করোনা লক ডাউন: অভূতপুর্ব কর্মহীনতার মুখোমুখি ভারত
পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: করোনা সংক্রমণ এবং দেশের বিভিন্ন শহরে লক ডাউন ঘোষণা করায় কেবল টুরিজম ও হোটেল শিল্পেই কাজ হারবেন তিন কোটি আশি লক্ষ মানুষ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিয়ে একথা জানিয়ে দিল ফেডারেশন অফ এসোশিয়েশন ইন ইন্ডিয়ান টুরিজম এন্ড হসপিটালিটি। চিঠিতে ফেডারেশন বলেছে, সরকার যদি অবিলম্বে ব্যবস্থা না নেয়, তবে সমগ্র শিল্পটিই ধ্বংস হয়ে যাবে।
মোদির জমানায় একদিকে শ্রমিকদের বেতন কমানো, অন্যদিকে করপোরেট সংস্থাগুলিকে বিপুল ছাড় দেওয়ার ফলে দেশের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। গত ৪৫ বছরে বেকারির হার সর্বোচ্চ। তার ওপরে লক ডাউনের প্রভাবে দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের মুখে এসে দাঁড়াবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকরা। দেশের প্রায় ৯৩ শতাংশ শ্রমিক অসংগঠিত ক্ষেত্রে কাজ করেন।
আরও পড়ুন: শ্রমজীবীদের সুরক্ষা না দিয়ে লকডাউনের পথে হাঁটলে করোনার পর আসবে অনাহারজনিত মহামারি
ন্যাশনাল রেস্টুরেন্ট এসোশিয়েশনের মতে দেশে রেস্টুরেন্টগুলিতে কমপক্ষে ৭৩ লক্ষ মানুষ কাজ করেন। এর মধ্যে অন্তত ১৫ লক্ষ মানুষ কাজ হারাবেন। দেশের দোকান কর্মচারীদের সংখ্যা প্রায় চার কোটি ষাট লক্ষ। রিটেলার্স এসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়ার মতে এর মধ্যে কাজ চলে যাবে প্রায় এক কোটি ১০ লক্ষ মানুষের।
২০১৭ সালে নির্মাণ শিল্পে কাজ করতেন পাঁচ কোটির বেশি মানুষ। বর্তমান আর্থিক সঙ্কটের ফলে এদের প্রায় ২০ শতাংশ ইতিমধ্যেই কাজ হারিয়েছেন। করোনা লক ডাউনের ফলে আরও প্রায় 35 শতাংশ মানুষ কাজ হারবেন বলে নির্মাণ সংস্থাগুলির আশংকা।
অ্যাপ- ভিত্তিক পরিবহণের (ওলা, উবর প্রভৃতি) সঙ্গে যুক্ত প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ। লক ডাউন শুরু হবার আগেই এক্ষেত্রে চাহিদা কমে গেছিল প্রায় ৪০ শতাংশ। স্বাভাবিক ভাবেই এক্ষেত্রেও ব্যাপক কর্ম সংকোচনের আশংকা করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।
গাড়ি শিল্পে সঙ্কটের কারণে আগে থেকেই কর্মী ছাঁটাই চলছিল। ২০১৯-এ গাড়ি ও তার যন্ত্র নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রায় ২৩ লক্ষ মানুষ কাজ হারিয়েছিলেন। করোনা আতংক শুরু হবার পর গাড়ির শোরুমগুলিতে খদ্দেরের সংখ্যা প্রায় ৭০ শতাংশ কমে গেছে বলে জানিয়েছে ফেডারেশন অফ অটোমোবাইল ডিলার্স এসোসিয়েশন। আর লক ডাউন শুরু হবার পরপরই এই সুযোগে উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে ফোর্ড, হিরো এবং ফিয়াট সংস্থা।
কৃষির পরে সব চেয়ে বেশি কর্ম সংস্থান হয় দেশের বস্ত্র শিল্পে। পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের প্রায় ৬৫ শতাংশই মহিলা। করোনা এবং লক ডাউনের ফলে এই শিল্পও এখন বন্ধ হবার মুখে।
বিশেষজ্ঞদের মতে সরকার যদি অবিলম্বে বেকার ও কর্মচ্যুতদের জন্য ভাতা দেওয়া শুরু না করে এবং বিশেষত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলিকে বাঁচানোর জন্য প্যাকেজ ঘোষণা না করে তবে ভারত শীঘ্রই অনাহার জনিত মহামারির মুখোমুখি এসে দাঁড়াবে।
সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী, সঙ্কট মোকাবিলায় অর্থ সংগ্রহ করতে মোদি সরকার ইতিমধ্যেই বিশ্বব্যাঙ্ক ও আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের দ্বারস্থ হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে চড়া সুদে এবং জন বিরোধী শর্তে ঋণ না নিয়ে সরকারের উচিত দেশীয় কর্পোরেট ও বহুজাতিকদের ওপর ‘করোনা কর’ চাপিয়ে অর্থ সংগ্রহ করা ।