দুয়ের্তের টানা পাঁচ বছরের লাগাতার যুদ্ধ মোকাবিলা করে এগোচ্ছে ফিলিপিনসের কমিউনিস্ট বিপ্লবীরা
ফিলিপিনসের প্রেসিডেন্ট রডরিগো দুয়ের্তের অত্যাচারী শাসনের পাঁচ বছর পূর্ণ হয়েছে ৩০ জুন। এই সময়কালে সে দেশের মাওবাদী কমিউনিস্ট সংগঠন ‘ফিলিপিনসের কমিউনিস্ট পার্টি’-র সশস্ত্র সংগ্রামকে ধ্বংস করার জন্য লাগাতার যুদ্ধ আলিয়েছে সে দেশের সামংরিক বাহিনী। কিন্তু তা ব্যর্থ হয়েছে। এই সম্পর্কে গত ৩০ জুন এই বিবৃতিটি প্রকাশ করেছে ফিলিপিনসের কমিউনিস্ট পার্টি।
রডরিগো দুয়ের্তের বিশ্বাসঘাতকতা, অত্যাচার, অপরাধ ও দুনীর্তিপূর্ণ শাসনের পাঁচ বছর পূর্ণ হয়েছে আজ। এই ভয়ঙ্কর শাসনকে উৎখাত করার জন্য জনগণ আজ আগের চেয়ে অনেক বেশি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
নিজের অত্যাচারী শাসনকে প্রতিষ্ঠা করা ও জনগণকে সন্ত্রস্ত করে রাখার জন্য দুয়ের্তে গত পাঁচ বছর ধরে গণহত্যাকে একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে। তার কথায়, তিনি ‘ড্রাগের বিরুদ্ধে’ এবং ‘স্থানীয় কমিউনিস্ট সশস্ত্র সংঘর্ষকে শেষ’ করার লক্ষ্যে এই যুদ্ধে চালিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে তা হল, নিরস্ত্র জনগণের ওপর আক্রমণ এবং সশস্ত্র বাহিনী দ্বারা তাদের নানা ভাবে হেনস্থা করার কৌশল।
এই সময়ে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষকে বিচার ব্যবস্থার সুযোগ না দিয়ে হত্যা, অপহরণ, অত্যাচার করা হয়েছে। বেআইনি ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ‘ড্রাগ পাচারকারী’, ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, জোর করে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করা হয়েছে এবং আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করা হয়েছে। এর সঙ্গে চলেছে আকাশ থেকে বোমাবর্ষণ এবং নিরন্তর কামান দাগা। নাগরিক বসতির মধ্যে সামরিক শিবির তৈরি হয়েছে, জনগণকে ক্রমাগত হেনস্থা করা হয়েছে।
দুর্নীতির জেরে দুয়ের্তে রাষ্ট্রকে দেউলিয়া করে দিয়েছে, ফিলিপিনসকে দেনায় ডুবিয়েছে, অন্যদিকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তুলেছে পুলিশ ও সামরিক বাহিনীকে। শ্রমিক, কৃষক, বেকার, শিক্ষক, নার্স, সরকারি কর্মচারী ও যুব সমাজের প্রতি সে সম্পূর্ণ অবহেলা করেছে। জনস্বাস্থ্য ও জনগণের আর্থসামাজিক প্রয়োজনগুলিকে মেটানোর বদলে সে ২০২০ থেকে অতিমারিকে ব্যবহার করে চলেছে, সরকার ও সমাজকে সম্পূর্ণ পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীর করার লক্ষ্যে। এই সময় সে একটি জনবিরোধী ‘সন্ত্রাস-বিরোধী আইন’ও পাস করেছে।
নতুন কর চাপানো, চাল ও শুকরের মাংস আমদানিতে ছাড়, মাইনে কাটা, জমি দখল, জমি-ব্যবহার নীতির পরিবর্তন, জনবিরোধী আর্থিক নীতি, বহুজাতিক খনি সংস্থাগুলির লুঠপাট, বাগিচাচাষ. বিভিন্ন শক্তি প্রকল্প এবং অন্যান্য বড়ো বুর্জোয়া মুৎসুদ্দিদের উৎসাহ দেওয়ার ফলে দুয়ের্তের জমানায় জনগণের আর্থসামাজিক অবস্থা খুব খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে। শহর এবং গ্রামের লক্ষ লক্ষ মানুষ এ সময় কাজ হারিয়েছেন।
এই সময় কালে দুয়ের্তে চিনকে দেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলিকে ঢুকে পড়ার সুযোগ দিয়েছে এবং আমেরিকার সঙ্গে সামরিক চুক্তি করেছে। সব মিলিয়ে দেশের সার্বভৌমত্বকে ধ্বংস করেছেন।
দুয়ের্তের আমলে, চিন ফিলিপিনসের মধ্যে তাদের সামরিক বাহনীকে ছড়িয়ে দিয়েছে এবং আশেপাশের সমুদ্র এবং খনিজ সম্পদের ওপর নিজেদের দখলদারি কায়েম করেছে। মাছ ও সামুদ্রিক প্রাণীর ওপর ফিলিপিনোদের অধিকার কেড়ে নিয়ে চিন তা দখল করেছে। অন্যদিকে, অসম চুক্তির মাধ্যে আমেরিকাকে দেশে সামরিক আগ্রাসন চালানোর সুযোগ করে দিয়ে, তাদের থেকে বিশাল টাকা আদায় করেছে। আদতে এই চুক্তি দেশের সার্বভৌমত্বের পক্ষে ক্ষতিকর।
পার্টি এবং জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব অবশ্যই দুয়ের্তেকে উৎখাত করবে। সে যদি ২০২২-এর নির্বাচনকে রিগিং করে নিজের মেয়ে বা কোনো অনুগতকে গদিতে বসায় বা অন্য ভাবে তার ফ্যাসিস্ট একনায়কত্বকে কায়েম রাখতে চায়, তাহলেও সে রেহাই পাবে না।
পাঁচ বছর কেটে যাওয়ার পর এটা পরিষ্কার যে, জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবকে ধ্বংস করার জন্য দুয়ের্তে য়ে ভয়াবহ যুদ্ধে চালিয়েছিল, তা ব্যর্থ হয়েছে। জনগণের বিপ্লবকে দুর্বল করার বদলে, দুয়ের্তের যুদ্ধ জনগণের বিপ্লবী দৃঢ়তাকে আরও শক্তিশালী করেছে। নিউ পিপলস আর্মি বা এনপিএ আরও ইস্পাতদৃঢ় হয়েছে। বাহিনী এখন আরও উদ্দীপনা নিয়ে দুয়ের্তের পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করার জন্য লড়াই চালাচ্ছে।
বর্তমান আধা ওপনিবেশিক আধা সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থাটা যে কতখানি পচে গেছে, তা দুয়ের্তের যুদ্ধ থেকেই পরিষ্কার। শোষিত, নিপীড়িত জনতার ওপর অত্যাচার না চালিয়ে এর টিকে থাকার কোনো উপায় নেই। দুর্দশা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিপ্লবী সংগ্রাম চালানো যে ন্যায্য ও প্রয়োজনীয়, তা দুয়ের্তের নোংরা যুদ্ধ থেকে জনগণ আরও স্পষ্ট ভাবে বুঝতে পেরেছেন।