Home শ্রমিক-কর্মচারী ভারতে প্রতিদিন গড়ে ৩ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় কারখানায়, বছরে আহত হন ৪০০০

ভারতে প্রতিদিন গড়ে ৩ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় কারখানায়, বছরে আহত হন ৪০০০

ভারতে প্রতিদিন গড়ে ৩ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় কারখানায়, বছরে আহত হন ৪০০০
0

পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: একটি সংবাদ মাধ্যমের তথ্যের অধিকার আইনে প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রকের অধীনস্থ ‘ডিরেক্টরেট জেনারেল ফ্যাক্টরি অ্যাডভাইস সার্ভিসেস অ্যান্ড লেবার ইনস্টিটিউটস’(ডিজিএফএএসএলআই)এক চমকপ্রদ তথ্য জানিয়েছে। ভারতে নভিভুক্ত কারখানাগুলিতে দুর্ঘটনায় গড়ে প্রতিদিন ৩ জন শ্রমিক মারা যান, ১১ জন আহত হন।

রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে প্রতি বছর গড়ে কারখানায় দুর্ঘটনায় ১১০৯ জন মারা যান, ৪০০০ জন আহত হন। এই তথ্য ২০১৭-২০২০-র মধ্যেকার। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি। কারণ, বেশিরভাগ দুর্ঘটনা ঘটে অসংগঠিত ক্ষেত্রে, সেখানেই ভারতের ৯০ শতাংশ শ্রমিক কাজ করেন। আর এই সরকারি তথ্য কেবল নথিভুক্ত কারখানার।

২০১৮ থেকে ২০২০-র মধ্যে অন্তত ৩৩৩১ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। অথচ ১৯৪৮ সালের কারখানা আইনে শাস্তি হয়েছে মাত্র ১৪ জনের।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার ২০১৫ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতি বছর শিল্প-দুর্ঘটনায় দুনিয়া জুড়ে সাড়ে তিন লক্ষেরও বেশি শ্রমিকের মৃত্যু হয় এবং ৩১ কোটি্ ৩০ লক্ষ শ্রমিক গুরুতর ভাবে আহত হন।

তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে ভারতে ৩,৬৩,৪৪২টি কারখানা নথিভুক্ত ছিল, তার মধ্যে ৮৪ শতাংশয় কাজকর্ম চলত। এগুলিতে মোট ২ কোটি শ্রমিক কর্মরত আছেন। ২০২০ সালের পরবর্তী তথ্য এখনও কোথাও প্রকাশিত হয়নি। প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কারখানা-দুর্ঘটনায় শ্রমিকদের মৃত্যুতে সবচেয়ে এগিয়ে গুজরাট। ২০১৯ সালে গুজরাটে কারখানা-দুর্ঘটনায় ৭৯ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয় এবং ১৭৯ জন শ্রমিক গুরুতর ভাবে আহত হন। সবকটি মৃত্যুই হয়েছে রসায়ন ও রাসায়নিক পণ্য ক্ষেত্রে।

২০২২ সালের অক্টোবরে দিল্লিতে ১৩,৪৬৪টি নথিভুক্ত কারখানা রয়েছে, ২০১৮ থেকে ২০২২-র মধ্যে সে রাজ্যে ১১৮ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। গত নভেম্বরে দিল্লির শ্রম দফতর এই তথ্য প্রকাশ করেছে। যদিও এর মধ্যে অসংগঠিত ক্ষেত্রের তথ্য নেই।

২০১৭ থেকে ২০২০-র মধ্যে পশিচিমবঙ্গের কারখানাগুলিতে গুরুতর দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩৯টি, সাধারণ দুর্ঘটনা ঘটেছে ২৩টি।

বিশেষজ্ঞ এবং ট্রেড ইউনিয়নগুলির অভিযোগ, সংস্কারের নামে ধারাবাহিক ভাবে শ্রম সুরক্ষা আইনগুলিকে দুর্বল করা হচ্ছে।

২০২০ সালে শিল্প-সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য আইনে সংস্কার করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে এটি ১৯৪৮ সালের কারখানা আইনের তুলনায় নখদন্তহীন। এতে শ্রম পরিদর্শকের পরিদর্শনের ক্ষেত্রে কারখানাগুলিকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এই আইনে বলা হয়েছে, জটিল কাজের ক্ষেত্রে কারখানায় ২৫০ শ্রমিক আর সাধারণ কাজের ক্ষেত্রে কারখানায় অন্তত ৫০০ শ্রমিক নিযুক্ত থাকলে, তবেই সেগুলিতে সুরক্ষা কমিটি গঠন করা যাবে।

এছাড়াও নতুন কোডে, কারখানার সংজ্ঞাও পালটে দেওয়া হয়েছে। নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী একটি ইলেকট্রেক কারখানায় অন্তত ৪০ জন শ্রমিক নিযুক্ত থাকলে, তবেই সেখানে শ্রম আইন প্রযুক্ত হবে। আগে এই সংখ্যাটা ছিল ২০।

এছাড়া, যেসব কারখানায় বিদ্যুতের সাহায্যে কাজ হয়, সেখানে শ্রম আইন প্রযুক্ত হতে হলে অন্তত ২০ জন শ্রমিক নিযুক্ত হতে হবে। আগে এই সংখ্যাটা ছিল ১০ জন।

এই ভাবে ব্যাপক সংখ্যক শ্রমিককে শ্রম আইনের বাইরে রাখা হচ্ছে। কারখানা মালিক বা সরকার- কেউই তাদের দায়িত্ব নেবে না।

নয়া শ্রম কোড পাস হওয়ার আগে থেকেই শ্রমিক সুরক্ষার বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত নেতিবাচক। শ্রম পরিদর্শন প্রায় বন্ধই হয়ে এসেছিল। হয়তো এসবের জন্যই দুর্ঘটনা এত বেড়েছে।

Share Now:

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *