নতুন পরিস্থিতি, একের পর এক ইউনিয়ন তৈরি করছেন মার্কিন শ্রমিকরা
পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: গত এক বছরে একের পর এক মার্কিন কর্পোরেট সংস্থার শ্রমিকরা ইউনিয়ন গঠনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। এই সংস্থাগুলির মধ্যে রয়েছে স্টারবাকস, আমাজন, গুগুল, অ্যাপলের মতো সংস্থাও। এদের মধ্যে অনেকগুলিতে এই প্রথম শ্রমিক ইউনিয়ন তৈরি হল। কিন্তু কেন এমন মোড় ঘোরানো প্রবণতা তৈরি হল মার্কিন শ্রমিকদের মধ্যে?
লাল-নীল, সাদা-কালো, ধনী-গরিব, ওয়াল স্ট্রিট-মেইন স্ট্রিট, ব্যাঙ্কার বোনাস-ফাঁকা কারখানা। অনেকেই মনে করেন, দুভাবে বিভক্ত আমেরিকার এই ছবিটা বোধহয় কখনওই মুছে যাওয়ার নয়। এই মুহূর্তে দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি বিভাজিত ও মেরুকরণ হয়ে থাকা দেশগুলির অন্যতম আমেরিকা। নানা খারাপ ঘটনার মধ্যে চমকপ্রদ ভাবে সামনে চলে এসেছে এই সব ইউনিয়ন তৈরির খবর। যা সে দেশে নতুন করে শ্রমিক আন্দোলন গড়ে ওঠার আশা তৈরি করেছে অনেকের মনে।
প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগন নয়া উদারনীতির পথে হাঁটা শুরু করার আগে সামাজিক ন্যায় আন্দোলন মার্কিন শ্রমিকদের জীবনে অনেকটাই নিশ্চয়তা বয়ে এনেছিল। নয়া উদারনীতির স্রোত দেশকে ভাসিয়ে দেওয়ার পর লোভই হয়ে ওঠে ঈশ্বর এবং সামাজিক ন্যায় আন্দোলন থমকে যায়। সাগর পেরিয়ে চলে যায় চাকরি, কারখানার মেশিনে জং ধরে যায়। এখন হঠাৎ করে শ্রমিক আন্দোলনের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। নয়া উদারনৈতিক অর্থনীতির যাবতীয় জাঁকজমক ভেঙে পড়া আর এই আন্দোলন ঘটছে একসাথেই।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে বাফেলোর একটি স্টারবাকস দোকানের কর্মীরা প্রথম ইউনিয়ন গঠন করেন। ওই সংস্থায় সেই প্রথম। সেটা মার্কিন শ্রমিক আন্দোলনে টার্নিং পয়েন্টে পরিণত হয়। একের পর এক সংস্থার শ্রমিকরা ইউনিয়ন গঠন করে নিজেদের দাবিদাওয়া কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরতে শুরু করেন। ২৪০টি স্টারবাকসের দোকানে ইউনিয়ন গঠিত হয়েছে। ২০২১-এর জানুয়ারিতে গুগুল, চলতি বছরের জুনে অ্যাপল, এ বছরের শুরুতে আমাজনের নিউইয়র্ক ওয়ার হাউজে ইউনিয়ন গঠিত হয়। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দরাদরির জন্য শ্রমিকরা ইউনিয়ন গঠন করছেন। আপাতত তাদের দাবিগুলির মধ্যে রয়েছে, বেতনবৃদ্ধি, কর্মস্থলে নিরাপদ কাজের পরিবেশ ও আরও সুযোগ-সুবিধা। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে সে দেশে ইউনিয়নের জন্য ভোটাভুটি ৭৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সকল ধরনের শিল্পেই ইউনিয়ন বিপুল হারে বাড়ছে।
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে ৬৮% মার্কিন জনতা শ্রমিক ইউনিয়ন তৈরির পক্ষে। ১৯৬৫ সালে একটি সমীক্ষায় এই সংখ্যা ছিল ৭১%। তারপর এটাই সর্বোচ্চ। সে দেশে আয় ও সম্পদের ক্ষেত্রে জনগণের নানা অংশের মধ্যে ফারাক ব্যাপক বৃদ্ধি পয়েছে। অতিমারি তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
কর্পোরেটদের দিক থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া মিলেছে। আমাজন কোথাও কোথাও ইউনিয়ন তৈরির বিরোধিতা করলেও মাইক্রোসফট ইউনিয়ন তৈরির পক্ষে মত দিয়েছে।
এই জল কতদূর গড়ায় সেটাই দেখার।