করোনাকে কাজে লাগিয়ে সংসদ বাতিল করে একনায়ক হয়ে গেলেন হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরব্যান
পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: গত দু সপ্তাহ জুড়েই দেখা যাচ্ছে গোটা দুনিয়ার চরম দক্ষিণপন্থী শাসকরা করোনা-মহামারিকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করতে চাইছেন। জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে নিজেদের পক্ষে মতামত সংগঠিত করছেন। তার চূড়ান্ত রূপ দেখা গেল সোমবার। হাঙ্গেরির অতি দক্ষিণপন্থী শাসক ভিক্টর অরব্যান সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা কাজে লাগিয়ে গোটা দেশে জরুরি অবস্থা জারি করলেন ‘অনির্দিষ্ট’ কালের জন্য। এখন থেকে তার আদেশেই দেশ চলবে। যদিও তিনি বলেছেন, করোনা-পর্ব চুকলে দেশের মানুষের সব গণতান্ত্রিক অধিকার তিনি ফিরিয়ে দেবেন।
আরও দেখুন: ‘সামাজিক দূরত্ব’ তৈরি করে শ্রমজীবী মানুষের ঐক্য ভাঙা যাবে না, ছবির গ্যালারি
নতুন পরিস্থিতিতে করোনা-প্রতিরোধে সরকারের কোনো পদক্ষেপের বিরোধিতা করলে, তা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। ভাইরাস সম্পর্কে কেউ ইচ্ছা করে ভুল তথ্য ছড়ালে, সেই ব্যক্তির পাঁচ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। বলে রাখা ভালো, হাঙ্গেরিতে এই মুহূর্তে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪৫০।
২০১০ সালে অরব্যান নতুন করে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ধীরে ধীরে বিচার ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা ধ্বংস করা হয়েছে এবং গণমাধ্যমের ওপর অরব্যানের দল ফিডেসের নিয়ন্ত্রণ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। সোমবার যে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে, তা নিয়ে কোবল প্রশ্ন তুলতে পারে সংসদ এবং সাংবিধানিক আদালত। সংসদে ফিডেসের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে আর বিরোধীদের মতে, আদালতে এই মুহূর্তে অরব্যান-অনুগতদের সংখ্যাই বেশি।
আরও পড়ুন: গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে করোনাকে কাজে লাগাতে পারে কর্তৃত্ববাদী শাসকরা, সতর্কতা জরুরি
ফলে বিরোধীরা বলছেন, নতুন আইন করে অরব্যান যাবতীয় চক্ষুলজ্জা ত্যাগ করলেন। অন্যদিকে ফেডেসের দলের লোকদের বক্তব্য, এই আইনকে অগণতান্ত্রিক বলা চলে না কারণ আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে কিনা, তা সংসদ এবং সাংবিধানিক আদালত দেখবে।
সোমবার এই আইন পাস হওয়ার আগে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পক্ষ থেকে একে অগণতান্ত্রিক হিসেবে চিহ্নিত করে বিবৃতি দেওয়া হয়। সেই বিবৃতিতে কোনো ফল না হলেও, এতে অরব্যানকে চাপে রাখা যাবে বলে মনে করছেন অনেকে।
তবে হাঙ্গেরির স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর কোনো উন্নতি যে গত দশ বছরে হয়নি, সে কথা একান্তে মেনে নিয়েছেন অরব্যানের দলের লোকেরাও।
সমালোচকদের মতে, আমেরিকার ট্রাম্প, ব্রাজিলের বলসেনারো, পোল্যান্ডের ক্যাজিনস্কি যা করতে চেয়েও এখনও করে উঠতে পারেননি, তাই করে দেখালেন হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী।
সব মিলিয়ে ইতিহাসকে নতুন করে লেখার পথে আর একধাপ এগোলেন অভিবাসী বিরোধী ভিক্টর অরব্যান। ইউরোপে নতুন করে শোনা যাচ্ছে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি।
আর ভারতে?