Home অর্থনীতি মোদি প্রশাসনের এক দশক: পিপলস ম্যাগাজিনের চোখে/ ২—দারিদ্র্য ও বেকারত্ব

মোদি প্রশাসনের এক দশক: পিপলস ম্যাগাজিনের চোখে/ ২—দারিদ্র্য ও বেকারত্ব

মোদি প্রশাসনের এক দশক: পিপলস ম্যাগাজিনের চোখে/ ২—দারিদ্র্য ও বেকারত্ব
0

দারিদ্র্য: নীতি আয়োগ বলেছে, ২৫ কোটি ভারতীয়কে দারিদ্র্য থেকে তুলে আনা হয়েছে এবং তারা ভুয়ো প্রচার চালাচ্ছে যে এটাই নাকি ‘নতুন ভারত’, ‘অম্রুত কাল’ ও ‘কর্তব্য কাল’-এর মহত্ত্ব। ২০১৭-১৮ থেকে কেন্দ্রীয় সরকার গরিবি সংক্রান্ত সমীক্ষা বন্ধ রেখেছে এবং মোদির বাণীগুলিকে স্বর্গীয় করে তোলার জন্য নতুন নতুন তাস খেলছে। আমরা জানি, নীতি আয়োগ মোদি সরকারের নির্দেশে গণ বণ্টন ব্যবস্থার বেসরকারিকরণ, বিনামূল্যের খাদ্য-উপভোক্তা ও ভরতুকি কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে।

মাথাপিছু খাদ্য শস্যের লভ্যতার ভিত্তিতে গ্রামীণ দারিদ্র্যের পরিমাপ করার বিষয়ে এর আগে যোজনা কমিশন সম্মতি দিয়েছিলো। তাদের হিসেব ছিলো, গ্রামে যারা প্রতিদিন মাথাপিছু ২২০০ ক্যালরির কম ক্রয় করতে পারেন, তারাই দারিদ্র্য সীমার নীচে। ২০১৭-১৮-র জাতীয় নমুনা সমীক্ষা অনুযায়ী, যারা প্রতিদিন মাথাপিছু ৭০ টাকার কম আয় করেন, তারা ২২০০ ক্যালরি শক্তিসমৃদ্ধ খাদ্য কিনতে পারেন না। যারা ন্যূনতম খাদ্যশস্য জোটাতে পারেন না এমন মানুষের সংখ্যা গ্রামাঞ্চলে ৮০ শতাংশে পৌঁছে গেছে। এই হিসেব অনুযায়ী আমাদের দেশের ৬৭ শতাংশ অর্থাৎ দুই-তৃতীয়াংশ জনগণ দারিদ্র্যসীমার নীচে রয়েছেন। মজুরি কমে যাওয়া, মূল্যবৃদ্ধি, চিরস্থায়ী বেকারত্ব ভারতকে ১২৫ দেশের বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ১১১তম স্থানে পৌঁছে দিয়েছে। দেশের অধিকাংশ জনগণ গুরুতর অপুষ্টি এবং ৭০ শতাংশ মহিলা রক্তাল্পতায় ভুগছেন। শিশুমৃত্যুর সংখ্যা অত্যন্ত বেশি। ৬০ শতাংশ শিশু প্রয়োজনের তুলনায় কম ওজনের সমস্যায় ভোগে। ২০১৫ সালের তুলনায় ২০২৩-এ অপুষ্টি বেড়েছে। কিন্তু মোদি সরকার দেশের জনগণকে উপোস করিয়ে খাদ্য রফতানি করছে।

২০২৪ সালের মানব সুখ সূচকে(হিউম্যান হ্যাপিনেস ইনডেক্স) ১৪৬টি দেশের মধ্যে ভারত ১২৬ নম্বর স্থানে রয়েছে। উপার্জন এবং সম্পদের অসাম্য সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। ২০২৩ সালে প্রকাশিত অক্সফ্যামের রিপোর্ট অনুযায়ীদেশের ১ শতাংশ ধনী, দেশের ৪০ শতংশেরও বেশি সম্পদের অধিকারী। অন্যদিকে জনসংখ্যার অর্ধেক নিম্নবিত্ত মানুষের কাছে রয়েছে ৩ শতাংশ সম্পদ। শ্রম সমীক্ষায় প্রকাশিত হয়েছে ২০১৭-১৮ থেকে ২০২২-২৩-এর মধ্যে গড় মাসিক মজুরি ২০ শতাংশ কমে গেছে। অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের প্রকৃত মজুরি কমে গেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বেড়ে চলেছে। কিন্তু জনগণের উপার্জন বাড়ছে না। কর্মসংস্থানের অভাবের কারণে শহর ও গ্রামের জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে এবং তারা খাবার কিনতে পারছেন না। নীচের তলার ৮০ শতাংশ মানুষের প্রকৃত মজুরি কমে গেছে এবং দারিদ্র্যের অনুপাত বাড়ছে। সরকার আরও ৫ বছর ধরে যদি ৮০ কোটি মানুষকে মাসে ৫কিলো করে চাল না দিত, তাহলে তারা খেতে পেতো না—এর থেকেই বোঝা যায় জনগণের জীবনধারণের মান কতটা নেমেছে। এটাই নীতি আয়োগের মিথ্যাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।

একদিকে মোদি সরকার দারিদ্র্য দূরীকরণে তাদের ব্যর্থতাকে ঢাকার জন্য ভুল পরিসংখ্যান দিয়ে জনগণের মনোযোগ ভুল দিকে চালিত করছে। অন্যদিকে ভোটের বছরে ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখতে বিশাল আকারে ‘বিকশিত ভারত সংকল্প যাত্রা’ করে ‘সমস্যার শেষ—মোদির গ্যারান্টি’ বলে বাতেলা করছে। যেভাবে প্রচারিত হচ্ছে সেই পরিমাণে বাড়ি, বিনামূল্যে রেশন, প্রতি বাড়িতে জল, রান্নার গ্যাস, কৃষকদের প্রতি বছর ৬০০০ টাকা এবং চিকিৎসার জন্য ৫ লক্ষ টাকা যে গরিব, মহিলা, যুবসমাজ এবং কৃষকদের কাছে পৌঁছবে তার কোনো গ্যারান্টি নেই। দারিদ্র্য দূর হবে না। এটা স্পষ্ট যে দারিদ্র্য দূর না হলে বিকশিত ভারতের লক্ষ্যও অর্জন হবে না।

মোদি প্রশাসনের এক দশক: পিপলস ম্যাগাজিনের চোখে/ ১

কর্মসংস্থান তৈরির দাবি সম্পূর্ণ ভুয়ো: প্রতি বছর ২ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি মোদি পূরণ করেননি। শূন্যপদগুলিতেও নিয়োগ হয়নি। তারওপর স্থায়ী চাকরিও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছাঁটাই ও স্বেচ্ছাবসরের নামে ২.৭ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি স্থায়ী কর্মচারীকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৭টি বৃহৎ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা থেকে ১৫ লক্ষ শ্রমিককে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ‘চাকরি মেলা’র নাম করে অস্থায়ী নিয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিতে অস্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ১৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪২ শতাংশ হয়ে গেছে। এই অর্থহীন নিয়োগে যুবসমাজ হতাশ। কর্মসংস্থানের সমস্যা সমাধানের জন্য কোনো চেষ্টা নেই। একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে দেশে ৪৪ কোটি কর্মচারী ছিলেন, ২০২২-এর ডিসেম্বরে তা কমে হয়েছে ৩৮ কোটি। এই সময়পর্বে কর্মক্ষম শ্রমিকের সংখ্যা ৭৯ কোটি থেকে বেড়ে ১০৬ কোটি হয়েছে। সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমির পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২২-২৩-এ নিযুক্ত শ্রমিকের সংখ্যা ৩৯.৫ শতাংশ হয়ে গেছে, যা তার আগের ৭ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। এর থেকে জানা যাচ্ছে, ১৫ বছরের বেশি বয়সিদের মধ্যে ৪০ শতাংশ কাজ পাচ্ছেন, বাকি ৬০ শতাংশ পরিবারের সদস্য বা অন্যদের ওপর নির্ভর করে আছেন। এদিকে অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের মান খারাপ এবং মজুরি খুবই কম। মোদি সরকার যে জিডিপি-র তথ্য প্রকাশ করছে তা জনগণকে ভুল দিকে চালিত করছে, কোটি কোটি মানুষের দারিদ্র্যকে লুকিয়ে রাখছে—যা তাদের মজুরি-নিযুক্তির বদলে স্বনিযুক্তির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

মোদি সরকারের বিভিন্ন পলিসির জেরে ৮ লক্ষ ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্প ও দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লক্ষ লক্ষ শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। বেকারত্ব ৪৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ১৮-২৫ বছর বয়সি স্নাতকদের ৪২ শতাংশ বেকার। প্রতি দু’জনের মধ্যে একজন বেকার। বর্তমানে দেশে ২৭ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ কর্মহীন। প্রতি মাসে বেকার সংখ্যায় ১৩ লক্ষ মানুষ যুক্ত হচ্ছেন। সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে একটা পদের জন্য হাজার হাজার চাকিরপ্রার্থী প্রতিযোগিতা করছেন। (ক্রমশ)    

 

Share Now:

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *