Home খবর আজীবন কমিউনিস্ট বিপ্লবী ও নদিয়া-মুর্শিদাবাদের বিপ্লবী কৃষক নেতা চণ্ডী সরকার প্রয়াত
0

আজীবন কমিউনিস্ট বিপ্লবী ও নদিয়া-মুর্শিদাবাদের বিপ্লবী কৃষক নেতা চণ্ডী সরকার প্রয়াত

আজীবন কমিউনিস্ট বিপ্লবী ও নদিয়া-মুর্শিদাবাদের বিপ্লবী কৃষক নেতা চণ্ডী সরকার প্রয়াত
0

পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: গত ৫ এপ্রিল, বুধবার রাত এগারোটায় নদিয়ার কৃষ্ণনগরে নিজের বাড়িতে ৭৬ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন আজীবন কমিউনিস্ট বিপ্লবী চণ্ডী সরকার।

চণ্ডী সরকারের জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট নদিয়া জেলার চাপড়া থানার মহারাজপুর গ্রামের এক জমিদার পরিবারে। পিতৃদত্ত নাম ছিল অশোক সরকার। শৈশবকাল থেকেই কৃষ্ণনগরে মামাবাড়িতে মানুষ। ছোটোবেলা থেকেই ভালো স্পোর্টসম্যান ছিলেন। হকি খেলার সুবাদে রেলে চাকরি পান। ষাটের দশকের উত্তাল খাদ্য আন্দোলনের সময় থেকেই সমবয়সি বন্ধুদের সাথে তিনিও রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীতে নকশালবাড়ি কৃষক আন্দোলনের অনুপ্রেরণায় সি পি আই (এম এল)-এ যোগ দেন। প্রথম কিছুদিন চাকরির সাথে সাথে পার্টির কুরিয়ার হিসেবে কাজ শুরু করলেও কিছুদিনের মধ্যেই চাকরি ছেড়ে সর্বক্ষণের কর্মী হিসেবে আত্মনিয়োগ করেন। সেইসময় কৃষ্ণনগর শহর ছিল কার্যত নকশাল বিপ্লবীদের মুক্তাঞ্চল। শোনা যায় কৃষ্ণনগর দখলমুক্ত করতে সেইসময় মিলিটারি নামাতে হয়েছিল। কমরেড চণ্ডী সরকারের মতো আরো অনেক যুবকের সাহসী পরিকল্পনায় মিলিটারির বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়। সেইসময়ই ৭১ সালে দুর্ঘটনাবশত বোম বাঁধার সময় আহত হন। বেশকিছু সাথি শহিদও হন। আহত অবস্থাতেই  চণ্ডী সরকারকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এরপর লকআপে চরম পুলিশি নির্যাতন এবং সাত বছর কারাবাস। মাঝে একবার জেলভেঙ্গে পালিয়ে গিয়েও পুনরায় ধরা পড়ে যান।

চণ্ডী সরকারের মৃতদেহকে ঘিরে গণ জমায়েত

কারামুক্তির পর যখন এম এল শিবির পার্টি লাইনের প্রশ্নে বহুধাবিভক্ত,চারপাশে দক্ষিণপন্থী সুবিধাবাদ ও বাম হঠকারী লাইন মাথা তুলছে,সেইসময় কমরেড চণ্ডী সরকার সি পি আই এম এল (পার্টি ইউনিটি)-তে যোগ দিয়ে কৃষক সংগ্রাম সমিতি গড়ে তুলে নদিয়া মুর্শিদাবাদের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বিপ্লবী কৃষক সংগ্রাম গড়ে তোলেন। তার নেতৃত্ব ও সাহসী পরিকল্পনায় জলঙ্গি নদীর দুপারের অসংখ্য গ্রামে খাস জমি দখল, চরের জমি দখল,মজুরি বৃদ্ধি আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে নদিয়া জেলার চাপড়া,শান্তিপুর, কোতোয়ালি,ভীমপুর, নাকাশিপারা,তেহট্ট, করিমপুর এবং মুর্শিদাবাদ জেলার নওদা,রেজিনগর, ডোমকল থানা এলাকায় ব্যাপক কৃষক সংগ্রামের জোয়ার ওঠে। স্থানীয় ডাকাত,প্রতিক্রিয়াশীল নেতা ও গ্রামীন বদবাবুদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে কৃষক জনগণ। কলিঙ্গ নদীতে মৎসজীবীদের অধিকার নিয়ে ব্যাপক গণ আন্দোলন গড়ে ওঠে। ধীরে ধীরে এই বিস্তীর্ণ সমতল এলাকায় গ্রামে গ্রামে কৃষক সমিতির কর্তৃত্ব গড়ে উঠছিল। এই অবস্থায় রাষ্ট্র বিরাট আকারের সন্ত্রাস নামিয়ে আনে এই এলাকায়। গ্রেফতার হন কৃষক আন্দোলনের বহু  স্থানীয় নেতৃত্ব।

ভগবানপুর গ্রামে মিছিল

২০০৫ সালে চাপড়া থানার কাঠগড়া গ্রাম থেকে  সিপিআই(মাওবাদী)-র রাজ্য কমিটির সদস্য হওয়ার অভিযোগে চণ্ডী সরকার আবার গ্রেফতার হন। ২০১৩ সালে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে নতুন উদ্যমে বিপ্লবী কৃষক  আন্দোলন গড়ে তোলার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। দুবার মিলিয়ে দীর্ঘ ১৫ বছরের কারাজীবনেও তিনি কারাগারে বহু আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। সংগ্রামী কৃষক মঞ্চের পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করতেন তিনি। নদিয়া-মুর্শিদাবাদের বিস্তীর্ণ এলাকায় তার গণভিত্তি ও গ্রহণযোগ্যতা ছিল প্রশ্নাতীত। তাঁর মৃতদেহের সঙ্গে এলাকায় যে মিছিল হয়েছে, তা এই সত্যেরই প্রমাণ দেয়। এই অঞ্চলে নকশালবাড়ির ধারার রাজনীতির ইতিহাসে তিনি ছিলেন মাইলফলক।

Share Now:

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *