরকার ঘোষিত প্রাপ্য রেশন পাচ্ছে (দুর্নীতি কোনো জায়গায় হয়নি বা হচ্ছে না, এটা বলছি না)। যদিও এই পাওয়াটা শুধু নয় স্বাস্থ্য সহ আরো অনেক কিছু পরিষেবা বিনামূল্যে সারাবছর ধরে মেহনতি মানুষের পাওয়াটা যে তার অধিকারের মধ্যে পড়ে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।এখন প্রশ্ন হল শ্রমিক ও শ্রমজীবী জনগণের রক্তচোষা এই ভারত রাষ্ট্র এত ‘মানবিক’ হচ্ছে কেন?

অতীতেও দেখেছি রাষ্ট্র নিজের তত্বাবধানে কিছু পরিমাণ ভূমি সংস্কার করেছে, প্রজাসত্ব আইনের কিছু পরিবর্তন ঘটিয়েছে, বর্গা প্রথা চালু করেছে। এখন কেউ যদি এইগুলোকে উপর থেকে দেখে পুঁজিবাদী বিকাশ হিসাবে চিহ্নিত করে তাহলে সে ভারতীয় কৃষি ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত চরিত্র বুঝতে ভুল করবে, আধা-সামন্ততান্ত্রিক উৎপাদন সম্পর্ককে পুঁজিবাদ বলেই ভুল হবে। আবার এটাও মাথায় রাখা দরকার আধা-সামন্ততন্ত্র মানে পুরোপুরি সামন্ততন্ত্রও নয়। এখানে একদিকে ফসলের একটা অংশ বাজারে আসছে অন্যদিকে তার দামের ক্ষেত্রে পুঁজিবাদী বাজারের নিয়ম না খেটে ফসলের দাম  নির্ধারিত হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগী ফড়ে ফসল ব্যবসায়ীদের সামাজিক কর্তৃত্ব দিয়ে(আরো অনেক উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু ভারতীয় কৃষির অন্তর্নিহিত চরিত্র নির্ধারণ এই প্রবন্ধের লক্ষ্য নয়)। অর্থাৎ একটা বিকৃত পুঁজিবাদ এখানে বিদ্যমান। ভারতীয় শাসক শ্রেণি বিভিন্ন সময় সাম্রাজ্যবাদের(মূলত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ) অঙ্গুলিহেলনে এই বিকৃত পুঁজিবাদের কিছু পরিমাণগত রূপান্তর ঘটিয়ে কিছু অর্থনৈতিক সংস্কার সাধনের মধ্যে দিয়ে (যাকে আমরা ভুয়ো সংস্কার বলতে পারি)জনতার ক্ষোভ বিক্ষোভকে প্রশমিত করা, সংগ্রামী বাম শক্তিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করা ও দমন করার প্রয়াস নিয়ে থাকে। এবং এই পলিসি লাগু করে সাম্রাজ্যবাদ কোনো ক্ষেত্রে কিছুটা পরিমাণে সফলও হয়েছে।

ভূমি সংস্কার থেকে একশ দিনের কাজ, কন্যাশ্রী, স্বাস্থ্যসাথী, দুটাকা কেজি চাল থেকে বর্তমান লকডাউনে সারা দেশ জুড়ে বিনামূল্যে ৫কেজি/৭কেজি চাল-গম দেওয়া- এই সংস্কার প্রকল্প মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের লাল বিপ্লবকে রোখার যে পলিসি তার অন্তর্ভুক্ত। এই পলিসির নাম নিচু মাত্রার যুদ্ধ বা এল.আই. সি(low intensity conflict)। মূলত চিন-ভিয়েতনাম যুদ্ধের নেতিবাচক ফলকে মাথায় রেখেই মার্কিন জেনারেল ম্যাক্সওয়েল টেলর ১৯৬৪ সালে ম্যাকনামারাকে একটি গোপন রিপোর্টে বলে, আমেরিকার জনযুদ্ধ মোকাবিলার নীতি বার্মা, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, জাপান, কোরিয়া, তাইওয়ান ও ফিলিপিনসকে ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এই সময় থেকেই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীরা এই সমস্ত দেশে কমিউনিস্ট বিপ্লব ঠেকানো এবং আধিপত্য চালানোর যে নিষ্ঠুর পরিকল্পনা নেয়, তাই হল এল.আই. সি। এই যুদ্ধ উঁচু বা মাঝারি মাত্রার যেমন নয় তেমনি এর কার্যকলাপ শুধু সামরিক নয়, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকও। এই কার্যকলাপগুলো হয় প্রকাশ্য এবং গোপন। এল.আই. সির মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদীদের লক্ষ্য হল দেশের দালাল শাসকদের পেছনে থেকে সেখানকার বিপ্লবী আন্দোলনকে দমন করা, ভুয়ো সংস্কারমূলক কাজের সাহায্যে জনগণের হৃদয় জয় করা। তাই মার্কিন সামরিক বিষয়ক সচিব জন ইয়ার্ম বলেন “বিপ্লবের উত্থানের কারণগুলি সামরিক বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়”। এল. আই. সির উদ্দেশ্য হল অপ্রচলিত, অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক, মনস্তাত্ত্বিক এবং বলপ্রয়োগের মাধ্যমে এই নিষ্ঠুর ‘নিচু মাত্রার পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ’ চালানোর মধ্যে দিয়ে বিপ্লবকে ঠেকানো। আমাদের দেশের আধা-সামন্ততান্ত্রিক উৎপাদন সম্পর্কের মূলে আঘাত না ঘটিয়েই এল. আই. সি পলিসির এই অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি উপর থেকে বিকৃতভাবে পুঁজিবাদী উপাদানের অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে(ব্রিটিশ আমল থেকেই যা চলে আসছে) জনগণের মন জয় করার চেষ্টা করে।

 বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে নিদারুণ খাদ্যাভাব, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, শ্রমিক ছাঁটাই ইত্যাদি প্রশ্নে সারা পশ্চিম বাংলায় ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়। ২৪পরগনা জেলার বিভিন্ন জায়গায় শ্রমজীবী জনতা পুলিশের থানা ও ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিস আক্রমণ করে, বিক্ষোভকারীরা রেল স্টেশন, ব্যাংক, সরকারি বাড়ি, এক মন্ত্রীর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ১৯৬৬সালের জানুয়ারি মাসে এই আন্দোলন জঙ্গি রূপ নেয়। সৈন্যবাহিনী তলব করতে হয়। সারা ষাটের দশকই ছিল শ্রমিক-কৃষক-মধ্যবিত্ত-ছাত্রযুবর সংগ্রামে উত্তাল, যার চূড়ান্ত পরিণতি নকশালবাড়ির কৃষক সংগ্রাম এবং অন্ধ্রের শ্রীকাকুলাম, বিহারের মুসাহরি, উত্তরপ্রদেশের লখিমপুরখেরি, পশ্চিমবঙ্গের ডেবরা- গোবিবল্লভপুর সহ গোটা জঙ্গলমহলে বিপ্লবী কৃষক সংগ্রামের দ্রুত বিস্তৃতি। এই কৃষক সংগ্রাম মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ- সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ সহ সব ধরনের সাম্রাজ্যবাদের হৃদয়ে গভীর ত্রাসের সৃষ্টি করে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীরা ভারতবর্ষে মূলত সংগ্রামী অঞ্চলে ভুমিসংস্কারের(আমূল নয় বলাই বাহুল্য) জোর দেয়। ভারতবর্ষে এল. আই. সি পলিসি লাগু এই সময় থেকেই।  যদিও বিংশ শতাব্দীর আশির দশকে রেগন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হবার পর এল. আই. সি পলিসি পূর্ণাঙ্গ রূপ পায় এবং আরও জোরদার আকার ধারণ করে। চিন-ভিয়েতনাম যুদ্ধের তিক্ত অভিজ্ঞতায় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নীতি নির্ধারকরা বুঝেছিল, সামন্ততন্ত্র-সাম্রাজ্যবাদ উচ্ছেদে কৃতসংকল্প কৃষকদের শুধুমাত্র বন্দুক-বোম দিয়ে দমন করা যাবে না। কৃষক অভ্যুত্থানের বাস্তব সম্ভবনা রোধ করতে বিংশ শতাব্দীর  পঞ্চাশের দশকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের উদ্যোগেই তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ভূমি সংস্কার কর্মসূচি গৃহীত হয়। ভারতে ভুমিসংস্কার কর্মসূচি সিপিএমের কোনো মার্কসবাদ সম্মত মৌলিক রাজনৈতিক এজেন্ডা নয়, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নিষ্ঠুর এল.আই. সি পলিসির একটা অংশ যা সিপিএমের মত নয়া সংশোধনবাদীরা সফল ভাবে পশ্চিমবাংলায় রূপায়িত করে। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে জাপানে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নির্দেশে ভুমিসংস্কার কার্যকর করার মূল পান্ডা ল্যাডেজিনস্কির ১৯৬৯সালে ভারতে আসার মূল কারণই ছিল ভারতের শাসক শ্রেণিকে ভুমিসংস্কার এবং সবুজ বিপ্লবের জন্য চাপ দেওয়া ( ভুমিসংস্কারের একান্ত প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে নেহেরুর বন্ধু মার্কিন রাষ্ট্রদূত চেষ্টার বোলস তাঁকে প্রথম ১৯৫২ সালে ভারতে আমন্ত্রণ করে)। এই সময় ল্যাডেজিনস্কি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল পরিদর্শন করে ভুমিসংস্কারে সরকারি ব্যর্থতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং উপদেশ দেন অবিলম্বে বর্গাদার, ভূমিহীন ও প্রান্তিক চাষিদের অবস্থার পরিবর্তন ঘটানোর। এরপরই ১৯৬৯সালের নভেম্বরে তৎকালীন দেশের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রীদের এক সম্মেলন ডাকেন এবং সেখানে ভুমিসংস্কারের গুরুত্ব বোঝান। এই সময় রকফেলার, কেলগ ফোর্ড প্রভৃতি বহুজাতিক সংস্থা এবং বিশ্ব ব্যাংকের নির্দেশে লাল বিপ্লব থেকে বাঁচতে ভারতকে ‘খাদ্যে স্বনির্ভর’করার নামে পঞ্জাব হরিয়ানারহ প্রায় ২৫টি জেলায় এবং উত্তর প্রদেশ বিহার সহ কিছু কিছু অঞ্চলে বড়ো ও মাঝারি জোতের চাষিদের বিপুল পরিমাণ কৃষি ঋণ ও সরকারি ভর্তুকি দিয়ে সবুজ বিপ্লব আমদানি করা হয়। এর ফলে বিংশ শতাব্দীর আশির দশক থেকে ভারতের কৃষি অর্থনীতিতে কিছু পরিমাণগত পরিবর্তন আসে। ষাটের দশকের মত ব্যাপক খাদ্য সংকট থাকে না। এই প্রসঙ্গে একটা সহজ উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা বুঝতে সুবিধা হয়- আগে যেভাবে ব্যাপক গ্রামীণ প্রান্তিক মানুষ শহরে আসতো ভিক্ষাবৃত্তির জন্য সেই আসাটা আর চোখে পড়ে না। এটা দিয়ে যেমন প্রমাণ হয়না সামন্তবাদের সঙ্গে ব্যাপক জনগণের দ্বন্দ্ব নির্মূল হয়ে গেছে আবার এটাও ঠিক এই ভুয়ো সংস্কার একটা পর্যায়ে প্রান্তিক মানুষের জীবনে কিছু পরিমাণগত পরিবর্তন ঘটায়।

এছাড়াও সেই সত্তর দশক থেকে আজ অবধি এই এল. আই. সি পলিসির অন্তর্গত আরো অনেক ধরনেরর অর্থনৈতিক সংস্কার প্রকল্পের উপর ব্যাপক জোর দেওয়া হয়। ইন্দিরা গান্ধী ব্যাংকগুলোর রাষ্ট্রায়ত্তকরণ করে, কৃষকদের কম সুদে ঋণ অনুমোদন করেন(যদিও ভূমিহীন কৃষক এর আওতাভুক্ত নয়), সত্তরের নকশাল প্রভাব অঞ্চলে প্রতিটা জেলায় ১০০০জনকে রাস্তা নির্মাণ, সেচ প্রকল্প ও নিকাশি ব্যবস্থা তৈরির কাজে নিয়োগ করা হয়, নকশালবাড়ি ও ডেবরার মত এলাকায় আঞ্চলিক বিকাশ কর্মসূচি(CADP)চালু করা হয়। গরিব উপজাতিদের ঋণ মুকুব করে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় স্থানীয় সরকারি আধিকারিকদের। ১/৭০ ধারার আইন অনুযায়ী উপজাতিদের জমির উপর সমতলের বাসিন্দাদের কোনো অধিকার থাকবে না বলে ঘোষিত হয়। উপজাতি এলাকায় স্কুল স্থাপন ও নিরক্ষরতা দূরীকরণের উপরে জোর দেওয়া হয়। গিরিজন কল্যাণ ও সমাজ কল্যাণ দফতরকে দায়িত্ব দেওয়া হয় উপজাতি কল্যানে যথাযথ নীতি রূপায়ণে। পরবর্তীতে অন্ধ্রে চন্দ্রবাবুর সময় বিপ্লবী সংগ্রাম ব্যাপক আকার ধারণ করলে গ্রামীণ গরিবদের আবাসন প্রকল্প, স্বেচ্ছাশ্রম, বন সুরক্ষা সমিতি, মাত্র ২৫পয়সায় সুদে ঋণ এবং রোজগার প্রকল্প(এনআরইজি) নেওয়া হয় যা এল.আই.সির অন্তর্গত। ‘মা-মাটি-মানুষের’ সরকার আসার পর গোটা জঙ্গলমহল জুড়ে দুটাকা কেজি চাল, কন্যাশ্রী, যুব ক্রীড়া উৎসব সবই এই লঘু মাত্রার যুদ্ধের অংশ।

আর বাংলাকে সাম্রাজ্যবাদীরা একটু বেশি গুরুত্বই দেয় কারণ ব্রিটিশ আমল থেকে এখনও পর্যন্ত ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে মোড় ঘোরানো রাজনৈতিক ঘটনা এই বাংলাতেই বারবার হয়েছে (পলাশির যুদ্ধ, মহাবিদ্রোহ, স্বাধীনতা আন্দোলনে সশস্ত্র ধারা, জঙ্গি বাম আন্দোলন, নকশালবাড়ি-লালগড়)। এই এল.আই.সি পলিসি নারীর ক্ষমতায়ন ও মিতব্যয়ী সমাজ গঠনের নামে মেয়েদের রাষ্ট্রের পক্ষে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়। শহরতলি এবং গ্রামে মেয়েদের নিয়ে গড়ে ওঠা স্বনির্ভর গোষ্ঠী এই রকম এক উদাহরণ। এই ধরনের ভুয়ো সংস্কার কর্মসূচি একদিকে যেমন মেহনতি জনগণের জীবনধারণের মানের কিছুটা পরিবর্তন ঘটায়(মৌলিক নয়), আবার জনগণের মধ্যে বিপ্লবী আন্দোলনের প্রতি বিভ্রম তৈরি হয় এবং এই পলিসি জনগণের একাংশ কে অর্থনীতিবাদের খপ্পরে নিয়ে যেতে সফল হয়। এর সাথে সাথে এটাও বাস্তব এই অর্থনৈতিক সংস্কার(আদপে ভুয়ো) কর্মসূচি সংখ্যাগরিষ্ঠ নিপীড়িত মানুষের বুনিয়াদি সমস্যাগুলোর কোনো সমাধান করতে পারে না। করোনা অতিমারিতে শাসক শ্রেণির জনগণকে ৫/৭কেজি বিনামূল্যে চাল বিতরণ আসলে সারা দেশ জুড়ে বিপ্লবী শক্তির উপস্থিতি এবং জোরদার বিপ্লবী সংগ্রামেরই ফল যা দমন করার জন্য সাম্রাজ্যবাদ এবং ভারতের দালাল শাসক শ্রেণি  জনগণকে একটা পর্যায় অবধি  কিছু পরিষেবা দিতে বাধ্য হচ্ছে। আজ উমপুনের মতো মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়ের ত্রাণের ক্ষেত্রেও শাসক শ্রেণি যে কর্মসূচি নেবে, তা এলআইসি-র নীতি অনুযায়ীই নির্ধারিত হবে। কোনো মমতা বা মোদির সদিচ্ছার ওপর নয়।

তাই ‘অধিকার বুঝে নেওয়ার প্রখর দাবিতে’ আন্দোলন যেন অধিকারবোধের নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ করার পথে এগোতে পারে, সে কথা যারা শোষণমূলক সমাজের পরিবর্তন চান, তাদের সবসময়ই মনে রাখতে হবে।নইলে ‘ছায়ার সঙ্গে লড়াই করে’ গাহাতপা ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।  

ছবি সৌজন্য: এশিয়ানেট নিউজ  

সহায়ক বই ও প্রবন্ধ-

১.ইকোনমিক টাইমস, ৩০ নভেম্বর, ১৯৬৯

২. ইমপেরিয়ালিজম’স টাইটেনিং গ্রিপ অন ইন্ডিয়ান এগ্রিকালচার, সুনীতিকুমার ঘোষ

৩. দ্য হোয়াক্স অফ ল্যান্ড রিফর্ম, লিবারেশন, ভলিউম ৩, নং-২, ডিসেম্বর, ১৯৬৯

৪. এছাড়া বিভিন্ন এলআইসি সংক্রান্ত প্রবন্ধ।

Share Now:

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *