Home লোকাচার সংরক্ষণের সুবিধা নিয়ে দেশের দলিত-আদিবাসীরা সংসদে যাচ্ছেন কিন্তু গুরুত্ব পাচ্ছেন না: রিপোর্ট

সংরক্ষণের সুবিধা নিয়ে দেশের দলিত-আদিবাসীরা সংসদে যাচ্ছেন কিন্তু গুরুত্ব পাচ্ছেন না: রিপোর্ট

সংরক্ষণের সুবিধা নিয়ে দেশের দলিত-আদিবাসীরা সংসদে যাচ্ছেন কিন্তু গুরুত্ব পাচ্ছেন না: রিপোর্ট
0

পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: দেশে সংসদীয় ব্যবস্থা শুরু হওয়ার সময় থেকেই গত সাত দশক ধরে নির্বাচনে তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য সংরক্ষণের বন্দোবস্ত রয়েছে। সেই সংরক্ষণের হাত ধরে বহু দলিত-আদিবাসী জনপ্রতিনিধি লোকসভায় নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু খতিয়ে দেখলে বোঝা যাবে, সংসদের বিভিন্ন স্থায়ী কমিটিতে তাদের উপস্থিতি খুবই কম। অর্থাৎ যে কমিটিগুলিতে প্রস্তাবিত নতুন আইন, সরকারের আয়ব্যয় নিয়ে আলোচনা হয়, সেখানে তাদের কর্তৃত্ব ও প্রভাব খুবই কম।

১৯৫১-৫২ সালে প্রথম সাধারণ নির্বাচনের সময়, ৪৮৯টি আসনের মধ্যে ৯৮টি অর্থাৎ ২০.০৪% সংরক্ষিত ছিল দলিত ও আদিবাসীদের জন্য। সাত দশক পরে সংরক্ষণের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ২৪.১৩%। কিন্তু লাভ কতটা হয়েছে?

সংসদে বিভিন্ন দফতর-ভিত্তিক ২৪টি স্থায়ী কমিটি আছে। সেই কমিটিগুলি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের বিষয়গুলি নিয়ে কাজ করে থাকে। এর মধ্যে ১৬টির দায়িত্ব রয়েছে লোকসভার সচিবালয়ের হাতে, ৮টি রয়েছে রাজ্যসভার সচিবালয়ের হাতে। এই ২৪টির বাইরে বিভিন্ন অর্থনৈতিক কমিটি আছে, যেগুলি সরকারি অর্থের ব্যবহার খতিয়ে দেখে। এগুলি অর্থ-বিষয়ক কমিটি থেকে আলাদা, ওই কমিটি অর্থ মন্ত্রকের বিষয়গুলি নিয়েই কেবল মাথা ঘামায়।

২৪টি কমিটির সদস্যদের লোকসভার অধ্যক্ষ এবং রাজ্যসভার চেয়ারপার্সন মনোনীত করেন। কিন্তু তিনটি অর্থনৈতিক কমিটির সদস্যদের দুই সভার সদস্যরা নির্বাচন করেন।

কমিটিগুলির আয়ু হয় এক বছর। সাধারণত কমিটির সদস্যদের প্রতিবছর নতুন করে মনোনীত করা হয়, তাদের ওই নির্দিষ্ট বিষয়ের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখে।

বর্তমান লোকসভায় ১৩৮জন দলিত-আদিবাসী সাংসদ রয়েছেন(২৫.৪%)। যা দলিত-আদিবাসীর জন্য সংরক্ষিত আসনের(২৪.১৩%)তুলনায় একটু বেশি। কিন্তু ২৭টি সংসদীয় কমিটির সদস্যদের ২৫.৪% কিন্তু দলিত বা আদিবাসী নন। অর্থাৎ সাংসদের অনুপাতে কমিটিগুলিতে দলিত-আদিবাসী সদস্য সংখ্যা কম।

২৭টির মধ্যে মাত্র আটটি কমিটিতে দলিত-আদিবাসী সদস্যের সংখ্যা ২৫.৪%-এর সমান বা তার থেকে বেশি। গত দুটি লোকসভা অর্থাৎ পঞ্চদশ এবং ষোড়শ লোকসভাতেও ওই আটটি কমিটিতে দলিত-আদিবাসী সাংসদের সংখ্যা একই রকম ছিল, অর্থাৎ তা একটুও পালটায়নি।

কমিটিগুলির মধ্যে সামাজিক ন্যায় সংক্রান্ত কমিটিতে দলিত-আদিবাসীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি(৫৯.৫%)। সবচেয়ে কম প্রতিনিধিত্ব পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটিতে(৬.৬৭%)

প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত কমিটিতে দলিত-আদিবাসী সদস্য ২১.৪% এবং অর্থ বিষয়ক কমিটিতে ৯.৫%। সাধারণ ভাবে পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র ও অর্থ- এই চারটি মন্ত্রককে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক মনে করা হয়। তার মধ্যে কেবল পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সদস্যদের এক চতুর্থাংশের বেশি(২৮.৫%)রয়েছেন দলিত-আদিবাসী সম্প্রদায় থেকে।

গত পঞ্চদশ লোকসভা থেকেই সামাজিক ন্যায় কমিটিতে অর্ধেকের বেশি সদস্য রয়েছেন দলত-আদিবাসী সম্প্রদায় থেকে। যদিও সংখ্যাটা ক্রমেই কমেছে। এছাড়া তফসিলি জাতি ও উপজাতি কল্যাণ বিষয়ক একটি যৌথ সংসদীয় স্থায়ী কমিটি রয়েছে। সেখানে পঞ্চদশ থেকে সপ্তদশ অবধি সবকটি লোকসভাতেই ৯৫% বা তার বেশি পরিমাণ সদস্য রয়েছেন দলিত-আদিবাসী সম্প্রদায় থেকে।

একজন সাংসদ, একটি বেশি কমিটিতে রয়েছেন, এমন ঘটনা হয় না বললেই চলে। তাই সামাজিক ন্যায় কমিটিতে যদি অধিকাংশ দলিত-আদিবাসী কমিটিতে জায়গা পেয়ে যান, তাহলে ওই সব সাংসদদের অন্যান্য বিষয়ে মতামত পেশ করার সুযোগ মেলে না।

তার ওপর, কোনো দলিত বা আদিবাসী সাংসদ কোনো সংসদীয় কমিটির চেয়ারপার্সন হয়েছেন, এমন ঘটনা গত ১ দশকে বিরল। যদিও লোকসভার বিধি অনুযায়ী, ১৬টি কমিটিতেই দলিত-আদিবাসী সাংসদদের চেয়ারপার্সন নিযুক্ত করতে পারেন অধ্যক্ষ। বর্তমান লোকসভার ১৬টি স্থায়ী কমিটির কেবল প্রতির৭আ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান একজন আদিবাসী, সাংসদ জুয়াল ওরাম। ২০০৯ থেকে ২০২০ পর্যন্ত লোকসভার ২৪০টি স্থায়ী কমিটির মধ্যে মাত্র ২১টির চেয়ারম্যান হয়েছেন তফসিলি জাতি-উপজাতি সম্প্রদায় থেকে(৭.৩%)।

চেয়ারপার্সন কোনো কমিটির আলোচ্যসূচি, গতিপথ ছিক করেন। তার হাতে নির্ধারক ভোটাভুটির সময় নির্ধারক ভোট দেওয়ার ক্ষমতা থাকে। ক্ষমতা থাকে রিপোর্টের ভুল সংশোধন করার এবং অসংসদীয় শব্দ বাদ দেওয়ার। এছাড়া আরও নানা ক্ষমতাও থাকে।

এই কমিটিগুলির বহু গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকে। বিলগুলি পড়ে দেখা, মন্ত্রকের বরাদ্দের দাবি খতিয়ে দেখা ইত্যাদি। আইনসভায় কাজ করার অভিজ্ঞতা চেয়ারপার্সন হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আইনসভার অভিজ্ঞতা যে কেবল কমিটির প্রধান হওয়ার কাজে লাগে তা নয়, মন্ত্রী হতেও কাজে লাগে। বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের ৫৪জন মন্ত্রীর মধ্যে ১১% দলিত-আদিবাসী সম্প্রদায়ের।

শুধু সংসদের মধ্যে নয়, সংসদের বাইরেও দলিত-আদিবাসী সম্প্রদায়ের খুব কম রাজনৈতিক নেতাই তাদের দলের শীর্ষ নেতা হতে পারেন। বর্তমান লোকসভার যে ১৭টি দলের অন্তত ৩ জন সাংসদ আছেন, তাদের মধ্যে মা৬ একটি দলেই দলিত-আদিবাসী শীর্ষ নেতা রয়েছে। গত সংসদে এমন ১৮টি দল ছিল। তাদের মধ্যে মাত্র দুটি দলের সাংসদ, সংশ্লিষ্ট দলের শীর্ষ নেতা ছিলেন।

সংসদের বিজনেস অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য হওয়ার জন্য দলের নেতা হওয়া জরুরি। কারণ সেখানেই সংসদের আলোচ্যসূচি এবং সময়সারণী তৈরি হয়।

সংসদে বক্তব্য রাখার ব্যাপারে দলিত-আদিবাসী সাংসদরা যথেষ্ট এগিয়ে। পঞ্চদশ লোকসভায় ভারতীয় জনতা পার্টির দলিত-আদিবাসী সাংসদরা বছরে দশবার বক্তব্য রেখেছেন। গত লোকসভায় সিপিএমের দলিত-আদিবাসী সাংসদরা বছরে গড়ে ৪৪ বার বক্তব্য রেখেছেন। এবারের তথ্য এখনও নেই, যেহেতু এই সংসদ চলছে। দেশের বিভিন্ন গুরুত্ব বিষয়ে বিতর্কে অংশ নেওয়া বা প্রশ্ন তোলার ক্ষেত্রেও তারা পিছিয়ে নেই।

তবে সংসদে যত ভালোই ভূমিকা রাখুন না কেন, তার মানেই য়ে তারা পরবর্তী নির্বাচনে নিজেদের কেন্দ্র থেকে টিকিট পাবেন, তার কোনো মানে নেই। যেমন বিজেপি ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তাদের ৫৩.৭% দলিত-আদিবাসী সাংসদকে টিকিট দেয়নি। ২০১৪ সালের ভোটে তারা ২৮%-কে টিকিট দেয়নি। কংগ্রেসের ৭এত্রে সেবার সংখ্যাটা ছিল ২৬%। এই প্রবণতার ফলে সাংসদ হিসেবে অভি৫ হয়ে ওঠার সুযোগ হারান দলিত-আদিবাসী জন প্রতিনিধিরা। এতে সংসদের মধ্যে তাদের গুরুত্বও কম থেকে যায় দিনের পর দিন।

অর্থাৎ সংরক্ষণের ফলে দিল-আদিবাসীরা কিছুটা এগনোর সুযোগ পেলেও, এর মধ্যে দিয়েই যে তাদের চূড়ান্ত মুক্তি সম্ভব, এ ধারণা একেবারেই ভুল। সমাজে উচ্চ শ্রেণি-বর্ণের আধিপত্য যতদিন থাকবে, ততদিন তা হওয়ার নয়। এর জন্য প্রয়োজন অন্য লড়াই।

Share Now:

LEAVE YOUR COMMENT

Your email address will not be published. Required fields are marked *