
কাবুলের পতন আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষের কাছে এক দুঃখজনক অধ্যায়ের সমাপ্তি এবং অন্য এক দুঃখজনক অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে ব্যক্ত করা যেতে পারে। বারবার এইরকম বিপর্যয় এখানকার মানুষদের দুর্দশার মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। ভয়,অনিশ্চয়তা এবং বিশৃঙ্খলা সমাজে প্রতিটি মুহূর্তে বিরাজমান। কঠিন ভবিষ্যতের আশঙ্কা সাধারণ মানুষের জীবন থেকে সমস্ত আশা ও উদ্যম কেড়ে নিয়েছে। বেশিরভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাস করছে এবং অনেকেই চলমান যুদ্ধ,খাদ্যাভাবের দরুণ উদ্ধাস্তু হয়ে পড়েছে। অনেক যুবক তাদের পুরোনো স্কুল,কলেজ ছেড়ে ইরানের দিকে চলে গেছে পরবর্তীতে তুরস্কের মধ্যে দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের আশায়। অনেক পরিবার পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমানায় আটকে রয়েছে, যারা পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছে তারা মসজিদ, বিয়েবাড়ি,হোটেল বা ফুটপাতে আশ্রয় নিয়েছে।
সাম্রাজ্যবাদ ও তার প্রতিক্রিয়া যা আফগানিস্তানের মানুষের এই দুর্দশার জন্য দায়ী সেই সকল শক্তিগুলি নিজেদের পরাজয়ের ক্ষয়পূরণ বা বিজয়ের জয়ঢাক বাজাতে ব্যস্ত রয়েছে। তালিবান নিজে তার অর্জিত ক্ষমতার নেশায় মত্ত হয়ে রয়েছে এবং যুদ্ধের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তির বিভাজন তালিবানকে অভ্যন্তরীণ বিবাদে জড়িয়ে ফেলেছে। এই পরিস্থিতির প্রমাণ এর থেকে পাওয়া যায় যে কাবুল বিজয়ের অনেকদিন অতিক্রান্ত হলেও তারা নিজস্ব সরকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়নি। তাদেরকে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে পড়তে হয়েছে। আমেরিকার পুতুল গনি সরকারের সেনাবাহিনীর অবশিষ্ট অংশ নিজেদের প্রাণ রক্ষার্থে হয় দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে নতুবা পঞ্জশির প্রদেশে (একমাত্র অঞ্চল যা তালিবানের দখলে নেই) আশ্রয় নিয়েছে। কিছু অংশ তালিবানের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হয়ে আবদুল্লাহ এবং কারজাইকে অনুসরণ করছে এবং আশা করে আছে যে তারা তালিবানের ইসালামিক রাজত্বের কার্যালয়ে নিজের জায়গা পাবে।
গনি সরকারের পতনের কিছু সপ্তাহের মধ্যেই সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির ‘ঐতিহাসিক দেশগড়ার প্রকল্পে’র মত হাস্যকর অভিনয় বেশি বেশি করে জনগণের সামনে প্রকাশ পাচ্ছে। গনি সরকারের পতনের মাধ্যমে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির শুধু পরাজয়ই হয়নি বরং আমেরিকা ও তার মিত্রশক্তির রাজনৈতিক,সামরিক এবং আদর্শগত দিক থেকেও অবমাননা হয়েছে। নিজেদেরকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচাতে এই বুর্জোয়া দেশগুলির রাজনৈতিক নেতৃত্ব একে অপরকে দোষারোপ শুরু করেছে। কিন্তু তাদের এই মরিয়া প্রচেষ্টা তাদেরকে কোথায় নিয়ে যাবে না । এতে আমেরিকার যে পরিমাণ নৈতিক,আদর্শগত ও রাজনৈতিক পরাজয় ঘটেছে তার ক্ষয়পূরণ সম্ভব নয়। প্রভু মাথার ওপর থেকে হাত সরিয়ে নিলে অনেক পুতুল সরকারেরই পতন ঘটে , কিন্তু আফগানিস্তানে সেই ঘটনাটি যে গতিতে ঘটেছে তা সত্যিই নাটকীয় ও অপ্রত্যাশিত। এই ঘটনার পরবর্তীতে কাবুলে এক বিস্ফোরণ ঘটে যার ফলে অন্তত ১৫০ জন নিহত এবং ২০০ জন আহত হয়েছে (১৩ জন মার্কিন নৌসেনা এবং ২৮ জন তালিবান সহ)।
আফগানিস্তানে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের পরাজয় অনেকটা আফগানিস্তানে সোভিয়েত এবং ব্রিটিশদের পরাজয়ের মতোই এবং আসরাফ গনির পরিণতিও অনেকটা নাজিবুল্লাহ এবং শাহ শুজাহর মতোই।
তালিবানের এই দুরন্ত গতিতে জয়লাভ দেশের অধিকাংশ জনগণকে অবাক করে দিয়েছে। বিমানবন্দরের দৃশ্যে দেখা যাচ্ছে যে কিভাবে সাধারণ মানুষ ইরান,পাকিস্তান এবং মধ্যে এশিয়ার দেশগুলিতে পালাতে চাইছে তালিবানের ভয়ে। জনগণের মধ্যে এইবার আর বিভ্রম নেই, তারা তালিবানকে আগেই থেকেই চিনে ফেলেছে। এই কারণেই তালিবান বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করছে যাতে তারা জনগণের সম্মতিলাভ করতে পারে। তালিবানের ক্ষমাশীল আচরণ এবং সবার সহযোগিতার সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি মধ্যবিত্ত শ্রেণি এবং পূর্ববর্তী সরকারের বুদ্ধিজীবী ও কর্মচারীদের ভয়কে প্রশমিত করতে পারেনি। মহিলা এবং সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে ছাঁটাই করা হয়েছে এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে। আশি শতাংশ সংবাদ মাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নারীদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ব্যতীত অন্যান্য সমস্ত দফতরের কাজ করার অধিকার বাতিল করা হয়েছে। উপরোক্ত কারণগুলি সত্ত্বেও তালিবানের কার্যকলাপ মুৎসুদ্দি বুর্জোয়া শ্রেণি এবং পূর্ববর্তী সরকারের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের আকৃষ্ট করেছে। তালিবান শুধু পূর্ববর্তী সরকারের আধিকারিকদের আকৃষ্ট করছে না বরং তারা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ সহ ও অন্যান্য সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রের সহানুভূতি লাভের চেষ্টাও করছে। তালিবানের বন্ধুসুলভ ব্যবহার সাধারণ মানুষের থেকে তাদের কুৎসিত দিকটি বেশিদিন লুকিয়ে রাখতে পারবে না।
পূর্বের পুতুল শাসনের সাথে জড়িত কিছু প্রযুক্তিবিদ তালিবান শাসনের সাথে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তালিবানদের সমর্থন দিতে উগ্র জাতীয়তাবাদী পাখতুন শক্তিগুলি বেশি উৎসাহী। তারা মনে করছে, তালিবানের ইসলামিক রাজত্ব পাখতুন উগ্র জাতীয়তাবাদকে শক্তিশালী করবে এবং রাষ্ট্রে তাদের আধিপত্য বাড়িয়ে দেব। কিন্তু পুতুল শাসনের (গনি সরকার) অ-পাখতুন শক্তিগুলো ভীত এবং বিচ্ছিন্ন। তালিবানরা তাদের সুযোগ দিলে, তারা তালিবান শাসনের সাথে অনিচ্ছা নিয়েই কাজ করবে। নিপীড়িত জাতিসত্তার ‘প্রতিনিধিত্ব’ দাবি করে এই গোষ্ঠীগুলি,কিন্তু তাদের প্রতিনিধি কেবলমাত্র সরকারে নিজেদের ক্ষমতা নিয়ে চিন্তা করে, তা সে আগের পুতুল শাসন ব্যবস্থায় হোক বা তালিবানের ইসলামি রাজত্ব।
তালিবানরা একটি ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ সরকার গঠনের কথা বলছে, যা গত ২০ বছর ধরে কারজাই এবং আশরাফ গনির পুতুল শাসন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কেউ কেউ এটাকে লক্ষণ হিসেবে ধরে ব্যাখ্যা করেছেন যে তালিবান বদলে গেছে। কোন সন্দেহ নেই, গত দশ বছরে তালিবানরা সাম্রাজ্যবাদী দেশ এবং এই অঞ্চলের দেশগুলোর সাথে তাদের কূটনীতির পরিবর্তন করেছে। একই ভাবে দেশে অভ্যন্তরীণ বিরোধিতা এবং আফগান জনগণের সঙ্গে মোকাবিলার ধরনও তারা পাল্টেছে। কিন্তু তালেবানের মুখপাত্র জবিহুল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, তালেবানের মতাদর্শ এবং মৌলিক বিশ্বাসের কোনো পরিবর্তন হয়নি। যদিও, গত এক দশকে, তালিবান সাম্রাজ্যবাদী এবং প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেছে এবং এই ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। বিশেষ করে কাতারে তাদের অফিস খোলার পর এবং বিশ্বের দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের পর তারা কূটনীতির দক্ষতা ও সতর্কতা অর্জন করেছে। অন্যদিকে, এই সময়কালে, নগরায়ন বৃদ্ধি পেয়েছে এবং শ্রমিক এবং শিক্ষিত জনসংখ্যার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তালিবান এই দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে এবং সাম্রাজ্যবাদী সাহায্য আকর্ষণের জন্য এবং অন্যদিকে দেশ থেকে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্মীদের বিদেশে চলে যাওয়া আটকাতে নিজেদের আচরণ সংযত করতে বাধ্য হয়। তালিবানরা আগের সরকারের মতো, দেশের অর্থনীতির অবস্থা পরিবর্তন করতে পারবে না, এর ফলে তারা সরকারের অর্থনৈতিক ভিত্তি শক্তিশালী করছে। তারা সাম্রাজ্যবাদী সাহায্যের উপর নির্ভরশীল একটি অর্থনীতি এবং পূর্ববর্তী শাসনামল থেকে একটি দুর্নীতিগ্রস্ত আমলাতন্ত্র উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে। বিদেশি সাহায্যের ওপর তালিবানদের নির্ভরতার আরেকটি কারণ হল পর্যাপ্ত দেশীয় আয়ের অভাব এবং কৃষি ও শিল্পের ধ্বংসপ্রাপ্তি। তালিবান জনগণের উদ্ভাবন এবং সৃজনশীলতার উপর নির্ভর করতে পারবে না, এবং তাই, তারা মূলত আগের শাসন থেকে আলাদা হবে না।
বিগত বিশ বছরে তালিবানের প্রধান স্লোগান ছিল বিদেশি দখলদারিত্বের অবসান এবং ইসলামি শরিয়া আইনের উপর ভিত্তি করে সরকার গঠন করা। এখন যেহেতু তাদের সুযোগ আছে, তারা ইসলামের ধর্মপ্রাণ এবং চরমপন্থী পাঠের উপর ভিত্তি করে একটি উগ্র ধর্মীয় শাসনব্যবস্থা সরকার গড়ে তুলবে। যে ব্যবস্থা ধর্মীয় আইন প্রণয়ন করবে যা ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক স্বাধীনতাকে ব্যাপকভাবে কেড়ে নেবে।
নারী, শ্রমিক, সামাজিক-রাজনৈতিক কর্মী, রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠী এবং কমিউনিস্টদের দমন করা হবে। তালিবানরা সমাজে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পক্ষাঘাত আরোপ করতে চায়। তারা তাদের শাসনের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য চায়। মোল্লারা সমাজের বৌদ্ধিক, নৈতিক, এবং অভিযোগ জনসংখ্যার রাজনৈতিক নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করবে। ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোকে কাজ করার অনুমতি দেওয়া হবে না, এমনকি অন্যান্য ইসলামি ও জিহাদি দলগুলিকেও কাজ করার অনুমতি দেওয়া হবে না। অধিকার ও স্বাধীনতার ওপর নিপীড়ন ও দমন, তালিবানদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। তরুণ এবং বুদ্ধিজীবী কর্মীদের মুখোমুখি হওয়ার ক্ষেত্রে, তালিবান একটি পরস্পরবিরোধী অবস্থায় পড়েছে। একদিকে প্রশাসনিক-রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের সক্ষমতা ও দক্ষতা প্রয়োজন, অন্যদিকে তালিবানের মৌলবাদী মানসিকতা এক্ষেত্রে গুরুতর বাধা সৃষ্টি করবে এবং তাদের দমন করবে।
জাতিগত উগ্রতা তালিবান শাসনের আরেকটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য হবে। ইসলামি ঐক্যের আড়ালে তালিবানরা নিপীড়িত জাতিসত্তার দাবি প্রত্যাখ্যান করে, তাকে ইসলাম বিরোধী তকমা দেবে। যদিও তালিবানে কিছু উজবেক, তাজিক এবং সুন্নি হাজারারা বিভিন্ন পদে আছে, কিন্তু এতে পাখতুন শাসক শ্রেণির হাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করতে কোনো বাধা হবে না, ফলস্বরূপ আরও সামাজিক বৈরিতার জন্ম হবে এবং তৈরি হবে জাতিগত বিভাজন।
তালিবানের সামনে আরেকটি চ্যালেঞ্জ হল বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিভাজন, যার একটি আন্তঃজাতিগত মাত্রাও রয়েছে। আশরাফ গনির শাসন পূর্ব ঘলজাই পাখতুনদের হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করেছিল, যা তার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের একটি কারণ ছিল।
তালিবানের মধ্যে বেশ কয়েকটি উপদল রয়েছে, দুটি প্রধান উপদল হচ্ছে মোল্লা হায়বাতুল্লাহর নেতৃত্বে কোয়েটা শুরা এবং সিরাজউদ্দিন হাক্কানির নেতৃত্বে পেশোয়ার শুরা। মোল্লা মনসুর এবং মোল্লা ইয়াকুবের নেতৃত্বাধীন উপদলের কথাও বলা হয়েছে। অতএব তালেবানদের সামনে এই মুহূর্তের চ্যালেঞ্জ হল একদিকে বিভিন্ন তালিবান গোষ্ঠীর মধ্যে লড়াই এবং অন্যদিকে কর্মী এবং নেতৃত্বের মধ্যে লড়াই। মোল্লা হাইবাতুল্লাহর নেতৃত্বাধীন প্রধান দলটি দুররানি এবং সিরাজউদ্দিন হাক্কানি এবং খলজ হাক্কানির নেতৃত্বাধীন হাক্কানি গোষ্ঠী ঘলজাই, এদের মধ্যে বিভেদ রয়েছে। প্রথমত ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ সরকারের অর্থ হল বিভিন্ন তালিবান গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতার বিভাজন। কারণ তালেবান নেতৃত্বের প্রধান সংস্থার প্রতিনিধিরা মূলত তিন প্রদেশ কান্দাহার, হেলমান্দ এবং উরুজগান থেকে আসা।
তালিবানদের অন্যান্য চ্যালেঞ্জ হল অন্যান্য জাতিগত গোষ্ঠী এবং জাতীয়তার সঙ্গে ক্ষমতার ভাগাভাগি। পূর্বতন শাসনব্যবস্থার কিছু সশস্ত্র বাহিনী আহমদ মাসউদের (প্রয়াত আহমদ শাহ মাসুদের পুত্র) নেতৃত্বে পাঞ্জশিরে জড়ো হয়েছে যারা রাজনৈতিক ক্ষমতায় অংশ চায়। পুতুল শাসনের আরো কিছু সশস্ত্র বাহিনী তাদের সরঞ্জামসহ সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এই বাহিনীকে নিরস্ত্র করা তালেবানদের সামনে আরেকটি সমস্যা। কাবুল বিমানবন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণ, জনগণকে নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে তালেবানদের অক্ষমতা প্রকাশ করেছে।
বাইরে থেকে দেখলে তালিবান এবং তাদের গঠিত সরকার এখনও সমস্যার মধ্যে রয়েছে,সাম্রাজ্যবাদী এবং প্রতিক্রিয়াশীল রাষ্ট্রগুলি থেকে তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে,তাদের সরকারকে মান্যতা দেওয়া হবে কিনা সেটা নিয়েও বিভিন্ন দেশের মধ্যে সংকোচ রয়েছে। পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী মধ্য এশিয়া এবং ইরানের বিভিন্ন দেশগুলিতে যাচ্ছে যাতে তারা তালিবান সরকারকে মান্যতা দেয়। বিশ্বের দরবারে তালিবানের মান্যতা তাদের সত্তার পরিবর্তন ঘটাবে না। যাই হোক না কেন, তালিবান একটি মৌলবাদী অমানবিক সংগঠনই থাকবে যাদের কার্যকলাপ জনসাধারণের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই যাবে।কেবলমাত্র নয়াগণতান্ত্রিক বিপ্লবের রাস্তাই আফগানিস্তানের জনগণকে এই শোষণের থেকে মুক্তি দিতে পারে।
সংক্ষেপে আফগানিস্তানে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের পরাজয় তাদের রাজনৈতিক,আদর্শগত এবং নৈতিক দোদুল্যমান অবস্থার পরিচয় দিয়েছে। এই ঘটনা সমস্ত মোহ থেকে আমাদের মুক্ত করে, জনসাধারণের মধ্যে নতুনভাবে প্রতিরোধ ও সংগ্ৰাম গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। মৌলবাদী এবং হিংসাপরায়ণ তালিবানের প্রতি জনগণ সাধারণভাবেই ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংঘর্ষে লিপ্ত হবে। সুতরাং আমাদের পরিস্থিতির সঠিক পর্যালোচনা ও সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সংগঠন এবং প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে,নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের জন্য এবং জনগণের তালিবানবিরোধী মানসিকতাকে কাজে লাগাতে হবে বৈপ্লবিক সমাজ পরিবর্তনের জন্য সংঘর্ষের কাজে।
কমিনিউস্ট পার্টি (মাওবাদী) আফগানিস্তান
২৮ অগাস্ট,২০২১
অনুবাদ: সায়নদীপ মণ্ডল