Home খবর গালওয়ানে শহিদের বেদি বানিয়ে জমি বেচতে বাধ্য করা হচ্ছে, বিহারের মহাদলিত পরিবারের অভিযোগ
0

গালওয়ানে শহিদের বেদি বানিয়ে জমি বেচতে বাধ্য করা হচ্ছে, বিহারের মহাদলিত পরিবারের অভিযোগ

গালওয়ানে শহিদের বেদি বানিয়ে জমি বেচতে বাধ্য করা হচ্ছে, বিহারের মহাদলিত পরিবারের অভিযোগ
0

পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: ২০২০ সালে গালওয়ানে চিনা সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে শহিদ হন ভারতের সেনা জওয়ান জয়কিশোর সিং। তার পরিবার থাকে বিহারের বৈশালী জেলার চক ফতেহ গ্রামে। সেখানে ছেলের স্মৃতিতে একটি শহিদ বেদি তৈরি করেছে তারা। এখন সেই শহিদ বেদি জাতপাত ও জমি নিয়ে সংঘর্ষের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার জেরে মৃত জওয়ানের বাবাকে দিন কয়েকের জন্য গ্রেফতারও হতে হয়েছে।

জয়কিশোরের পরিবার ঠিক রাস্তার ধারে সরকারি জমিতে তার শহিদ বেদিটি তৈরি করেছে। প্রথমে সেখানে কেবল চারটি স্তম্ভ ছিল। পরে সেখানে একটি আবক্ষ মূর্তি বসিয়ে দেওয়াল তোলা হয়।

বেদিটি মহাদলিত সম্প্রদায়ের হরিনাথ রামের জমির ঠিক সামনে। হরিনাথের অভিযোগ, বেদিটি এমন ভাবে তৈরি হয়েছে, যাতে তার জমিতে ঢোকার পথ আটকে গেছে। এটা তার জমিটি দখল করারই ছক।

হরিনাথের অভিযোগের ভিত্তিতে জয়কিশোরের বাবা রাজপুত রাজকাপুর সিং ২৫ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার হয়। অভিযোগ ছিল, মানুষের জীবনকে বিপদে ফেলা, স্বেচ্ছায় আঘাত করা, জনসমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি এবং অপরাধমূলক ভাবে ভয় দেখানোর। তপশিলি জাতি/উপজাতি আইনের বিভিন্ন ধারাতেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। ২ মার্চ সে জামিন পেয়েছে। হরিনাথের গ্রাম চক ফতেহ থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে।

হরিনাথের ছেলে মনোজকুমার মনে করে, তার পরিবারকে জমি বিক্রি করতে বাধ্য করতেই বেদিটি তৈরি করা হয়েছে। বেদিটি তাদের জমিতে যাওয়ার পথ বন্ধ করে দিয়েছে। তার বক্তব্য, তাদের জমির সমান্তরাল ভাবেই রয়েছে রাজকাপুরদের জমি অথচ মৃত জওয়ানের পরিবার নিজেদের জমির সামনে বেদিটি বানায়নি। এমনকি মূর্তিটি স্থাপন করার আগে প্রশাসন থেকে অনুমতিও নেওয়া হয়নি।

প্রশাসনিক নথিতেও স্পষ্ট বলা রয়েছে, কোনো অনুমতি ছাড়াই বেদিটি বানানো হয়েছে এবং এর বিরুদ্ধে দখলদারির মামলা চলছে। দুই পক্ষের মধ্যে এই মর্মে চুক্তি হয় যে ওখানে নতুন করে কোনো নির্মাণ হবে না এবং স্থিতাবস্থা বজায় থাকবে। কিন্তু মনোজের অভিযোগ, তার পরেও জওয়ানের পরিবার সেখানে প্লাস্টার করেছে এবং দেওয়াল তুলেছে।

এই দুই পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্ব নতুন নয়। ২০১৯-এও তাদের মধ্যে গোলমাল বেঁধেছিল। মনোজের মা সুনয়না দেবীর বক্তব্য, সে বছর তিনি যখন নিজেদের জমিতে গম চাষ করতে যান, তখন দেখেন, সেখানে রাজকুমার মাটি ফেলে রেখেছে। তিনি সেটা সরিয়ে নিতে বললে, তাকে নিচু জাত বলে গালাগালি দেওয়া হয়। পুলিশের কাছেও তিনি এই অভিযোগ করেছেন। সেই মামলাতেও রাজকাপুর গ্রেফতার হয়েছিল।

মনোজের বক্তব্য, ২০০৫ সালে সে জমিটি কেনে বাড়ি করবে বলে, কারণ জমিটি রাস্তার ধারেই। কিন্তু রাজপুতরা তাকে জমি বেচতে জোর করছে। মনোজ বলে, “আমি জয়কিশোর সিং-এর শহাদাতকে সম্মান করি। তিনি ভারত ভূমি জন্য লড়াই করেছেন। কিন্তু তার বাবা আমাদের জমি কেড়ে নিচ্ছে। ওরা মনে করে আমরা যেহেতু মহাদলিত, তাই আমাদের বিরুদ্ধে যা ইচ্ছা করা যায়। কিন্তু সংবিধান আমাদের সকলকে সমান অধিকার দিয়েছে। আমরা সবাই শহিদ বেদি চাই। কিন্তু সেটা সব নিয়ম মেনে হতে হবে এবং কাউকে সমস্যায় ফেলা যাবে না। কিন্তু ওরা কোনো আইন মানছে না এবং প্রশাসনের নির্দেশও মানছে না”। মহকুমা শাসক পুনম কেশরিও মনোজ কুমারের সব অভিযোগ মেনে নিয়েছেন।

শহিদ জয়কিশোরের ভাই সেনা জওয়ান নন্দকিশোর মনোজের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তার দাবি, বেদি বানানোর সময়, দুই পক্ষের চুক্তি হয়েছিল, মনোজরা ওই জমি ছেড়ে দেবে। তার বদলে নন্দকিশোররা তাদের অন্য জায়গায় সম পরিমাণে জমি দেবে। সেই মতো তারা জমিও কিনেছে। কিন্তু পুলিশ তাদের সেই কথা শোনেনি, হরিনাথও পরে সেই জমি নিতে চায়নি। নন্দর বক্তব্য, “আমরা যদি তাদের জাতের জন্য সমস্যায় ফেলে থাকি, তাহলে কি ওরা দেড় কিলোমিটার দূর থেকে এসে চাষ করতে পারত”? তার অভিযোগ, পুলিশের বিরুদ্ধেও। পুলিশ তার বাবাকে গ্রেফতারের সময় চড় মেরেছে। গাড়িতেও মারধর করেছে বলে তার দাবি। তার আরও বক্তব্য, তারা থানায় অভিযোগের কথা জানতই না। পুলিশ তাদের বেদি সরিয়ে দিতে বলেছে।

পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা বলছে, সিসিটিভি ক্যামেরার ছবি দেখলেই বোঝা যাবে, অভিযুক্তের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়নি। গ্রাম জাতপাত নিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গিয়েছিল, তাই রাজকাপুরকে গ্রেফতার করা হয়, বলেন পুলিশ আধিকারিক বিশ্বনাথ রাম।

বিশ্বনাথ বলেন, শহিদের নামে শহিদ ভবন আছে। তারপরেও হরিনাথের জমির সামনে বেদি বানানোর কী দরকার? এর পেছনে উদ্দেশ্য কী? বিশ্বনাথ তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, তিনি সংশ্লিষ্ট থানায় আসার আগে থেকেই গোলমালচলছে। তিনি কেবল নিয়ম মেনে কাজ করছেন।

Share Now:

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *