Home সংস্কৃতি পর্দায় নয়, মন্দার যেন অভিনীত হয়েছে বিরাট আকারের এক মঞ্চে!

পর্দায় নয়, মন্দার যেন অভিনীত হয়েছে বিরাট আকারের এক মঞ্চে!

পর্দায় নয়, মন্দার যেন অভিনীত হয়েছে বিরাট আকারের এক মঞ্চে!
0

আর্যভট্ট মুখার্জি

গ্রামের পাশ দিয়ে গিয়েছে জোড়া নদী। দীর্ঘ দিন ধরে দু’টি নদীতে পলি জমছে। আশপাশের মানুষের খুব অসুবিধা। কারণ নদীতে পলি জমলে তার নাব্যতা কমে। বর্ষায় সেই নদীর খাই বেড়ে যায়। দুই পাড়ের এলাকা গিলে ফেলতে থাকে নদীর জল। ফি বছর বন্যা। এ ভাবে বহু দিন চলল। তার পর কোনও এক দিন ভোটারদের কষ্টের কথা ভেবে কোনও সরকার ওই দু’টি নদীর পলি খননের জন্য বেশ কিছু টাকা বরাদ্দ করল। তাতে কাজও হল কিছুটা। নদী থেকে পলি তোলা হতে থাকল। নদীর পাড়ে পলির পাহাড় গজিয়ে উঠতে থাকল একের পর এক। পলি এমনিতেই ঊর্বর। ফলে তার স্তূপ থেকে জন্ম নিল নানা রকমের পেশা।

তেমনই সব পেশায় স্বনিযুক্ত হয়ে পড়ল এলাকার যুবকরা। বিনা পয়সার পলি। তা গাড়ি বোঝাই করে বিভিন্ন জায়গায় অর্থের বিনিময়ে চালান করতে থাকল এলাকার ছেলে নান্টু। নান্টু ছোট থেকেই ডাকাবুকো, লড়াকু, দাদা টাইপের। কিছুটা পড়াশোনা করে বাড়িতে বসেই ছিল। লেগে পড়ল পলি বিক্রির কাজে। দু’পয়সা আয় হতে থাকল। তার পর তা গিয়ে ঠেকল কোটি কোটিতে। জমিদারি প্রথা গিয়েছে এ দেশে বহু দিন। কিন্তু পয়সা হাতে এলে মানুষের জমিদারি অভ্যাস তৈরি হয়ে যায়। যত পয়সা আসে ততই একের পর এক তেমন অভ্যাস গ্রাস করতে থাকে জীবন। এ ক্ষেত্রেও তার রকমফের দেখা গেল না।

অর্থ এবং রাজনীতির মধ্যে চিরকালই আকর্ষণ বল বেশি। তাই এ হেন নান্টুরও নেতা হয়ে উঠতে দেরি হল না। এলাকার ঝামেলা সেই মেটায়। আশপাশের এলাকার সেই নিয়ন্ত্রক। নদীর ধারে এর মধ্যেই অসংখ্য ভেড়ি গজিয়ে উঠেছিল। সেখানে নানা ধরনের মাছ চাষ হত। বিক্রি হত। সে সব চালাত আশপাশের এলাকার অনেকেই। নান্টু তাদের পিতাঠাকুর হয়ে উঠল। সাধারণত ভেড়িগুলি নদীর জলে পুষ্ট। এ বার সেই জল নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করল নান্টু। লেখাপড়া খুব বেশি দূর না গড়ালেও নান্টু কিন্তু শিক্ষানুরাগী। সে এলাকায় বিএড কলেজ তৈরি করেছে। মানে সেখানে হবু শিক্ষকরা প্রশিক্ষণ নেন, ছাত্রদের তাঁরা কী শেখাবেন আর কী শেখাবেন না।

“ফেলো কড়ি, নাও জল। তুমি কি আমার পর?’’— নান্টুর নীতি এটাই। ‘‘আমাকে টাকা দাও আর মাছ চাষ করতে নদীর জল নাও”। দু’এক জন অবশ্য প্রতিবাদ করে বলেছিল, ‘‘ও তো নদীর জল। ওতে আমাদের সকলের অধিকার”। কিন্তু এ সব ধোপে টেকেনি। কারণ নান্টুই পঞ্চায়েতের প্রধান। বিএড কলেজের দৌলতে মন্ত্রীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ। তার সাঙ্গোপাঙ্গ আছে। হাতে অস্ত্র আছে। এ সব বললে প্রথমে ওরা ধমক দেবে বা মারধর করবে। তাতে কাজ না হলে খুন করবে।

কিন্তু চির দিন কারও সমান যায় না। নান্টুরও গেল না। তিতিবিরক্ত হয়ে এক দিন সমাজসেবী, শিক্ষানুরাগী এবং সুকৌশলী ব্যবসায়ী নান্টুকে টাকার লোভ দেখিয়ে ডেকে পাঠাল তার চেয়ে ছোট পুঁজির মালিকরা। সঙ্গে স্থানীয়, উচ্চাকাঙ্খী এবং এক দাদা টাইপের ছোকরার নেতৃত্বে ছিল এলাকার কিছু যুবকও। তার পর নান্টুকে নিরস্ত্র এবং প্রায় সঙ্গীহীন অবস্থায় কুপিয়ে খুন করা হল। নদীর ধারে ফেলে দেওয়া হল রক্তাক্ত দেহ। নান্টুর শবের উপরে দাঁড়িয়েই উত্থান হল মাছের ভেড়িতে ভরপুর জোড়া নদীর পাড়ের ওই জায়গার নতুন নায়কের।

ঘটনাপ্রবাহ এমন হলে আপনি ভাবতেই পারেন— জোড়া নদীর পাড়ের ওই জায়গা আসলে পর্দার ‘গেইলপুর’। আর নান্টু তথা ডাবলু ভাইয়ের শবের উপরে দাঁড়িয়ে ‘মন্দার’, যে এই কাহিনির নতুন ‘নায়ক’।

বর্তমান রাজনীতিকে ছুঁয়ে ‘মন্দার’ গল্পটার চলন এমনটা হতেই পারত। প্রতিটি চরিত্রের শ্রেণীকে এমন ভাবে খোদাই করে দেখানো যেতে পারত। যাতে মনে হয় চরিত্রটার শিকড় আছে। তা আচমকা উঠে আসেনি। কিন্তু তা হল না। ডাবলু ভাইয়ের অনেক টাকা। ভেড়ির মালিক। সন্ধ্যায় হুইস্কি খায়। এমনকি সারা দিনও মদে বুঁদ হয়ে থাকতে পারে। আর নিজের শাকরেদের স্ত্রী-কে টাকার মালায় কিনে নেয়। ভোগ করে। এর বাইরে ডাবলু ভাই কে, তা স্পষ্ট হয়নি ওই গল্পে। এক জনকে খুন করে তার ব্যবসা দখল করে নেওয়া অতটা সহজ নয়। যতটা স্বাভাবিক ভাবে মন্দার করেছে গেইলপুরে। ভোগী ডাবলু ভাইয়ের শ্রেণী চরিত্র স্পষ্ট। কিন্তু তার কার্যকলাপ কতটা বিস্তৃত তা দেখানোয় খামতি রয়ে গেল। যেমন বোধগম্য হল না কী কারণে ‘জোড়াভেড়ি’র অত গুরুত্ব? কেন তা মন্দারের হাতে তুলে যায় না?

শেকসপিয়রের ‘ম্যাকবেথ’ প্রথমে খল তার পর নায়ক। তার মধ্যে ‘ইভল’ বেশি, ‘গুড’ কম। সে ডানকানকে হত্যা করে তার স্ত্রী লেডি ম্যাকবেথের ইন্ধনে। রাজার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। রাজাকে খুন করে সিংহাসনে বসে। তা টিকিয়ে রাখতে আরও খুন করে। নাটকের শেষ ভাগে বিরনামের জঙ্গল যখন এগিয়ে আসছে তার দরজা লক্ষ্য করে তখন সেই বীর অবশ্য দর্শকের করুণার পাত্র হয়ে ওঠেন। ট্র্যাজেডিতে বরাবর মাপা অনুপানে চরিত্র এঁকেছেন শেকসপিয়র। তাঁর হ্যামলেট চরিত্রে ‘ইভল’ কম, ‘গুড’ বেশি। ঠিক যেমন তিনি করেছেন রাজা লিয়রের চরিত্র সৃষ্টির ক্ষেত্রেও। হ্যামলেট মানসিক দ্বন্দ্বের সমাহার। লিয়রও তাই। কিন্তু আপাত দৃষ্টিতে ম্যাকবেথ তা নয়। তার নিয়ন্ত্রক যেন তিন ডাইনি। এমনিতে সাহিত্যের রোথো ছাত্র আমি। ম্যাকবেথ প্রথম পাঠের সময় আমার নিজেরও মনে হয়েছিল, শেকসপিয়রের এই ট্র্যাজিক হিরো বুঝি এমনই চরিত্র। যার লাগাম রয়েছে ডাইনিদের হাতে, লেডি ম্যাকবেথের বাসনায়। পরবর্তী কালে মনে হয়েছে, ডাইনি-ফাইনি নয়, ম্যাকবেথের মনোবিকলেনই লুকিয়ে রয়েছে তার ট্যাজেডির আসল রহস্য। সে নিজে ‘ফাউল’ এবং ‘ফেয়ার’-এর অনবদ্য মিশেল। সমস্ত ষড়যন্ত্র আসলে তারই মস্তিষ্কপ্রসূত। যাতে ক্রমাগত ঘি ঢেলে গিয়েছে লেডি ম্যাকবেথ। এতে ভাগ্য-টাগ্য বা ডাইনি-ফাইনির কোনও হাত নেই। আসলে সেনাপতি থেকে রাজা হয়ে ওঠার উচ্চাশা তাড়া করে বেড়াত ম্যাকবেথকে। তা তাড়া করে বেড়ায় উচ্চাকাঙ্খীদের।

শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অনির্বাণ ভট্টাচার্যের ‘মন্দার’ সারা ক্ষণ যেন ডুবে স্ত্রী-কে যৌন সুখ না দিতে পারার গ্লানিতে। শুধু সেই অক্ষমতা এবং তজ্জনিত ঘটনাক্রমই কি তার এক মাত্র ক্ষোভের উৎস? ‘জোড়াভেড়ি’ না পাওয়ার দুঃখ কি সেই গোদের উপর বিষফোঁড়া? ম্যাকবেথ বীর সেনাপতি। ডানকানকে খুন করার আগে পর্যন্ত যে বীরত্বের তেজে উজ্জ্বল। রাজহত্যার পর তার চরিত্রে পড়ে নিষ্ঠুর এবং ষড়যন্ত্রীর প্রলেপ। ‘মন্দার’ চরিত্রে অবশ্য ক্রোধের আধিক্যই বেশি। তার মধ্যে অন্য আবেগ তুলনামূলক ভাবে অনেক কম। ফলে মন্দার চরিত্র বহুমাত্রিক মনে হয়নি। আবার এই সূত্রেই মনে হয়েছে, মন্দার চরিত্রের শিকড় গল্পের ততটা গভীরে প্রোথিত নয় যতটা গভীর হলে একটি চরিত্রের শ্রেণী স্পষ্ট হয়ে ধরা দেয়। ফলে অনির্বাণের মন্দার চরিত্রটি ওয়েবসিরিজের বড় অংশ জুড়েই স্রেফ খুনি হিসাবে মনে হয়েছে। অথচ তাকে ঘিরেই গল্পের আবর্তন, ঘূর্ণি।

মৃত্যুকালে ম্যাকবেথ বলে, ‘জীবন এক চলমান ছায়া, ব্যর্থ অভিনেতার মতন/তার কিছু কাল রঙ্গমঞ্চে তর্জন-আস্ফালন, তার পর চিরতরে স্তব্ধ। এ এক মূর্খের আত্মকাহিনি, অহমিকার শব্দঝঙ্কারে পূর্ণ, কিন্তু অর্থ কিছুই নেই।’ সেই ম্যাকবেথ আসলে এক জন দার্শনিক। আর সেই দার্শনিকের মৃত্যুতে দর্শক হয়ে ওঠেন শোকস্তব্ধ। ঠিক যেমনটা ঘটে সক্রেটিসের জীবন কাহিনি শুনে। অনির্বাণের মন্দার অবশ্য এই ম্যাকবেথ থেকে অনেকটা দূরে।

তবে নতুন কি কিছুই তৈরি করতে পারলেন না অনির্বাণ? ওয়েবসিরিজের ডাবলু ভাইয়ের হত্যাদৃশ্যে দেখা যায়, তাঁর গাড়ির চালক ফোনে ‘জুলফিকার’ ছবিটি দেখছেন। বলিউডে গ্যাং ওয়ার নিয়ে বহু মাইলস্টোন সিনেমা হয়েছে। শেকসপিয়রের ট্র্যাজেডির উপযুক্ত ভারতীয়করণ যাঁরা করেছেন তাঁদের মধ্যে বিশাল ভরদ্বাজ অন্যতম। তাঁর ‘মকবুল’ ছায়াছবিটির পিছনে ‘ম্যাকবেথ’ নাটকের ছায়া স্পষ্ট। এ দেশের মাটিতে এ হেন হিমালয়-সম উদাহরণ থাকার পরেও অনির্বাণ যে কেন প্রাদেশিকতা বোধে আক্রান্ত হলেন জানি না। আরও একটা প্রশ্ন, ডাব্লু ভাইয়ের ছেলে মঞ্চা কি শুধু বড়লোক বাপের বখে যাওয়া সন্তান বলেই অমন দুর্যোধন-সম ক্রোধী? না কি নারীঘটিত হতাশা গ্রাস করেছে তাকে? তার স্পষ্ট উত্তর পেলাম না।

কয়েকটি দৃশ্য মনে গেঁথে থাকার মতো। ডাব্লু ভাইয়ের হত্যার পর সমুদ্র সৈকতে পড়ে থাকা লাশ এবং তার চারপাশকে দেখানো হয় টপ শটে। দেখা যায়, ডাবলু ভাইয়ের ঘনিষ্ঠরা আশপাশে দাঁড়িয়ে। স্ত্রী দাঁড়িয়ে কাছে। লাইলি একটু দূরে। রাতের বেলা বাড়ি থেকে ঠিক যতটা দূরে ডাব্লু ভাইকে যেতে হত লাইলিকে ভোগ করার জন্য। ঠিক ততটাই যেন দূরে। আর সকলের পিছনে অস্থির হয়ে পায়চারি করছে মদন হালদার। ক্ষমতার বদল হচ্ছে সে বুঝতে পারছে। কিন্তু কোন দিকে সে থাকবে তখনও যেন সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠতে পারেনি। যেন জনগণ, ভোটের সময় যেন সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করছে। প্রচারের ঠেলায় কার পক্ষে ছাপ দেবে তা ঠিক ঠাহর করে উঠতে পারছে না।

কয়েকটি দৃশ্য মনে হয়েছে বাস্তব আর অবাস্তব— এই দু’টি জগতের মাঝের সেতুতে দাঁড়িয়ে। লাইলি আত্মহত্যা করেছে নৌকার গলুইয়ের বাঁশে। সেখান থেকে ঝুলছে তার দেহ। অথচ গলায় দড়ি দিতে গেলে প্রাথমিক ভাবে একটি উচ্চতা স্পর্শ করতে হয় তার পর সেখান থেকে ঝুলে পড়তে হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেই উচ্চতা স্পর্শ করার জন্য কোনও উপকরণ দেখা যায়নি। প্রথমে সিনেমা দেখা চোখ ধাক্কা খেয়েছিল কিছুটা। আসলে এটা পুরো দস্তুর থিয়েটারের কৌশল। মঞ্চের জ্যামিতিগত খামতির দিক থেকেই কোনও উপায় না পেয়ে রিয়েলকে সুররিয়েল হিসাবে তুলে ধরা হয়। সেই কৌশলের ব্যবহারে লাইলির আত্মহত্যার দৃশ্য আরও বাঙ্ময় হয়েছে বলেই আমার মনে হয়। একই কৌশল ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছে মন্দারের মৃত্যুদৃশ্যেও। সে যখন নৌকার প্রায় মাঝ বরাবর তখন তার গলায় ঢুকে গিয়েছিল বর্শা। কিন্তু তার দেহ শেষে ঝুলছিল সেই গলুইয়ে যেখানে ঝুলছিল লাইলির দেহও। আসলে থিয়েটার ছন্দ তৈরি করে। একের পর এক দৃশ্য মিলিয়ে দেওয়া হয়। সেই কৌশল ‘মন্দার’-এও ব্যবহার করেছেন অনির্বাণ। পর্দায় তুলে ধরেছেন বিশালাকার এক থিয়েটার। এমন কাজ বাংলা ছায়াছবির ক্ষেত্রে মুষ্টিমেয়।

মুকদ্দর মুখোপাধ্যায় চরিত্রটি আসলে শহুরে বাবু। ক্ষমতা ব্যবহার করে গ্রামের ভালমন্দ লুটেপুটে নিতে চায়। ডাবের জল খেয়ে সে মালাইটা পর্যন্ত ছাড়তে রাজি নয়। সময়ে সময়ে তুইতোকারি করে নিজের শ্রেণী জাহির করে। আবার প্যাঁচে পড়লে অবশ্য সে নিজে নিজেই ‘টাইট’ হয়ে যায় সময়ের চাহিদা বুঝে। ‘মন্দার’ ওয়েবসিরিজের মেক আপেও থিয়েটারের ছাপ স্পষ্ট। ঠিক যেমন অভিনেতাদের মধ্যেও সেই কৌশল ধরা পড়েছে প্রায় সর্বত্রই। অবশ্য এর মধ্যে লাইলি মানে সোহিনী সরকারের অভিনয় ব্যক্তিগত ভাবে আমার দুর্বল লেগেছে। অবশ্য রক্তমাখা চাদর বার বার কেচে শুকোতে দেওয়ার সময় লাইলি আর মন্দারকে একই উচ্চতায় ধরেছে ক্যামেরা। সেই মুহূর্তে মনে হয়েছে, পর্দায় মন্দার আর লাইলি চরিত্রগত ভাবেই একই অবস্থানে অবস্থিত। আরও একটা বিষয় বলার, মন্দারের সঙ্গে দেখা করতে এসেছে বঙ্কা। তাকে ঘরে বসতে বলছে লাইলি। সেই দৃশ্যে সোহিনীর স্বর প্রক্ষেপণ অসামান্য।

শেষ কথা হিসাবে যা বলার— ছবিতে মেদিনীপুর অঞ্চলের ভাষার ব্যবহার বেশ আকর্ষণীয়। আমি নিজে অবশ্য মদন হালদার চরিত্রটির সঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুর নিবাসী বঙ্গ বিজেপি-র এক নেতার উচ্চারণের বেশ মিল খুঁজে পেয়েছি। তাতে নিজের যারপরনাই আনন্দ হয়েছে। সেই পথ ধরে ওয়েবসিরিজটি রাজনৈতিক হয়ে উঠলে ‘মন্দার’ বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খেয়ে একটি রাজনৈতিক নির্মাণও হয়ে উঠত বইকি। আরও একটা কথা— অনির্বাণের ‘মন্দার’ ওয়েবসিরিজের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে সত্যজিত রায়ের নাম। ‘সোনার কেল্লা’ ছায়াছবিতে ‘মন্দার বোস’ চরিত্রটি দুর্ধর্ষ খলনায়ক। মজা করে, অহরহ মিথ্যা বলে, গোয়েন্দার ঘরে কাঁকড়া বিছে ছেড়ে দেয়। শেষে ধরা পড়ে যায়। বাংলা ছায়াছবির প্রচলিত ভিলেনের মতো নয়। অনিবার্ণের ‘মন্দার’ও নির্মাণ কৌশলে তেমনই বিপথগামী।

Share Now:

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *