রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী অন্তর্ঘাত বিভিন্ন দেশের শ্রমিক শ্রেণির
পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: পাঁচ সপ্তাহ ধরে চলছে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ। বা বলা ভালো, ইউক্রেনের ওপর রুশ আগ্রাসন। এই যুদ্ধে একদিকে যেমন রয়েছে রুশ সাম্রাজ্যবাদ, অন্যদিকে তেমনই রয়েছে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সাম্রাজ্যবাদী সামরিক গোষ্ঠী ন্যাটো। সরাসরি না করলেও, গোপনে নানা ভাবে ইউক্রেনকে অস্ত্র সাহায্য করছে ন্যাটো তথা আমেরিকা-ব্রিটেন। দুনিয়ার নানা প্রান্তে এই সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েছে শ্রমিক শ্রেণি। হয়েছে বিক্ষোভ-মিছিল। কিন্তু তার চেয়েও অনেক বেশি জরুরি কাজের উদাহরণ তৈরি করছেন শ্রমিকরা।
এই যুদ্ধে রাশিয়ার সামরিক ঘাঁটি হিসেবে কাজ করছে প্রতিবেশী দেশ বেলারুশ। বস্তুত, সে দেশকে ব্যবহার করেই কিভ দখল করতে মরিয়া পুতিনের বাহিনী। কিন্তু যুদ্ধের শুরু থেকেই বেলারুশের রেল শ্রমিকরা নানা ভাবে অন্তর্ঘাত করছেন রাশিয়ার যুদ্ধ সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে। রেলের সিগন্যাল ব্যবস্থা তারা বারবার নষ্ট করেছেন। পরিবহণ ক্ষেত্রেও নানা সমস্যা তৈরি করেছেন। এর ফলে রুশ সেনার পরিবহণ ব্যবস্থাটি অনেকাংশেই স্বয়ংক্রিয় অবস্থা থেকে সরে এসে মনুষ্যচালিত করতে হয়েছে বেলারুশ প্রশাসনকে। এই কর্মকাণআডের জন্য ইতিমধ্যেই বেশ কিছু শ্রমিক গ্রেফতার হয়েছেন। তাদের ‘উগ্রপন্থী’ ও ‘সংগঠিত উগ্রপন্থী সংগঠনে’র সঙ্গে যুক্ত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাও তাদের দমানো যায়নি। কার্যত, বেলারুশের রেল শ্রমিকদের অন্তর্ঘাতের জন্যই রুশ সেনার পক্ষে কিভ দখল করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের সরবরাহ ব্যবস্থা কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
এতো গেল রুশ বিরোধী কর্মকাণ্ডের কথা। এবার আসা যাক ন্যাটোর বিষয়ে। মার্চের মাঝামাঝি ইতিলারি পিসা শহরের গ্যালিলেও গ্যালিলেই বিমানবন্দরের মাধ্যমে ন্যাটোর ‘মানবিক সাহায্য’ যাচ্ছিল ইউক্রেনে। তেমনই একটি বাক্স খুলে বিমানবন্দরের শ্রমিকরা দেখেন, তাতে খাদ্য কিংবা ওষুধের মতো প্রয়োজনীয় সামগ্রীর বদলে যাচ্ছে অস্তর। তখন তারা তা পরিহবণ করতে অস্বীকার করেন। কর্তৃপক্ষ তা মানতে বাধ্য হয় এবং ঘোষণা করে ওই বিমানবন্দরের মাধ্যমে ইউক্রেনে কোনো অস্ত্র পাঠানো হবে না।
গত সপ্তাহে বড়ো ঘটনা ঘটে গ্রিসে। সে দেশের আলেকজান্দ্রাউপোলি বন্দর থেকে ন্যাটোর অস্ত্র তুলে তা রেল পথে পোল্যান্ডের মধ্য দিয়ে ইউক্রেনের সীমান্ত অঞ্চলে পাঠানোর কথা ছিল সে দেশের অন্যতম ট্রেন সংস্থা ট্রেইনোসের। সংস্থার ইঞ্জিনিয়ারদের এই মর্মে নির্দেশ পাঠায় কর্তৃপক্ষ। ইঞ্জিনায়ররা তা অস্বীকার করতে থাকান দুই সপ্তাহ ধরে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ চাপ সৃষ্ট করে বলে যে, চাকরির শর্ত অনুযায়ী কর্মীরা কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মানতে বাধ্য। পাল্টা বিবৃতি দেয় রেল কর্মীদের ইউনিয়ন। আরও ১২টি শ্রমিক সংগঠন ট্রেইনোসের কর্মীদের সমর্থন জানায়। পরিস্থিতি তেতে ওঠে। শেষ অবধি ৬ এপ্রিল শ্রমিকরা সাধারণ ধর্মঘট ডাকে গ্রেসে। তা সফল হয়। পিছু হঠতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ।
এই সব ঘটনাগুলি থেকেই পরিষ্কার যে দুনিয়া জুড়ে শ্রমিক শ্রেণির সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী চেতনা ও সক্রিয়তা ক্রমেই বাড়ছে। এ এক আন্তর্জাতিকতাবাদী অবস্থান, যা শ্রমিক শ্রেণির একেবারে নিজস্ব চরিত্র। এই জন্যই তারা বিপ্লবী শ্রেণি।