পিপলস ম্যাগাজিন ডেস্ক: সারনা ধর্মের স্বীকৃতির জন্য তীব্র আন্দোলন করছেন ঝাড়খণ্ডের আদিবাসীরা। তারই মধ্যে আদিবাসীদের সংস্কৃতি ও রীতিনীতি রক্ষার কঠিন লড়াই করতে হচ্ছে খুঁটি জেলার তিলমা গ্রামের বাসিন্দাদের। তারা তাদের পুজো ও ধর্মীয় আচার পালনের সারনা স্থলকে রক্ষা করতে চান। তাদের অভিযোগ, ওই জায়গাটাতেই প্রশাসন থানা তৈরি করতে চায়। সে জন্য গ্রামবাসীদের সেখানে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। তাদের প্রতিবাদ দমন করা হচ্ছে।
গ্রামবাসীদের দাবি মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে থানা থাকলেও ওই গ্রামে আরও একটি থানা তৈরি করতে চাইছে প্রশাসন, সে জন্য আদিবাসীদের জমির অধিকার রক্ষায় তৈরি পেসা আইন মানছে না পুলিস। এ ব্যাপারে বারবার কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখেছেন গ্রামবাসীরা। তাতে কোনো লাভ হয়নি. এখন তারা এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেন এবং জাতীয় তফসিলি উপজাতি কমিশনের হস্তক্ষেপ চাইছেন।
আদিবাসী সম্প্রদায়ের বক্তব্য, তাদের মতামত ছাড়াই ওই জমিটি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তাছাড়াও তাদের বক্তব্য, ওই জমিতে থানা তৈরির সিদ্ধান্ত জমি অধিগ্রহণ আইন ও পেসা আইনের বিরোধী। কারণ, পেসা আইনে গ্রামের জমি কোন প্রকল্পে ব্যবহার করা হবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আদিবাসীদের দেওয়া হয়েছে।
গ্রামবাসীদের বক্তব্য, জমিটি এক একরেরও কম এবং গোটা এলাকাটা এখন কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। ফলে তারা সেখানে যেতে পারছেন না। তাদের যে কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচিকে দমন করা হচ্ছে। ওই গ্রামে বসবাসকারী মুন্ডা উপজাতিদের কাছে এটা শুধু পুলিশ কর্তৃক জমি অধিগ্রহণের বিষয় নয়, জমির অধিকার এবং সায়ত্তশাসনেরও প্রশ্ন। এই জমির সঙ্গে তাদের দীর্ঘদিনের ধর্মীয় আচার পালন ও ঐতিহ্যের বিষয়টিও জড়িয়ে রয়েছে।
আদিবাসীদের বক্তব্য, প্রতিটি গ্রামেই এমন একটি সারনা স্থল রয়েছে। আদিবাসীরা ৫-৬ রকমের পুজো করেন। যেগুলি তাদের কাছে খুবই মূল্যবান ধর্মীয় আচার।
জেলা পুলিস সুপার আশুতোষ শেখরের বক্তব্য, জমিটি প্রশাসন অধিগ্রহণ করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। তার দাবি, যে জমিটি নেওয়া হয়েছে, সেটি মোটেই সারনা স্থল নয়, তার পাশের এলাকা। গ্রামবাসীরা ওই ঘেরা এলাকার মধ্যে পুজো করতে চাইছেন বলেই, তাদের আটকানো হচ্ছে।
কিন্তু আদিবাসীরা কিছুতেই ওই জমি হাতছাড়া করতে রাজি নন। তারা বলছেন, প্রশাসনের দাবি জেলা কালেক্টরেটের নির্দেশেই জমি নেওয়া হয়েছে কিন্তু তার কোনো প্রমাণ দেখানো হচ্ছে না। জমি না দেওয়ার এই লড়াই তিন বছর ধরে চলছে। গত বছরের ডিসেম্বরে গ্রামসভা থানা তৈরিতে সম্মতি দিতে অস্বীকার করে। তখান তাদের বলা হয়, সরকার বলপ্রয়োগ করে হলেও থানা তৈরি করবেই। ফেব্রুয়ারি মাসে গোটা এলাকা কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়। যারা প্রতিবাদ জানায়, তাদের মারধর করা হয়।
অনেক চিঠিচাপাটি করেও কাজ না হওয়ায় সম্প্রতি রাজ্য়ে প্রশাসনের কাছে একটি চিঠি পাঠাচ্ছেন গ্রামবাসীরা। তাতে ১০০-রও বেশি গ্রামবাসী সই করেছেন। তাতে বলে হয়েছে, গ্রামসভা যে থানা তৈরির অনুমতি দেয়নি, তা যেন প্রশাসন মাথায় রাখে।
আদিবাসীরা হিন্দু ধর্মের পরিধির বাইরে বেরনোর জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন। তিলমার আন্দোলন, তারই ধারাবাহিকতা।