Home রাজনীতি ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের বার্তা দিয়ে বিশাখাপত্তনমে অনুষ্ঠিত হল সারা ভারত আদিবাসী সম্মেলন

ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের বার্তা দিয়ে বিশাখাপত্তনমে অনুষ্ঠিত হল সারা ভারত আদিবাসী সম্মেলন

ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের বার্তা দিয়ে বিশাখাপত্তনমে অনুষ্ঠিত হল সারা ভারত আদিবাসী সম্মেলন
0

নিজস্ব প্রতিনিধি: অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমের আল্লুরি সীতারামা রাজু বিজ্ঞান কেন্দ্রে গত ২১ মে অনুষ্ঠিত হল সারা ভারত আদিবাসী সম্মেলন। এই সম্মেলনের মধ্যে দিয়েই তৈরি হল জনজাতিদের দেশব্যাপী সংগ্রামী মোর্চা ‘সারা ভারত আদিবাসী ফোরাম’। ‘আদিবাসী পরিচিতি সত্তা’র জন্য সংগ্রাম ও ‘উচ্ছেদ ছাড়াই উন্নয়নের’ আহ্বান দিয়ে সম্মেলন শেষ হয়। সম্মেলনে আদিবাসীদের ওপর নিপীড়ন, জোর করে উচ্ছেদ, আদিবাসীদের জোর করে হিন্দু ধর্মের অঙ্গ করে তোলা এবং আরএসএস-এর বিভাজনের রাজনীতির তীব্র নিন্দা করা হয়।

সম্মেলনের উদ্বোধন করেন ঝাড়খণ্ডের প্রখ্যাত লেখিকা ও আন্দোলনকর্মী ড. বাসবী কিরো। বাসবী কিরো তাঁর বক্তব্যে আদিবাসী ভাষা-সংস্কৃতির উন্নতি সাধনে নয়া আদিবাসী নীতি ও আদিবাসী ইতিহাস একাডেমি তৈরির দাবি তোলেন। আদিবাসীদের সংগ্রামে বাম বিপ্লবী আন্দোলনের অবদানের কথা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরেন তিনি। তিনি বলেন, আদিবাসীদের নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগঠিত হতে হবে। আদিবাসী নয়, এমন অনেক বন্ধু আদিবাসীদের সংগ্রামে অবদান রেখে চলেছে। তিনি ব্যাখ্যা করেন, আরএসএস-নেতৃত্বাধীন শক্তিগুলি আদিবাসীদের মধ্যে বিভাজন ও দ্বন্দ্ব তৈরি করছে কিন্তু যারা ‘লাল সালাম’ বলে, তারা আদিবাসীদের লড়াইয়ের জন্য অনেক বেশি আত্মত্যাগ করছেন।

স্বাধীন ভারতের ৭৫ বছরে দেশের ২০ কোটি আদিবাসীর ওপর অত্যাচারের কথা উঠে আসে তাঁর বক্তব্যে। তাঁর মতে ভারতে আদিবাসীদের দূরবস্থার মূল কারণ হল, রাষ্ট্রের ‘উন্নয়নের জন্য উচ্ছেদ’-এর নীতি, এছাড়া অরণ্য লুঠ, জমি থেকে আদিবাসীদের বিচ্ছিন্ন করা, প্রকৃতি ধ্বংস, তাদের সাংবিধানিক অধিকারগুলি থেকে বঞ্চিত রাখা ইত্যাদি। বাসবী বলেন ভারতে যে ১০ কোটি মানুষকে উচ্ছেদ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশই আদিবাসী।  আদিবাসীদের সম্পদ কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য বিজেপি সরকারকে তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, আদিবাসী মহিলা দেশের রাষ্ট্রপতি হয়েছেন, সেটা খুবই আনন্দের কথা কিন্তু অরণ্যের অধিকার আইন কার্যকর হচ্ছে না এবং আদিবাসীদের ওপর নিপীড়নও বন্ধ হচ্ছে না।

সম্মেলনের অভ্যর্থনা কমিটির চেয়ারম্যান, ভারত সরকারের অবসরপ্রাপ্ত সচির ইএএস শর্মা আদিবাসীদের অধিকার না দেওয়া এবং তাদের প্রাপ্য ভূলুণ্ঠিত করার জন্য ভারত সরকারকে দায়ী করেন। বিজেপি সরকার এতই জনবিরোধী যে তারা জাতীয় আদিবাসী কমিশনের সঙ্গেও কোনো আলোচনা করেনা, বলেন শর্মা।

অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি প্রবীণ সাংবাদিক রামমূর্তি বলেন, আদিবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করলেও, এই সমস্যাগুলি নিয়ে যারা লড়ছে তাদেরকে একজোট করার ক্ষেত্রে খামতি থেকে গেছে। সেই ঐক্যবদ্ধ করার কাজটা করতেই এই সম্মেলন বলে জানান তিনি।

প্রবীণ আইনজীবী ও আদিবাসীদের বিষয়ক লেখক পলা ত্রিনাধ রাও ছিলেন অতিথি বক্তা। তিনি সংবিধানে আদিবাসীদের জন্য কী কী অধিকার আছে, তা বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরেন।  লেগেপড়ে সংগ্রাম চালানোর মধ্য দিয়েই সেই অধিকার কার্যকর করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

এআইকেএমএসের সভাপতি ভি. ভেঙ্কটরামাইয়া বাসবী কিরোর লেখা বই ‘ভারত কি ক্রান্তিকারী আদিবাসী আওরতেঁ’ প্রকাশ করেন এদিনের সম্মেলনে। তিনি আদিবাসীদের অধিকার অর্জনের জন্য আদিবাসী গোষ্ঠীগুলির যত বেশি সম্ভব ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের পক্ষে সওয়াল করেন। শাসক শ্রেণির দলগুলি নিজেদের স্বার্থে আদিবাসীদের মধ্যে যে বিভাজনের বীজ পুঁতে দিচ্ছে, তিনি তার তীব্র সমালোচনা করেন। সংযুক্ত কিষান মোর্চার মতো আদিবাসী ফোরামকেও ঐক্যবদ্ধ ভাবে ইস্যুভিত্তিক আন্দোলনের পথে হাঁটতে হবে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, শ্রীকাকুলামে যে গিরিজন সংঘম গড়ে উঠে উঠেছিল, তা সংগ্রামকে সশস্ত্র সংগ্রামের স্তর অবধি নিয়ে যেতে পেরেছিল।

১১ রাজ্যের ৬০০-রও বেশি প্রতিনিধি সম্মলনে উপস্থিত হয়েছিলেন। তাদের প্রতিনিধিরা বক্তব্য পেশ করেন।  তাদের ইতিবাচক প্রস্তাবগুলি যুক্ত করে ‘সারা ভারত আদিবাসী ফোরাম’-এর খসড়া আহ্বানপত্রটি চূড়ান্ত করা হয়। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মনিপুরের তিন প্রতিনিধিও।

সম্মেলনে চারটি রাজনৈতিক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।

১) মধ্যপ্রদেশের বুরহানপুর, ছত্তীসগঢ় ও দেশের অন্যান্য প্রান্তে আদিবাসীদের ওপর নিপীড়ন, দণ্ডকারণ্যে বিমান হামলার নিন্দা।

২) মহিলা কুস্তিগিরদের সমর্থন এবং বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ সিং-এর গ্রেফতারির দাবি।

৩) মনিপুরে আরএসএসের মদতে হওয়া হিংসা ও হানাহানির নিন্দা।  বিদ্যমান আদিবাসী গোষ্ঠীগুলির অধিকার অক্ষুণ্ন রাখার দাবি।

৪) অন্ধ্রপ্রদেশের ভাকাপল্লিতে আধা সামরিক বাহিনী কর্তৃক আদিবাসী মহিলাদের গণধর্ষণের নিন্দা।

ফোরামের ১৫ জনের কমিটিতে আছেন পশ্চিমবঙ্গের ২ জন, বিহারের ১ জন, উত্তরপ্রদেশের ১ জন, দিল্লির ১ জন, ওড়িশার ২জন, তেলেঙ্গনার ৩ জন, অন্ধ্রের ৩ জন, ঝাড়খণ্ডের ১ জন প্রমুখ। কমিটির দায়িত্ব আগামী দিনে সংগঠন ও সংগ্রামকে বিস্তৃত করা।

সম্মলনে বিপ্লবী গান ও নৃত্য পরিবেশন করে অরুণোদয় কালচারাল ফ্রন্ট।

Share Now:

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *