করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের শেষে স্থায়ী ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে দেশের ২০০০টি সিনেমা হল
পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: করোনার দ্বিতীয় ঢেউ পার করে ব্লক বাস্টার চলচ্চিত্র রিলিজের অপেক্ষায় দিন গুনছে চলচ্চিত্র শিল্প। অথচ সেগুলো দেখানোর জন্য খুব বেশি সিনেমা হল টিকে থাকার অবস্থায় নেই। একটি হিসেবে বলছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শেষ হতে হতে দেশের প্রায় ২০০০টি সিনেমা হল স্থায়ী ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। এই ছবি গোটা দেশ জুড়েই।
কোভিডের আগে ভোরতে মোটের ওপর ৯,৫২৭টি স্ক্রিন ছিল। তার মধ্যে ৬৩২৭টি সিঙ্গল স্ক্রিন, ৩২০০টি মাল্টিপ্লেক্স(আন্র্স্ট অ্যান্ড ইয়ং-এর ২০২০ সালের রিপোর্ট অনুয়ায়ী)।
গত বছর এর মধ্যে ১০০০টি স্থায়ী ভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।
এ বছরের লকডাউনে নতুন করে সিনেমা হল বন্ধ। এর ফলে আরও বহু স্ক্রিন স্থায়ী ভাবে বন্ধ হওয়ার মুখে। সব মিলিয়ে অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের শেষে দেশে স্ক্রিনের সংখ্যা কমে হতে পারে ৭০০০।
এর ফলে টিকিট বিক্রি থেকে প্রযোজকদের আয়েও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
এলারা ক্যাপিটালের সহ সভাপতি করণ তাওরানির মতে, আঞ্চলিক ভাষার সিনেমায় এর প্রভাব বেশি করে পড়বে|
কারণ আঞ্চলিক ভাষার সিনেমার টিকিট বিক্রি থেকে আয়ের ৬০-৬৫ শতাংশ আসে সিঙ্গল স্ক্রিন থেকে।
মিডিয়া কনসালটিং সংস্থা ওরম্যাক্স মিডিয়ার সিইও শৈলেশ কাপুরের মতে, বলিউডে এর প্রভাব কম পড়বে। কারণ এই সিঙ্গল স্ক্রিনগুলোর টিকিটের দাম কম। তার কথায়, হিন্দি ছবির বক্স অফিস থেকে আয়ের ৭০% আসে মালিটপ্লেক্স থেকে। সিঙ্গল স্ক্রিন থেকে তাদের আয় খুব একটা হয় না।
যদিও চৌহানের মতে, সিঙ্গল স্ক্রিন বলিউডের একটা সম্পদ, যা তারা বহুদিন ধরে ভোগ করে আসছে। এই সম্পদ খোয়ালে প্রতিটি ছবিতে তাদের ৪০-৫০ কোটি টাকা ক্ষতি হবে।
একটি এলাকায় একটি সিঙ্গল স্ক্রিন বন্ধ হলে, সেই অঞ্চলের দর্শকরা হাতছাড়া হয়। ফলে সেই দর্শকরা জাল ভার্সনের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হয়। অর্থাৎ এই সম্পদ নষ্ট করার মধ্যে দিয়ে বলিউড নিজেরাই নিজেদের বাজারকে ধ্বংস করবে। তার মতে সিঙ্গল স্ক্রিন বন্ধ হওয়ায় ধাক্কা খাবে বলিউডের ব্যবসা।
২০১৮ সালে রণবীর কাপুরের সঞ্জু এবং রাজকুমার রাওয়ের স্ত্রী ছবির বক্স অফিস কালেকশনের ৪০-৪৫ শতাংশ এসেছিল এমন এলাকা থেকে, যেখানে মালটিপ্লেক্স নেই। ওই একই বছরে জন আব্রাহামের সত্যমেব জয়তে ছবির ৭০ শতাংশ বক্স অফিস কালেকশন এসেছিল সিঙ্গল স্ক্রিন থেকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সিঙ্গল স্ক্রিনে টিকিটের দাম কম হওয়ায়, এই সব হলে বেশি মানুষে সিনেমা দেখতে যান। বেশি বেশ করে সিঙ্গল স্ক্রিন বন্ধ হলে, সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখার লোক অনেকটাই কমে যাবে।
আরেকটা সমস্যা হল, যে পরিমাণ স্ক্রিন বন্ধ হচ্ছে, সেই পরিমাণ স্ক্রিন বাড়ছে না। কোভিড-পূর্ববর্তী সময়ে ৩৫০-৪০০ সিঙ্গল স্ক্রিন বন্ধ হয়েছিল বদলে মালটি প্লেক্সে ২০০-২৫০টি স্ক্রিন চালু হয়েছিল। এখন পরিস্থিতি আলাদা। ব্যবসা কমে যাওয়ায় মালটিপ্লেক্সগুলি নতুন স্ক্রিন চালু করতে দেরি করছে।
দেশের সবচেয়ে বড়ো মালটিপ্লেক্স সংস্থা পিভিআর ২০২০-২১ অর্থবর্ষে মাত্র ১৩টি নতুন স্ক্রিন চালু করেছে। গত সাত বছরের কোনো বছরেই তারা এত কম নতুন স্ক্রিন চালু করেনি। সংস্থা তাদের ১৬টি স্ক্রিন বন্ধ করেছে এবং তাদের ৮৪২টি স্ক্রিনের পেছনে যাবতীয় খরচ স্থগিত করে রেখেছে, স্বাভাবিক পরিস্থিতির অপেক্ষায়।
অন্যান্য মালটিপ্লেক্স সংস্থাগুলিরও একই অবস্থা। আইনক্স তাদের যাবতীয় সম্প্রসারণ পরিকল্পনা পিছিয়ে দিয়েছে।
দেশ জুড়ে এখন বিভিন্ন সিনেমা এখন রিলিজের জন্য দিন গুনছে আর বহু থিয়েটার বন্ধ হওয়ার জন্য।
২৭ জুলাই রিলিজ হতে চলেছে অক্ষয় কুমারের বেল বটম। আঞ্চলিক ভাষার বেশ কিছু বল্ক বাস্টার রিলিজ করতে চলেছে ১২ আগস্ট।
এই পরিস্থিতিতে বন্ধ হওয়া হলগুলির শ্রমিকদের কেমন আছেন, তা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।