দেবজিত ভট্টাচার্য
এক কালে ‘কেতাবি পন্ডিত’দের পান্ডিত্যের সান্নিধ্য পাওয়ার সৌভাগ্যে জানতে পেরেছিলাম কংগ্রেস+গরু=বিজেপি। তবে যত দিন গেছে, ততই বুঝেছি সংসদীয় গণতন্ত্রে বিজেপি বাদে ক্ষমতাসীন সমস্ত দলের রাজনীতি প্রায় একই গতি-প্রকৃতির, স্বৈরতান্ত্রিক। সবদলের সাথেই গরু যোগ হলে তারাই হবে এক একটা অন্য ‘রঙে’র বিজেপি। এই ‘গণতন্ত্র‘ থেকে ফ্যাসিতন্ত্রে যাওয়ার রাস্তা ভীষণ মসৃণ।
দিল্লির কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসীন হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিষ্ট আরএসএস-বিজেপি সরকারের থেকে আমাদের পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকারের রাজনীতি খানিক আলাদাই। আর সেই জাদুতে বোকা বনে রাজ্যের বহু শুভবুদ্ধিসম্পন্ন গুণী ব্যক্তি এবং খেটেখাওয়া মানুষ, একদল সংসদীয় বামেদের ঐক্যবদ্ধ ছাতার তলায় এসে ভোটের আগে প্রচার করেছিল ফ্যাসিবাদ বিরোধিতার অর্থ শুধুমাত্র বিজেপি বিরোধিতা। তারা ভাবিয়েছিল বিজেপিকে নাকি ভোটে হারালেই রাজ্য থেকে ফ্যাসিবাদ মুছে যাবে। কিন্ত ফ্যাসিবাদ যে কোন একক দল নয়, এই গোটা রাষ্ট্র ব্যবস্থাটার গলিখুঁজিতে যে ফ্যাসিবাদ ঘাঁটি গেঁড়ে আছে, সেটাই প্রমাণ করে দিয়েছে তৃতীয়বার এ রাজ্যে বহাল তবিয়তে ক্ষমতায় আসার পরে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার। মুরগি হয়েছে কেবল সাধারণ মানুষ আর এর দায় সংসদীয় বামেদের আজ এড়ানোর উপায় নেই।
গোটা একবছরে বেশ কিছু আরএসএসের সক্রিয় নেতাকে বিধায়ক বানিয়ে ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী’ তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের আমলে পরপর ঘটে গেছে এমন এমন ঘটনা যা হার মানিয়েছে বিজেপি শাসিত রাজ্যেগুলিকেও। তাই মমতা ব্যানার্জি নিজেই সেটা বুঝে আগেভাগে প্রতিবার তুলনায় টেনেছে সবসময় কুখ্যাত যোগী শাসিত রাজ্য উত্তরপ্রদেশকে। তবে তাতে ফ্যাসিবাদের কীই বা এসে যায়?
ফ্যাসিষ্ট বিজেপি ভোটে হেরে যাওয়ার পরেও রাজ্যে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ঘটনাগুলিকে ধরে কেন্দ্রীয় ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে বারবার ঘুরপথে প্রবেশ করতে চেয়েছে এ রাজ্যে। আর তৃণমূল কংগ্রেস ‘ফ্যাসিবাদ’কে সমানে সমানে টেক্কা দিতে ধাপে ধাপে এগিয়েছে। আস্তে আস্তে রপ্ত করছে ফ্যাসিস্ত বিজেপির সমস্ত রাজনৈতিক কায়দাগুলি। কখনও রাতের অন্ধকারে ঘরে পুলিশ পাঠিয়ে প্রতিবাদী মুসলিম যুবক খুন আবার কখনো গণআন্দোলন কর্মীদের বিনা ওয়ারেন্টেই গুম। গণ আন্দোলনকর্মীদের উপরে ইউএপিএ, ১২৪-এ সেডিশন এক্ট-সহ কালা আইনের বন্যা বইয়ে দিয়েছে রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস সরকার। ঘটিয়েছে হাথরাসকে পাল্লা দিয়ে হাঁসখালি। দলবদলের রাজনীতিতেও তারা পিছিয়ে থাকেনি।বাবুল সুপ্রিয় থেকে অর্জুন সিং-এর মতন হিন্দুত্ববাদী দাঙ্গাবাজ নেতাদের ঠাঁই হয়েছে তৃণমূলেই, যার ফলে বহু সেকুলার ও গণতন্ত্রকামী মুসলমান ব্যক্তিত্ব গোঁসা করে মুখ ফিরিয়েছে তাদের থেকে। আর এসবের ফলে বেড়ে উঠেছে ক্রমাগত রাজ্য-কেন্দ্রের ‘সাপে-নেউলের’র সম্পর্ক। এর মাঝে রয়েছে ক্ষিপ্ত জনগণ। যারা কাজ হারিয়েছে কেন্দ্রের জনবিরোধী নীতিগুলির ফলে আবার অত্যাচারিত হচ্ছে বাস্তবের মাটিতে এই নিয়ে বিক্ষোভ প্রতিবাদ করতে গেলে তৃণমূলের রাজনৈতিক পুলিশের হাতে। যে কারণে আজ রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন থেকে মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলতে শুরু করেছে। আর সেই দেখে ‘ঝোপ বুঝে কোপ’ মারার নীতিতে রাজ্যের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে কেন্দ্রের ফ্যাসিস্ট বিজেপি। এ রাজ্যে ফ্যাসিস্ট বিজেপির সংগঠন কাঁচা হলেও প্রধান বিরোধী দলনেতা তাদের, শুভেন্দু অধিকারী। যিনি অবশ্য এককালে ছিলেন তৃণমূলের মন্ত্রী, এর নাম জড়িত অজস্র দুর্নীতির সাথে আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা চাপ দিয়েই তাকে দলবদলাতে বাধ্য করেছিল একসময়।
আজ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সমস্ত কিছু লক্ষ রেখেই- তৃণমূলের হাতে অত্যাচারিত হওয়া সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ ও ভোটের পর থেকে সংসদীয় বামেদের এই নিয়ে গর্জে ওঠার ব্যর্থতাকে কাজে লাগিয়ে সম্পূর্ণ আইনি জোর ব্যবহার করে রাজ্যে সমস্ত ক্ষেত্রে ঢুকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে তাদের কর্তৃত্বে চলা সিবিআই ও এনআইএ-র মতো তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে।
গরুপাচার+তৃণমূল=কেন্দ্রীয়এজেন্সি। সম্প্রতি, রাজ্যে তৃণমূলের নেতাদের অজস্র দুর্নীতির ফলে আরো অনেক মানুষ কাজ হারিয়ে পথে বসার কারণে রাজ্যে ব্যাপক কাজের চাপ বেড়েছে সিবিআই-এনআইএ-র মতো কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা রাজ্যে তৃণমূল নেতাদের গরুপাচার মামলায় তদন্ত করতে এসে আজ রাজ্যের এমন কোনো তদন্তের ভার নেই যা তাদের হাতে নেই(আনিস বাদে)। আবার তাদের অধিকারিক রাজ্যের গরুপাচার মামলা দেখতে দেখতে ফেঁসে গেছে এই কেসেই। এর ফলে আরও বেড়ে বাইরে বেরিয়ে এসেছে রাষ্ট্রের মধ্যেকার দ্বন্দ্বগুলি। এত তদন্তের বোঝার চাপে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী অধিকর্তাদের জীবন হচ্ছে হিমশিম! এমনটা আজ তাদেরই দাবি। এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তাদের অফিসাররাই- “এক মানুষ এক সাথে কত কেস সামলাবে কত দিকে যাবে? এত কম আধিকারিক নিয়ে কি করে এত কেস সামলানো যাবে?”- তবুও কুছ নেহি পরোয়া, সামলাতে তো হবেই। কেস বাড়বেই! এ কথা অস্বীকার করার জায়গা নেই, শুধু দুঃখের বিষয় একটাই যারা বিধানসভা ভোটের আগে ‘ফ্যাসিবাদ’ শুধু বিজেপির মধ্যে দেখেছিল আর বিজেপির বিরুদ্ধে সবাইকে এক ছাতার তলায় এনে আন্দোলন করেছিল (যে আন্দোলনকে তৃণমূল তখন কাজে লাগিয়েছিল),তারা যদি ভোটের পর দিয়ে সেইভাবেই তৃণমূলের ফ্যাসিবাদী সমস্ত শাসন কায়দার বিরুদ্ধে এক হয়ে রাস্তায় নামতো, তবে হয়তো আজ কেন্দ্রীয়এজেন্সির হাতে রাজ্যের সমস্ত মামলার তদন্তের দায়ভার যেত না এতো সহজেই কিংবা তৃণমূলের শাসন কায়দাও আজ ফ্যাসিবাদী ধারায় বইতে পারতো না এই রাজ্যে।
বস্তুত: কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থা ও অভিজিৎ গাঙ্গুলির দৌলতে বীরভূমের বগটুইকান্ড, সেখানকার উপপ্রধান ভাদু শেখ খুন, ঝালদায় তপন কান্দু খুন, হাঁসখালি গণধর্ষণে নাবালিকা মৃত্যু, মালদহের কালিয়াচকের ধর্মান্তর (যা সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে অভিযোগ হিন্দু পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে গরিব হিন্দুদের মুসলিম ধর্মে ধর্মান্তরিত করানোর। যার তদন্তভার এনআইএর হাতে ও যাতে হিন্দুত্ববাদী নেতাদের মতন বিচারপতি নিজেও জেহাদি গন্ধ পেয়েছেন)। এছাড়াও রয়েছে, শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি আর শেষ সংযোজন হেরিটেজ সংক্রান্ত অভিযোগে কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চ্যাটার্জি ও হেরিটেজ কমিটির চেয়ারম্যান শুভাপ্রসন্নর বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলা। এনআইএ-র হাতে রয়েছে খাগড়াগড় জাল নোট মামলা(যাতে এনআইএ চিন, বাংলাদেশ-পাকিস্তান গন্ধ পেয়েছে) সহ আরও বেশ কয়েকটি মামলা। অতএব, স্পষ্টত বোঝাই যাচ্ছে রাজ্যের সাধারণ মানুষ যখন শাসকদলের নেতাদের দুর্নীতি-সন্ত্রাস ও এসব নিয়ে পুরোপুরি রাজনৈতিক-প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তার ফলে রাজ্যসরকারের থেকে আশাহত হয়ে পথে বসেছে তখন কেন্দ্রের ফ্যাসিস্ট বিজেপি তাদের তদন্তকারী সংস্থা খুব সহজেই এগিয়ে দিয়ে পুনরায় রাজ্যের মানুষের মন জয় করতে চাইছে। এককথায় বলতে গেলে তৃণমূলই বিজেপির ফ্যাসিস্ট নীতি এ রাজ্যে পরোক্ষভাবে আনছে, আনতে সাহায্য করছে চারিদিক থেকেই।
এ মত অবস্থায় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে গত ২০ মে সিবিআইয়ের অতিরিক্ত অধিকর্তা অজয় ভাটনগর দিল্লি থেকে এসে সংস্থার অঞ্চলিক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক সেরেছেন। এত চাপের মুখে তদন্তকারী ও আইনজীবীদের মধ্যে সমন্বয়ে ঘাটতি বৃদ্ধির সম্ভবনা যে বাড়ছে তা তিনি বাজারি সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনেই স্বীকার করছিলেন। এত কেস সামলাতে কেন্দ্র কয়েক দফায় রাজ্যে নতুন অফিসার পাঠিয়েছেন দিল্লি থেকে তবুও সামলিয়ে উঠে পারা যায়নি। ইতিমধ্যেই ডিএসপি ও সুপারিটেনডেন্ট পদের বেশ কয়েকজন অফিসার পূর্বাঞ্চলীয় অফিসে যোগও দিয়েছেন। সিবিআইয়ের এক পদস্থ কর্তা সংবাদ মাধ্যমে এ নিয়ে বলেন, “মামলার সংখ্যার নিরিখে অফিসারদের সংখ্যা খুব কম, একই অফিসারদের হাতে একাধিক মামলার তদন্তভার এসে পড়েছে। তাছাড়া, ঘটনা ঘটে যাওয়ার মাসখানেক পরে মামলা হস্তান্তরের ফলে সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহণে সময় লাগছে বেশি”। সংস্থার ডিআইজি- রামপুরহাট তদন্তের ফাঁকেই ছুটছে ঝালদায় তপন কান্দু খুনের তদন্তে আবার তার মাঝে যেতে হয়েছে তাকে হাঁসখালির নাবালিকা মৃত্যুর তদন্তে। এরকম ভাবেই আরও অনেক অফিসারকে রামপুরহাটের তদন্ত আধা করে কলকাতায় এসে গরুপাচার কাণ্ডে তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতা অনুব্রত মন্ডলের মামলা পর্যবেক্ষণ করতে হচ্ছে আবার সেটা শেষ না করেই কোর্টের পরামর্শে দৌড়ে চলে যেতে হচ্ছে আসানসোলের বিকাশ মিশ্রের মামলায়।
এই মুহূর্তে সিবিআইয়ের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ এসএসসি দুর্নীতি মামলা। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই মামলার রিপোর্ট তাদের আদলতে জমা দিতে হবে। সমস্ত কিছু নিয়ে তদন্তকারী সংস্থার অফিসারদের ভিতরেও প্রবল আসন্তোষ বাইরে ফুটে বেরিয়ে এসেছে। স্বাভাবিক ভাবেই পরিবার, খাওয়া,নাওয়া ছেড়ে কাজ করে যেতে হচ্ছে তাদের। যা নিয়ে তাদের ভেতর থেকে বহু অফিসার সংবাদমাধ্যমগুলিতে সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন, “একজন মানুষ কতদিকে মাথা লাগাতে পারে একসাথে? একজন মানুষ কটা জায়গায় তদন্ত করতে পারে একরাতে?”- যা নিয়ে আরও প্রশ্ন জাগছে, আসলে কি কোন কেসের কোনো তদন্ত হচ্ছে সঠিকভাবে? নাকি শ্রমজীবী মানুষের মন ভোলাতে শাসকশ্রেণির দ্বন্দ্ব কেন্দ্র-রাজ্যের নিজেদের রুটি সেঁকাসেঁকির লড়াই চলছে?
এর আগে সিবিআইয়ের সারদা-নারদা, রোজভ্যালি ও ‘ভোট পরবর্তী হিংসা’-সহ একাধিক মামলা রয়েছে যার কোনো সুরাহা এত বছর পরেও জনগণের স্বার্থে তারা করে উঠতে পারেনি উল্টে যাদের তৎক্ষণাৎ জেলে ঢোকানো হয়েছিল তারাও সব একে একে ছাড়া পেয়ে গেছে আর কেস ধামাচাপা পরেছে ঢিমেতালে। ‘ভোট পরবর্তী হিংসার’- একটি মামলাতেও নিম্ন আদালত থেকে কয়েকজন অভিযুক্তের জামিন খারিজের আবেদনের শুনানিতে বিচারপতির প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি সিবিআইয়ের আইনজীবী, যা নিয়ে মৃতের (বিজেপিকর্মী) ভাই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। কিছুদিন আগেই ঝালদা তপন কান্দু খুনের মামলা গতিহীন হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ করছিলেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল। এই মামলার শেষ শুনানিতেও সিবিআই আইনজীবীদের তরফ থেকে কোন সদুত্তর আসেনি। ফলত, শাসকশ্রেণির বুজরুকি কিছুটা হলেও মানুষ ধরতে পারছে।
প্রসঙ্গত: বছর খানেক আগে মমতা ব্যানার্জি করোনাকালীন পরিস্থিতিতে নিজের ডাকা ‘লকডাউন’ নিজেই ভঙ্গ করে(যখন তিনি ‘লকডাউন’ বিরোধী বিক্ষোভকারীদের পুলিশ দিয়ে জেলে ভরছিলেন) সিবিআই কলকাতা ভবন নিজাম প্যালেসে গিয়ে ধরনা দিয়ে নারদা-কান্ডে ফেঁসে যাওয়া তাঁর চার মন্ত্রীকে চারদিনে ছাড়িয়ে এনেছিলেন অথচ বিধানসভা ভোট চলাকালীন তার দলের আরেক নেতা জঙ্গলমহলের একসময়কার(সিপিআইএম আমলে) গণআন্দোলনকর্মী ছত্রধর মাহাতোকে রাজ্যের গারদ থেকে দশ বছর সাজা খেটে বেরনোর পর সেই পুরোনোর মামলায় পুনরায় এনআইএ ঘর থেকে ভোটের পরদিন তুলে নিয়ে কালাআইন ইউএপিএ-তে হাজতে পুরলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি নির্দ্বিধায় চুপ থেকেছেন। ‘বাঙালির উপর ফ্যাসিস্ট কেন্দ্রের আক্রমণ কিংবা কেন্দ্রের প্রতিহিংসার রাজনীতি’- বলতে একবারও শোনা যায়নি তাকে। যে বাক্যগুলি তিনি তার ঘুষখোর নেতাদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকেন সবসময়। সুতরাং-এ রাজ্যে কেন্দ্রীয়এজেন্সির হাতে সমস্ত তদন্তের দায়ভারের ক্ষেত্রে প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে আরও বহু কিছুই। এসব দেখে বোঝা যাচ্ছে আরও একটা বিষয় ভীষণ ভালোভাবেই- শাসকশ্রেণির শ্রেণিচরিত্র। তাদের নিজেদের ভেতরে হাজার দ্বন্দ্ব থাকলেও তারা সাধারণ শ্রমজীবী আপামর জনগণের নয় একদমই। শ্রমজীবী মানুষকে একএক রকম কায়দায় গিলে খেতে তারা সবাই সিদ্ধহস্ত।
রাজ্যে কেন্দ্রীয়এজেন্সির এইরকম ভাবে প্রবেশ, যা বলতে গেলে রাজ্য সরকারের মদত কিংবা গাফিলতিতেই- খাড়া করছে আরও বেশ কিছু প্রশ্ন- ভারতীয় সাংবিধানিক অধিকারের ক্ষেত্রে। সংবিধানের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর ‘আধা’ স্বীকৃতি পাওয়া যুগ্মকলামে রাজ্যের অধিকারগুলির বিষয়। বহুদিন ধরেই যার উপর ক্রমাগত আঘাত নামছে। যার বিরোধিতা মমতা ব্যানার্জিকে শুধুমাত্র নিজের দলের কাছের নেতা মন্ত্রীদের ক্ষেত্রে হলেই করতে একমাত্র দেখা গেছে। রাজ্যের অন্য কোনো মানুষের ক্ষেত্রে হলে দেখা যায়না বরং উল্টে রাজ্য-কেন্দ্রের সমস্ত বিবাদ পাশে সরিয়ে রাজ্য তদন্তকারী সংস্থা এসটিএফ সাহায্য করেছে এনআইএ কে কিংবা রাজ্য বহু কেস কেন্দ্রীয়এজেন্সি এনআইএরের হাতে তুলেও দিয়েছে স্বমহিমায়। সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে কেন্দ্রের তদন্তকারী সংস্থা ক্রমাগত হেনস্থা করে গেছে রাজ্যের গরিব মুসলমান ও পিছিয়ে পড়া আদিবাসী জনজাতির মানুষকে, করছে মিথ্যে মামলায় গারদে বন্দি। এর উদাহরণ রয়েছে ভুরিভুরি।
২০২১ সালের শেষে কেন্দ্রের প্রশাসনিক বৈঠক ‘অপারেশন সমাধান ও প্রহার’ নিয়ে, তারপরেই কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলিতে ‘মাওবাদী’ ও মানবাধিকারকর্মীদের দমনে এই দুই কেন্দ্রীয়এজেন্সি সিবিআই ও এনআইএ কে রাজ্যগুলিতে সরাসরি প্রবেশে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল। আজ শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস কেন্দ্রের ফ্যাসিস্ট বিজেপিকে তাদের রাজনৈতিক পলিসিগুলিতে সমানেসমানে পাল্লা দিতে গিয়ে, সাধারণ মানুষের আস্থা হারিয়ে ঘুরপথে তাদের আবার রাজ্যে প্রবেশদ্বার খুলে দিয়েছে—যার থেকে রাজ্যের গরিব খেটে-খাওয়া মানুষকে বাঁচাবেন না ‘উনি’, তা পুরোপুরি প্রমাণিত হয়ে গেছে। এখন এর- সুরাহা সংগ্রামী-বাম আন্দোলন ছাড়া নেই। কিন্ত তবুও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে রাজ্যের সমস্ত ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী’ গণসংগঠন ও বুদ্ধিজীবীদের সদ্দিচ্ছার উপরে- তারা কি এখনো মমতা ব্যানার্জিকে সামনে রেখে ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী’ নেত্রী ভেবেই রাজ্যের রাজনৈতিক ময়দানে এগোবেন…??