পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ২০২১-২২ সময়কালের শ্রমশক্তি সমীক্ষা রিপোর্ট। অতিমারি-পরবর্তী সময়ে ভারতের শ্রম বাজারের হালহকিকৎ নিয়ে এটিই প্রথম কোনো নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান। জাতীয় নমুনা সমীক্ষা দফতর থেকে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে ২০২১-এর জুলাই থেকে ২০২২-এর জুন পর্যন্ত সময়কাল নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এই রিপোর্টে ভাল-মন্দ দুই দিকের পাশাপাশি যথেষ্ট আশঙ্কার কারণও রয়েছে।
লকডাউনের সময় দলে দলে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিজেদের গ্রামে ফেরার দৃশ্য আমাদের চমকে দিয়েছিল। তাতে ফেরার কষ্ট নিয়ে নাগরিক সমাজে চর্চা বেশি হয়েছিল কিন্তু আড়ালে চলে গিয়েছিল উপার্জন চলে যাওয়ার বিষয়টি। তারপর গ্রামীণ কৃষিক্ষেত্রের ওপর চাপ বাড়ে। এর আগের শ্রমশক্তি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল কৃষিক্ষেত্রের ওপর সেই চাপ বহাল রয়েছে। কিন্তু বর্তমান রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, তা কিছুটা কমেছে অর্থাৎ গ্রাম থেকে মানুষ আবার অন্য জায়গায় কাজে যাওয়া শুরু করেছেন। যদিও অতিমারির আগে সংখ্যাটা যত ছিল, ততটা এখনও হয়নি। সাধারণ ভাবে গ্রামীণ শ্রমশক্তির ৪০% কাজের জন্য অন্যত্র গিয়ে থাকেন।
অনেক স্বাধীন অর্থনীতিবিদ মনে করছিলেন, অতিমারির পর ভারতের অর্থনৈতিক উন্নতির যে ছবি দেখানো হচ্ছে, তা মূলত মুনাফার পরিমাণ দ্বারা তৈরি, এর সঙ্গে মজুরির তেমন সম্পর্ক নেই। বর্তমান শ্রমশক্তি সমীক্ষায়, সেই ধারণার স্বপক্ষে প্রমাণ মিলেছে। লকডাউনের সময় থেকেই বেতনভূক এবং স্বনিযুক্ত শ্রমিকদের প্রকৃত মজুরি কমতে শুরু করেছিল। চলতি রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, তা বাড়ছে। কিন্তু ২০১৭-১৮-র প্রথম রিপোর্টের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে, প্রকৃত মজুরি মূলত একই থেকে গেছে। মূল্যবৃদ্ধির কারণে ২০২২-২৩-এও তা বাড়ার সম্ভাবনা নেই।
১৯-২৯ বছয় বয়সি স্নাতক ডিগ্রিধারীদের মধ্যে ২০২১-২২-এ বেকারত্বের হার ২৯.১%। মাথায় রাখতে হবে, ভারতে এই অংশের মধ্যে শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণের হার মাত্র ৫৩.৭%, তার চেয়ে বেশি বয়সিদের মধ্যে তা ৬২.৪%। আরও বড়ো সমস্যা হল উপার্জনহীন শ্রম, প্রকৃত বেকারত্বকে ঢেকে রাখে। রিপোর্টে দেখানো হয়েছে, ২০১৮-১৯ থেকে এই বয়সিদের মধ্যে বেকারত্বের হার ধীরে ধীরে কমছে। ২০২১-২২-এ তা ১২.৩%। বেতনহীন স্বনিযুক্তদের যদি এই তালিকায় যুক্ত করা যায়, তাহলে তা হবে ৩৪.৯%। এই সংখ্যাটা তার আগের অর্থবর্ষের তুলনায় কম হলেই অতিমারির আগের পর্বের থেকে বেশি। যেটা আরও আশঙ্কার বিষয়, তা হল, উচ্চশিক্ষা তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের সমস্যা বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ যে ধরনের কাজ বাজারে মিলছে, তা তাদের প্রত্যাশার সঙ্গে খাপ খাচ্ছে না। যে অর্থনীতিতে এক-তৃতীয়াংশ তরুণ স্নাতকের কাজ জোটে না, তা যে বিপদের মধ্যে রয়েছে, তা বলাই বাহুল্য।