Home রাজনীতি মোদি প্রশাসনের এক দশক: পিপলস ম্যাগাজিনের চোখে/ ৪— ‘নির্বাচিত স্বৈরতন্ত্র’

মোদি প্রশাসনের এক দশক: পিপলস ম্যাগাজিনের চোখে/ ৪— ‘নির্বাচিত স্বৈরতন্ত্র’

মোদি প্রশাসনের এক দশক: পিপলস ম্যাগাজিনের চোখে/ ৪— ‘নির্বাচিত স্বৈরতন্ত্র’
0

সংসদ, সরকার ও বিচারব্যবস্থায় মোদি আরএসএসের রাজনীতিকে সরাসরি কার্যকর করছেন। বিভিন্ন তদন্ত সংস্থা, পুলিশ ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক যন্ত্রগুলিকে নিজের হাতে রেখেছেন। তিনি ভিতর-বাহিরের গোটাটাই শাসন করেন। যোজনা কমিশন, সিবিআই, সিভিসি, ইডি, আরবিআই এমনকি বিচারব্যবস্থার মতো স্বাধীন ‘সাংবিধানিক’ প্রতিষ্ঠানগুলিকেও তিনি পদদলিত করেছেন। তিনি বলেন, এক দেশ, এক পার্টি, এক নেতা এবং ভগবান তাকে পাঠিয়েছেন দেশ শাসন করতে। তিনি দেশকে স্থায়ী স্বৈরতন্ত্রের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। মোদি কখনও সংসদকে মসৃণ ভাবে চলতে দেননি। কোনো গুরুত্বপূর্ণ আইন নিয়ে আলোচনা করতে দেননি। বিরোধী সদস্যদের প্রশ্নের উত্তর দেন না। সংসদে কম থাকেন এবং বিদেশ সফর বেশি করেন। সংসদের গুরুত্ব কমিয়ে দিয়ে জনগণের শত শত কোটি টাকা খরচ করে চলেছেন। কর্তব্য পথের নামে বৈদিক মন্ত্র ও দণ্ড সহকারে সংসদকে নতুন বাড়িতে সরিয়ে দিয়েছেন। এই ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে, মোদি সরকারের সংস্কৃতিটা মধ্যযুগের অত্যাচারী সামন্ত সংস্কৃতির মতোই। শোষণের অংশীদারি নিয়ে কামড়াকামড়ি করার জায়গা হলো সংসদ, কিন্তু মোদি সরকার যে ন্যূনতম গণতন্ত্রটুকু রয়েছে তাকে এবং সংবিধানকে পদদলিত করে লোকসভা ও রাজ্যসভা থেকে ১৪৬জন সাংসদকে বিতাড়িত করে। এরা সংসদীয় গণতন্ত্রের মূল্যবোধগুলিকেও ভেঙেচুরে তছনছ করে দিয়েছে।

মোদি প্রশাসনের এক দশক: পিপলস ম্যাগাজিনের চোখে/ ৩—অর্থনীতি

মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পরই তারা বেশিরভাগ প্রধান মিডিয়া হাউজকে গোদি(ক্ষমতার সঙ্গী) মিডিয়ায় পরিণত করে। যে সব মিডিয়া তাদের কথা শুনে চলে না, তাদের তারা নানা ভাবে হেনস্থা করে। যে সব সাংবাদিক তাদের দুর্নীতি ও চুরি-জোচ্চুরি প্রকাশ করেন, তাদের পেছনে তারা পুলিশ ও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকে লেলিয়ে দেয়। তাদের ওপর আক্রমণ ও তাদের বিরুদ্ধে ভুয়ো মামলা চাপিয়ে দেওয়াটা সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। এমনকি তাদের খুনও করা হয়েছে। ২০২২ সালে দেশের ১৯৪ জন সাংবাদিকের ওপর আক্রমণ হয়েছে। যে সব ইতিহাসবিদ ও লেখকরা বিজেপি ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুত্ব ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গলা তুলেছেন, তাদের ওপর ভফুয়ো মামলা চাপিয়ে তাদের জেলে পোরা হয়েছে।

মোদি সরকার চক্রান্ত করে বিরোধী দলগুলির রাজ্য সরকারকে ফেলে দিয়েছে। তারা ‘জন প্রতিনিধিদের কিনে বিজেপির সরকার বানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় নীতিকে লঙ্ঘন করে তারা নিজেদের সীমার বাইরে গিয়ে রাজ্যপালের মাধ্যমে বিরোধী দলগুলি দ্বারা শাসিত রাজ্য সরকারগুলিরে কাজে হস্তক্ষেপ করেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের হাতের পুতুল রাজ্যপালেরা অগণতান্ত্রিক ভাবে বিধানসভায় পাস হওয়া আইনগুলিকে কার্যকর হতে দেয়নি।

আইন, বিচারব্যবস্থা, রাষ্ট্র, সংবিধান হলো নাগরিক-কেন্দ্রীক বিষয়। এই সবকটিরই লক্ষ্য হলো নাগরিকদের স্বাধীনতা দেওয়া। গণতন্ত্র নাগরিক-কেন্দ্রিক বিষয়। কিন্তু প্রতিক্রিয়াশীল মোদির ‘গণতান্ত্রিক’, ‘নির্বাচিত স্বৈরতান্ত্রিক’ শাসনে এটা বিপরীতে কিছু অতিধনীর স্বার্থে চালিত হচ্ছে। এরা জনগণের স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে এবং তাদের ন্যূনতম অধিকারগুলিকেও পদদলিত করছে ও এগুলির ওপর তীব্র আক্রমণ নামিয়ে আনছে। যে স্বার্থপর মুৎসুদ্দি আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থা যে কোনো উপায়ে সম্পদ সঞ্চয় ও নিজেদের সুবিধা ছাড়া কিছু ভাবে না, সেই ব্যবস্থাকে গ্রাম স্তর পর্যন্ত নামিয়ে আনা হচ্ছে। এরা সরকারি যন্ত্র, সর্বোচ্চ আইনসভা এবং বিচারব্যবস্থার ওপর আধিপত্য স্থাপন করেছে। এরা আইএএস, আইপিএস এমনকি সশস্ত্র বাহিনীকেও কেন্দ্রীয় সরকারি পরিকল্পনার(বিকশিত ভারত সংকল্প যাত্রা) প্রচারক বানিয়ে তুলেছে। যা মোদির শাসনের বিলোপবাদী(গণতন্ত্র) নীতির চূড়ান্ত নিদর্শন। একদিকে মোদি ‘গণতান্ত্রিক’ হওয়ার ভান করেন, অন্যদিকে তিনি সরকারি যন্ত্রকে সম্পূর্ণ ভাবে আমলাতান্ত্রিকীকরণ এবং যে কোনো কুখ্যাত স্বৈরশাসকের থেকে বেশি মাত্রায় ‘নির্বাচিত স্বৈরত্ন্ত্র’কে কার্যকর করছেন।  শ্রমিক, কৃষক, মহিলা, আদিবাসী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগণ, নিপীড়িত জাতিসত্তাগুলি, মৎস্যজীবী, ছাত্র, যুব, কর্মচারী, শিক্ষক, অন্যান্য পেশাদার, ছোটো ও মাঝারি ব্যবসায়ী ও গোটা দেশের জনগণ ফ্যাসিবাদী আইন ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার। অসমের সাংস্কৃতিক মন্ত্রকের মাধ্যমে সেখানকার ১৩টি জাতিসত্তার প্রতীককে সরিয়ে তার জায়গায় হিন্দু ধর্মের প্রতীক ব্যবহার করার বিরুদ্ধে মোদির শততম ‘মন কি বাত’-এর দিন অসমের শিবসাগর জেলায় শয়ে শয়ে মানুষ বিক্ষোভ দেখান। সে রাজ্যের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পড়ুয়া এবং শিক্ষাবিদরা সমাজ মাধ্যমে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। (ক্রমশ)

Share Now:

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *