পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: মাস দেড়েক ধরেই চলছে আন্দোলন। বেতন বাড়ানো সহ আরও নানা দাবিতে আলাদা আলাদা ভাবে আন্দোলন-ধর্মঘট চালাচ্ছিলেন ব্রিটেনের সরকারি নার্স, অ্যাম্বুলেন্স কর্মীরা। কিন্তু গত সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারি দুই পক্ষ যৌথ ভাবে ধর্মঘট পালন করলেন ব্রিটেন জুড়ে। ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা বা এনএইচএসের ৭৫ বছরের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বড়ো আকারের ধর্মঘট।
এটাই শেষ নয়। এই সপ্তাহ জুড়েই বিভিন্ন দিনে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের বিভিন্ন পেশার মানুষ ধর্মঘটে সামিল হবেন। স্বাস্থ্যকর্মীরা এই সপ্তাহটিকে ধর্মঘটের সপ্তাহ হিসেবে পালন করছেন।
চার দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূল্যবৃদ্ধিতে জ্বলছে গোটা ব্রিটেন। স্বাস্থ্যকর্মীদের দাবি, এই মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাড়াতে হবে তাদের বেতন। কিন্তু সরকার তাতে রাজি নয়। তাদের বক্তব্য, মাইনে বাড়ানো তাদের পক্ষে সম্ভব নয়, পাশাপাশি তাতে মূল্যবৃদ্ধি আরও বাড়বে। বাড়বে সুদের হার ও বন্ধকির মূল্য।
২০২২-এর গ্রীষ্ম থেকে ৫ লক্ষ কর্মী ধর্মঘট চালাচ্ছেন। তাদের বেশির ভাগই সরকারি ক্ষেত্রে কর্মরত। এই আন্দোলন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনকের ওপর চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে। স্বাস্থ্য, রেল, শিক্ষার মতো জরুরি সরকারি পরিষেবাকে সচল রাখাটা তার কাছে বড়ো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
একদা ব্রিটেনের গর্ব এনএইচএস বেশি কিছুদিন ধরেই সমস্যায় ভুগছে। বেতন সংক্রান্ত নানা সমস্যার জেরে গত এক দশকে হাজার হাজার নার্স সরকারি চাকরি ছেড়েছেন। গত বছরেই ছেড়েছেন ২৫ হাজার জন। ফলে সরকারি ক্ষেত্রে নার্সের ব্যাপক ধাটতি দেখা দিয়েছে। গত বছরের জুলাই মাসে একটি রিপোর্টে জানা যায়, গোটা এনএইচএসে ১ লক্ষ ৩২ হাজারেরও বেশি শূন্যপদ রয়েছে। যা তার আগের বছরের তুলনায় ৩৪ হাজার বেশি।
এই পরিস্থিতিতে ফুলে ফেঁপে উঠছে বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা। আন্দোলনকারীদের দাবি, তাদের এই লড়াই শুধু তাদের নিজেদের জন্য নয়, এনএইচএস-কে রক্ষার জন্যও। কারণ কর্মী কমে যাওয়ায় বহু সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অনেকের মতে, বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবাকে সুবিধা পাইয়ে দিতেই ধাপে ধাপে দুর্বল করা হচ্ছে এনএইচএস-কে।
শুধু সোমবার নয়, নার্সরা মঙ্গলবারেও ধর্মঘট চালিয়েছেন। অ্যাম্বুলেন্স কর্মীরা আবার ধর্মঘট করবেন শুক্রবার। বৃহস্পতিবার ধর্মঘট করবেন ফিজিওথেরাপিস্টরা।
নার্সদের সংগঠন অন্তত ৫ শতাংশ বেতন বাড়াবার দাবি করেছে। জানিয়েছে তারা এ বিষয়ে আলোচনায় প্রস্তুত। কিন্তু সরকার এখনও জল মাপছে। অন্যদিকে ওয়েলস সরকার গত সপ্তাহে নার্সদের বেতন ৩ শতাংশ বাড়ানোয়, সেখানকার নার্সদের সংগঠন সোমবারের ধর্মঘট থেকে সরে দাঁড়ায়।
এই ধর্মঘটের আওতা থেকে ছাড়া দেওয়া হয়েছে এমার্জেন্সি ও ক্যানসার বিভাগকে।