Home রাজনীতি ফাদার স্ট্যান স্বামী: জরুরি রাজনীতিকে এড়িয়ে যাচ্ছে চর্বিতচর্বণে ভরা শোকগাথাগুলো

ফাদার স্ট্যান স্বামী: জরুরি রাজনীতিকে এড়িয়ে যাচ্ছে চর্বিতচর্বণে ভরা শোকগাথাগুলো

ফাদার স্ট্যান স্বামী: জরুরি রাজনীতিকে এড়িয়ে যাচ্ছে চর্বিতচর্বণে ভরা শোকগাথাগুলো
1
সুমনকল্যাণ মৌলিক

বিশিষ্ট সমাজকর্মী ও অধিকার আন্দোলনের অগ্রণী  নেতৃত্ব ফাদার স্ট্যান স্বামীর রাষ্ট্রের হেফাজতে নির্মম হত্যার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে,গণমাধ্যমে ও সোসাল মিডিয়ায় যে ক্ষোভ – বিক্ষোভ দেখা যাচ্ছে তা যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক।এই প্রতিবাদের অনুষঙ্গে ইউএপিএ আইন,ঔপনিবেশিক সময় থেকে চালু হওয়া ও স্বাধীন ভারতে একই ভাবে ক্রিয়াশীল রাষ্ট্রদ্রোহ আইন এবং ভীমা- কোঁরেগাও  মামলা নিয়ে জনমানসে সামান্য হলেও যে বিতর্ক শুরু হয়েছে অবশ্যই তা যথেষ্ট মনোযোগের দাবি রাখে।এই পবিত্র শোক ও ন্যায়সঙ্গত ক্রোধকে যথাযোগ্য  শ্রদ্ধা জানিয়েই বলতে হয়  এই প্রতিবাদ ও প্রতিবাদীদের মধ্যে এমন কিছু বিষয় আছে যেগুলি সম্পর্কে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। এ কথা বলার কারণ স্ট্যান স্বামী নিছক এক বৃদ্ধ, পারকিন্সন আক্রান্ত, মানবপ্রেমে ভরপুর জেসুইট পাদ্রি ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন আদ্যন্ত রাজনৈতিক মানুষ যাকে রাষ্ট্র পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করেছে। এক অর্থে এই হত্যা ভুয়ো সংঘর্ষের চেয়েও মারাত্মক কারণ সংঘর্ষের হত্যার সময় রাষ্ট্র তার নৈতিক অবস্থানে স্থির থাকতে পারে না, গোপনে কাজ সারতে হয়, সেই গল্পকে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য মিথ্যার বেসাতি করতে হয়। কিন্তু স্ট্যান স্বামীর ক্ষেত্রে সকলের চোখের সামনে,আইন বিভাগ,সরকার ও বিচার বিভাগের সম্মিলিত প্রয়াসে ও কর্পোরেট মিডিয়ার জানকবুল সমর্থনে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। অতিমারির সময় জামিনের গাইডলাইন, অসুস্থতা, বয়স সমস্ত বিষয়কে অগ্রাহ্য করে,এমনকি বেঁচে থাকার সামান্য উপকরণগুলি ফাদার যাতে ঠিক সময়ে পায় তার ব্যবস্থা না করে বিচার বিভাগ এই হত্যার ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে। তাই এই সময় যদি ফাদারের হত্যার জন্য শুধু কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দলকে দায়ি করি তবে তা হবে পর্বতপ্রমাণ ভুল কারণ এটি এক প্রাতিষ্ঠানিক হত্যা এবং রাষ্ট্রের সমস্ত অংশই এর জন্য কমবেশি দায়ি।

অনেকে বলার চেষ্টা করছেন এতদিন পর্যন্ত দানবীয় আইনগুলির বিরোধিতা, ভুয়ো সংঘর্ষে হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুধুমাত্র অধিকার আন্দোলনের আঙিনায় আটকে ছিল,এবার পরিস্থিতির চাপে সংসদীয় রাজনৈতিক দলগুলির নেতৃত্বও বিষয়গুলি নিয়ে সরব হয়েছেন। এই আশাবাদের প্রেক্ষাপট দেশের দশটি প্রধান রাজনৈতিক দলের ( জাতীয় কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিআই( এম),ডিএমকে,এনসিপি প্রভৃতি)  মাননীয় রাষ্ট্রপতিকে লেখা চিঠি( ৬জুলাই,২০২১)। এতে ফাদার স্ট্যানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়েছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত  মামলায় জেলবন্দিদের মুক্তি ও দানবীয় ইউ এ পি এ আইনের অপব্যবহার বন্ধের দাবি জানানো হয়েছে। এখানে সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো রাজনৈতিক নেতাদের চোখে যে ইউএপিএ আইন দানবীয় তার অপব্যবহার বন্ধের দাবি! এই বক্তব্য নেহাৎই ভন্ডামি কারণ যাবতীয় সাক্ষ্য প্রমাণ এটাই বলে যে আইনকে বাতিল করাই সময়ের দাবি।আসলে এই আইনটাতো তৈরিই হয়েছে অপব্যবহারের জন্য।

এই চিঠির অন্যতম স্বাক্ষরকারী সিপিআই ( এম)।এই দলের সরকার চলছে কেরলে যেখানে ২০১৬ সালের মে মাস থেকে ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত ইউএপিএতে ১৪৫ টা কেস হয়েছে এবং একথাও ভোলার কোনো কারণ নেই যে ভারতে এই দানবীয় আইনের ধারায় রাষ্ট্রের হেফাজতে মৃত্যুর প্রথম ঘটনা ঘটে বাম আমলে পশ্চিমবঙ্গে যখন পিপলস মার্চ পত্রিকার সম্পাদক স্বপন দাশগুপ্ত মারা যান। এই চিঠির আরেক স্বাক্ষরকারী তৃণমূল কংগ্রেস যারা ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার সময় বন্দিমুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু গত দশ বছরে একজন বন্দি তো মুক্তি পানইনি বরং যথেচ্ছ ভাবে ইউএপিএ ধারার প্রয়োগ হয়েছে গণ আন্দোলনের কর্মীদের উপর। একাধিক রাজনৈতিক বন্দির তৃণমূল আমলে জেল হেফাজতে প্রায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে। এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছে শরদ পাওয়ারের ন্যাশানালিস্ট কংগ্রেস পার্টি। আজ মহারাষ্ট্রে  যে মহাবিকাশ আগাদি সরকার চলছে তার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী শরদ পাওয়ারের দলের। কারা দফতর রাজ্যের বিষয় হওয়া সত্বেও ও এনসিপি প্রধানকে বারবার অবহিত করা সত্বেও তালোজা সেন্ট্রাল জেলে ফাদারের ক্ষেত্রে ( বিশেষ করে চিকিৎসার প্রশ্নে) যে পরিকল্পিত অবহেলা দেখানো হয়েছে তার দায় কি এনসিপি অস্বীকার করতে পারবে?

তবে স্ট্যান স্বামী ও ইউএপিএ প্রশ্নে সবচেয়ে বড়ো ভন্ডের ভূমিকা পালন করছে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস। শিবসেনা-এনসিপি- কংগ্রেস শাসিত মহারাষ্ট্র বা শুধু কংগ্রেস শাসিত ছত্তীসগঢ়ে আজও কিন্তু এনকাউন্টার রাজ চলছে। সোসাল মিডিয়ায় কংগ্রেস নেতা পি.চিদম্বরম্, কপিল সিব্বলরা ইউএপিএ  বিরুদ্ধে  যে ‘ বিপ্লবীর’ ভূমিকা পালন করছেন তারাই কিন্তু ২০০৮ সালে ইউএপিএ ( সংশোধনী) ও এন আই এ তৈরির হোতা। জনগণের বিরুদ্ধে ভারত রাষ্ট্রের যুদ্ধ ঘোষণার নীল নকশা অপারেশন গ্রিন হান্ট এই চিদম্বরমের নেতৃত্বে হয়েছিল। এই কপিল সিব্বল সংশোধনী পাশ হবার পর পার্লামেন্টে টেবিল চাপড়ে বলেছিলেন – ” we have made a provision of 180 days under this law.our laws are more tough than that of America and England. can you give me the example of any other country where such laws exist? “।আর আজ সেই কপিল সিব্বল কুমিরের কান্না কেঁদে বলছেন –” Stan swamy(84) passes away the system sucks UAPA  No bail.Little hope for early trial.Others too languish in jail.lawyers,academics,Social  activists—- raise their voice for the voiceless.They too are now voiceless. The state call them terrorists”। কপিল সিব্বলকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া যেতে পারে নরেন্দ্র মোদি সরকার যখন এই রক্তচোষা আইনকে আরো ভয়ঙ্কর বানাবার লক্ষ্যে ব্যক্তিকে সন্ত্রাসবাদী তকমা দেওয়ার সংশোধনী আনলো, তখন রাজ্যসভায় যাবতীয় বিতর্কের শেষে কংগ্রেস দলগত ভাবে এই সংশোধনীর পক্ষে মত দিয়েছিল।

স্ট্যান স্বামী হত্যার প্রতিবাদে যে লেখাগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তাতে এই বিষয়টিতে সবাই একমত যে সরকার ( অনেকে ‘ রাষ্ট্র ‘ কথাটি ব্যবহার করেছেন, কেউ আবার ‘ সিস্টেম ‘ কে দায়ি করেছেন)  এই হত্যা সংঘটিত করেছে। কিন্তু যে প্রশ্নটি এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে ( সচেতন ভাবে?), তা হল কেন এই অশীতিপর বৃদ্ধকে খুন হতে হল! একজন আদিবাসীদের মঙ্গলের জন্য নিবেদিত প্রাণ মানুষের মৃত্যু — এই ব্যাখ্যা অসম্পূর্ণ এবং অনৈতিহাসিক। সবিনয়ে যে কথাটি বলতে চাই তা হল গরিব তথা প্রান্তিক মানুষের দুঃখে কাতর,সংবেদনশীল সমাজসেবী মানুষ এদেশে বহু আছেন কিন্তু তাদের পরিণতি ফাদার স্ট্যান স্বামীর মত হয়নি। আসলে এখানে সুস্পষ্ট রাজনীতির প্রশ্ন আছে যা আলোচনার বৃত্তে আনা জরুরি।

আশির দশকে সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে ও বিশ্বব্যাঙ্ক,আই এম এফ প্রমুখ আন্তর্জাতিক অর্থ লগ্নি সংস্থাগুলোর অধিনায়কত্বে ‘ উদারীকরণ – বেসরকারিকরণ- ভুবনায়ন’ নামক যে নীতি গৃহীত হয় ভারতবর্ষের শাসককুল সোল্লাসে তার শরিক হয়। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক জমি অধিগ্রহণ আইনকে ব্যবহার করে এদেশের জল- জমি- খনিজ- প্রাকৃতিক ও মানব সম্পদকে লুঠ করার আগ্রাসী শিল্পায়নের ব্যাপারে কর্পোরেট মিডিয়া, বহুজাতিক সংস্থাগুলি ও সংসদীয় দলগুলি এক ঘৃণ্য মতৈক্যর রাজনীতি গড়ে তোলে, যুক্তি দেয় দেশ বাঁচাতে আর অন্য কোন বিকল্প অবশিষ্ট নেই ( there is no alternative)।

বাস্তবে কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষ বা আরও নির্দিষ্ট করে বললে আদিবাসী ও দলিত মানুষ এই মতৈক্যর রাজনীতিকে প্রত্যাখান করে। দেশের জল- জমি- সম্পদকে বাঁচাতে পূর্ব – মধ্য – পশ্চিম ভারতে গড়ে ওঠে প্রতিরোধের নতুন মহাকাব্য। এই প্রতিরোধের রাজনীতি চরিত্রগত ভাবে ছিল রাষ্ট্র নির্মিত সংসদীয় রাজনীতির লক্ষ্মণ রেখার বাইরে। স্বাভাবিকভাবে রাষ্ট্রীয় রাজনীতির ছলাকলা দিয়ে এই উদীয়মান প্রতিরোধকে লাগাম দেওয়া সম্ভব ছিল না। ফলে রাষ্ট্র বলপ্রয়োগের রাস্তা নেয়। সালওয়া জুড়ুম,অপারেশন গ্রিন হান্ট,যৌথ বাহিনী,অরণ্য আইনের সংশোধন, ইউএপিএ  ছিল রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনের উপকরণ। এর বিরুদ্ধে আদিবাসী তথা প্রান্তিক মানুষের প্রতিরোধ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে সীমায়িত থাকেনি,বহু ক্ষেত্রে তা সশস্ত্র রূপ ধারণ করে। মোদ্দা কথা হল শিবির বিভাজন হয়। একদিকে মহামহিম, সামরিক শক্তিতে বলীয়ান,কর্পোরেট মদদপুষ্ট শাসকের ভারত, অন্যদিকে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া প্রান্তিক, শোষিত ভারত।

এই শিবির বিভাজনের সময় ‘ মধ্যবর্তী ভারত’ ( শিক্ষিত,উচ্চ ক্রয়ক্ষমতা সম্পন্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণি)  সাধারণভাবে নিরপেক্ষ থাকে বা রাষ্ট্র প্রচারিত ‘ স্যান্ডুইচ তত্ত্ব ‘ ( যার মোদ্দা কথা হল রাষ্ট্র ও সশস্ত্র প্রতিরোধ কারী গোষ্ঠীর লড়াইয়ের মধ্যে পড়ে নিষ্পেষিত হচ্ছে আদিবাসীরা) কে সমর্থন করে। কিন্তু সংখ্যায় অতি ক্ষুদ্র হলেও সংবেদনশীল মানুষ এই সময় আদিবাসী তথা প্রান্তিক মানুষদের প্রতিরোধের সমর্থনে রাস্তায় নামে। এই অংশটি নিজেদের সুবিধাভোগী অবস্থানটি সচেতন ভাবে ত্যাগ করে এই প্রতিস্পর্ধার পক্ষ নেন। স্ট্যান স্বামী ছিলেন এই পক্ষ বিশিষ্ট মানুষ তাই তিনি চার্চ নির্ধারিত ধর্মাচরণ ও আদিবাসী শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করার মধ্যে নিজেকে সীমায়িত করেননি। তিনি আদিবাসীদের বলপূর্বক উচ্ছেদের বিরোধিতা করেছেন,রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির দাবিতে সংগঠন তৈরি করেছেন, ঝাড়খণ্ডে যৌথ বাহিনীর নজরদারিতে বনজঙ্গল লুঠ করার প্রকল্পের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন,তাই তিনি রাষ্ট্রের জিঘাংসার শিকার। আমরা যদি এই প্রসঙ্গে ভীমা- কোঁরেগাও মামলায় আটক সমাজ কর্মীদের তালিকার দিকে তাকাই তবে দেখব এই মানুষেরা তাদের যাবতীয় বুদ্ধি বৃত্তি,প্রতিভা,দক্ষতা নিয়ে চলমান মহাভারতে পক্ষাবলম্বন করেছেন। আজ ভারভারা রাও কত বড়ো কবি বা তেলেগু সাহিত্যে তার ভূমিকা কতখানি,সুধা ভরদ্বাজ কত বড়ো আইনজীবী, গৌতম নওলাখা কত দক্ষ সাংবাদিক বা আনন্দ তেলতুম্বের সামাজিক পরিচিতি — এ আলোচনা নিরর্থক। একমাত্র সত্য হল কর্পোরেট দাসানুদাস,আদ্যন্ত বৈষম্যযুক্ত,বর্ণবাদী,ফিনান্স পুঁজির মৃগয়াক্ষেত্র হিসাবে রাষ্ট্র পরিচালকরা যে ভারতবর্ষ কল্পনা করেন, আলোচ্য সমাজকর্মীরা সেই প্রকল্পের ঘোষিত প্রতিবন্ধক।এই কারণে রাষ্ট্রের পরিচালকদের কাছে তারা মূর্তিমান বিপদ,’ দেশদ্রোহী ‘। আমরা যতই এই অস্বস্তিকর কিন্তু অনিবার্য সত্য কথাগুলোকে কার্পেটের আড়ালে লুকোবার চেষ্টা করি না কেন,পরিস্থিতি কিন্তু পাল্টাবে না। আজ স্ট্যান স্বামী মারা গেছেন,ভারভারা রাও মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন, কাল অন্য কেউ মারা যাবেন। অধিকার আন্দোলনকে আজ এই রাজনৈতিক বাস্তবতাকে স্বীকার করে নিয়েই তার আন্দোলনের রূপরেখাকে নির্দিষ্ট করতে হবে।

Share Now:

Comment(1)

  1. এক‌একজনের মৃত্যু হয়, আমরা প্রতিবাদ করতে থাকি। কিছুদিন পর স্ট্যান স্বামীর কথাও ভুলে যাবো! সবকিছুর তো একটা বিহিত দরকার। সেই ভাবে আন্দোলন করার জন্য সুচিন্তিত পরামর্শ এবং সহযোগিতা একান্ত জরুরি।

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *